৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ কলকাতা মেট্রোপলিটন ক্লাবে এমনই একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে বাংলা খেয়াল পরিবেশন করলেন কবীর সুমন। সহজ প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা বন্দিশ গেয়ে খেয়াল উপস্থাপনা করলেও কবীর সুমন এই কাজ, এই অবদান সৃষ্টি করছেন মূলত ভারতের উত্তরকালের রাগ সংগীত শিল্পীদের জন্য।
খেয়াল বা রাগ সংগীতের অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে বা ঘোষণায় সাধারণত ভাষার উল্লেখ থাকে না, কবীর সুমন যখন রাগ সংগীত পরিবেশন করেন তখন কিন্তু উল্লেখ করা থাকে বাংলা ভাষায় খেয়াল। কিন্তু কেন– একথা মনে হতেই পারে।
পড়ুন ‘আপন খেয়ালে’ পর্ব ১: খেয়াল-ঠুংরি গাইতে গেলে কৃত্রিম বাংলা ভাষায় কেন গাইব?
প্রথমেই বলা দরকার, কবীর সুমন যেমন একদা আধুনিক বাংলা গানের ভাষায়-আঙ্গিকে-ভাবনায় এবং অবশ্যই যন্ত্রানুষঙ্গের প্রয়োগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন, তেমনই রাগ সংগীতের উপস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘপ্রচলিত অচলায়তনের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছেন বিগত কয়েক বছরে। কারণ তাঁর খেয়াল গানের কথা বা যাকে পরিভাষায় বলা হয় ‘বন্দিশ’– তা তিনি রচনা করছেন বাংলা ভাষায়। ভারতে এর আগে বন্দিশ লেখা হয়েছে হিন্দি, মারাঠি, পাঞ্জাবি ও আরও নানা ভাষায়, এবং সেটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর যে কোনও ভাষায় যেমন গান লেখা সম্ভব তেমনই রাগ সংগীতের বন্দিশ লেখাও সম্ভব। অথচ একটা-দুটো ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলা ভাষায় বন্দিশ নেই বললেই চলে। আরেকটি হতাশার কথা হল, অন্যান্য ভাষার বন্দিশ কোথাও কোথাও আবার সুরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আর এখানেই কবীর সুমনের লড়াই। শুধু লড়াই না বলে ‘গানের লড়াই’ বলা যায়। বাংলা ভাষায় লেখা বন্দিশে একের পর এক খেয়াল পরিবেশন।
পড়ুন ‘আপন খেয়ালে’ পর্ব ২: সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা খেয়াল গাওয়ার বরাত পেয়েছিলেন আকাশবাণী থেকেই
৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ কলকাতা মেট্রোপলিটন ক্লাবে এমনই একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে বাংলা খেয়াল পরিবেশন করলেন কবীর সুমন। সহজ প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা বন্দিশ গেয়ে খেয়াল উপস্থাপনা করলেও কবীর সুমন এই কাজ, এই অবদান সৃষ্টি করছেন মূলত ভারতের উত্তরকালের রাগ সংগীত শিল্পীদের জন্য।
পড়ুন ‘আপন খেয়ালে’ পর্ব ৩: আমায় ক্ষমা করে দিন, আমি আর হিন্দুস্থানি ভাষায় খেয়াল গাইতে পারছি না
এদিন অনুষ্ঠান শুরু হল কেদার রাগে খেয়ালের মধ্য দিয়ে। ‘এলেই যদি এখনই তবে বোলো না যাই বোলো না যাই/সন্ধে এলো তোমায় নিয়ে আলো-ছায়ায় তোমাকে চাই।’ পান্নালাল ঘোষ ‘দীপাবলি’ নামে একটি রাগ সৃষ্টি করেন। সুমন সেই দীপাবলি রাগে খেয়াল রচনা করেছেন ‘কিছু নেই তবু আছে একা নীল তারা/ বহু যুগ ছুঁয়ে এসে হল দিশেহারা/ যুগ আসে যুগ যায় তারা থাকে সারারাত/ তুমি হবে আরো একা আকাশেই আঁখিপাত।’ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল এত বছর আমরা যা খেয়াল শুনেছি, তাতে বন্দিশের বিষয় ছিল সাধারণত দেবতা বন্দনা, প্রকৃতি বন্দনা বা রাধা কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনি কিন্তু মানুষের জীবন, মানুষের জীবনের টানাপোড়েন, একাকিত্ব রাগ সংগীতের কথার বিষয় হয়ে উঠে আসছে সুমনদার গানের মধ্যে দিয়ে। হয়তো কিছুদিন পরে অথবা অনেকবছর পরে অন্যান্য ভাষার বন্দিশ লিখিয়েরাও বাংলা খেয়ালের বিষয় ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন করে বন্দিশ লিখবেন। সেদিন হবে বাংলা খেয়ালের আসল বিস্তার।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved