বিচিত্র বিষয়ের বহুজ্ঞতা তৈরি হয় বিচিত্র বিদ্যাব্যসনী জ্ঞানী প্রাবন্ধিক তথা সৃজনশীল সাহিত্যিকদের এক সমাগম থেকে। শান্তিনিকেতনে যে সময়ে বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন, সিলভাঁ লেভি কিংবা নন্দলাল বোস অথবা রামকিঙ্কর বেইজ-এর মতো মানুষ ছিলেন, সে-সময়ে এই বিদ্বজ্জনেরা শুধু রবীন্দ্রনাথের ভাবনাতেই উজ্জীবিত হয়েছিলেন, তা নয়, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও তাঁদের কয়েকজনের ভাবনায় রসায়িত হয়েছিলেন। বৌদ্ধ জাতক, অবদান শতক, কিংবা মহাবস্তু অবদান থেকে আকর সংগ্রহ করে রবীন্দ্রনাথ যে শ্যামা, সন্ন্যাসী উপগুপ্তের মতো কবিতা লিখেছিলেন অন্যতর উত্তরণে, সেটা বিধুশেখরের সাহায্য ছাড়া সম্ভব ছিল না।
সিধু জ্যাঠার চরিত্র যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি সাহিত্যের ঘরে জন্মেছিলেন বলেই এমন চিরন্তন চরিত্র বাস্তব হয়ে ওঠে। বস্তুত উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কিংবা সুকুমার রায়– দু’জনেই তাঁর আপন কালের সিধু জ্যাঠা; এমনকী, সত্যজিৎ নিজেও তাই। সত্যি বলতে কী, সিধু জ্যাঠার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তাঁর বহুজ্ঞতা, তিনি অনেক কিছু জানেন এবং সেই জানাটা এতই বিচিত্র যে, আগে তাঁর কাছে যা জানতে চাওয়া হয়েছিল, পরের পর্যায়ে সেই প্রশ্নটা বিপরীত একটা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞতাও হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, সিধু জ্যাঠা যে জ্ঞানটি উত্তরে জানাবেন, সেই জ্ঞানটা কখনওই ‘পেরিফের্যাল’ নয়, সেটা যেন এক বিশেষজ্ঞের জ্ঞান, যেটা তিনি সরলভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন। আসলে সত্যজিতরা তিন পুরুষ মিলে অর্থাৎ তাঁর বাপ-পিতামো এবং নিজে সাহিত্য এবং বিজ্ঞানকে মিলিয়েছিলেন এমন নিপুণ চিত্রকরের মতো, যেখানে ঝোড়ো হাওয়া এবং তবুও স্থির পোড়ো বাড়ি একত্রে মিলে যায়। সত্যজিতের মতো একজন চিত্রকর এবং চলচ্চিত্রকারই এমন বহুজ্ঞতায় সিধু জ্যাঠার ছবি আঁকতে পারেন।
বস্তুত সত্যজিতের কল্যাণে ‘সিধু জ্যাঠা’– এই নামটাই একটা কনসেপ্ট হয়ে উঠেছে রীতিমতো। আমার ছোটবেলায় আমার এক বন্ধু ছিল, যার নাম চন্দ্রশেখর সর্বজ্ঞ। সেই বয়সে এই উপাধি-নাম নিয়ে আমার কোনও কৌতূহল হয়নি বটে, কিন্তু পরিণত বয়সে এটা বেশ বুঝেছি যে, আমার বন্ধুর পূর্বপুরুষদের মধ্যে এমন কেউ ছিলেন, যিনি এতটাই জ্ঞানী মানুষ যে, তাঁকে ‘সর্বজ্ঞ’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল হয়তো। অথচ এটাও তো এক বড় সত্য যে, একজন একাধারে সব কিছু জানতে পারেন না কখনওই। আমাদের শাস্ত্রীয় ভাবনায় একমাত্র ভগবান অথবা ব্রহ্মকেই বলা হয়েছে উপনিষদে– যঃ সর্বজ্ঞঃ সর্ববিৎ– অতিপ্রাচীন মুণ্ডকোপনিষদের এই কথাটাই আরও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে মাণ্ডুক্য উপনিষদে, যেখানে বলা হচ্ছে– যিনি সর্বেশ্বর, সেই সর্বেশ্বরই একমাত্র সর্বজ্ঞ পুরুষ– এষ সর্বেশ্বরঃ এষ সর্বজ্ঞঃ।
তাহলে এটাই একটা শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত যে, স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ সর্বজ্ঞ হতে পারেন না। আর এ-ব্যাপারে প্রাচীন সংস্কৃতের প্রবাদও এটাই যে, সকলেই সব জানে না, জানতে পারে না, জানার ক্ষমতাই হবে না– ন হি সর্বঃ সর্বং জানাতি। হ্যাঁ, এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েও বলব– এই ভারতবর্ষে যুগে যুগে এমন অনেক মানুষ জন্মেছেন, যাঁদের মধ্যে পরম ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতার বিভূতি আছে বলে মনে করি– যেমনটা ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে– মম তেজঃ অংশসম্ভবম্। এইসব বড় মানুষের মধ্যে সর্বজ্ঞতা নাই থাকুক, কিন্তু বহুজ্ঞতা থাকে। স্ববিষয় ছাড়াও তাঁরা অনেক কিছু জানেন। এবং সেই জানাটাও এতই গভীর, তথা আশ্চর্যরকমের জানা যে, সেটা কখনওই আমাদের পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল কিংবা ক্লাব ইন্টেলেকচুয়ালদের মতো ওপরচালের মৌখিক আড়ম্বর নয়। বহুজ্ঞ মানুষদের বহু বিষয়ে প্রবেশ করার মতো প্রজ্ঞা এবং বিদ্যাচর্চার ক্ষমতা থাকে বলেই তাঁরা হয় সত্যজিৎ রায়, নয়তো বা তাঁরই কল্পলোকের সিধু জ্যাঠা হয়ে ওঠেন।
আমার তো মনে হয়– বিচিত্র বিষয়ের বহুজ্ঞতা তৈরি হয় বিচিত্র বিদ্যাব্যসনী জ্ঞানী প্রাবন্ধিক তথা সৃজনশীল সাহিত্যিকদের এক সমাগম থেকে। শান্তিনিকেতনে যে সময়ে বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন, সিলভাঁ লেভি কিংবা নন্দলাল বোস অথবা রামকিঙ্কর বেইজ-এর মতো মানুষ ছিলেন, সে-সময়ে এই বিদ্বজ্জনেরা শুধু রবীন্দ্রনাথের ভাবনাতেই উজ্জীবিত হয়েছিলেন, তা নয়, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও তাঁদের কয়েকজনের ভাবনায় রসায়িত হয়েছিলেন। বৌদ্ধ জাতক, অবদান শতক, কিংবা মহাবস্তু অবদান থেকে আকর সংগ্রহ করে রবীন্দ্রনাথ যে শ্যামা, সন্ন্যাসী উপগুপ্তের মতো কবিতা লিখেছিলেন অন্যতর উত্তরণে, সেটা বিধুশেখরের সাহায্য ছাড়া সম্ভব ছিল না।
এই ধরনের বিদ্বজ্জনের সমাগম কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা, যেমন ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’, ‘এশিয়াটিক সোসাইটি’, কিংবা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কিংবা সংস্কৃত কলেজেও এককালে হত, তেমনই হত ব্যক্তিগত সত্যজিতের ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়িতেও। বস্তুত বহুজ্ঞতার স্থান কিন্তু এইগুলিই, যেখান থেকে যুগে যুগে সিধু জ্যাঠারা তৈরি হয়েছেন।
……………………………….
প্রশ্ন করলাম– সংস্কৃত নাটকে যে সম্ভোগ শৃঙ্গারের কথা আছে, সেটা কি কোনওভাবে নায়ক-নায়িকার মিলনোত্তর ব্যাপার? বিষ্ণুবাবু বললেন– আমার মতে সম্ভোগ-শৃঙ্গার ব্যাপারটা পুরোপুরি বিবাহ-পূর্ব ঘটনা। কালিদাস তাঁর কুমারসম্ভবে শিব-পার্বতীর বিবাহের প্রসঙ্গ-মাত্রেই সপ্তম-সর্গে তাঁর কাব্য শেষ করে দিয়েছেন– রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এখানে কবিতার টিপ্পনীতে লিখেছেন– সহসা থামিলে তুমি অসমাপ্ত গানে। সবচেয়ে বড় কথা– সম্ভোগ-শৃঙ্গার যদি বিবাহোত্তর মিলনের কোনও অনুকল্প হত, তাহলে রবীন্দ্রনাথ ‘শেষের কবিতা’ লিখতেন না।
………………………………..
