রবি ঘোষের যে সিনেমার জন্য খ্যাতি সব থেকে বেশি , সেই গল্প হলেও সত্যি– এমন একটা সিনেমা, যেখানে রবি ঘোষের জন্য মাঠ ছাড়া আছে, ওখানে রবি ঘোষই রাজা, এ সিনেমা নিয়ে চেষ্টা করলে আলাদা একটা লেখা লেখার যথেষ্ট পরিসর আছে। দেখার বিষয় এই যে, এই সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্র ধনঞ্জয়, সে ঢুকছে সিনেমা শুরুর প্রায় কুড়ি-পঁচিশ মিনিট বা তারও পরে। সেখানে আক্ষরিক অর্থেই রবি ঘোষ এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। এখন দুঃখ, এই যে এসব সিনেমার প্রসঙ্গ তুলে-টুলে আজকের সিনেমা, আজকের কমেডি– এসব কথা মনে পড়ে, তখন যে কী অবস্থা হয় ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন!
গ্রাফিক্স: দীপঙ্কর ভৌমিক
মানুষ কীসে আনন্দ পায়– এ কথা ঠিক করে সবার জন্য একইভাবে বলা দুষ্কর। কেউ খেলে (খেলারও আবার কত বৈচিত্র– জুয়া সমেত) কেউ বই পড়ে, কেউ বেড়িয়ে আনন্দ পায়। কেউ আবার গান শুনে আনন্দ পায়। আরও নানাবিধ আনন্দের উৎসের মধ্যে আর একটা আনন্দের খনি ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে তো বটেই, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলা ‘বাত্তিওয়ালা’ অর্থাৎ, এনলাইটেন্ড বহু দেশেই খুব আদরের চোখে দেখা হয়– সেটা হল সিনেমা, মুভি– ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তমকুমাররা যখন অভিনয় করতেন, আমরা একটু কম শিক্ষিত ছিলাম বলে, আমাদের বাবা-কাকারা বলতো, বই। ভানুর প্রসঙ্গ এসে যাওয়াতে সুবিধে হল এই ওই ছোটবেলায় শেখা সমার্থক শব্দ, সূর্যর সমার্থক শব্দ ভানু, বিবস্বান (পানাসক্তেরা বলবেন বিবsun) এবং রবি। এই রবিতে এসে থেমে যেতে হচ্ছে কেননা রবিই আজকে ঘোষিত কর্মসূচি।
রবি ঘোষ যে আমাদের মধ্যে এলেন, এখন মনে হয়, একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর। খেয়াল করলে দেখা যাবে, ওঁর আগে হরিধন মুখোপাধ্যায়, তুলসী চক্রবর্তী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অজিত চট্টোপাধ্যায়, শ্যাম লাহা, নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, জহর রায়, নবদ্বীপ হালদার থেকে আমরা যে সময় পুরোদমে রবি ঘোষ, অনুপ কুমার, চিন্ময় রায়েদের ‘কমেডিয়ান’ হিসেবে দেখব– সেই গোটা সময়টা! এর মধ্যে তবু অনুপ কুমার ‘পলাতক’, ‘জীবন কাহিনী’, ‘নিমন্ত্রণ’ পেলেন, চিন্ময় রায় পেলেন ‘চারমূর্তি’। এর মধ্যে রবি ঘোষ ঠিক কোনখানে, তাঁর জন্মদিনের দিন আজকে একটু খেয়াল করে দেখি। কেন্দ্রীয় চরিত্রে রবি ঘোষ-কে নিয়ে কী সিনেমা হয়েছে– কুইজ মাস্টার কোনও দিন জিজ্ঞেস করবেন না, কেননা ওইটা হাফভলি। গুপী-বাঘা সিরিজের সিনেমাগুলো আর ‘গল্প হলেও সত্যি’-র বাইরে সে অর্থে রবি ঘোষ কেন্দ্রীয় চরিত্র না পেলেও, এমন কোনও ছবি আছে যেখানে রবি ঘোষ আছেন, অথচ মনে নেই আমাদের? প্রশ্নটা কঠিন, উত্তরটা অজানা। রবি ঘোষ আছেন, জনি ওয়াকার আছেন, অথচ মনে নেই আমাদের এরকম ছবি এই ঘটনা আসলে বিচিত্র!
মনে থাকার অনেকগুলো কারণও আছে। ওরকম একটা বেঁটেখাটো লোক, মাথায় যার অল্প বয়েসেই কেশ-বিরলতার লক্ষণ, অথচ পেটানো চেহারা মেদের ‘ম’ নেই, এ লোকটা স্ক্রিনে ম্যাজিক করতে পারে এরকম শারীরিক বৈপরীত্য নিয়ে– এ আমাদের বিশ্বাস হয়নি প্রথমটায়। যখন হল তখন বিশ্বাসটা থেকেই গেল। সাধারণভাবে যদি চিন্তা করি, নৃপতি চট্টোপাধ্যায়ের একটা অসামান্য হাইট ছিল, একটা বিচিত্র বয়স্ক মুখের অভিব্যক্তি ছিল, যা দিয়ে তাঁকে দিয়ে হাসির সিন করানো সহজ। এরকম বহু সিনেমা আছে, যেখানে নৃপতিকে কেউ রাগিয়ে দিয়েছেন, ওই খেপে যাওয়া দেখে আমরা হেসেছি। একথা শ্যাম লাহার ক্ষেত্রেও সত্যি, একেবারে ওঁর ছিল একটা বনেদি ভারিক্কি চেহারা, বাড়ির বড়দা গোছের, ‘পৃথিবী আমারে চায়’ সিনেমাটা মনে করলেই পরিষ্কার হয় ব্যাপারটা। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল অসামান্য মুখের গঠন, যা দেখে তাঁকে চালাক বলে মনে না-হয়ে পারে না। ফলে তাঁর মুখে চোখা সংলাপ বসিয়ে লোক হাসানোর কাজ সহজ। নবদ্বীপ হালদারের গলার মতো বিচিত্র গলা ছিল না আর একটাও। আরেক দিকে যদি দেখি, তুলসী চক্রবর্তী, জহর রায় এবং পরের দিকে রবি ঘোষ– এঁদের তিনজনের মুখের গঠন ছিল এরকম যে, এঁদের দিয়ে লোক হাসানোর জন্য পরিচালককে আশ্রয় নিয়েছেন এরকম চরিত্র দিয়ে যে, এঁরা গোবেচারা। মূলত এই-ই। এঁরা পড়ে গেলে আমরা হাসি, এঁরা ঠকে গেলে আমরা হাসি। নিশ্চয়ই এর ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু সুর এইটাই মূল পদের। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ ভানুকে দিয়ে নির্মল দে-র ওই বাত্তিওয়ালা ডায়লগটা দিলেন, জহর রায়-কে দিলেন– সেই উত্তম-সুচিত্রা হেঁটে যাবেন, অজিত চ্যাটার্জি, ভানু ব্যানার্জি আর জহর রায় পিছু নিলে, জহর রায় রাস্তায় পড়ে গিয়ে আছাড় খাবেন, ওই দৃশ্যটা। আবার ‘ফুলেশ্বরী’-তে একটু বোকা বোকা গোছের একটা ছেলের চরিত্রে রবি ঘোষ, যে নাকি সন্ধ্যা রায়ের জন্য পাগল! এমন পাগল যে, মা তাকে মাদুলি দিয়েছে হাতে। সন্ধ্যা রায় তাকে পুকুরে ফেলে দিলে আমরা হেসে গড়িয়ে পড়ি।
এই দ্বিতীয়ভাগে যাঁদের নাম করা গেল, এঁদের চরিত্রে বোকামো, কিছু তুচ্ছ অসংগতি না রেখে পরিচালক এঁদের কথা ভাবতে পারতেন না। এদের জন্য বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ নেই খুব একটা, আছে ক্যারিকেচার, বোকামো, আর পরিচালক নিয়ন্ত্রণ না-জানলে হত গিয়ে ভাঁড়ামো। অথচ এই রবি ঘোষ-কে যখন দেখি, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-তে তখন অন্যরকম লাগে। লাগে রবি ঘোষের গুণে, লাগে পরিচালকের গুণে। একটা জায়গায় আছে ওতে, টিফিন ক্যারিয়ার ফেরত দিতে গিয়ে পাহাড়ি সান্যালের গান শুনছেন সবাই। গান শেষ, রবি ঘোষ সবার হয়ে দেরি করে আসার জন্য ক্ষমা চাইতে গিয়ে বলছেন, ‘সত্যি কী বলে যে এপোলো’ apologize কথাটা শেষ করতে দিলেন না সত্যজিৎ রায়! কাবেরী বসু বললেন, ‘বাস বাস আর না ওসব আর কিচ্ছু শুনতে চাই না!’ ওই ‘এপোলো’ কথাটুকু বলিয়ে একটা হাসি আনা যায়, যা অট্টহাসি না আবার মুচকি হাসিও না, এটা একজন বড় পরিচালক পারেন। ওইখানেই পাহাড়ি সান্যালের নাতির চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছিলেন তাঁকে পাহাড়ি সান্যাল বলছেন, ‘দাদু এঁদের বলে দাও কাল রাত্তিরে হেড লাইটের আলোয় কী দেখেছ?’ বাচ্চাটা উত্তর দিচ্ছে, ‘একটা খরগোশ দুটো বন বেড়াল।’ রবি ঘোষ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘যাক, অল্পের ওপর দিয়ে গেছে।’ এই বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ দিয়ে হাসানোর সুযোগ রবি ঘোষ খুব কম পেয়েছেন। তপন সিনহার ‘নির্জন সৈকত’-এ সিনেমায় রবি ঘোষ উড়িয়া পাণ্ডা, পুজো দেওয়ার জন্য জোর করে ভারতী দেবীর কাছে দাত খিঁচুনি খেয়ে অনিল চ্যাটার্জির কাছে গেছেন, একইরকম জোর করাতে অনিল চ্যাটার্জির ঠাকুরদা আর বাবার নাম জেনেছেন যথাক্রমে, হরনাথ আর প্রণবেশ। বলে অনিল চ্যাটার্জি এগিয়ে গেছেন, রবি ঘোষ আউড়ে যাচ্ছেন, ‘হরনাথো, প্রণোবেশো, হরনাথো জগন্নাথো।’
এইরকম চরিত্র করতে অভ্যস্ত রবি ঘোষ যখন ‘জন অরণ্য’-র চরিত্রটা পান সত্যজিৎ রায়ের থেকে, তখন দু’জনের কাছেই বলতে হয় খুরে খুরে দণ্ডবৎ! ওরকম একটা চরিত্র যে রবি ঘোষ করতে পারেন, আমরা কি ভাবতে পেরেছিলাম? রবি ঘোষের একটা অনন্য সম্পদ ছিল ওঁর চোখ, যখন রবি ঘোষ কোন জায়গায় হাসছেন– এরকম কোনও সিনে দেখলে দেখা যাবে, চোখদুটো যেন হাসছে। অত এক্সপ্রেসিভ চোখ, খুব কম লোকের আছে!
রবি ঘোষ যে-মুখ্য চরিত্রগুলোর জন্য বিখ্যাত, সেগুলো নিয়ে কথা হয়, যেমন গুপী বাঘা বা গল্প হলেও সত্যি। দুটো সিনেমাতেই রবি ঘোষ কেন্দ্রে আছেন, অথচ চারদিকে এত দিকপাল অভিনেতা অভিনেত্রী-তে ঘিরে আছেন, যেহেতু রবি ঘোষ-কে কেন্দ্র করে সিনেমা তাতে ম্লান হওয়ার প্রশ্ন নেই ওঁর। কিন্তু যাতে রবি ঘোষ কেন্দ্রে নেই, কিন্তু সেখানেও রবি ঘোষ-কে ভোলা যায় না, সে সিনেমাগুলোর আলোচনা রবি ঘোষ ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। এরকম অনেক সিনেমা আছে, তার মধ্যে ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’ সিনেমায় ‘কাপুরুষ’-এ রবি ঘোষের করা চরিত্রটা যেখানে সেই শিব সেজে ঘরের মধ্যে নাচছেন রবি ঘোষ, প্রলয় নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে হে নটরাজ । তারপর শেষে যখন পালাচ্ছে মামা-ভাগনে, রবি ঘোষ সেই ফলস চারটে হাতে ঝুলিয়ে লেডিস ব্যাগ চুরি করে পালাচ্ছেন।
আবার ‘বসন্ত বিলাপ’-এর চরিত্রটা,– বসন্ত বিলাপ দেখে রবি ঘোষের পূর্ববঙ্গীয় ডিকশন শুনলে অবধারিতভাবে মনে আসে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। কিন্তু অভিনয় গুণে রবি ঘোষ ওটাকে বের করে এনেছেন।
দোলের দিন চিন্ময় রায় অপর্ণা সেনের হাতে ধরা পরেছেন, আর দূর থেকে রবি ঘোষ একটা পাঁচিলের আড়াল থেকে দেখছেন গলা বাড়িয়ে, পাঁচিলে ছেঁড়া পোস্টার, শাম্মি কাপুর, সাধনা প্রাণ অভিনীত রাজকুমার সিনেমার। এই ফ্রেমের বৈপরীত্যটাই এমন যে হাসি না পেয়ে পারে না। আবার এই রবি ঘোষ যখন বিজয় বসুর ‘বাঘিনী’-তে অভিনয় করেন, ওই যে চোখের কথা বলা গেল কিছুক্ষণ আগে রবি ঘোষের চোখের অভিব্যক্তি দেখার মতো।
‘মৌচাক’-এ ওইটুকু একটা ক্যারেক্টার, রত্না ঘোষালের সঙ্গে ধরা পড়ে গিয়েছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের হাতে, চেয়ারের চারপাশে সাবিত্রী ধরবেন বলে ঘুরছেন, রবি ঘোষও ঘুরছেন– এর মধ্যে প্রেম করা অন্যায় এসব সংলাপ চলছে, হুট করে ঘুরতে ঘুরতে রবি ঘোষ বলে উঠলেন ‘‘দু’ চক্কর হয়ে গেল।” এত সাটেল এই বলে ওঠাটা! তারপর উত্তমকুমার এসে ব্যাপারটা নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ঠিক পরের দিন আসতে বললেন। কথা হয়ে যাওয়ার পর, জুতোটা খোলা ছিল, সেটা নিয়ে যেতে যেতে বলে ক্যামেরার দিকে পেছন করে বলে গেলেন– ‘কালকে আসব আবার।’ উত্তমকুমার উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আসবে।’ এই ছোট্ট ছোট্ট জায়গাগুলো আসলে একটা সিনেমার গয়নার মতো। দাগিয়ে দেওয়া হাসি না, কিন্তু ওই নাকাল হওয়ায় যে বলে যায়, কালকে আসব আবার, এটা ভেবেই হাসি পায় আর কী!
……………………………………………….
আরও পড়ুন রবি ঘোষ-কে নিয়ে লেখা: গন্ডগোলে যাতে না পড়েন, নকশাল আমলে ভরদুপুরেই রবি ঘোষ পৌঁছে যেতেন নাটকের স্টেজে
……………………………………………….
কত বড় বড় নায়ক-নায়িকা কেন্দ্রিক সিনেমায় বিশাল বিশাল পার্শ্বচরিত্রর পাশে, যাকে এখন ‘ensemble cast’ বলার চল হয়েছে, তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা থাকলেও রবি ঘোষের দিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না– এই দৃষ্টান্তগুলো এর সবথেকে বড় প্রমাণ। ‘আগন্তুক’-এর গোটা জায়গাটা যেখানে উৎপল দত্তের সঙ্গে কথা হচ্ছে, সেখানে একটা জায়গায় আছে, সেখানে দীপঙ্কর দে ছাড়া সবাই পূর্ববঙ্গের, দীপঙ্কর দে বর্ধমানের। ওটা শুনে রবি ঘোষ যেভাবে তাচ্ছিল্য করলেন, এত স্বতস্ফূর্ত– কল্পনার বাইরে।! গোটা অংশটায় রবি ঘোষ দেখার মতো!
রবি ঘোষের যে সিনেমার জন্য খ্যাতি সব থেকে বেশি , সেই ‘গল্প হলেও সত্যি’– এমন একটা সিনেমা, যেখানে রবি ঘোষের জন্য মাঠ ছাড়া আছে, ওখানে রবি ঘোষই রাজা, এ সিনেমা নিয়ে চেষ্টা করলে আলাদা একটা লেখা লেখার যথেষ্ট পরিসর আছে। দেখার বিষয় এই যে, এই সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্র ধনঞ্জয়, সে ঢুকছে সিনেমা শুরুর প্রায় ২০-২৫ মিনিট বা তারও পরে। সেখানে আক্ষরিক অর্থেই রবি ঘোষ এলেন, দেখলেন, জয় করলেন।
এখন দুঃখ, এই যে এসব সিনেমার প্রসঙ্গ তুলে-টুলে আজকের সিনেমা, আজকের কমেডি– এসব কথা মনে পড়ে, তখন যে কী অবস্থা হয় ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন! ওই ছোটবেলার জিকে শিকেয় না তুলে কাজে লাগাতে হয়, পৃথিবীতে রবি আসলে একটাই।
……………………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………………
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved