উদ্বাস্তু-কে নয়? পুরুলিয়া থেকে আসা যে ছেলেটি মুখ গুঁজে পড়ে আছে যাদবপুরের মেসে, যে জানে আর কোনও দিন স্থায়ীভাবে ফিরতে পারবে না নিজের বাড়িতে, সে উদ্বাস্তু নয়? স্পাইডারম্যানের মতো রঙের বালতি হাতে কলকাতার ৫৮ তলা বহুতলে উঠে পড়ছে যে মালদার যুবক, কাজ সেরেই যাকে পাড়ি দিতে হবে গুরগাঁও বা বেঙ্গালুরু, সে উদ্বাস্তু নয়? এই শতাব্দীটাই ঘর হারানা মানুষের শতাব্দী।
বিশ্ব উদ্বাস্তু দিবসের সকালে আমার মনে পড়ে একটি নদীর নাম– অশ্ব কুহকিনী। ময়মনসিংহের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্রের ছোট্ট একটা শাখা। খুব ছোট্ট। পূর্ববঙ্গের তিরিশ হাজার নদনদীর একটি। ইন্টারনেটে হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না তাকে। ঠিক যেমন পাওয়া মুশকিল ভাস্করখিলার গা-ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া ফুলেশ্বরীকেও।
আজ থেকে অনেক বছর আগে অশ্ব কুহকিনী আর ফুলেশ্বরীর ধারের দুই গ্রামের দু’টি মেয়ে সই পাতিয়েছিল। তাদের বিয়ে হয়েছিল নাটোরে, পাশাপাশি দুই বাড়িতে। একজনের স্বামী ছিলেন ইংরেজির মাস্টার, অন্যজনের ছিল ওষুধের দোকান। তারপর দাঙ্গা, তারপর দেশভাগ। তারপর ভিটেমাটি ছেড়ে দৌড়, দৌড়, দৌড়! প্রথমে হলদিবাড়ি, তারপর বহরমপুর, তারপর কলকাতা। খাওয়া না-খাওয়ার দিনকাল। মাথার ওপরে ছাদ নেই। স্টেশনে কাটানো রাতের পর রাত। তারও পরে জীবনে ঢুকবে কমিউনিস্ট পার্টি, ঢুকবে উদ্বাস্তুদের সংগঠন ইউসিআরসি, ঢুকে পড়বে ইস্টবেঙ্গল– রিফিউজিদের ক্লাব! হয়তো কোনও মাঝরাতে কলোনি-পাড়ার তক্তপোশে আচমকা ছলাৎছল, চোখ উপচে গাল জুড়ে অশ্ব কুহকিনীর ঢেউ, ফুলেশ্বরীর জোয়ারে দুলতে থাকা ফেলে আসা চাঁদ– পূর্ব বাংলার।
অশ্ব কুহকিনী আর ফুলেশ্বরী হয়তো ভুলেই গেছে ওই দুই সখীকে। অথবা হয়তো ভোলেনি। সমুদ্র নাকি সবকিছু ফিরিয়ে দেয়। নদীও কি তাই? বাড়ি ফিরিয়ে দেয়? ভিটে ফিরিয়ে দেয়? স্মৃতি? নাকি উদ্বাস্তু নিজেই লিখে ফেলে জীবনের মহাকাব্য, যার পরতে পরতে বিস্মৃতির সঙ্গে সংগ্রাম। কুন্দেরা না পড়েই সে জানে, ভুলে যাওয়া মানেই ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ। মনে রাখতে হবে সব– যা কিছু চৌপাট হয়ে গিয়েছে রাজনীতির ঝড়ে, যা কিছু লুটপাট হয়েছে মন্বন্তর ও দাঙ্গায়, যা কিছু থেঁতলে দিয়েছে পার্টিশন, সেই সবকিছু মনে রাখতে হবে প্রাণপণ। কলোনিপাড়ার একচিলতে ঘরে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ফেলে আসা নদী, মাঠ, ঝোপঝাড় এবং আটচালা। বাঁচিয়ে রাখতে হবে পূর্বপুরুষ ও পূর্বনারীদের। দশ ফুট বাই দশ ফুটের দমবন্ধ বাস্তবতায়, অসহ্য গরমে ঘামতে ঘামতে, নির্ঘুম মধ্যরাতে নিজেকে বলতে হবে, সবকিছু বেঁচে আছে। ফেলে আসা ভিটে, ফেলে আসা নদী, ফেলে আসা প্রেম ও বিচ্ছেদ– বেঁচে আছে।
বাংলার বুকের ওপরে যখন একটু একটু করে বসে যাচ্ছে দেশভাগের করাত, ঠিক তখনই, চারের দশকের শেষে প্ল্যান-ডি আছড়ে পড়ছে ফিলিস্তিনে। ’৪৮ সাল। লক্ষ লক্ষ আরব ভিটেমাটি ছেড়ে ছুটছেন প্রাণটুকু রক্ষা করবেন বলে। পিছনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি, প্রিয়জনের লাশ, ধর্ষিতা নারীর শরীর। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিকে লাথি মেরে তাড়িয়ে গড়ে উঠল ইজরায়েল। পশ্চিম ইউরোপের সাদা চামড়ার পাপের শাস্তি ভোগ করলেন নিরপরাধ এশীয়রা। সেই ক্ষত বুকে নিয়ে দশকের পর দশক একটার পর একটা উদ্বাস্তু শিবিরে ঘুরেছেন লায়লা। যদি খুঁজে পান ‘নকবা’য় হাতছুট হয়ে যাওয়া বোনকে। খুঁজে পাননি। খুঁজে পাননি মা, বাবা, দাদা– কাউকেই। তাই সেই হাতে তুলে নিয়েছেন বন্দুক। নিজের দেশটাকেই খুঁজে বের করবেন বলে। যোগ দিয়েছেন প্যালেস্টাইনের মার্কসবাদী গেরিলা বাহিনী পিএলএফপি-তে।
অতিবৃদ্ধা লায়লার হাত ধরে আমি যখন হেঁটেছি লন্ডনের রাস্তায়, যুদ্ধ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মিছিলে, আমাদের পাশে পাশে হেঁটেছে উদ্বাস্তু কুর্দ যুবক-যুবতীরা। নিজেদের স্বপ্নের দেশ কুর্দিস্তানের জন্য তাদের লড়াই। তারা গান গাইছে বসন্তের পর বসন্ত জেলে পচতে থাকা আবদুল্লা ওচালানের জন্য, তারা স্লোগান দিচ্ছে কুর্দিস্তানের ওয়ার্কাস পার্টির নামে, যে পার্টি রিফিউজি কুর্দদের মনে বুনে দিচ্ছে মুক্ত কুর্দিস্তানের স্বপ্ন। আমাদের পাশে পাশে হাঁটছেন ইরানের তুদে পার্টির লোকজন, যাঁরা রাজনৈতিক কারণে উদ্বাস্তু, দশকের পর দশক পেরিয়ে যায়, ঘরে ফিরতে পারেন না। হাঁটছেন সুদানের রিফিউজি কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা– রাজনৈতিক হিংসায় ঝলসে গিয়েছে যাঁদের গোটা জীবন। হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, গোটা পৃথিবীটাই উদ্বাস্তুদের! একুশ শতক উদ্বাস্তুদের শতক। মনে পড়ে, এক জার্মান উদ্বাস্তুকে– কার্ল মার্কস, এক দেশ থেকে অন্য দেশে তাড়া খেতে খেতে যিনি ঘোষণা করেছিলেন, একদিন সব কাঁটাতার অবলুপ্ত হবে।
১৯ জুনের ওয়াশিংটন পোস্ট লিখে রাখছে, কেনিয়ার দাবাব উদ্বাস্তু শিবিরের বাসিন্দা ১৬ বছরের দুওল ও তার পায়রাদের গল্প। দক্ষিণ সুদানের গৃহযুদ্ধের ফলে দুওলের বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া পরিবার যখন এই শিবিরে আসে, তার বয়স তখন ৫। দশ বছর ধরে উদ্বাস্তু শিবিরে বেড়ে ওঠা কিশোর দুওল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে অচিরেই একদিন রাষ্ট্রপুঞ্জের লোকেরা তাদের নিয়ে যাবে। আশ্রয় জুটে যাবে অন্য কোনও দেশে– হয়তো অস্ট্রেলিয়ায়।
কানাডায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে দাবাবের ২১ বছরের সোমালি-কন্যা কনসো হাসান। এই উদ্বাস্তু শিবিরের স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করে ৭০ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে। প্রতিবছর পাশ করে ১৫০০-র বেশি, যাদের মধ্যে মাত্র ১% বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। এমন অসংখ্য উদ্বাস্তু শিবির পৃথিবী জুড়ে। হাজার হাজার। লক্ষ লক্ষ কৈশোর ও যৌবন মুখ গুজে বেঁচে থাকে সেখানে।
চটপট দেখে নেওয়া যাক রাষ্ট্রপুঞ্জের কিছু পরিসংখ্যান– ২০২৩-এর শেষে পৃথিবীতে নিপীড়ন, সংঘাত, হিংসা, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা স্বাভাবিক সামাজিক জীবনকে ব্যাহত করে এমন ঘটনার ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ১১৭৩ লক্ষ; এর মধ্যে ৬৮৩ লক্ষ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু, অর্থাৎ নিজের দেশের মধ্যেই নিজ বসতি থেকে বিতাড়িত বা পালাতে বাধ্য হয়েছেন এমন মানুষ। ৩৭৬ লক্ষ আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু, ৬৯ লক্ষ শরণার্থী এবং ৫৮ লক্ষ মানুষ অন্যান্য দেশের সরকারের থেকে নিরাপত্তা চান। ৭৩% উদ্বাস্তু আদতে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইউক্রেন অথবা দক্ষিণ সুদানের বাসিন্দা। ৩৯% উদ্বাস্তুর ঠাঁই হয়েছে ইরান, তুরস্ক, কলম্বিয়া, জার্মানি এবং পাকিস্তানে। গত বছরের শেষে পৃথিবীতে উদ্বাস্তু শিশুর সংখ্যা ৪৭০ লক্ষ, যার মধ্যে ২০ লক্ষ জন্মেছেই উদ্বাস্তু পরিচয় নিয়ে। ৪৪ লক্ষ মানুষের নিজের কোনও দেশই নেই, অর্থাৎ কোনও দেশের নাগরিকত্ব নেই তাঁদের।
আমরা ছবি দেখি ইজরায়েলের আক্রমণে ভিটে হারানো ফিলিস্তিনিদের, ছবি দেখি ক্রন্দনরত সিরিয়ান শিশুদের। ছবি দেখি সমুদ্রতীরে শুয়ে থাকা লাল জামা ও নীল ট্রাউজার পরা আয়লান কুর্দির। আমাদের করুণা হয়। উদ্বাস্তুদের খাবার, ওষুধ, জল সংকটের কথা আমরা খবরে দেখি, সাধ্যমতো কখনও কখনও হয়তো টাকাও দিই উদ্বাস্তু ত্রাণের জন্য। কিন্তু তাঁরা স্নান করেন কীভাবে? শৌচকর্ম? ফোন চার্জ দেন কোথায়? মহিলারা পোশাক পাল্টান না? হঠাৎ করে পিরিয়ড হলে কী করেন? পিরিয়ডের সরঞ্জামই বা কোথায় পান? কাপড় কাচা? কাপড় মেলা? এমন হাজারও দৈনিক খুঁটিনাটি সমস্যা আমাদের মাথায় আসে কি?
যাদের বাড়ি আছে, বাড়ির সমস্ত সুবিধা তাদের কাছে এমনই একটা অভ্যাসের বিষয় মাত্র, যে বাড়ি না থাকা মানুষের সমস্যা আন্দাজ করাই তাদের পক্ষে রীতিমতো চিন্তাসাধ্য ব্যাপার। আর মানসিক অনিশ্চয়তার আন্দাজ করা বোধহয় সম্ভবই নয়। দীর্ঘকাল অনিশ্চিত জীবনযাপনের ফলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ধারণাই হারিয়ে ফেলেন বহু মানুষ; কোনও পরিবেশেই তাঁরা আর নিরাপদ বোধ করেন না।
২০১১-র আরব বসন্তের পর থেকে একটানা গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় ৮৫% পরিবার তাদের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। দেশের মুদ্রাস্ফীতির হার ৯০%। তদুপরি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়া ও তুরস্কের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূমিকম্পের ফলে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের সংখ্যাও কিছু কম নয়। আরব বসন্তে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে উদ্বাস্তু সমস্যায় জর্জরিত আরেকটি দেশ হল দক্ষিণ সুদান। ২০২৩-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ সুদানের ৪০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত, যার মধ্যে ২২ লক্ষ দেশচ্যুতও।
২০১৭-র মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে গত বছর পর্যন্ত, ১২ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা উপজাতির মানুষ মায়ানমার থেকে বিতাড়িত। পৃথিবীর বৃহত্তম উদ্বাস্তু শিবির এই দেশহীন রোহিঙ্গাদের জন্য, বাংলাদেশের কক্সবাজারের কাছে। কঙ্গো এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে প্রতিবছর বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। খরা, ক্ষুধা, ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘকাল ধরে উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে সোমালিয়া। পৃথিবীর প্রতি ছয় জন উদ্বাস্তুর মধ্যে একজন আফগান। অধিকাংশ আফগান উদ্বাস্তু ইরান বা পাকিস্তানে আশ্রিত। ২০২৩-এ বহু আফগান শরণার্থীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তান। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির এই কোটি কোটি উদ্বাস্তুদের বছরের পর বছর ধরে দেখার পরে, ২০২২ থেকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পশ্চিমের পৃথিবী অবাক হয়ে দেখেছে সাদা চামড়ার উদ্বাস্তুদের।
