নেতাজি সুভাষচন্দ্রের এক ডাকে ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর অন্যতম নারী বাহিনী গড়ে তোলার দায়িত্ব। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ আপ্রাণ লড়ে যেমন নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন নারী কমান্ডার হিসেবে, অন্যদিকে নেতৃত্ব দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন যুদ্ধ প্রশিক্ষিত ‘ঝাঁসি রানি ব্রিগেড’। ২০ জন থেকে শুরু করে ৩০০ জনের নারী বাহিনী, যাঁরা দক্ষিণ এশিয়ার গভীর জঙ্গলে থেকে যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছিলেন। গোয়েন্দাগিরি, অ্যাকশন, আহতদের চিকিৎসা-শুশ্রূষা, বার্মাদেশ থেকে ইম্ফল– সম্মুখ যুদ্ধের ভূমিকা পালন করেছিলেন নীরা আর্য্য, সরস্বতী রাজামণি সহ অন্যান্যরা।
ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন থেকে সেহগাল একটি দুঃসাহসের নাম। ১৯৩৮ সালে মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজের থেকে এম.বি.বি.এস ডিগ্রি ও পরবর্তী ডাক্তারি পাঠ নিয়ে তিনি তৎকালীন ভারতবর্ষের মহিলা ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অন্যদিকে বুকের মধ্যে তীব্রভাবে লালন করেছিলেন একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের স্বপ্ন। তাই দেশের বাইরে (সিঙ্গাপুরে) থাকাকালীন সুযোগ পেতেই, পরাধীন দেশকে মুক্ত করার লড়াইয়ে একজন সৈনিক হওয়ার সুযোগ লুফে নিতে দু’বার ভাবতে হয়নি তাঁকে।
নেতাজি সুভাষচন্দ্রের একডাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর অন্যতম নারী বাহিনী গড়ে তোলার দায়িত্ব। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ আপ্রাণ লড়ে যেমন নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন নারী কমান্ডার হিসেবে, অন্যদিকে নেতৃত্ব দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন যুদ্ধ প্রশিক্ষিত ‘ঝাঁসি রানি ব্রিগেড’। ২০ জন থেকে শুরু করে ৩০০ জনের নারী বাহিনী, যাঁরা দক্ষিণ এশিয়ার গভীর জঙ্গলে থেকে যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছিলেন। গোয়েন্দাগিরি, অ্যাকশন, আহতদের চিকিৎসা-শুশ্রূষা, বার্মাদেশ থেকে ইম্ফল– সম্মুখ যুদ্ধের ভূমিকা পালন করেছিলেন নীরা আর্য্য, সরস্বতী রাজামণি সহ অন্যান্যরা। নেতাজির পাশাপাশি নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী।
১৯৪৫ সালে ইম্ফলের যুদ্ধে ধরা পড়ছেন লক্ষ্মী। বার্মাদেশে পরবর্তীতে পরাধীন ভারতবর্ষের জেলে কেটেছে তাঁর জীবন। ১৯৪৭ সালে দেশ থেকে ব্রিটিশ বিদায় নিচ্ছে। এরপর মুক্তি পেয়ে থেমে থাকেননি তিনি। সাংসারিক জীবনের পাশাপাশি কানপুরে দাতব্য চিকিৎসালয় তৈরি করে ডাক্তারি করে মানুষের সেবা করেছেন। পরবর্তীতে সংসদীয় বাম দলের হয়ে কখনও যুক্ত থেকেছেন মেয়েদের সংগঠিত করার কাজে অথবা কখনও দাঙ্গা বিরোধী কাজে। আমরা জানি, ২০০২ সালে এ. পি. জে. আবদুল কালামের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি ক্যান্ডিডেট হিসেবে ছিল কমরেড লক্ষ্মী সেহগলের নাম।
…………………………………………..
পড়ুন অরণি বসু-র লেখা: হাওয়া, রোদ্দুর ও তারার আলোয় ভেসে যেতে পারত দেবারতি মিত্রর মন
…………………………………………..
কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে কমরেড লক্ষ্মী সেহগাল ছিলেন একজন ছকভাঙা জীবনের সংগ্রামী মানুষ। তৎকালীন সমাজের মেয়েদের জন্য নির্ধারিত জীবনের ছক তিনি মানেননি। কেরিয়ার ছেড়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে যেতে আর সব রকম ব্যক্তিগত ক্ষতি স্বীকার করতে দু’বার ভাবতে হয়নি তাঁকে।
…………………………………..……………….
পড়ুন তিলোত্তমা মজুমদারের লেখা: কবিতার বারুদ আগুন
……………………………………………………
অথচ আজও লিঙ্গগত বৈষম্যের ছক সমাজ জুড়ে সক্রিয়। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো বারবার লিঙ্গগত পরিচয়/ বৈশিষ্ট্যের ছক সাজায় নির্লজ্জভাবে। বাজার মেয়েদের শুধু ভোগ্যবস্তু, সাজানো ফুলদানি হিসেবে পেশ করতে চায়, যাতে তার সামাজিক সত্ত্বা, তার সমান অধিকারের আওয়াজ, তার বৈষম্যের বিরুদ্ধে চিৎকার চাপা পড়ে যায়।
আজকে যখন গোটা সমাজ জুড়ে মেয়েরা, প্রান্তিকায়িত লিঙ্গ যৌনতার মানুষ ছক ভাঙা সত্ত্বা হিসেবে তাদের কর্মস্থলে, শ্রমিক হিসেবে, সামাজিক সৃজনশীল মানুষ হিসেবে নিজেদের সমমর্যাদা চাইছে, রাস্তার অধিকার, রাতের অধিকার চাইছে, তখনও বাজার, প্রশাসন ও তাদের নিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতি তাদের কখনও দশ দিনের দেবী হিসেবে আর বাকি সময় স্বাধীন সত্ত্বাহীন ভালনারেবেল ক্যাটাগরি (দুর্বল, যার ওপর যখন খুশি আক্রমণ নামিয়ে আনা যায়) হিসেবে সংরক্ষিত করতে চাইছে। আসুন আমরা লিঙ্গবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে ধিক্কার জানাই এই দ্বিচারি প্রচেষ্টাকে, ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগলকে তাঁর জন্মদিনে স্মরণ করে। স্যালুট কমরেড লক্ষ্মী সেহগাল।
……………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………….
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved