ব্যক্তিকে ঘিরেই তো সমাজ। এখন এই সমাজকে ঘিরে আবিলতা চোখে পড়ে। এই তো ক’-দিন আগেই সংবাদপত্রে দেখলাম, সন্তান মা-কে খুন করেছে। কেননা মা সন্তানের মেলামেশার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিলেন। অতীতে তো এমন ঘটনা অকল্পনীয় ছিল। অথচ অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই, কমবয়সি ছেলে ও মেয়ের মেলামেশা অভিভাবকরা পছন্দ করতেন না। তার জন্য এরকম ঘটনা ঘটত না। যারা বাধা দিতে পারে– মা-বাবা, দাদা দিদি বা অন্য কেউ– তাদের বড়জোর এড়িয়ে চলত। দূরে গিয়ে দেখা করত। এখন খুন করে ফেলছে। এটা সুস্থ সমাজের লক্ষ্মণ নয়। সমাজের ভিতর এখন অসুখ ঢুকে পড়েছে।
বিমান বসু। দাঁড়িয়ে আলিমুদ্দিনের সেই বিখ্যাত সিঁড়িতে। ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি। সাদামাটা, সম্ভ্রান্ত। বাঙালি। রোদজলের দিন তখন বাইরে লুটোপুটি। বেলা পড়ে এসেছে প্রায়। প্রথমেই, আমি এবং সঙ্গীরা চা খেয়েছি কি-না জানতে চাইলেন। তার পর সেই সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে সবিনয় নিবেদন, ‘টিফিন করে আসব?’। প্রশ্ন! প্রশ্ন-ই। না-করলেও পারতেন। তিনি বিমান বসু। পার্টি-প্রশাসন, চৌত্রিশ বছর। সব হু-হু করে তখন সামনে। তবু তিনি বিমান বসু, তাই-ই প্রশ্ন, যেন অনুজ অতিথিদের কাছে অনুমতি প্রার্থনা। সামলে উঠে বলি, অবশ্যই। মিনিটকয় পরই তিনি এলেন। বসলেন। সামনের টেবিল বাহুল্যবর্জিত। এক পাশে রাখা রাজনৈতিক রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত বই। আরও একটা দুটো বই। পিছনে আগুন হয়ে আছে একটুকরো লাল-আকাশ। আদতে পতাকা, চিরচেনা। সেই মুহূর্তে তিনি প্রশ্নের অপেক্ষায়। তাকালেন। আর হঠাৎ আমার মনে হল, বুঝি তিনি ফ্রন্টের মধ্যে একা। প্রশ্ন করি,
রাজনৈতিক বন্ধু হিসাবে কে সবথেকে প্রিয় কমরেড?
আমার রাজনৈতিক বন্ধু যাঁরা ছিলেন, কেউ আর বেঁচে নেই। আমারও তো পঁচাশি চলছে। একটু আগে একজনের সঙ্গে আলাপ হল। আমার থেকেও প্রবীণ। ছিয়াশি। এখন আর কিছু করেন না। বললেন, শ্রমিকের কাজ করতেন। এসে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে গেলেন। পণ করেছিলেন, আমার হাতেই দেবেন। ওঁর সঙ্গেই কথা বলছিলাম। শুনলাম, খাওয়া-দাওয়া কিছু করেননি। খাইয়ে এলাম, বোঝালাম যে, খাওয়া-দাওয়া একেবারে না-করলে চলবে কী করে! আমিও সেই নব্বইয়ের পর থেকে আর লাঞ্চ করি না। সকালে দুটো রুটি খাই, দুপুরে ফল-শশা এইসব, বিকেলে একটু মুড়ি খাব। আবার রাতে রুটি আর একপিস মাছ। ব্যস! এই আমার রুটিন। মাঝেমধ্যে লিট্টি, উপমা এসবও খাই। তবে বেশি না, পরিমিত।
বন্ধুদের প্রায় কেউই তো নেই বললেন। মাঝেমধ্যে এখন কি তাহলে একা লাগে?
না, একেবারেই না। আমি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, একা লাগবে কেন! আমি পার্টিকে পরিবার ভাবি। সেভাবেই চিরকাল ভেবে এসেছি। কোনও অসুবিধা নেই।
কিন্তু কখনও কোনও সংকট বা প্রশ্ন-দ্বিধা নিয়ে কারও সঙ্গে যদি কথা বলতে ইচ্ছে করে, তাহলে?