যুক্তরাজ্যের আসন্ন নির্বাচনের পর নিজেদের ভাগ্য জানার অপেক্ষায় রয়েছেন সেখানকার বিরাট সংখ্যক উদ্বাস্তুরা। ছোট ছোট নৌকোয় চড়ে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে উপস্থিত হওয়া উদ্বাস্তুদের ঠেকাতে অভিনব বুদ্ধি বের করেছে কনজার্ভেটিভ পার্টির ঋষি সুনকের সরকার। তাকে বলা হচ্ছে ‘রোয়ান্ডা প্ল্যান’। এককালীন টিকিট কেটে এই উদ্বাস্তুদের রোয়ান্ডার কিগালিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অবশ্য এক জায়গার ভিটেমাটিহারা লোকজনকে তুলে আরেক জায়গায় বসিয়ে দেওয়ার ঐতিহ্য ব্রিটিশ সরকারের নতুন কিছু নয়। সেই ঐতিহ্যেরই ফল আজকের প্যালেস্তাইন, যেখানে সম্পূর্ণ একতরফা ‘যুদ্ধ’-এ সর্বস্ব হারিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা। তারই সমান্তরালে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ির দখল নিচ্ছে ইজরায়েলিরা।
এইসব যুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধের পরে থাকে প্রকৃতি ও মানুষের অবিরাম সংঘাত, যার ফলে প্রতি বছর বন্যায়, খরায়, বা দাবানলের ফলে ভিটেমাটি হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বেন আনুমানিক ১২০ কোটি মানুষ। এর মধ্যে বৃহৎসংখ্যক মানুষ নিজেদের ভিটে ছেড়ে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবেন কেবলমাত্র পানীয় জলের অভাবে। আরেকটা কারণ হবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি। ডুবে যেতে পারে বাংলাদেশের ১৭% উপকূলীয় অঞ্চল, যার ফলে ভিটে হারাবেন ২ কোটি মানুষ। ২০১৯ সাল থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যে পাঁচটি দেশে তা হল– ভারত, ফিলিপিন্স, বাংলাদেশ, চিন, ও যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া জলবায়ুর স্থায়ী পরিবর্তনের ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং পুষ্টির অভাব ও রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বাধ্য হবেন বহু মানুষ। প্রাকৃতিক কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষেরা মূলত দেশের মধ্যেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে যান। এ জাতীয় উদ্বাস্তুদের আইনি স্বীকৃতি ও সুরক্ষা এখনও তেমনভাবে নেই।
উদ্বাস্তু-কে নয়? পুরুলিয়া থেকে আসা যে ছেলেটি মুখ গুঁজে পড়ে আছে যাদবপুরের মেসে, যে জানে আর কোনও দিন স্থায়ীভাবে ফিরতে পারবে না নিজের বাড়িতে, সে উদ্বাস্তু নয়? স্পাইডারম্যানের মতো রঙের বালতি হাতে কলকাতার ৫৮ তলা বহুতলে উঠে পড়ছে যে মালদার যুবক, কাজ সেরেই যাকে পাড়ি দিতে হবে গুরগাঁও বা বেঙ্গালুরু, সে উদ্বাস্তু নয়? এই শতাব্দীটাই ঘর হারানো মানুষের শতাব্দী। ভিটেছুট মানুষ বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুরছে ঘর, কুলুঙ্গি, ফেলে আসা দুপুর ও কুয়োতলা। বোমাবৃষ্টি বা চাকরি হারানোর ভয়ের তলায় সে খুঁড়ে নিচ্ছে ব্যক্তিগত ট্রেঞ্চ। বাঁচিয়ে রাখছে নিজেকে। বাঁচিয়ে রাখছে ভিটেমাটি। অন্য দেশে। অন্য শহরে। বাস্তবে বেশিক্ষণ বাঁচে না মানুষ। বিদ্রোহের স্বপ্নের চেয়েও বেশি করে বাড়ি ফেরার স্বপ্নে তার বেঁচে থাকা। মনে রাখাই বিদ্রোহ। বাড়ি ফেরাই বিপ্লব। একুশ শতকে।