এ বিষয়ে আরও একটা উদাহরণ দিতে হবে বহুজ্ঞতা লাভ করার ক্ষেত্রে সেই বিচিত্র সংস্থাগুলিই বোধহয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পীঠস্থান হিসেবে গণ্য হতে পারে। এগুলি হল– আমাদের মধ্যযুগে ফরাসি দেশের সালোঁগুলি (Salons)। শব্দটা অনেকের কাছে অপরিচিত বটে, কিন্তু এককালে এই সালোঁ-গুলোতেই পণ্ডিতি আড্ডা মারতে আসতেন কবি-সাহিত্যিক থেকে আরম্ভ করে গায়ক-চিত্রকররাও। আর আসতেন সেই বহুজ্ঞ বিজ্ঞ মানুষরা, যাঁদের বলা হয়েছে encyclopedists– যাঁদের আমি সত্যজিৎ রায় কিংবা সিধু জ্যাঠা বলে চিহ্নিত করতে পারি। আমি বলতে চাই– উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়িটাই ছিল সিধু জ্যাঠা তৈরির কারখানা এবং দীর্ঘ তিন পুরুষ ধরে ওঁরা নিজেরাই বাঙালি সমাজের সিধু জ্যাঠা হয়ে বসেছিলেন।
আমি ক্যারল বটরাইট-এর লেখা থেকে সালোঁগুলির চরিত্র খানিক বোঝাতে চাই–
The salons facilitated meeting and discussion between the encyclopedists and the ideas contained in the Encyclopedia were debated by these philosophes who attended between two and four salons a week. Because of the rules of the salons, they were assured that discussion would be linked to the enlightenment subjects of science, philosophy, economics, literature, art, music and current affairs. It was possible to have conversations in these places about changes in society which would have been interpreted in public as destabilizing, and discussion could challenge the authority of the church or crown. It was a forum where government reform was discussed safely. But the salons were not only attended by French thinkers. The salonieres also issued invitations to visiting thinkers from all over the world: Horace Walpole and Lord Chesterfield from Britain, Hume from Scotland, Abbe Galiani from Italy, Friedrich Grimm from Germany and American Benjamin Franklin. These visitors were able to return to their home countries and spread the enlightenment with first hand knowledge of how the salons functioned and gave Paris the reputation for being an intellectual center with the name ‘Cafe de l’Europe’.
সমগ্র ইউরোপের ‘কফি হাউজ’ হয়ে উঠেছিল ফ্রান্স এবং সেটা সালোঁর দৌলতে, যে সালোঁগুলি চালাতেন ফ্রান্সের অভিজাত মহিলারা, যাঁদের বিখ্যাত নামগুলি জানিয়ে আমার পাঠকদের ধৈর্য ভেঙে দিতে চাই না। তবুও তো একবার নাম করতে হবে Mme de Tencin-এর; তাঁর salon-তে আসতের ফরাসি বিপ্লবের প্রাতঃকালীন পিতা– ফন্টিনেল এবং মন্টেস্কু। সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন Mme Geoffrin– অদ্ভুত এই মহিলা। মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে তাঁর ঠাকুমা তাঁর বিয়ে দিয়েছিলেন একজন বড়লোক কাচ-ব্যবসায়ী কর্নেলের সঙ্গে, যাঁর বয়স ছিল জিওফ্রিনের চারগুণ। কিন্তু স্বামীটি অতি ভালো মানুষ। জিওফ্রিনের সালোঁতে সমস্ত অর্থের জোগান ছিল তাঁর। কিন্তু বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যার নির্দেশ ছিল যে, সপ্তাহের যে দু’দিন অপরাহ্নে সোলোঁ খুলত তাঁর বাড়িতে, সে দু’দিনই সেই স্বামী-পুরুষটি জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের পারস্পরিক আলাপ এবং আলোচনা শুনতে পারতেন, কিন্তু তিনি নিজে কোনও কথা বলার বা তর্ক করার অধিকার পেতেন না। এমনকী, এই দু’টি দিনের ‘ডিনার’টাও তিনি খেতেন সবার সঙ্গে মুখ বুঁজে।
অথচ সালোঁর যিনি অধিকারিণী জিওফ্রিন নিজেই কিন্তু এক আকর্ষণ। পণ্ডিত মানুষদের তক্কাতক্কি চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছলে ‘মিডিয়েট’ করতেন জিওফ্রিন। জিওফ্রিনের স্বভাব ছিল এতটাই মিষ্টি যে, দিদেরো-র মতো দার্শনিক এবং ফরাসি দেশের প্রথম বিশ্বকোষ (Encyclopedia) রচনার প্রধান সম্পাদক দেনিস দিদেরো (Denis Diderot) পর্যন্ত তাঁর টেবিলে বসার জায়গা পেতেন না, দিদেরো যেহেতু ভীষণ ‘bold and outspoken’ ছিলেন, অতএব জিওফ্রিন তাঁকে দার্শনিক হিসেবে ভীষণ পছন্দ করলেও তাঁর সালোঁতে তিনি আপন ব্যক্তিত্বেই খানিক চাপে রাখতেন দিদেরোকে।
আমরা জিওফ্রিনের আলোচনায় বসিনি এখানে, কিন্তু দিদেরোর মতো বহুজ্ঞ মানুষ, একটি বিশ্বকোষের জনক, তিনি কিন্তু জিওফ্রিনের সালোঁতে মত-বিনিময় করা মানুষ। আর দ্বিতীয়, ফ্রান্সে এইরকম সালোঁ কিন্তু একটা ছিল না; ছিল অনেক এবং সেগুলির মধ্যে অন্তত গোটা পাঁচেক ছিল Enlightenment Salons– যেগুলি ছিল ফরাসি বিপ্লবের আঁতুর ঘর। ভাবা যায়!