বইয়ের সঙ্গে কথা বলি। পড়ে দেখে নিই,– বিষয়টি ঠিক আছে, নাকি নেই! সবই তো লেখা আছে। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার তৈরি করতে পারেনি, তবু লড়াই-সংগ্রাম জারি থেকেছে- এ সবই লেখাজোকা আছে। সেইসব পড়ে নিই। মিলিয়ে নিই।
[ সচরাচর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়, উলটোদিকের মানুষটি প্রশ্নকর্তাকে ব্যক্তিগত ভাবে সম্বোধন করেন। যেমন, দেখুন বা দেখো কিংবা শোনো ইত্যাদি। খেয়াল করলাম, বিমান বসু সেভাবে কথা বলছেন না। তিনি উত্তর দিচ্ছেন আমাকেই, তবে যেন তাঁর সামনে বসে আছেন রোববার ডট ইন-এর সকল পাঠক। অথবা এই রাজ্যের সমস্ত মানুষ। নাকি মহাকাল! মনে হল, মৃদু অথচ দৃঢ় স্বরে যেন তিনি সময়ের সঙ্গেই কথা বলছেন। আর তাই সময়ের ভিতরকার একজন হয়েই কথোপকথন এগিয়ে নিয়ে যাই, প্রশ্ন করি সময়ের।]
ঠিক। বই খুব ভালো বন্ধু, রাজনৈতিক বন্ধু নিশ্চিতই। তবে, আপনাদের সময়টা তো প্রায় মুছে গিয়েছে। যে প্রেক্ষিত থেকে আপনারা বামপন্থায় বিশ্বাস রেখেছিলেন, আজ আর তা নেই। নয়া উদারবাদী অর্থনীতি সবকিছুর ভোল পালটে দিয়েছে। এখন কি বামপন্থায় বিশ্বাস রাখা আরও বেশি কঠিন? নাকি এটাই উপযুক্ত সময়?
বামপন্থায় বিশ্বাস পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয়বস্তু বা পরিবেশের পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে না। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতির বৈপরীত্যে খানিক অসুবিধা হয় বইকি; বামপন্থা অনুযায়ী কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে। সেই অসুবিধা যে একেবারে নেই, তা নয়।
তবে, দেশটা যে পঁচাত্তর-ছিয়াত্তর বছর আগে স্বাধীন হয়েছে, তাতে সাদা চামড়ার শাসকের বদল শুধু হয়েছে। অসাম্যের নীতিগুলো এখনও একই রকম বহাল। যেমন, ’৪৩-এর মন্বন্তর নিয়ে যাঁরা চর্চা করেছেন, ড. অমর্ত্য সেন-ও, সকলেই বলেছেন, যে, সেটা ছিল ম্যান-মেড-ফেমিন। হল কেন এমনটা? যারা মজুতদার, যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের মুনাফা বাড়াবার জন্যই তো হল। খাদ্যবস্তু সরবরাহে কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু মজুত করে রেখে কৃত্রিম অভাব তৈরি করা হয়েছিল। কত মানুষ যে তাতে মারা গেলেন, কেউ সে-সংখ্যা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। শিল্পী সোমনাথ হোর বলেছিলেন, মন্বন্তরে মৃত্যুর সংখ্যা যা বলা হয়, তা তিনি বিশ্বাস করেন না। তো, ফর্মটা আলাদা হলেও, সেই একই জিনিস কিন্তু এখনও আমাদের এখানে চলছে। একদিকে বৈভব আছে। আর-একদিকে মানুষের খাদ্যের সংকট। অসাম্য বেড়েছে, কমেনি তো। এই অসাম্যের সমাজব্যবস্থা যতদিন থাকবে, ততদিন বামপন্থা থাকবে, থাকবে সব রকম প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই।
শুধু, এই বৈভব দেখে মাথা যেন খারাপ হয়ে না যায়! যেন মনে না হয়, এখন আর কী করব! করা যায়। এখনও করা যায়।
আপনার কথাবার্তা-যাপন, পোশাকে তো বটেই, চিরকালের একজন সম্ভ্রান্ত বাঙালিকে খুঁজে পাই। এই বাঙালিয়ানা কি ক্রমশ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়?
আমার কিন্তু তা মনে হয় না। পোশাক পালটে ফেললে বাঙালিয়ানা চলে যাবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে, আমি আবার আমার পোশাকের ধরন পরিবর্তন করতেও পারব না। অনেক বছর আগের একটা কথা। এম. বাসভপুন্নাইয়া একদিন আমাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি এখনও ধুতি-পাঞ্জাবি পরছ। আর কতদিন পরবে?’ আমি বললাম, ‘যদ্দিন বেঁচে থাকব।’ উনি তখন সবে প্যান্ট পরা শুরু করেছেন। আমার উত্তর শুনে বললেন, ‘কেন?’ আমি বললাম, ‘খামখা আমি পোশাক বদলাতে যাব কেন! বাঙালি হিসাবে আমার পরিচিতি তো এতে দিব্যি বোঝা যাচ্ছে।’
তবে, বিদেশে, বিশেষত আমেরিকায় অনেকে আমাকে আফ্রিকান ভাবত, বোধহয় এই পোশাকের জন্যই। কিউবার অভিজ্ঞতা আবার একেবারে আলাদা। একটি বাচ্চা বাবার সঙ্গে যাচ্ছিল, দূর থেকে আমাকে দেখেই ‘ইন্ডি ইন্ডি’ বলতে শুরু করল। অর্থাৎ ইন্ডিয়ান। আমি বাচ্চাটির কাছে গিয়ে তাকে কোলে নিলাম। সে তার বাবার থেকে ওদের একটা কয়েন– পেশো নিয়ে আমায় দিল। আমিও ভারতীয় একটা মুদ্রা তাকে দিলাম। আমি ঠিক করেছিলাম যে, কেউ আমাকে কয়েন দিলে, তাকে ভারতীয় মুদ্রা দেব। পকেটে রেখে দিয়েছিলাম। ভারি সুন্দর এই আদানপ্রদান। স্মারক হিসাবে থেকে যায়। বাচ্চাটি সেদিন কিন্তু আমাকে ভারতীয় হিসাবেই চিনতে পেরেছিল। আমার খুব ভালো লেগেছিল।
হাভানার রাস্তাতেও এক দম্পতি আমাকে দেখে ভারতীয়-ই ভেবেছিল। তাঁদের সঙ্গেও মুদ্রা আদানপ্রদান করেছিলাম।
[ কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, একটা পুরনো সময়ে ফিরে গেছি। যে সময়ে বাঙালি নিজস্বতা বজায় রেখেই আন্তর্জাতিক। সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগসুত্র গড়ে তুলতে আগ্রহী। আবার একই সঙ্গে সময়ের বারান্দায় তুলে রাখছেন নিজেদের চিহ্ন। এ সেই সময়, যখন মার্কস দূরের তারা নন, বরং আপনজন। বিখ্যাত সিনেমার কথা মনে পড়ে, যেখানে বাঙালির ঘরোয়া খেলাতেও এসে পড়েন মার্কস। অতএব জানতে ইচ্ছে করে-]
আচ্ছা, বাঙালির সঙ্গে মার্কসের তো নিবিড় সম্পর্ক। তা, আপনার সময়ে যেমন ছিল, আজ কি সেই সম্পর্ক-সমীকরণ অনেকখানি বদলে গেছে?
বদলায়নি। আগে হয়তো এরকম বাঙালি সংখ্যায় অনেকে ছিলেন, আজ কম। সত্যজিৎ রায় যে মার্কসের স্কেচ করেছিলেন, কেউ কি তাঁকে করতে বলেছিল? অনেক বরেণ্য মানুষের স্কেচই তিনি করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গেই এসে গেলেন মার্কস। ওঁর বাড়িতে কম বয়সে একবার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। সত্যজিৎ রায়ের কাকু সুবিমল রায় আমার মাস্টারমশাই ছিলেন, তিনিই নিয়ে গিয়েছিলেন। তখনও ‘পথের পাঁচালী’ হয়নি, সত্যজিৎ বিখ্যাত হননি। চুটিয়ে প্রচ্ছদ করছেন তখন। সুবিমলবাবু আমাকে আলাপ করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘মানিক, এই আমার প্রিয় ছাত্র।’ উনি আমার নাম-ধাম জানতে চাইলেন। আমার বাড়ির ঠিকানা– ২৩/১৬ গড়িয়াহাট রোড শুনে বললেন, ‘ও তাহলে তো তুমিই পাশেই থাকো।’ আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। সুবিমলবাবুর স্কেচ-ও করেছিলেন, সেটাও সেদিন দেখলাম। সুবিমলবাবুই দেখালেন। সত্যজিৎ যা দেখতেন, তাই-ই আঁকতেন। ভারি চমৎকার গুণ ছিল ওঁর।
তো সত্যজিৎ মার্কসকেও এঁকেছিলেন। সুতরাং, মানুষ কমিউনিস্ট না-হলে যে ভালো জিনিস পছন্দ করবে না, তা তো হয় না। কমিউনিস্ট নন এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা মানুষকে মানুষ হিসাবেই দেখেন। কমিউনিস্ট তো ছিলেন রোজেনবার্গ দম্পতি, যাঁদের ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে খুন করা হয়েছিল। তাঁরা যখন কমিউনিস্ট ছিলেন না, তখনও গোড়ার দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকমই ছিল। এরকম অনেকেই আছেন। পিকাসো-ও পরে কমিউনিস্ট হয়েছিলেন, শিল্পীজীবনের শুরুতে ছিলেন না। কিন্তু যখন কমিউনিস্ট ছিলেন না, তখনও মানুষের দুঃখ-দারিদ্র ফুটিয়ে তুলতেই চেয়েছিলেন। সেটাই তাঁর শিল্পের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। ‘গ্যের্নিকা’ তো বিশ্বের বিস্ময়, ফ্যাসিস্ট যুদ্ধ নিয়ে সে-ছবি।
অর্থাৎ এটা বলা যায়, মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকলেই হল! কমিউনিস্ট কেউ হোক বা না-হোক! যদি কেউ মানবিক হয়, তার ভিতরকার গুণগুলো বিকাশ পেতে পারে আবহাওয়া, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশের প্রভাবে। এভাবেই হয়।
আপনাকে তাহলে বামপন্থী আন্দোলনে যোগ দিতে উৎসাহিত বা সেই বয়সের হিসাবে বলতে গেলে খেপিয়ে তোলার কাজটা করেছিলেন কে?
একটা কথা গোড়াতেই বলে নেওয়া ভালো যে, আমি ছাত্র আন্দোলন করে কমিউনিস্ট পার্টিতে আসিনি। বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে এটা, তবে তথ্যগত ভাবে একান্তই ভুল। আমি যখন কমিউনিস্ট পার্টিতে আসি, সেই পঞ্চাশের দশকে, মানুষের দুঃখ-দারিদ্র দেখেছি। আমাদের বাড়িতে গাড়িবারান্দা ছিল। তার নিচে একজন মহিলাকে থাকতে দেখতাম। কোলে সদ্যোজাত তামাটে-রং বাচ্চা। এই এতটুকু! সঙ্গে আরও দুটো বাচ্চা আছে। আমি দেখতাম আর ভাবতাম, এঁরাও তো মানুষ! এঁদের এভাবে থাকতে হচ্ছে! এই ঘটনা আমাকে খুব ভাবিয়ে তোলে। সেবার খুব শীত পড়েছে। আমি মাকে বললাম, তুমি ওঁকে একখানা কম্বল দাও। মা তো অবাক! বললাম, নইলে আমি আমারটা দিয়ে দেব। সেই শুনে মা তাঁকে একখানা কম্বল দিলেন। সেই সময় ঘটনাচক্রে আমাদের বাড়িতেও বাচ্চা ছিল, দিদি এসেছিল বাচ্চা নিয়ে। সে কাঁদলেই তাকে ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়ানো হয়। আমি মাকে বললাম, ওই বাচ্চাটাকে কেন তাহলে একটা ফিডিং বোতল কিনে দেওয়া হচ্ছে না? মা বললেন, তোর মাথায় কী ঢুকেছে! আমি বললাম, ঢুকবে আবার কী! যা দেখেছি, তাই বলছি। তখন পার্টির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই। পরের দিন দেখলাম, বোতল কিনে আনা হল। এবার আমি বললাম, ওকে যেন দুধ দেওয়া হয়। যে-ক’দিন থাকবে, সেই ক-দিনই। মা-কে সেবার রাজি করাতে পেরেছিলাম এই ব্যাপারে। দুধের বোতলটা মহিলার কাছেই থাকত। খালি হয়ে গেলে নিয়ে আসত, মা ভরে দিত। তার পর আমাকে আর কিছু বলতেই হয়নি। মা নিজেই মহিলাকে খাবার দিতে শুরু করলেন।
এই দারিদ্র-কষ্ট আমি চোখের সামনেই দেখেছি। এক সময় মানুষ ফ্যান-ও চেয়েছে। আর একটু আগের কথা, তা দেখার অভিজ্ঞতা নেই আমার। ’৪৩-তে তো আমি মায়ের কোলে। তবে, খাদ্য সংকট– ’৫৬-’৫৭-’৫৮-এর সেই দিন, তীব্র অভাব– সবই আমি দেখেছি।
দারিদ্রের সেই চেহারা দেখাই আপনাকে পার্টির দিকে টেনে আনল?
১৯৫৮-তে পার্টিতে চলে এলাম। ছাত্ররা কেউ আমায় চিনত না, তাঁদের চেনার কথাও নয়। কেননা আমি ছাত্র করে আসিইনি। পাড়ায় পার্টি করতাম। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে গিয়েছিল। তিনটে টুকরো হয়েছিল। এদিক ওদিক ঘুরে শেষে বালিগঞ্জে চলে আসি, সেই বাড়িটায় থাকতাম, যেখানে চাইনিজ প্যাভিলিয়ন ছিল। তো সেখানে একদিন মিছিল করেছি। বাড়িতে জেনে ফেলে খুব মারল। ‘কেন কমিউনিস্ট পার্টির মিছিলে গিয়েছিলি?’ আমি বললাম, ‘তাতে কি অপরাধ করেছি নাকি?’ এই উত্তর যে-ই না দেওয়া অমনি চড়!
ঠিক করে নিলাম যে, এই পাড়ায় আর মিছিল করব না। পার্টির সদস্য তখনই হইনি, তবে কাজ করব বলে অন্য অন্য জায়গায় চলে যেতাম। বালিগঞ্জে আর নয়। পার্টির বয়স্ক নেতারা তখন থেকেই আমাকে বেশ পছন্দ করতেন। একটা কাজ দিলেন তাঁরা। শিবতলার বস্তিতে অনেক গরিব শ্রমিক থাকতেন, অবাঙালিও। তখন ভোটার লিস্ট হত ইংরেজিতে। বাংলা তো অনেক পরে হল। তো সেটা স্ক্রুটনি করতে হবে। কারা আছেন, কারা মারা গেছেন, কারা চলে গেছেন ইত্যাদি। সব দেখে-শুনে লিখে নোট জমা দিলাম পার্টিতে। শুনেছিলাম, যে, পার্টি নেতৃত্ব বলেছিল বিমানের নোট খুব ভালো হয়েছে। তখন স্কুলে পড়ি। প্রস্তাব এল যে, আমাকে মেম্বরশিপ দেওয়া উচিত। তখন আমার বয়স ১৭ বছর ১ মাস। আটকে দিল। বলল, পরের বছর হবে। যাই হোক, তার পর থেকে পার্টির যা কাজ করেছি বালিগঞ্জ এলাকায় আর করিনি, চলে এলাম পার্ক সার্কাসের দিকে। পার্টির সেক্রেটারি তখন জলি মোহন কল। জলিদা আমায় খুব পছন্দ করতেন। বাড়ির চোখে চোখে থাকার দিন ফুরোল। আমিও মুক্তি পেয়ে গেলাম।
তার মানে, সময়ই আপনাকে বামপন্থায় টেনে আনল?
হ্যাঁ, কাউকে দেখে আমি পার্টিতে আসিনি। বলতে পারি, পরিস্থিতিই আমাকে এই চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। আর একটা ঘটনাও ছিল। একদিন দেখলাম, আট-ন’জন দৌড়চ্ছে, হাতে লাল ঝান্ডা, পিছনে পুলিশ। আমি তখন বাচ্চা ছেলে, শুনলাম, ওরা মুখে বলছে, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, ভুলো মত্’। বাড়িতে ফিরে জানতে চাইলাম, বাংলায় কথাটার মানে কী? আবার চড়! বুঝে নাকি না-বুঝে মেরেছিল জানি না। কাগজে তখন কমিউনিস্ট পার্টির কথা লেখা হচ্ছে। বাড়িতে কাগজ পড়া হত খুব। অনেকগুলো কাগজ থাকত বাড়িতে। আমাকে আগে পড়তে দিত না কিছুতেই। বাচ্চা ছেলে তো! বাড়ির কুকুরটাকে তখন ট্রেনিং দিয়েছিলাম। কাগজ ছুড়ে গাড়িবারান্দায় দিলে যাতে প্রথমে আমার কাছেই দিয়ে যায়। তো, কাগজে সেই সময় তা নিয়ে লেখা হচ্ছিল। বাড়ির লোক সম্ভবত তা জানত। এইসব পরিস্থিতিই অন্যরকম চিন্তা করতে বাধ্য করেছিল।
[ বাড়ি থেকে দেখা দারিদ্রর দৃশ্য যাঁকে বামপন্থায় টেনে আনল, তিনি আর বাড়িই ফিরলেন না। সারাজীবন পার্টির জন্য কাটিয়ে দিলেন। সহজ নয়, সে তো জানি। তবে, কেউ যদি সে পথে এগোতে চায়, তাহলে পথ খুঁজে পাবে কী করে! বিশেষত যখন সময়টা বদলে গেছে আমূল, তখন এই পথের হদিশ পাওয়া কি আদৌ সম্ভব! তাই জানতে চাইলাম- ]
পার্টির হোলটাইমার হতে গেলে জীবনে কী কী সমঝোতা করতে হয়? আপনার কথাই বলি, আপনি কি হোলটাইমার হয়ে গর্বিত, নাকি কোনও ক্ষোভ রয়ে গেছে?
সত্তর সালে পার্টি হোলটাইমার হলাম। খুবই গর্ববোধ ছিল তা নিয়ে। পার্টির হোলটাইমার হতে হলে, সারা দিন পার্টির কাজ করবে এইটা কথা নয়, কিন্তু পার্টি-অন্তঃপ্রাণ হতে হবে। অর্থাৎ পার্টির যে মতাদর্শ, তার প্রতি বিশ্বাস, এবং তার জন্য একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করতে। পার্টির কর্মসূচি, সিদ্ধান্তকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য পরিশ্রম করতে হবে। এবং পড়াশোনা করতে হবে। হোলটাইমার মানে সকাল থেকে রাত অব্দি শুধু পার্টি-ই করবে, এরকম নয়। অন্য কিছু করতেও পারে। পার্টি হোলটাইমার হল, প্রফেশনাল রেভলিউশনারি। তার অন্য কোনও পেশা থাকবে না। তা যে একশো ভাগ সব ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযোজ্য হয়, তা বোধহয় নয়। ব্যতিক্রমও ঘটে, তবে তা কাম্য নয়। কাম্য হল, পার্টির জন্যই সে কাজ করবে। একজন হোলটাইমারের ন্যূনতম ভরণপোষণের দায়িত্বটা নিতে হবে।
আমি যখন হোলটাইমার হলাম, তখন ১২৫ টাকা দেওয়া হত। একাত্তরে বাড়িঘর ছাড়লাম। ওই টাকায় চলত না। চলত না তো চলত না! আমি কখনও টাকা বাড়াবার কথা বলিনি। বরং মায়ের থেকে টাকা নিয়েছি। খেয়েদেয়ে সে-টাকা খরচ করিনি। কনভেন্সের জন্য খরচ করেছি। অনেক টাকাই নিয়েছি মায়ের থেকে।
নতুন প্রজন্মকে তো আপনি শেখান, অনেক বছর ধরেই। মানসিকতায় কি কোনও পার্থক্য নজরে পড়ে?
পার্থক্য অবশ্যই আছে। উদারীকরণের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাজের মধ্যে যে সব ব্যতিক্রমী বিষয়গুলো জায়গা করে নিয়েছে, তার প্রভাব সামান্য হলেও পড়ছে। তার পর এখন এই যে ফেসবুক শুরু হয়েছে, সেখানে কমিউনিস্টদের যে সব বিষয়ে পোস্ট করতে হবে, এমনটা হওয়া উচিত নয়। পার্টির নিয়মনীতি যখন গড়ে উঠেছিল, তখন মুঠোফোন ছিল না। তাই হয়তো নিয়ম বা বিধান করতে পারেননি। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষিতে এই বিধান হয়তো করতে হবে। বুঝতে হবে, যে, এনিথং অ্যান্ড এভরিথিং ক্যানট বি শেয়ারড। সবকিছু সব ক্ষেত্রে পোস্ট করে দেওয়া ঠিক নয়। আমি শুনি এই বিষয়টি। এটা ঠিক নয়। বন্ধ হওয়া উচিত। এতে ভুল বোঝাবুঝি বরং বাড়ে। সমস্যা হয়।
বামপন্থী হওয়ার প্রাথমিক বা প্রধান শিক্ষা তাহলে কোনটি?
মানুষকে ভালোবাসতে হবে, অকৃত্রিম ভালোবাসা। মানুষ যদি ভালো না থাকে, তাহলে সমাজটা ভালো হবে কী করে! ব্যক্তিকে ঘিরেই তো সমাজ। এখন এই সমাজকে ঘিরে আবিলতা চোখে পড়ে। এই তো ক’-দিন আগেই সংবাদপত্রে দেখলাম, সন্তান মা-কে খুন করেছে। কেননা মা সন্তানের মেলামেশার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিলেন। অতীতে তো এমন ঘটনা অকল্পনীয় ছিল। অথচ অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই, কমবয়সি ছেলে ও মেয়ের মেলামেশা অভিভাবকরা পছন্দ করতেন না। তার জন্য এরকম ঘটনা ঘটত না। যারা বাধা দিতে পারে– মা-বাবা, দাদা দিদি বা অন্য কেউ– তাদের বড়জোর এড়িয়ে চলত। দূরে গিয়ে দেখা করত। এখন খুন করে ফেলছে। এটা সুস্থ সমাজের লক্ষ্মণ নয়। সমাজের ভিতর এখন অসুখ ঢুকে পড়েছে। অসুস্থ সমাজকে সুস্থ করার জন্য বোধহয় অভিযান করতে হবে।
এই যে সমাজের অসুখের কথা বললেন, সেদিকে যদি ফিরে তাকাই তো দেখব, বাঙালির আন্তর্জাতিকতা ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম নিয়ে বাঙালির অতীত আগ্রহ আমরা জানি। সেই বাঙালি ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন বা শ্রীলঙ্কা নিয়ে আশ্চর্য নীরব। এই বদল কেন এল?
এর নির্দিষ্ট বাস্তব ভিত্তি আছে। ছাত্র-যুব আন্দোলনের জন্মই হয়েছে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্তস্তল থেকে। এবং তার নানারকম ধারা আছে আমাদের দেশে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গেই ছাত্র-যুব আন্দোলন সম্পৃক্ত ছিল। সেখানেও মূল বারুদ কিন্তু ছিল ওই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা। পরবর্তী সময়ে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ যখন অস্তমিত, তখন আবার প্রখর হয়ে উঠল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। ভিয়েতনামের কথা যে উঠল, সেখানে আমেরিকানরা তো ছিল না, ছিল ফরাসিরা। তারা উত্তর ভিয়েতনাম থেকে সরল, হো চি মিনের সরকার হল। ১৯৫৪ সালে ২০ জুলাই জেনেভা এগ্রিমেন্ট হল, ফলে উঃ ভিয়েতনাম মুক্ত হল। সনদ তৈরি হল, যেখানে দঃ ভিয়েতনামে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। অর্থাৎ উত্তর মুক্ত, আর দঃ ভিয়েতনাম ফরাসিদের হাতে রইল। তিন বছরের মধ্যে যখন নির্বাচন করে নতুন সরকার গঠন করা হল না, তখন বিপত্তির সূত্রপাত। ততদিনে আসরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ফরাসিরা যেমন যেমন যেতে শুরু করল, মার্কিন সেনা ঢুকতে শুরু করল। তখন সীমান্ত বরাবর তারা কর্তৃত্ব নিয়ে নিল। লড়াইটা ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তখন নয়। মার্কিনরা যখন করায়ত্ত করল দঃ ভিয়েতনামকে, তখন তার বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামের আহ্বান জানাল ভিয়েতনাম। সে লড়াইটা হয়ে উঠল বিশ্বব্যাপী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। এমনকী, বার্কলে ইউনিভার্সিটিতে দেখে এসেছি, যে, ভিয়েতনামে মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকদের স্মরণে ফলক আছে। ওখান থেকেই সূত্রপাতটা হয়। তারপর আমেরিকার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই বিক্ষোভ হয়েছে। গোটা বিশ্বে তা ছড়াতে শুরু করে। আমাদের এখানে তার ঢেউ এসে লেগেছে, ঢাকায় হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মার্কিনদের হার মানতে হয়েছিল।
এইসব যখন পড়তাম, সকলেই উত্তেজিত হয়ে পড়তাম। আমাদের এখানে মিছিল হত। এদিকে আমার তো ধুতি-পাঞ্জাবি। বৃষ্টিতে মিছিল হচ্ছে, পোশাক ভিজে একশা। শুকনো-ইস্ত্রি হওয়ার আগেই শুনি আবার বোমা পড়েছে। আবার মিছিল। পরপর মিছিল চলছে। গোটা তৃতীয় বিশ্ব, আর প্রথম বিশ্বের মধ্যে আমেরিকার ছাত্রসমাজ দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
এখন, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব স্তিমিত হয়ে গিয়েছে বলা যায়। তবে, যারা এখন আর ইম্পিরিয়ালিস্ট নয়, সেখানেও শোষণ চলছে। আমাদের এখানেও নেই, কিন্তু কর্পোরেট লবি আছে। তারাই তো পলিসিমেকার, মোদি সরকার নয়।
পার্টি আর প্রশাসন আলাদা করে রাখা বিধেয়, আমরা জানি। সেই লক্ষণরেখা কী? আবার জ্যোতি বসুর মতো জনপ্রিয় নেতা, তাঁকেও যে পার্টির পরিধির মধ্যেই চলতে হত, সেই মেকানিজম-ই বা কী ছিল?
পার্টি আর সরকারের ফারাক তৈরি করা তখনই সম্ভব, যদি সেইমতো মন থাকে। দ্বিতীয়ত, পার্টির দিশা থাকতে হবে। আর তৃতীয়ত, পার্টির সংগঠনে যাঁরা আছেন, তাঁদের এই বিষয়ে অবিচল থাকতে হবে। এই তিনটেই প্রধান ব্যাপার। এখানে যখন বামফ্রন্ট সরকার ছিল, তখন, কোনোদিন কোনও বিষয়ে আলোচনার জন্য রাইটার্স বিল্ডিং-এ বামফ্রন্ট নেতৃত্বকে যেতে হয়নি। পার্টির নেতৃত্বের যা বলার, তা প্রশাসনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হত। অনেক সময় প্রশাসনের নেতৃত্বে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা আলোচনায় উপস্থিত থাকতেন, তাঁদের মত প্রকাশ করতেন। কোনও একটা বিশেষ বিভাগ নিয়ে হয়তো আলোচনা হবে, সেই বিভাগীয় মন্ত্রী থাকতেন। এবং আলোচনার পরই কী করণীয় তা ঠিক হত। কিন্তু তার জন্য সরকারি ভবনে যেতে হত না। কাজেই লক্ষণরেখা রক্ষা করার ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয়টিই হল, দৃষ্টিভঙ্গি। সরকার হচ্ছে বাংলার জনগণের, তার দায়-দায়িত্ব অন্যরকম। পার্টিও জনগণের, তবে যে অর্থে সেটা বোঝায়, সেই অর্থে একটু ফারাক থেকে যায়।
জ্যোতি বসুর কথা উঠল, তিনি নিয়মনিষ্ঠ একজন কমিউনিস্ট ছিলেন। যখন জ্যোতি বসুর খ্যাতি আকাশছোঁয়া, তখনও পার্টির সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতেন। বরাবর তাই-ই করতেন। তিনি তো পার্টির সম্পাদক ছিলেন, ফলত জানেন যে, কীভাবে পার্টিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৫৪ থেকে ’৬০ সাল পর্যন্ত তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফলত তিনি জানতেন, কীভাবে কাজ করতে হয়। পার্টি ডিসিপ্লিন তিনি সর্বদা মান্য করে চলেছেন। আমৃত্যু তা থেকে চ্যুত হননি। ফলত, ওই পার্টি আর প্রশাসন আলাদা করে রাখার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গিটা বা মনোভাবটাই আসল।
[ সাক্ষাৎকার প্রথাগত ভাবে একটি বিন্দুতে এসে শেষ হয়। এবারও হল। এবার তিনি খোঁজ নিতে শুরু করলেন, রোববার-এর পক্ষ থেকে যাঁরা এসেছেন তাঁরা কে কোথায় থাকেন। প্রত্যেকের কাছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানলেন। না-জানলেও হত। তবু…! মানুষকে অকৃত্রিম ভালোবাসা। বামপন্থী হওয়ার প্রথম ও প্রধান শিক্ষা। আপনি আচরি ধর্ম তিনি মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন। নিচে নেমে দেখি, আলো তখনও আছে, অল্প হয়তো, তবু একেবারে নেবেনি।]
যে উন্মত্ত জনতার ঢেউ রবীন্দ্রনাথকে প্রয়াণের পর ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সেই ঢেউ হয়ে ওঠা জনতার অন্তর্গত মানুষগুলি কি জানতেন, তাঁদের এই মানুষটির প্রতি বিশ্বের মানুষের গভীর শ্রদ্ধার কথা! কয়েক মাস পড়ে, এই সংখ্যাটি কি হাতে নিয়ে দেখেছিলেন ভিড়ের মানুষেরা?