রোববার.ইন-এর পাতায় শুরু হল কড়চা। প্রতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী বাংলা সংস্কৃতির আনাচকানাচের খবর জানা যাবে। রইল এ সপ্তাহের কড়চা– ক্ক।
প্রচ্ছদ: অর্ঘ্য চৌধুরী
এস্রাজের জন্য যিনি
উচ্চাঙ্গসংগীতের অধিবেশনে কেবল সংগত করাই নয়, একক যন্ত্রের মর্যাদাও যে তার প্রাপ্য, এস্রাজকে সেই সম্মানের স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলেন বিশ্বভারতী সঙ্গীতভবনের অধ্যাপক রণধীর রায়। অপূর্ণ ছেচল্লিশে চলে গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেই স্বল্পসময়েই পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে যান তাঁর নিত্যসঙ্গী এই বাদ্যযন্ত্রটিকে। সে কাজের একরকম সূচনা অবশ্য হয়েছিল তাঁর গুরুর হাতে। বিষ্ণুপুর ঘরানার বিশিষ্ট শিল্পী অশেষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই তালিম শুরু হয়েছিল রণধীরের। এস্রাজবাদককে একক সংগীতশিল্পীর মর্যাদায় দেখেছিলেন গুরু, আর শিষ্য ধ্রুপদি হিন্দুস্থানি সংগীতকে আরও বিস্তার দিতে এস্রাজের আমূল সংস্কার ঘটান। একাধিক রাগরূপের মিশ্রণে তিলক-কল্যাণ, সিন্ধু-গান্ধার, মধু-পলাশের মতো নতুন সৃষ্টি করে চলেছিলেন তিনি। সংগীতজ্ঞ কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এক-একজনের জন্য এক-একটা যন্ত্রর সৃষ্টি হয়। যেমন সরোদ আলি আকবরের জন্য, সানাই বিসমিল্লা খান, গীটার ব্রিজভূষণ কাব্রা-র, এস্রাজ তেমন রণধীরের জন্যই জন্মেছিল। অকালে সে চলে না-গেলে সারা দেশ আমার মতের পক্ষে সায় দিত।’ শিল্পী মা-বাবার সন্তানও যে শিল্পবোধের দীক্ষা পাবেন, তা অনেকখানি পূর্বনির্ধারিতই হয়ে থাকে। তবে অবনীন্দ্রনাথের শিষ্য প্রশান্ত রায় ও নন্দলাল বসুর ছাত্রী গীতা রায়ের সন্তান রণধীর সেই বোধকে নিজস্ব বীক্ষায় অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন। ১৯৪৩-এর জাতক এই শিল্পী ১৯৮৯ সালে প্রয়াত হন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই অরিন্দম সাহা সরদার-এর সাক্ষীচিত্র ‘এস্রাজের রণধীর’-এর নির্মাণ। ২০ জুলাই, শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায় জীবনস্মৃতি আর্কাইভের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি।
…………………………………………………………………………………………………
ছবিজীবনের রচয়িতা সমীর ভট্টাচার্য
১৮ জুলাই প্রয়াত হয়েছেন শিল্পী সমীর ভট্টাচার্য। গলার ক্যানসারে তিনি ভুগছিলেন বেশ কিছু কাল। কর্কট রোগ জীবৎকালেই হেরে গিয়েছিল তাঁর কাছে, তাঁর জীবনকে স্থবির করে তুলতে পারেনি। গঙ্গার পাড়ে প্রায়শই ঘুরে বেড়াতেন আজন্ম উত্তর কলকাতার এই মানুষ। থাকতেন কাশী মিত্র ঘাটের কাছেই। আড্ডা-চা-রাজনীতি-পুরনো দিনের গল্পগাছা এইসব মিলিয়ে ছিলেন আপাদমস্তক রসিক এক ছবিজীবনের রচয়িতা। জীবন উপান্তে এসে বন্ধুবান্ধবদের ছবি এঁকে বিলিয়ে দিতেই ভালোবাসতেন। একসময় প্রকাশ করতেন ‘পট’ নামের একটি শিল্প-সংস্কৃতির পত্রিকা। নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কাব্যগ্রন্থেরও প্রথম প্রচ্ছদ করেছিলেন তিনিই। বহু বই ও লিটল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তাঁর আঁকা ছবি দেখতে পাওয়া যায়। শিল্পী সনাতন দিন্দা তাঁর শেষ প্রদর্শনীটি উৎসর্গ করেছেন তাঁকেই। সনাতন জানিয়েছেন, সমীর ভট্টাচার্যর কাছেই ছিল তাঁর শিল্পের হাতেখড়ি, প্রথম আঁকার স্যর। আড্ডায় মশগুল হলেও, নিজের ছবির ব্যাপারে সারাজীবনই মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন সমীর ভট্টাচার্য। তাঁর এদিক-ওদিক ছড়িয়ে থাকা ছবিগুলো নিয়ে এ কলকাতায়– গঙ্গার পাড়ে, ওই কাশী মিত্র ঘাটেই কি একটা প্রদর্শনী হতে পারে না দ্রুতই? সমীর ভট্টাচার্যকে আবারও নিজের রাস্তায় ফিরিয়ে আনার এটা একটা উপায় হতে পারে!
…………………………………………………………………………………………………
ইলশেগুঁড়ি ও ইলিশ রসনা
বর্ষাকাল মানেই ইলিশের মরশুম। সাধ্য না থাক, ইলিশ খাওয়ার সাধ তো সবারই। রসনার টানে যদিও বাঙালিই সবথেকে এগিয়ে। ইলিশ মাছের সঙ্গে বাঙালির স্রেফ পেটের নয়, প্রাণের টান রয়েছে। এখন অবশ্য রুপোলি রঙের মাছের দামও পাল্লা দিচ্ছে রুপোর দরের সঙ্গে। ইলিশে হাত ছোঁয়াতেই ভয় পান কেউ কেউ। তবে প্রিন্সটন ক্লাব বাঙালির ইলিশ রসনা মেটাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। ২০ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই অবধি আয়োজন করা হয়েছে ইলিশ উৎসবের। থাকছে ইলিশ মাছের বাহারি পদ। ইলিশ ভাজা থেকে নবাবগঞ্জ ইলিশ কারি। ইলিশ সরষে বাটা থেকে বারবিকিউ ইলিশ। চিরাচরিত ধারার বাইরেও থাকছে বিভিন্ন ইলিশ পদ। যেমন ইলিশ বিরিয়ানি, কুমড়ো পাতা দিয়ে ইলিশ ভাপা, ইলিশের তেল বেগুন ঝোল, সেজওয়ান ইলিশ গার্লিক টসড রাইজ সিজলার, প্যান শেরড ইলিশ মাস্টারড কাসুন্দি সস অন সিজলার, ইত্যাদি। দাম যদিও সাধ্যের মধ্যেই। প্রতিটি পদই ৬৫০-৭৫০-এর মধ্যে। দুপুরে এবং রাত– দুই সময়ই মিলবে ইলিশের এইসব রকমারি পদ। তাই দেরি না করে, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ইলিশ রসনা মেটাতে হাজির হতে পারেন প্রিন্সটন ক্লাবে।
…………………………………………………………………………………………………
অন্য বিবেক
শুধুই কি তিনি সংস্কারক? বক্তৃতায়, তর্কে-বিতর্কেই তাঁর সীমানা? কিন্তু তিনি তো সীমানা মানতে চাননি, ছড়িয়ে পড়তে চেয়েছিলেন। ছড়িয়ে পড়েওছিলেন। দেশে-বিদেশে তাঁর বিচরণ ছিল। বিচরণ ছিল সংগীতে, রন্ধনে, ক্রীড়ায়, কবিতায়। কর্মমুখরতার বাইরে তিনি নিজের সঙ্গে থেকেছেন, রচনা করেছেন কবিতা, তাতে সুর দিয়েছেন নিজেই। এক অন্যতর বিবেকানন্দকে খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর ব্যক্তিগত খাতার পাতায়। তাঁর রচিত এবং অনূদিত কবিতাগুলির প্রেক্ষাপটে রয়েছে এমন কিছু মুহূর্ত, যা নিমেষে বিশ্ববিখ্যাত স্বামী বিবেকানন্দকে আমাদের আঙিনার মানুষ করে তোলে। সেই অন্য বিবেকানন্দকে নিয়েই ‘সন্ন্যাসী কবি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউ অফ কালচার। ২৫ জুলাই, সন্ধ্যা ৫:৪৫-এ, গোলপার্কের ইন্সটিটিউট অফ কালচারে। একাধারে মায়িক বন্ধন ছিন্নকারী সন্ন্যাসী ও অন্য আধারে সংসারের আনন্দ-বিষাদকে কাব্যরচনার উপাদানের স্বীকৃতি দেওয়া কবি– সন্ন্যাসী কবি।
…………………………………………………………………………………………………
ও গানওয়ালা
গানওয়ালা শুনলেই কবীর সুমনের এই গান মাথায় আসে। মুক্তির এত বছর পরও এতটুকু প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি গানওয়ালা। সুমনের অনুষ্ঠানে এই গানের আবদার আসতে বাধ্য। কিন্তু এখানে সুমনের গানওয়ালার কথা বলা হচ্ছে না। কয়েকজন গানওয়ালার কথা হচ্ছে। বিগত ৯ বছর ধরে মৌলিক বাংলা গান নিয়ে চর্চা করছেন এই গানওয়ালারা। গানযাত্রার এই ন’বছর উদযাপন করতে চলেছেন তাঁরা। সেই উপলক্ষে ২০ জুলাই ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন ক্লাবে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের নাম ‘চেনা তবু চেনা’। সেখানে নিজেদের লেখা এবং সুর করা গান সবাইকে শোনাবেন গানওয়ালারা। গানে গানে নিজেদের কতটা চেনাতে পারেন এই গানওয়ালা-রা, সন্ধে ৬টা থেকে তা জানতে পারা যাবে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন ক্লাবে।
…………………………………………………………………………………………………
কিস্তিমাতের চক্করে
ভোটের মরশুমেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল রাহুল গান্ধী আর গ্যারি কাসপারভের কথা চালাচালি। কাসপারভকে তাঁর ‘প্রিয় দাবাড়ু’ বলে দাবা এবং রাজনীতির লড়াইয়ের তুলনা টেনেছিলেন রাহুল। শোনা যায়, দাবা খেলার শখ রয়েছে অমিত শাহেরও। আসলে দুনিয়া জুড়েই যখন কিস্তিমাতের চক্কর, তখন দাবার জনপ্রিয়তা না বেড়ে উপায় আছে! গোটা বিশ্বেই সবচেয়ে জনপ্রিয় বোর্ড-গেম বলা যেতে পারে দাবাকেই। বিজ্ঞাপনী মোহ নেই, তবুও মেধার খেলাতেই তার জয়জয়কার। শতরঞ্জ কি খিলাড়ি-র সিনেদুনিয়া থেকে বাস্তবের আনন্দ-কাসপারভের লড়াই, চৌষট্টি ঘরের টান এতটুকু কমেনি। আন্তর্জাতিক দাবা দিবসে তাই শামিল বাংলাও। ‘কলকাতা ডিস্ট্রিক্ট চেজ অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেজ অ্যাসোসিয়েশন’– দুই জেলার দাবাড়ু সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ দিনটি উদযাপন করছে কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি। মূক এবং বধির শিশুদের জন্য দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজনের মধ্য দিয়েই পালিত হবে এ দিনটি। ২০ জুলাই, দুপুর ১২টা ১৫-তে কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে বসছে এই দাবা খেলার আসর।
সহায়তা: রণিতা চট্টোপাধ্যায়, শুভদীপ রায়, সম্বিত বসু, তিতাস রায় বর্মন