কিন্তু এই সব সালোঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল শুধু কথা বলা, বহু বিষয়ে, বহু তথ্য-সম্বলিত কথা, যার সম্বন্ধে Diderot পর্যন্ত মন্তব্য করেছেন– One can reach only a select group through publication, but everyone through conversation– Our writings affect only a certain class of citizen, our words everyone. এই যে বড় মানুষের কথা বলার জায়গা, এই সব জায়গা থেকেই যুগে যুগে সিধু জ্যাঠাদের আবির্ভাব ঘটেছে। এবং প্রকৃষ্ট সিধু জ্যাঠার লক্ষণ কিন্তু এটাই যে, কোনও নির্দিষ্ট বিষয়েই পূর্ণ পারদর্শিতা নয়, কিন্তু বিভিন্ন এবং বিচিত্র বিষয়ে পারদর্শিতা– যেটা একজন নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ে খানিক কম হতে পারে বটে, কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে আচ্ছা-আচ্ছা পিএইচ.ডি-র চেয়ে অনেক বেশি সেই পারদর্শিতা।
আমার মনে আছে, আমার মাস্টারমশাই বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য বৌদ্ধ-পণ্ডিত বেণীমাধব বড়ুয়াকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন– আপনি কি একই বিষয়ে অতি নিপুণ এক বিশেষজ্ঞ-ব্যক্তিকে বেশি প্রাধান্য দেন, নাকি বহু বিষয়েই বহুজ্ঞ ব্যক্তিকে বেশি প্রাধান্য দেন? বি. এম. বড়ুয়া বলেছিলেন– আমি নিজে সংস্কৃত ভাষা এবং পালি ভাষা দুটোই ভালো করে জানি বলে আমার গবেষণা-কর্মে যত সুবিধে হয়েছে, শুধু সংস্কৃত কিংবা শুধুই পালি ভাষা জানলে আমি এতগুলো বড় কাজ করতে পারতাম না। তাই আমার মনে হয় যে, যিনি বহু বিষয়ই ভালো করে জানেন, তাঁর পক্ষে ভারতবর্ষের মতো মাল্টি-কালচারাল (multicultural) দেশে আরও বেশি ‘ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি’ কাজ আরও ভালো করে করা সম্ভব।
এটা কী ভাবা যায় যে, বি. এম. বড়ুয়া গ্রিক ভাষাতেও মাস্টার্স করেছিলেন থেকে। তিনি একদিকে ব্রাহ্মী-লিপি, সম্রাট অশোকের পালি ভাষায় লেখা লিপি উদ্ধার করছেন, অন্যদিকে বৌদ্ধতত্ত্ব নিয়ে বই লিখেছিলেন একটার পর একটা। আমার মাস্টারমশাই বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্যও অনেকটা এই গোত্রেরই মানুষ ছিলেন। তাঁর কাছে অলঙ্কার-শাস্ত্রের যে কোনও বিষয় নিয়ে যেমন প্রশ্ন করা যেত, তেমনই বেদান্ত কিংবা আরও বিপরীত পাণিনি ব্যাকরণ, ভতৃহরির শব্দতত্ত্ব, এমনকী, বঙ্কিমচন্দ্র কিংবা রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধেও এমন সব তথ্য তিনি বলতে পারতেন, যা অনেক বাংলা ভাষার পণ্ডিতরাও বলতে পারতেন না।
এবার আমার জীবনের শ্রোতব্য ভাবনার মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্য ঘটনা ছিল এটাই যখন আমি লেখালেখি আরম্ভ করেছি। আনন্দবাজারে লেখা বেরচ্ছে এবং পর দু’-চারটে বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্যের চোখে পড়েছে। তাঁর সামনে আমার এ-কথা বলার ধৃষ্টতা ছিল না যে, স্যর! আনন্দবাজারে আমার লেখাটা কি আপনার চোখে পড়েছে? অবশ্য আমার লেখা সম্বন্ধে কাউকেই এ প্রশ্ন করিনি। কিন্তু এটা বিষ্ণুবাবু– voracious reader– অথচ ভয়ঙ্কর রকমের অহঙ্কারী এবং উন্নাসিক। একবারও উচ্চারণ করলেন না যে, আমার লেখা তিনি দেখেছেন। আমিও অবশ্য সংস্কৃত কলেজে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম একটা প্রশ্ন নিয়েই, যার উত্তর তিনিই একমাত্র দিতে পারবেন।
প্রশ্ন করলাম– সংস্কৃত নাটকে যে সম্ভোগ শৃঙ্গারের কথা আছে, সেটা কি কোনওভাবে নায়ক-নায়িকার মিলনোত্তর ব্যাপার? বিষ্ণুবাবু বললেন– আমার মতে সম্ভোগ-শৃঙ্গার ব্যাপারটা পুরোপুরি বিবাহ-পূর্ব ঘটনা। কালিদাস তাঁর কুমারসম্ভবে শিব-পার্বতীর বিবাহের প্রসঙ্গ-মাত্রেই সপ্তম-সর্গে তাঁর কাব্য শেষ করে দিয়েছেন– রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এখানে কবিতার টিপ্পনীতে লিখেছেন– সহসা থামিলে তুমি অসমাপ্ত গানে। সবচেয়ে বড় কথা– সম্ভোগ-শৃঙ্গার যদি বিবাহোত্তর মিলনের কোনও অনুকল্প হত, তাহলে রবীন্দ্রনাথ ‘শেষের কবিতা’ লিখতেন না। সংস্কৃত-সাহিত্যে যদি প্রেমের অনুসন্ধান করতে হয়, তাহলে সেটা দশটা দশার মধ্যেই আছে। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো, তাহলে আমি বলব– পূর্বরাগের যে প্রথম দশা– নয়ন-প্রীতিঃ প্রথমম্– অর্থাৎ একটি মেয়েকে দেখে পুরুষের যে ভীষণ ভালো লেগে যাওয়া, সেখানে ওই ভালো লাগার মধ্যে কামগন্ধহীন প্রেম থাকে না, সম্ভোগ-শৃঙ্গারের আরম্ভ ওখান থেকেই। পুরুষের ভোগারম্ভ ওখান থেকেই।
আমি বললাম– সে কী স্যর। এখনকার দিনের Liberals-রা তো এটাকে objectification বলবে। বিশেষত মেয়েরা তো এমন নির্লজ্জ হতেই পারবে না। বিষ্ণুবাবু বললেন– আমি তো এখনকার কথা বলছিও না। ধরেই নিলাম– এখনকার অষ্টাদশীদের কোনও পুরুষকে দেখেই কাম্য মনে হয় না, এমনকী আড়ালেও তারা তাদের মেয়ে বন্ধুদেরও বলে না যে, কিন্তু–
দেখে এলাম তারে সই দেখে এলাম তারে।
এক অঙ্গে এত রূপ নয়নে না ধরে।।
বেন্ধেছে বিনোদ চূড়া নব গুঞ্জা দিয়া।
উপরে ময়ূরের পাখা বামে হেলাইয়া।।
কালিয়া বরণখানি চন্দনেতে মাখা।
আমা হইতে জাতি-কুল নাহি গেল রাখা।।
অতএব আমি মনে করি– সম্ভোগের আরম্ভ হয় পূর্বরাগের প্রথম দেখা থেকেই এবং তা শেষ হয় বিবাহ-পূর্ব মিলনের শেষ জায়গায়– যেখানে নায়ক-নায়িকা দুই পক্ষই এই বিষয়ে সম্মত হন যে, তাঁরা আর পৃথক থাকবেন না। তার মানে, শরীর নয় শুধু, মন দেওয়া-নেওয়াও বিবাহ-পূর্ব প্রেমের সংস্কার। আমি বললাম– বেশ বুঝলাম স্যর! কিন্তু একটা কথা আমি এখনও বুঝি না এবং সেটা হল– অভিজ্ঞান-শকুন্তলে শকুন্তলাকে প্রথম দেখার পর কালিদাস কিন্তু খুব বুঝেশুনেই পরিশীলিত শব্দ উচ্চারণ করেছেন– অন্তত অন্য সংস্কৃত কবিদের মতো শকুন্তলার প্রত্যঙ্গ বর্ণনার মধ্যে যাননি। বিষ্ণুবাবু বললেন– একটু বড় বড় কথা বলছ বলে মনে হচ্ছে। তা প্রথম-দর্শনে কালিদাসের পরিশীলনী ভদ্রতা কেমন শুনি?
আমি একটু অপ্রতিভ স্বরেই বললাম– কেন, ওই যে শকুন্তলাকে দেখে গাছের আড়াল থেকে দুষ্ম্যন্তের দর্শন– কুসুমমিব লোভনীয়ং যৌবনম্ অঙ্গেষু সন্নদ্ধম্। রবীন্দ্রনাথ তো অনুবাদও করেছেন হৃদয়- লোভনীয় কুসুম-হেন/ তনুতে যৌবন ফুটেছে যেন। আমার কথা শুনে বিষ্ণুবাবু বললেন– তুমি কালিদাসও বোঝো না, রবীন্দ্রনাথও বোঝো না। এটা বোঝোনি যে, রবীন্দ্রনাথ আরও বেশি পরিশীলিত। আমি বললাম– কালিদাস তো শুধু ‘যৌবন’ শব্দটা মাত্র ব্যবহার করেছেন, অন্য কবিদের মতো তিনি কোনও স্তন-জঘনের বর্ণনা করেননি। বিষ্ণুবাবু বললেন–করেছেন। আবার করেনওনি। অন্তত তুমি কিছু বোঝোনি। অন্তত মহাকবির শব্দ-প্রয়োগের মাহাত্ম্য যে কী, সেটা তোমার বোঝার ক্ষমতা হয়নি। আমি বললাম– কী জানি, বাবা! আমরা যখন কালিদাসবাবুর কাছে শকুন্তলা-নাটক পড়েছি, তখন তিনি নাটকের এই অংশটুকু বাড়িতে দেখে নিতে বলেছিলেন।
বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য বললেন– তিনি ঠিকই করেছেন। মনে রেখো– ১৮৯৩ সালে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘ইন্দিরা’ উপন্যাসের পঞ্চম সংস্করণ প্রকাশ করার সময় বিজ্ঞাপন দিয়ে লিখেছিলেন– “ইন্দিরা ছোট ছিল– বড় হইয়াছে।” সম্পূর্ণ অন্য কারণে এ কথাটা তিনি লিখে থাকলেও আমি তোমাকে এই কথাটা বলছি। এখন তো অনার্সের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছ না। এখন বড় হয়েছ, কলেজে পড়াচ্ছ এবং ওই অভিজ্ঞান-শকুন্তল নাটকটাই পড়াচ্ছ, অথচ একবারও মনে হল না যে, একবার অভিজ্ঞানের টীকা-টিপ্পণী উলটে-পালটে দেখি যে, কালিদাসের মতো মহাকবির কল্পনায় দুষ্ম্যন্তের মতো এক ধীরোদাত্ত নায়ক শকুন্তলার দিকে চোরা-গোপ্তা চাহনি দিয়ে বলছেন– প্রস্ফুটিত পুষ্পের মতো লোভনীয় যৌবন এই মেয়ের সারা অঙ্গ জুড়ে– এখানে ‘কুসুম’ কথাটার মানে কী হতে পারে অথবা ‘লোভনীয়’ এবং শুধু ‘যৌবন’ কথাটার মানে এখানে কী হতে পারে?
