কড়চা। চারপাশে কী হচ্ছে। কোথায় যাবেন, কী দেখবেন। সংস্কৃতির হাঁড়ির খবর, ভেতরবাড়ির খবর এখন এক ঠিকানায়: ক্ক!
তুলি ও তিলোত্তমা
শহরে শুরু হতে চলেছে ৭ দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী। থিম: শরৎকাল। ভারতীয় বিদ্যাভবন এবং ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘শেফালী’। এই অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে চিত্র প্রদর্শনী দিয়ে। উদ্বোধন করলেন স্বনামধন্য শিল্পী সনাতন দিন্দা। কথা ছিল থিম শরতের ওপর ছবি আঁকবেন। কিন্তু শরতের পরিবর্তে সবাইকে চমকে দিয়ে এক হলঘর ভর্তি দর্শকের সামনে তিনি তুলির টানে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুললেন ‘তিলোত্তমা’র যন্ত্রণা। ছবি আঁকা শেষে তিনি বলেন, ‘এমন এক ঘটনা ঘটেছে যা ক্যানভাসে এঁকে, কবিতা লিখে তার প্রতিবাদ করা যাবে না। আমাদের সবাইকে গর্জে উঠতে হবে। আমরা আজ কেউ কোনও সেফ জোনে নেই। তা সত্ত্বেও আমাদের নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা বাবা-মেয়েরা নিজেদের সন্তানদের আর রক্ষা করতে পারছি না। কিন্তু আমরা যেন আমাদের সন্তানদের এমন শিক্ষা দিতে পারি তারা যেন ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করার কথা কল্পনাও করতে না পারে। আজ শরৎকালের ওপর আঁকার কথা ছিল, এই শরৎকাল, দুর্গা মা এইভাবেই ক্যানভাসে ফুটে উঠুক’।
………………………………………………ক্ক.………………………………………………..
ভজনের সুরে ভাসবে কলকাতা। জন্মাষ্টমী তিথির প্রাক্কালে এই আয়োজন, তবে সুরের তো কোনও ধর্ম হয় না। বরং সমস্ত সংকীর্ণ গণ্ডি ভেসে যায় সুরের জোয়ারে। সেই জোয়ারেই ভাসতে চলেছে শহর। কলকাতায় প্রথমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে শুভা মুদগলের ‘ভজন সন্ধ্যা’। আয়োজনে ‘সংস্কৃতি সাগর’ এবং ‘ভারতীয় বিদ্যা ভবন’। একক শিল্পী হিসেবেই সারা সন্ধ্যা ভজন শোনাবেন শুভা মুদগল। শিল্পীর কথায়, ‘কৃষ্ণ ভজন ছাড়াও সগুণ-নির্গুণ পরম্পরার ভজন, সুফি শোনারও ইচ্ছে আছে। আমি বহু বছর ধরেই কলকাতায় অনুষ্ঠান করে আসছি। কলকাতা সংস্কৃতির পীঠস্থান। আমার মনে আছে, আমার গুরু শ্রীমতী নয়না দেবীজির সঙ্গে আমি প্রথম কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে আসি। সেই সময় মূলত আমি তানপুরায় সঙ্গত করেছিলাম। আর মাঝে মাঝে গুরুজির সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলাম। কলকাতা আমায় আপন করে নিয়েছিল। সেই উষ্ণতা আজও কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এলে আমি অনুভব করি।’ ‘ভজন সন্ধ্যা’-য় শুভা মুদগলের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করবেন পণ্ডিত অন্বেষ প্রধান, হারমোনিয়ামে থাকবেন পণ্ডিত সুধীর নায়েক এবং পারকাশনে থাকবেন সিদ্ধার্থ পদিয়ার। ২৪ আগস্ট, জি ডি বিড়লা সভাঘরে, সন্ধে সাড়ে ছ’টায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই ‘ভজন সন্ধ্যা’।
………………………………………………ক্ক.………………………………………………..
তৃতীয় নয়ন
ফোটোগ্রাফির ইতিহাস খুঁজতে গেলে পৌঁছে যেতে হয় ১৮৩০ সালে। যখন লুই ডাগে সর্বপ্রথম ফটোগ্রাফিক প্রসেস আবিষ্কার করেন, যার নাম ‘ডাগেরোটাইপ’। ১৮৩৯ সালে দ্য ফ্রেঞ্চ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে সেই আবিষ্কার সামনে আসার পর, ওই বছরেরই ১৯ আগস্ট দিনটিকে বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ফ্রান্স। সেখান থেকেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই দিনের উদযাপন। এবার সেই উদযাপনেই শামিল থার্ড আই। আর ছবির দিনের উদযাপন তো ছবির মাধ্যমেই হতে পারে। বিশ্ব ফোটোগ্রাফি দিবসকে মনে রেখেই আজ, ১৭ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত চলবে অতনু পাল ও থার্ড আই সদস্যদের প্রদর্শনী, প্রতিদিন বিকেল ৩টে থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত। প্রতিদিনই বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জমে উঠবে বৈকালিক আড্ডাও। আয়োজনে গণেশা আর্ট গ্যালারি। প্রবেশ অবাধ।
………………………………………………ক্ক.………………………………………………..
ভগ্নকাল
ব্রিটিশ আমলে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা একসঙ্গে জুড়ে ছিল বঙ্গদেশ। শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে সরিয়ে এই বিপুল অঞ্চলের রাজস্ব এবং সম্পদে থাবা বসিয়েছিল ইংরেজ শাসকেরা। কিন্তু ক্ষমতাকে উপভোগ করলেও, দায়িত্ব নেওয়ার মনোভাব ছিল না তাদের। ফলে অবাধ লুণ্ঠন আর অরাজকতায় বঙ্গ জুড়ে বারেবারে নেমে আসছিল দুর্ভিক্ষের ছায়া। ১৮৬৬ সালে উড়িষ্যায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পর শাসনের সুবিধার অজুহাত দেখিয়ে বাংলা ভাগের ভাবনা শুরু করে ইংরেজ সরকার। ১৮৭৪ সালে আলাদা হয় অসম, তার সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় বাংলাভাষীদের সিলেট এলাকা। এরপর ১৯০৩ সালে সমগ্র চট্টগ্রাম ডিভিশান, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলাকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা শুরু হয়। একে একে রংপুর, বোগরা, পাবনাকেও আসামের সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়। তালিকায় যুক্ত হয় রাজশাহি, দিনাজপুর, মালদহ, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারও। অবশেষে ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা করে সরকার। নতুন প্রদেশের নাম দেওয়া হয় ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম’। ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ প্রশাসনিকভাবে কার্যকর করা হয়। স্বাধীনতার ৭৮ বছর উদযাপনের আবহেও ফিরে ফিরে আসে বঙ্গভঙ্গের সেই স্মৃতি। যা মোটেও সুখের স্মৃতি নয়। ভিটে-মাটি ছেড়ে এক কাপড়ে অন্যত্র পাড়ি দেওয়া সহজ ছিল না। সম্পূর্ণ অজানা অচেনা জায়গায় নিজেদের মানিয়ে তো নয়-ই। সহ্য করতে হয়েছে কতশত অত্যাচার, লাঞ্ছনা, নিপীড়ন। তবু জাতির সেই ভাগ্য-বিপর্যয় স্মরণ করতে হয় আমাদের। কেননা সমসময়ের সংকটকে মোকাবিলা করতে হলে, এই ইতিহাসকে স্বীকার করে নিয়েই, সন্ধান করতে হবে নতুন কোনও পথের। বঙ্গভঙ্গ স্মরণেই এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আলিপুর মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। ১৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা থেকে আলিপুর মিউজিয়ামের অডটোরিয়ামে অনুষ্ঠান। আলোচনায় প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন ঐতিহাসিক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুগত বোস। দেশভাগের স্মৃতি ও সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই আলোচনা চলবে। আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে ‘দ্য লঙ হিস্ট্রি অফ পার্টিশান ইন বেঙ্গল’। যে কেউ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন।
………………………………………………ক্ক.………………………………………………..
দেবতাদের কথাবার্তা
‘কোমল গান্ধার’ ছবিতে যখন দেবব্রত গাইতে থাকেন ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ’, তখন ‘ভরা’ শব্দটির বিস্তার এমন মাত্রা পায়, যেন মনে হয় জীবনানন্দ দাশ হয়তো এমন শ্রবণের অভিজ্ঞতা থেকেই আবিষ্কার করেছিলেন ‘অনন্ত আকাশগ্রন্থি’ শব্দগুচ্ছ। অথবা আইন্সটাইনীয় মহাবিকর্ষে কল্পিত ‘ফাইনিটিয়েট আনবাউন্ডেড ইউনিভার্স’ সংক্রান্ত ধারণা বোধহয় এইরকমই– একথা লিখেছিলেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। রোববার.ইন-এর ঋত্বিক ঘটকের গানের ব্যবহার নিয়ে। ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে রবীন্দ্রনাথ ও দেবব্রত বিশ্বাসের সমন্বয় ঘটেছে। গানের ব্যবহারে তা শুধু অলংকার হয়ে থাকেনি, ছবির শিরায়-উপশিরায় প্রবাহিত হয়েছে রীতিমতো। রবীন্দ্রনাথকে ব্যবহার করতে গিয়ে, বারবার, ঋত্বিক ঘটক চেয়েছেন দেবব্রত বিশ্বাসকেই। বিশ্বাসে তাঁর এই স্থিতি, রবীন্দ্রনাথে তাঁর এই বিশ্বাস। তৎসঙ্গে এক ভয়াবহ ভাঙনকালকে নিজের শরীরে বহন করে চলেছিলেন ঋত্বিক। দেবব্রত বিশ্বাসের ১১৩তম জন্মদিন ২২ আগস্ট, সেই উপলক্ষেই ‘দেবতাদের কথাবার্তা’ শিরোনামে বক্তৃতা দেবেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ, দেবব্রত এবং ঋত্বিক ঘটক– এই তিনজনকে ঘিরে তাঁর বলা, তাঁদের সৃষ্টির পথ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবেন শ্রোতাদের।
সহায়তা: রণিতা চট্টোপাধ্যায়, শুভদীপ রায়, সম্বিত বসু