Robbar

মৃত্যুর পর ইতিহাস কাউকেই মনে রাখে না, বিশ্বাস করতেন জ্যোতি বসু

Published by: Robbar Digital
  • Posted:July 8, 2024 5:07 pm
  • Updated:July 8, 2024 5:07 pm  

স্বাধীনতার পর বাংলাকে পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে উদ‌্যোগ নেওয়ার জন‌্য বিধান রায় স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। জ‌্যোতিবাবুর ক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। তাঁর দীর্ঘ মুখ‌্যমন্ত্রিত্বের সময়কালটা বাংলার অবক্ষয়ের জন‌্য চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। বঞ্চনা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই সত্ত্বেও পাঁচ ও ছয়ের দশকের বাংলায় সার্বিক অগ্রগতির ছাপ ছিল। সাতের দশকের অরাজকতা বাংলার সমাজ জীবনে ঘুণ ধরিয়ে দিয়েছিল। আট ও নয়ের দশকে শ্মশানের শান্তির মধ‌্যে দাঁড়িয়ে বাংলা শুধু অবক্ষয় দেখেছে। দুর্ভাগ‌্যজনকভাবে এই সময়টার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন জ‌্যোতি বসু।

প্রচ্ছদের ছবি: অর্ঘ্য চৌধুরী

সুতীর্থ চক্রবর্তী

নিজের জীবনী লিখতে দেওয়ার বিষয়ে প্রবল অনীহা ছিল জ‌্যোতি বসুর। তিনি বলতেন, ‘মৃত‌্যুর পর ইতিহাস কাউকে মনে রাখে না।’ তিনি মনে করতেন, তাঁকে কেউ মনে রাখবে না। বেঁচে থাকার সময় বাংলার মানুষ তাঁকে প্রখর বাস্তববাদী বলত। তিনি যে কতটা বাস্তববাদী ছিলেন, এখন তাঁকে ভুলে যাওয়া দেখে সেটা আরও উপলব্ধি করা যায়, সত‌্যিই, মৃত‌্যুর পর ইতিহাস কাউকেই মনে রাখে না।

Jyoti Basu: Behind the Scenes of a 23-Year Reign – Elgin Hotels & Resorts |  Luxury Boutique Heritage Hotels in India – Darjeeling, Kalimpong, Gangtok,  Pelling, Kolkata and Scotland, UK – Inverurie

 

পূর্বসূরি বিধান রায়ের সঙ্গে তাঁর জন্মদিনের তফাত মাত্র সাতদিনের। ‘বাংলার রূপকার’ হিসেবে বিধান রায়কে তুলনায় ইতিহাস এখনও মনে রেখেছে। ‘বাস্তববাদী’ জ‌্যোতি বসুর ক্ষেত্রে ইতিহাস নির্দয়। মুখ‌্যমন্ত্রীর পদে রেকর্ড করেও মৃত‌্যুর মাত্র ১৪ বছরের মধ‌্যে তিনি অনেকটাই বিস্মৃত। ১ জুলাই যত মানুষ বিধান রায়কে স্মরণ করেন, তার সামান‌্য অংশও জ্যোতি বসুকে স্মরণ করেন, এমনটা বলা যাবে না। বিশেষ করে, এই প্রজন্মের কাছে ৮ জুলাই ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ‌্যায়ের জন্মদিন হিসেবে অনেক বেশি পরিচিত।

 

জ‌্যোতি বসুর ক্ষেত্রে আরও বড় ‘ট্রাজেডি’ নিশ্চিত করেই এটা যে, তাঁর মৃত‌্যুর পরে পরেই ক্ষমতাচ‌্যুত হল বামেরা। ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজ‌্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতাও হারাল তারা। ফলে বাংলার জনমানসে ‘জ‌্যোতিবাবু’র স্মৃতি ও উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে যাওয়ার কেউ রইল না। জীবদ্দশাতে জ‌্যোতি বসু কখনওই তাঁর ভাবমূর্তিকে দলীয় সত্তার ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চাননি। আদ‌্যন্ত ‘পার্টি ম‌্যান’ হিসেবেই বেঁচেছেন। তাই তিনিও তাঁর পার্টির সঙ্গেই রাজ‌্যবাসীর মন থেকে যেন হারিয়া গিয়েছে।

Who is Jyoti Basu? - Quora

স্বাধীনতার পর বাংলাকে পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে উদ‌্যোগ নেওয়ার জন‌্য বিধান রায় স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। জ‌্যোতিবাবুর ক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। তাঁর দীর্ঘ মুখ‌্যমন্ত্রিত্বের সময়কালটা বাংলার অবক্ষয়ের জন‌্য চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। বঞ্চনা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই সত্ত্বেও পাঁচ ও ছয়ের দশকের বাংলায় সার্বিক অগ্রগতির ছাপ ছিল। সাতের দশকের অরাজকতা বাংলার সমাজজীবনে ঘুণ ধরিয়ে দিয়েছিল। আট ও নয়ের দশকে শ্মশানের শান্তির মধ‌্যে দাঁড়িয়ে বাংলা শুধু অবক্ষয় দেখেছে। দুর্ভাগ‌্যজনকভাবে এই সময়টার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন জ‌্যোতি বসু।

 

জ‌্যোতিবাবু বাস্তববাদী ছিলেন। জ‌্যোতিবাবু শিক্ষায়, মেধায়, মননে তাঁর সময়কার রাজনীতিবিদদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। জ‌্যোতিবাবু এক বিরল ব‌্যক্তিত্বের অধিকারী। জ‌্যোতিবাবুর ক‌্যারিশমা ছিল। মানুষকে মোহিত করে রাখার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু তবু অধিকাংশ বাঙালি তাঁকে আজও শুধু রাজ‌্যের অবনমনের জন‌্য চিহ্নিত করে। ‘পার্টি ম‌্যান’ হিসাবে হয়তো অসহায়ের মতো তিনি নিজেও সেটা বেঁচে থাকতেই উপলব্ধি করতেন।

সে কারণেই বলতেন, মৃত‌্যুর পর আর কেউ মনে রাখে না।