আমি বললাম হ্যাঁ, তা বটে। ‘লোভনীয়’ কথাটার সঙ্গে ‘যৌবন’ শব্দটা লাগালে অর্থাৎ কিনা ‘লোভনীয়’ শব্দটাকে যৌবনের বিশেষণ হিসেবে ধরলে পৌরুষেয় প্রবৃত্তির ব্যাপারটা সম্ভোগ-শৃঙ্গারের অঙ্গ হয়ে ওঠে পূর্বরাগের প্রথম পদক্ষেপেই। এবার বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য বললেন– এখনও কিছুই বোঝনি। দু’-চার পাতা এদিক-ওদিক লিখেই বড় বড় কথা বলতে শিখেছ। আবার কলেজে পড়াচ্ছ, শকুন্তলা পড়াচ্ছ। নিশ্চয়ই ছাত্রদের এটা বোঝাতে বলছি না, কিন্তু নিজে তো বুঝবে? মহাকবি শব্দ প্রয়োগ করছেন– কুসুমমিব লোভনীয়ং যৌবনম্ অঙ্গেষু সন্নদ্ধম্। এখানে ‘কুসুম’ মানে কী, যৌবন মানে কী, ‘সন্নদ্ধ’ মানে কী? আবার এখানে তুমি যে মূর্খের মতো বলবে– স্যর! ‘কুসুম’ মানে তো ফুল, ‘যৌবন’ মানে যৌবন আর ‘সন্নদ্ধ’ মানে ছড়িয়ে আছে অঙ্গ জুড়ে– তাহলে কিন্তু মানব না।
আমি বললাম– সত্যিই তো এর চেয়ে বেশি বুঝতে গেলে তো শব্দের লক্ষণা, ব্যঞ্জনার মধ্যে যেতে হবে। এই সাধারণ শব্দগুলির মধ্যেও কি সেসব আছে? আমার কথা শুনে বিষ্ণুবাবু এবার একটু রেগেই গেলেন। এই রাগের ফলশ্রুতিতে তিনি প্রথমত সংস্কৃত কলেজের লাইব্রেরি থেকে অভিজ্ঞান-শকুন্তলম্ নাটকের একটি বিশেষ সংস্করণ আনাতে বললেন এবং তারপর যে ঝাড়টা দিলেন, সেটা একদিকে আমার কাছে ছিল এক দিগন্তের উন্মোচন এবং অন্যদিকে সেই পরম বোধ যে, বিদ্বান-পণ্ডিতদের জগতে বিষ্ণুবাবুরা হলেন সিধু জ্যাঠার বাবা, কিংবা পিতা-পিতামহ।
বিষ্ণুবাবু আমাকে বললেন– মহাকবির প্রযুক্ত শব্দ-মাত্রেই এক একটা অমোঘ অব্যর্থ শব্দ। সেগুলির একটা শব্দ সরিয়ে নিয়ে অন্য একটা শব্দ বসিয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষত কালিদাস-রবীন্দ্রনাথ, কিংবা ব্যস-বাল্মীকির মতো মহাকবির শব্দ। তুমি কি সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ থেকে পিসির চরিত্রটা বাদ দিতে পারবে? নাকি, জীবনানন্দের– একদা সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হলুদ হয়েছে– এই লাইনটা বদলে দেওয়া যাবে। ‘পদ-বাক্য-প্রমাণবিৎ’ মহাকবির এক-একটা শব্দ, যা তাঁর বৌদ্ধিক হৃদয় থেকে অবান্তর শব্দরাশি ভেদ করে বেরিয়ে আসে, সেগুলির শব্দার্থ-মাত্র বিচার করলে হয় না, শব্দের ধ্বনি বিচার করতে হয়, পূর্ব-প্রসঙ্গ বিচার করতে হয়। ধ্বনিকার আনন্দবর্ধন লিখেছেন– যেসব মহাকবি শব্দের ব্যঞ্জনায় শৃঙ্গার-রসের ব্যঞ্জনা তৈরি করবেন শাব্দিক মধুরতায়, তাঁকে শব্দের এবং অর্থের দিকে এতটাই নজর দিতে হয় যে, সেই অনুশীলন-অভ্যাসের ফলে এক একটা শব্দ নিজেই অনায়াসে নেমে আসে মহাকবির লেখনী থেকে– সেই শব্দ আপন ব্যঞ্জনায় রসধ্বনি তৈরি করে।
এই অসামান্য কথাটা বলার পরেই বিষ্ণুবাবু জিজ্ঞাসা করলেন– তুমি ফরাসি সাহিত্যিক মপাসাঁর লেখা পড়েছ? অবশ্য পড়ে থাকলেও সেই এক ‘নেকলেস’। তাই তো? আমি সলজ্জে স্বীকার করলাম– তাই বটে। বিষ্ণুবাবু বললেন– আমি অবশ্য মপাসাঁর কথা বলছি না, আমি তাঁর গুরুর কথা বলছি, তাঁর নাম গুস্তভ ফ্লবেয়ার (Gustave Flaubert)– তাঁরই লেখা ‘মাদাম বোভারি’ (Madame Bovary) সেই বিখ্যাত উপন্যাস, যা এক সময় পৃথিবীর সাহিত্য-জগৎ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। অন্যদিকে