বহুদিন পরে বাংলা ছবিতে কামব্যাক করলেন রাখি গুলজার। জানালেন, এখনও বাংলা ভাষা বিন্দুমাত্র ভোলেননি। তা তো তাঁর মাতৃভাষাই। ‘আমার বস্’ ছবিতে অভিনয় করেছেন মায়ের ভূমিকায়। সেই মা গতানুগতিক মায়েদের বন্দি থাকার দিনলিপি নয়, বরং এই মা ব্যতিক্রমী, বিদ্রোহী। আজ বিশ্ব মা দিবসে রইল রাখি গুলজার-এর একান্ত সাক্ষাৎকার। কথালাপে রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেমন লাগল এতদিন পরে বাংলা ছবিতে ফিরে আসতে?
চলে তো যাইনি। বাংলা আমার মাতৃভাষা। মাতৃভাষা কেউ ভুলতে পারে? তবে একথা ঠিক– অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চারধারের পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা প্রত্যেকেই চলেছি ডাইনোসরের মতো লুপ্তির পথে। তবু এইসব পরিবর্তনের মধ্যে বাংলা ভাষার টান তো আছেই।
সেই কবে দেখেছিলাম আপনার ‘পরমা’। রিনার ছবি। সেই থেকে আপনি আমার পরমা। কত বছর পরে আমার স্বপ্নপূরণ হল। পরমার সঙ্গে দেখা হল।
(রাখি এই প্রশ্নে কোনও কথা বলেননি। শুধু তাকালেন আমার দিকে। যেন অনেক আলোকবর্ষ দূরের আলো রাখির চোখে। ওটাই তাঁর কথা।)
আপনি নন্দিতা-শিবপ্রসাদের নতুন ছবি ‘আমার বস্’ -এ মায়ের চরিত্রে। কী কারণে রাজি হলেন?
রাজি হয়েছি একটিই কারণে। এই মায়ের গল্প কোনও ‘রূপকথা’ নয়। সত্যি কথা। আর আমি অভিনয় করিনি। একেবারে স্বাভাবিকভাবে আমি ওই চরিত্রটা হয়ে উঠেছি। আমরা সবাই স্বাভাবিক অভিনয় করেছি। মানে, ব্যাপারটা ‘অভিনয়’ বলে মনেই হবে না।
এটা কি মা আর ছেলের গল্প? শিবপ্রসাদ আপনার ছেলের ভূমিকায়…
এই মা হল বাড়ির মধ্যে এক বন্দি মা। মা কাজ করত। সেই মাকে রিটায়ার করিয়ে দেওয়া হল। মা-কি কখনও রিটায়ার করে? মা-র স্থানটা শুধু সংসারে বদলে যায়। আজকে যে মা, কাল সে ঠাকুমা বা দিদিমা।
এই মা কী অর্থে ‘বন্দি’?
এমন একটা অবস্থায় এই মানুষটি থাকতে বাধ্য হচ্ছে যে মনে হচ্ছে তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। সে আর সহ্য করতে পারছে না। সে অসুস্থ। এবং গৃহবন্দি। এবং তার স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার পথ যেন বন্ধ হয়ে আসছে। পৃথিবী জুড়ে হয়তো এমন মা, বা এমন মানুষ অনেক আছেন। এই যে মা, সে একদিন এই দমবন্ধ করা অবস্থার মধ্যে এই মানুষটি একদিন বিদ্রোহ করে।
কীভাবে?
সে বলে, রোজ রোজ আমি পচা মাছ খাব না। মা, যে এ কথাটা বলে, খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে। কিন্তু একদিন তাকে এই সত্যি কথাটা বলতেই হয়।
এটা কি ছবির টার্নিং পয়েন্ট?
খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা মুহূর্ত। এখান থেকে সব কিছু বদলাতে থাকে। তার মনের মধ্যে একটা ক্ষোভ তো বাড়ছিলই নানাভাবে। তারপর সেই ক্ষোভটা বেরিয়ে এল।
এই যে মা এই কথাটা বললেন, তার বিদ্রোহ, রাগ, এসব কি এখানেই শেষ? তারপর আবার সেই বন্দিদশায় প্রত্যাবর্তন?
একেবারেই নয়। এই মা একদিন একটা অসীম সাহসের কাজ করে ফেলল। সে একদিন ছেলের অফিসে গিয়ে একেবারে বসের চেয়ারে বসে পড়ল।
তাই! সে তো ভয়ংকর ব্যাপার? তারপর?
মা শুধু যে বসের আসনে বসল, তা তো নয়। সে বসের আসনে বসে রীতিমতো তার শাসন জারি করল। ছেলেকে পর্যন্ত বলে দিল, এটা বাড়ি নয়। অফিস। তুমি কিন্তু এখানে আমার কর্মচারী। অতএব আমার ঘরে যখন তখন ঢুকে পড়তে পারো না। আমার অনুমতি নিয়ে তোমাকে আমার ঘরে আসতে হবে, যেমন আসে অন্যান্য কর্মচারী।
আমি শুনেছি, এই মায়ের একটা পাস্ট আছে। তাই কী?
(কিঞ্চিৎ বিরক্ত) না, ভুল শুনেছেন। কোনও অতীত নেই এই মায়ের। মানে, লুকোনোর মতো কোনও পাস্ট। তবে একটা প্যাঁচ আছে।
প্যাঁচ? এর পরেও?
(সামান্য হেসে) প্যাঁচ মানে, এই যে ছেলের ব্যবসা। তাতে কিন্তু মায়ের টাকাও আছে। মা সেকথা ছেলেকে বলে। সে বলে, তোমার ব্যবসার টাকাতে তোমার বাবার টাকাও আছে। তার টাকা না থাকলে এই ব্যবসা হতই না। সেই টাকা তো আমার টাকা। সুতরাং তোমার ব্যবসায় আমার শেয়ারের কথা তো ভুললে চলবে না। আমার শেয়ারের জোরে আমি বসতেই পারি বসের চেয়ারে।
গল্পটা তো সাংঘাতিক ইন্টারেস্টিং জায়গায় পৌঁছচ্ছে?
এখান থেকেই মাদার-সান কনফ্লিক্ট্। যার শেষটা না-ই বললাম।
…………………………………..
ফলো করুন আমাদের ওয়েবসাইট: রোববার ডিজিটাল
…………………………………..
চিরকালের যৌবনের রহস্যময়তার প্রতীক হয়ে থাকতে চেয়ে নায়িকা যদি তাঁর রূপযৌবন সম্মান প্রতিপত্তি থাকতে থাকতেই সব মোহ ত্যাগ করে স্বেচ্ছায় অসামাজিক, অন্তরালবর্তিনী হয়ে যান, সেটা তো অসামান্য সংযমের, সুবিবেচনার এবং ইচ্ছাশক্তির কাজ।