পার্ক স্ট্রিটে নিয়ে গিয়ে একটা বিদেশি খাবারের দোকানে মুরগির মাংস ভাজা দেখে বেশ রাগ করে বললেন, ‘মাছের ঝোল কই ? এসব খাবার আমি ভালোবাসি না।’ আমি তখন নিরুপায় হয়ে শিশুকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো করে বললাম, ‘ফাদার, এখন তো লাঞ্চ টাইম না। আমি তাই বুঝতে পারিনি। এখন খেয়ে নিন। পরে আরেক দিন বাঙালি খাবার খাওয়াব।’ তারপর অবশ্য ইটালিয়ান কফি খেয়ে বেশ খুশি হয়েছিলেন।
চলার পথে কোনও কোনও অভিজ্ঞতা পূর্ব-পরিকল্পনাবিহীন মধুর ষড়যন্ত্রের মতো। ফাদার দ্যতিয়েনের সঙ্গে আমার অকস্মাৎ আলাপ সেরকম একটা। শ্রীরামপুর কলেজে চাকরি করতে গিয়ে কেরি রিসার্চ লাইব্রেরিতে যে বইটা আমাকে প্রথম আকৃষ্ট করে, তা উইলিয়াম কেরির ‘ইতিহাসমালা’। ভূমিকা ফাদার দ্যতিয়েনের। কে এই ফাদার দ্যতিয়েন ? এক বহুল প্রচারিত পত্রিকায় যে বিদেশি লেখক আশ্চর্য বাংলা গদ্য লিখতেন, তিনিই? ভূমিকার গদ্যটি বারবার পড়েও বোঝা গেল না তা কোনও বিদেশির রচনা।
বইটির গুরুত্ব এবং ফাদারের আশ্চর্য গদ্যই শুধু নয়, ভূমিকাতে ছিল ইতিহাসের সেই বিশেষ সময় নিয়ে আশ্চর্য কিছু ইঙ্গিত। কে সংকলন করেছিলেন সেসব গল্প, কেন আগুন লেগে স্টক পুড়ে গেল এইসব বইয়ের– এসবের উত্তর ছিল ফাদারের সেই ভূমিকার ইঙ্গিতে। বইটির ধূলিধূসরিত এবং মাত্র খান দুই-তিন কপি কেরি লাইব্রেরিতে পড়েছিল। কাউকে জিজ্ঞেস করেও সদুত্তর পেলাম না, এমনকী, গুগলকেও নয়, ‘ছোট রাজপুত্র’-এর লেখক পল দ্যতিয়েনই ‘ইতিহাসমালা’র মতো বই সম্পাদনা করেছেন কি না।
এই কৌতূহল পর্বের সময়ে, সালটা ২০১৩-’১৪ হবে, আমি ঘটনাচক্রে ‘প্রাত্যহিক সংবাদ’-এ বুক রিভিউ লিখতাম। তখন মেল ছিল না, কলেজ যাতায়াতের পথে লেখা জমা দিয়ে আসতাম। একদিন জমা দিতে গিয়ে দপ্তরে শুনি, ফাদার দ্যতিয়েন বেলজিয়াম থেকে কলকাতায় এসেছেন, তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রয়োজন। ফাদার দ্যতিয়েন তবে বেঁচে আছেন? প্রায় আত্মহারা হয়ে জিজ্ঞেস করি, এই ফাদারই কি শ্রীরামপুরে থাকতেন একদা? সকলে তাঁকে বিখ্যাত গদ্যলেখক হিসেবে চেনেন, কিন্তু শ্রীরামপুর সংযোগ কেউ জানেন না। আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করার ঠিকানা চাইতেই আমাকেই সাক্ষাৎকারের দায়িত্ব দেওয়া হল।
পরের রবিবার গেলাম রফি কিদোইয়া রোডের চার্চে। যেতেই ছোট্ট গেস্টরুম সবাই দেখিয়ে দিল। এক দীর্ঘদেহী সদাহাস্য মানুষ আলাপ করছেন সেখানে বহু মানুষের সঙ্গে। একগাল হেসে আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন। কোনও মানুষের মুখে যে এত ঐশ্বরিক প্রশান্তি থাকে, তাঁকে না দেখলে সত্যিই জানতাম না। এবং বসে বসে দেখলাম মানুষের অদ্ভুত আবদার তিনি কী ধৈর্য আর আনন্দের সঙ্গে কথা বলে মেটাচ্ছেন। এক ভদ্রমহিলা অন্তত বার পনেরো তাঁর বাড়ি সত্যনারায়ণের সিন্নি খাওয়ার নিমন্ত্রণ করলেন। উনি পনেরোবারই হাসিমুখে তা গ্রহণ করলেন এবং কথা দিলেন যে, যাবেন।
শেষে আমি। আমাকে দেখে প্রথমে যতটা স্নেহ দেখালেন, কিন্তু সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি শুনে ততটাই রাগ করলেন! প্রায় ছেলেমানুষের মতোই বললেন, ‘তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে, তুমি আমার কী সাক্ষাৎকার নেবে?’
৮৯ বছরের এক মানুষের কাছে আমি তখন বাচ্চা তো বটেই। তবু এই নির্ভান মন্তব্যের উত্তরে আমিও প্রমাণ করতে লাগলাম যে, আমি বাচ্চা মেয়ে নই! দশ বছর কলেজে পড়াচ্ছি, এক শিশু সন্তানের মা ইত্যাদি। ফাদার হো হো করে হেসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন কলেজ?’ যেই মুহূর্তে বললাম, ‘শ্রীরামপুর কলেজ’। ফাদার নড়েচড়ে একেবারে শিশুর মতো বললেন, ‘দেখেছ, ভগবানের কী ক্ষমতা! আমি তো এসে থেকেই খুঁজছি কে আমাকে শ্রীরামপুর নিয়ে যেতে পারবে? তুমি জানো, ৫০ বছর আগে আমি শ্রীরামপুরে থাকতাম, ইন্দ্রবাবুর কাছে সংস্কৃত শিখতাম! তুমি আমাকে শ্রীরামপুর নিয়ে যাবে?’
সাক্ষাৎকার হল। কিন্তু বাইরে থেকে গেল এই গল্পগুলো। ফাদারের শ্রীরামপুরের সঙ্গে এই পুনরায় সংযোগ। সেদিনই শোনালেন এক আশ্চর্য কাহিনি। ওঁর সংস্কৃতের মাস্টারমশাই ইন্দ্রবাবুর নাতনি ওঁকে চিঠি পাঠিয়েছেন বেলজিয়ামে, ওঁর কথা নিজের দাদুর লেখায় খুঁজে পেয়ে। দাদুর কাছে কিছু চিঠি পেয়েও নাতনি জানতে চেয়েছেন সেই চিঠিগুলোর মালিক তিনিই কি না। এরকম একটা গল্পের আভাস পেয়ে আমি সব বিস্তারিত জেনে ফিরে এলাম আর শ্রীরামপুরে দিন কয়েকের মধ্যেই আবিষ্কার করলাম ফাদারের ৫০ বছর আগেকার শিক্ষক ইন্দ্রবাবুর নাতনিকে। যিনি নিজেও তখন মধ্যবয়স্কা।
ফাদারকে নিয়ে সেবার শ্রীরামপুর যাওয়া ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। গাড়িতে উঠেই ড্রাইভারের সঙ্গে অজস্র গল্প, কলেজে পৌঁছে শিশুর মতো খুশি হওয়া, ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে নিয়ে একেবারে মেতে ওঠা! আর আমাদের আলোচনাসভায় ফাদারের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত! সেই গান শুনে গোটা কেরি লাইব্রেরি হল মুগ্ধ দেখে উনি গান ধরলেন, ‘নাম রেখেছি বনলতা…’ আমরা তো ফাদারের স্মার্টনেস দেখে মুগ্ধ! উনি সেদিন আনন্দের বান ডেকে আনলেন গোটা কলেজে। এখন খুব অনুশোচনা হয়, কেন যে সব আলাদা করে সংরক্ষণ করিনি। তখন স্মার্টফোন না থাকায় ব্যাপারটা যে আয়োজন দাবি করত, তা করিনি। শ্রীরামপুরের বিখ্যাত দোকান থেকে ওঁর জন্য প্রিয় সব বাঙালি খাবার আনা হল। সবরকম খাদ্য অল্প করে হলেও অতি যত্নে খেলেন। ওঁর হাত দিয়ে ভাত-ডাল, কই মাছ, ইলিশ মাছ, মাংস, দই খাওয়া দেখতে সবাই ভিড় করে এল। ফাদার কিন্তু এমনভাবে খাচ্ছিলেন যেন খাবার নয়, বাংলা গদ্যের মতো বাঙালিয়ানাকে আত্মস্থ করতে চাইছেন তিনি।
আমাদের ২০০ বছরের কলেজের মূল ভবনের চাতালে দাঁড়িয়ে বললেন, এখানেই পঞ্চাশ বছর আগে ভোরবেলা উঠে সংস্কৃত পড়তেন। ইন্দ্রবাবু পান খেতেন খুব। এক ভট্টাচার্য পণ্ডিতের কাছে সংস্কৃত শিখছেন এক ফরাসি ব্রাদার, আমি দেখছিলাম ফ্রেডরিক নগর আর সেরামপুর (সাহেবদের উচ্চারণ) হয়ে আজকের শ্রীরামপুর বিবর্তিত হচ্ছে যেন উইলিয়াম কেরির পরম্পরায়। এক জীবন্ত ইতিহাস এসে দাঁড়িয়েছে বৃদ্ধা ইতিহাসের আঙিনায়।
এরপরে ইন্দ্রবাবুর নাতনির বাড়ি যাওয়া হলে ওঁকে আদর-আপ্যায়ন করা হল। কিন্তু জানা গেল সব চিঠিচাপাটি যা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে সেগুলো ফাদার দুতিয়েনের! ফাদার এতে হো হো করে হাসলেন। দ্যতিয়েন আর দুতিয়েন দুই ফরাসি সাহেবই ছিলেন তাঁর ছাত্র। একজনকে খুঁজতে গিয়ে আরেকজনকে পাওয়া গেল, আর ফাদারও তাঁর শিক্ষকের উত্তরপুরুষকে চিনলেন, এই নিয়ে আমরা আড্ডা আর আলোচনায় মেতে উঠলাম সেদিন।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………
ছাত্রদের বলতাম, ৯০ বছর বয়সেও এক ভদ্রলোক কীভাবে ভিন্ন সংস্কৃতি আর সাহিত্যচর্চা করছেন সেই আশ্চর্য কাহিনি! আবারও নিয়ে এলাম শ্রীরামপুর। এবার খুঁটিয়ে দেখলেন কেরি লাইব্রেরি, আর্কাইভের পুঁথি। আমাকে দু’দুবার ধমকালেন যে, তুমি এগুলো নিয়ে কাজ করছ না কেন? সেই ধমক আজও আমার পরম উৎসাহ হয়ে আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। পড়াশোনার জগতে বহু গবেষক, সাহিত্যানুরাগী মানুষকে দেখি, তাঁদের লেখা পড়ি। কিন্তু মানুষ হিসেবে ব্যক্তিত্বেও এত প্রসন্ন এত প্রাণখোলা প্রায় দেখিনি।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………
ফাদার সেবার গাড়িতে ফিরতে ফিরতে শুধুই রবীন্দ্রসংগীত শুনতে চাইছিলেন। আমার প্রিয় কোন গান, এখানে সবথেকে বেশি কোন কোন গান গাওয়া হয়। আমি যখন বললাম, আমার প্রিয় গান, ‘সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখ তোমার কোলে/ যাকনা গো সুখ জ্বলে’, ফাদার চলন্ত গাড়িতেই খাতা-পেন বের করে লিখে নিলেন গানটি। বললেন, এই গান তিনি আগে শোনেননি। তারপর সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্য নিয়ে কথা বলতেই বললেন, ‘এখনকার কবিতা আমি বুঝি না। কিচ্ছু বুঝি না।’ আমি ইচ্ছে করেই ফাদারকে বললাম, ‘এত ভালো মিষ্টি গদ্য লেখেন, কবিতা না বুঝে নাকি?’ ফাদারের তবু এক গোঁ। ‘কবিতা কিচ্ছু বুঝি না।’ আমি উত্তরে বলেছিলাম, ‘ওই মেয়েটির কাছে/ সন্ধ্যাতারা আছে, এটা ভালো না? জয় গোস্বামীর লেখা।’ ফাদার দু’বার লাইন দুটো শুনে অল্প চুপ করে বললেন, ‘এটা ভালো। এটা বুঝেছি। কিন্তু কবিতা আমি বুঝি না।’ বলেই হাসতেন হো হো করে। বাকি পথটুকু কথা হয়েছিল উইলিয়াম কেরির ‘ইতিহাসমালা’ নিয়ে, বলেছিলেন সেসব কথা প্রমাণের অভাবে যা তিনি ভূমিকায় লিখতে পারেননি। সেদিনের ওই আলোচনা পর্ব আমার সারাজীবনের সাহিত্য সম্পদের মতো হয়ে আছে। ভূমিকাতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কেরির সহকারী কোনও এক বাঙালি পণ্ডিতের কথা, যাঁর নাম কোত্থাও উল্লেখ নেই! রামরাম বসুর গদ্যের সঙ্গেও যাঁর গদ্য মেলে না। ‘ ইতিহাসমালা’ বা ‘ কথোপকথন’ সংকলন এবং লেখার কৃতিত্ব সেই ভদ্রলোকের হতে পারে। কারণ ‘ ইতিহাসমালা’-র কোথাও কেরি লিখিত বা সম্পাদিত বলে উল্লেখ নেই। ‘by William carey’ আছে মাত্র।
ফাদার প্রথমবার বেলজিয়ামে ফিরে যাওয়ার সময় আশা করিনি, পরের বছর উনি আবার আসতে পারবেন। তাই যখন আবার আসার খবর পেলাম আমরা আবারও ওঁকে শ্রীরামপুর নিয়ে আসার পরিকল্পনা করলাম। ছাত্রদের বলতাম, ৯০ বছর বয়সেও এক ভদ্রলোক কীভাবে ভিন্ন সংস্কৃতি আর সাহিত্যচর্চা করছেন সেই আশ্চর্য কাহিনি! আবারও নিয়ে এলাম শ্রীরামপুর। এবার খুঁটিয়ে দেখলেন কেরি লাইব্রেরি, আর্কাইভের পুঁথি। আমাকে দু’দুবার ধমকালেন যে, ‘তুমি এগুলো নিয়ে কাজ করছ না কেন?’ সেই ধমক আজও আমার পরম উৎসাহ হয়ে আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। পড়াশোনার জগতে বহু গবেষক, সাহিত্যানুরাগী মানুষকে দেখি, তাঁদের লেখা পড়ি। কিন্তু মানুষ হিসেবে ব্যক্তিত্বেও এত প্রসন্ন এত প্রাণখোলা প্রায় দেখিনি।
দ্বিতীয়বার যখন এলেন একদিন ফাদারের কাছে তাঁর কলকাতার ঠিকানার চার্চে গেলাম। বলেছিলেন, হাত কাঁপছে, তাই সব লেখা লিখতে পারছেন না। আমি যেন ওঁর কথা থেকে কিছু লিখে দিই। গেস্টরুমে ছিলেন। আমাকে দেখে একগাল হেসে বললেন, ‘তোমাকে নিয়ে একটাই অসুবিধে, তুমি নারী।’ আমি সপ্রশ্ন তাকাতেই হো হো করে হেসে বললেন, ‘তিনতলা থেকে কিছু কাগজ আনতে হবে লেখার জন্য, কিন্তু তোমাকে এরা ঢুকতে দেবে না।’
আমি নারী হওয়ার জন্য রীতিমতো আফসোস করতে করতে দেখলাম ৯০ বছরের তরুণটি টকটক করে হেঁটে চলে গেলেন ভেতরে। কাগজ নিয়ে ফিরে এলে আমি লিখতে শুরু করব তখন ওঁর মনে পড়ল আরেকটা জিনিস ভুলে গিয়েছেন। আমি ব্যথিত হয়ে বললাম, ‘আবার তিনতলায় উঠবেন?’ উনি দুষ্টু হেসে মিষ্টি বাংলায় বললেন, ‘চিন্তা করো না। তিনতলাতেই উঠব। তার ওপরে নয়। ঠিক ফিরে আসব।’
আমি হাসলাম কিন্তু সভয়ে অপেক্ষাও করলাম। ফাদার বাকি কাগজ নিয়ে একই রকম প্রসন্নচিত্তে ফিরলেন। কিছুটা কাজ হল। সেদিন ওঁর নবনীতা দেবসেনের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল বিকেলে। আমি বললাম, ‘আপনাকে বাইরে কিছু খাইয়ে আমিই পৌঁছে দেব।’ পার্ক স্ট্রিটে নিয়ে গিয়ে একটা বিদেশি খাবারের দোকানে মুরগির মাংস ভাজা দেখে বেশ রাগ করে বললেন, ‘মাছের ঝোল কই? এসব খাবার আমি ভালোবাসি না।’ আমি তখন নিরুপায় হয়ে শিশুকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো করে বললাম, ‘ফাদার, এখন তো লাঞ্চ টাইম না। আমি তাই বুঝতে পারিনি। এখন খেয়ে নিন। পরে আরেক দিন বাঙালি খাবার খাওয়াব।’ তারপর অবশ্য ইটালিয়ান কফি খেয়ে বেশ খুশি হয়েছিলেন। সেদিন ট্যাক্সিতে এক পাঞ্জাবি ড্রাইভারকে পেয়ে ফাদার ভাঙা-হিন্দিতে সারা রাস্তা খোশগল্প করতে থাকলেন। ট্যাক্সিওলাও কী খুশি। ফাদারের সঙ্গে চলতে চলতে শুধু ওইটুকুই বুঝতে চেয়েছিলাম জীবনের এমন অপার আনন্দের উৎস কী?
দ্বিতীয়বার ফেরার পরই অসুস্থ হয়েছিলেন। বাংলাদেশে গিয়েছিলেন ফেরার পথে। শুনেছি, বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডায়াসেই পড়ে গিয়েছিলেন। পরে বেলজিয়ামে ফিরে জানতে পারেন, ওঁর স্লিপিং ক্যানসার আছে।
ফাদার বেলজিয়ামে ফিরে আমাকে যে একাধিক মেল করেছিলেন, তার কিছু অংশ তুলে ধরলেই বোঝা যায় তাঁর বাঙালিয়ানা, গভীর জীবনদর্শন এবং গভীর মৃত্যুদর্শনও বটে।
২০১৪ তে লিখছেন,
dear Isha,
Eso he baisakh… today is Bengali new year… I have spent the whole day of the Nababarsha listening to Bengali songs of Rabindrasangit ofcouse but also Shyamal Mitra (whose sister as you well know, has taught me that now famous Nam REKHECHI BANOLATA) and Hemanta Mukherjee whom I have known personally.
তারপরই আসছে তাঁর অসুস্থ হওয়ার মেল। বেশ কিছুদিন মেল না পেয়ে উদ্গ্রীব হয়ে আমি মেল করলে ফাদার লিখছেন,
Dear Isha,
I too would be glad to receive some personal news: your work, your students, the cultural life of Calcutta…
I have become very weak… and I lie on my bed most of the time… but without feeling bored at any time, and without feeling any pain (as yet), ( Jun 11, 2015)
এরপরে আবার একটা মেল আমি পাঠালে ফাদার উত্তর দিচ্ছেন, যেটা আমাকে একা নয়, আরও কলকাতার বন্ধুদের,
Dear Isha, Dear Friends
Before wishing you a very Happy New Year, let me first apologise for being still alive. The cancer specialists had clearly announced my death as imminent : it was a matter ( so they said) not of a few months but of at the most a few weeks. And they had not failed to add ‘ do not imagine for a second that you could still be alive by the end of the year’.
Tomorrow , December 30th, is my (91st) birthday… a friend will take me to an Indian restaurant, They will show me the card and without even having a look at it, I shall choose a biriani.’…
I have left half of my heart in Bengal… And I do not stop thanking the lord for all the marks of affection which during 30 years I have received from all of you.
ফাদারের কাছ থেকে পাওয়া এটাই ছিল শেষ মেল। পরে তাঁর চলে যাওয়ার সংবাদ পাই অন্য মেল থেকে।
দ্যতিয়েনের বাংলা বই, বাংলা গদ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতেই পারে, হয়ও অনেক, কিন্তু তাঁর মতো আলোর মতো সহজ এবং সুন্দর ব্যক্তিত্বও যে আনন্দের পথ দেখায় তাও সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করে।
এ বছর তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে এই বাঙালি মানুষটাকে আমার প্রণাম জানাই।