মপাসাঁর মা লরা (Laure) যথেষ্ট পড়াশোনা করা মহিলা ছিলেন এবং মপাসাঁ-র মা লরা-র বোন Alfred Le Poittevin-এর ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন গুস্তভ ফ্লবেয়ার। মপাসাঁ-র মা শিক্ষিত এবং গুণী মানুষ হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে বিবাহ-বন্ধন থেকে বেরিয়ে এলেন এবং দুই ছেলে মপাসাঁ এবং হার্ভে-কে নিয়ে পৃথক থাকতে আরম্ভ করলেন। মপাসাঁর বয়স তখন এগারো।
মপাসাঁ লেখা-পড়া খুব একটা করে উঠতে পারেননি। সে যাই হোক, তাঁর সতেরো বছর বয়সে ১৮৬৭ সালে মপাসাঁ-র মা তাঁর বোন Poittevin-এর পরিচয়ে গুস্তাভ ফ্লবেয়ার-এর কাছে পাঠান মপাসাঁকে এবং ছেলেটির প্রতি দৃষ্টি রাখতে বলেন। ফ্লবেয়ার-এর সঙ্গে মাঝে মাঝেই মপাসাঁর দেখা হতে লাগল এবং মপাসাঁ-র মন গেল লেখালেখির দিকে। মপাসাঁ-কে গদ্য লেখার রীতি শেখাতেন ফ্লবেয়ার এবং তাঁকে তিনি এতই স্নেহ করতেন যে, অন্য সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় করানোর সময় তিনি সাদরে বলতেন– ‘mon disciple’, কখনও বা ‘mon eleve’– দু’টিরই মানে– আমার শিষ্য, আমার ছাত্র।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য সংস্কৃত ভাষায় দর্শন, ব্যাকরণ, অলঙ্কারশাস্ত্র অত্যন্ত নিপুণভাবে জানা সত্ত্বেও ফ্রেঞ্চ ভাষাটাও জানতেন যথেষ্ট। সেই সুবাদেই শুধু এই ফ্লবেয়ার এবং মপাসাঁ-র সম্পর্কটা সামান্য উল্লেখ করেই অবশেষে যে কথাটা উচ্চারণ করায় আমি চমকে গেলাম, সেটা হল সেই পূর্ব প্রসঙ্গ– মহাকবির প্রযুক্ত এক-একটি শব্দ, যা শুনতে সাধারণ হলেও তার গভীরতা থাকে শব্দ-ধ্বনির মধ্যে। অথাৎ সেই আনন্দবর্ধনের ধ্বন্যালোক, যেখানে আনন্দবর্ধন লিখছেন– মহাকবির লেখায় প্রযুক্ত শব্দার্থ খুব যত্ন করে বুঝতে হবে– যত্নতঃ প্রত্যভিজ্ঞেয়ৌ তৌ শব্দার্থৌ মহান করেঃ।
বিষ্ণুবাবু বললেন– সার্থক গদ্য কীভাবে, কত সদর্থকভাবে লিখতে হবে সেটা বোঝানোর জন্য ফ্লবেয়ার নাকি মপাসাঁকেই বলেছিলেন– Whatever the thing you wish to say, there is but one word to express it, but one verb to give it movement, but one adjective to qualify it; you must seek until you find this noun, this verb, this adjective.
আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম– বিষ্ণুবাবুর এই পাণ্ডিত্য দেখে। ফরাসি দেশের ফ্লবেয়ারকে সংস্কৃতের সর্বশ্রেষ্ঠ রসশাস্ত্রকার আনন্দবর্ধনকে যিনি আপন বিদ্যাশৈলীতে এইভাবে মিলিয়ে দিতে পেরেছিলেন, আমাদের দেশের সিধু জ্যাঠাদের প্রশিক্ষণ কিন্তু হয়েছিল এইসব অনন্ত ভিন্ন শাখার বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্যদের কাছে। আর দ্বিতীয় যে জায়গাগুলি, যেখান থেকে সিধু জ্যাঠারা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য বিশ্বকোষ গড়ে তুলেছেন, সেই জায়গাগুলির কথা বহুকাল আগে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী লিখে গেছেন– ‘শিক্ষার স্থল অনেক– বিদ্যালয়, গ্রন্থ, মনুষ্য-সমাজ এবং বাহ্য জগৎ।’
আমি সিধু জ্যাঠাদের এইভাবেই বুঝেছি।
…………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………………