মান্টোর তীব্রভাবে সচেতন দেশভাগের কাহিনির সঙ্গে অনেকে পরিচিত, কিন্তু তার ১৯৪০-এর বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আখ্যানগুলি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই গল্পগুলিই সেই পিরিয়ডের সবচেয়ে জরুরি দলিল। যেমন ‘জানকি’, ‘মাই নেম ইজ রাধা’, ‘শিকারি আউরাতে’ এবং অসামান্য ব্যঙ্গাত্মক লেখা (সিরিজ) ‘গঞ্জে ফরিসতে’– অর্থাৎ ‘নেড়া দেবদূত’ (ইংরেজি টাইটেল: ‘স্টার্স ফ্রম আনাদার স্কাই’)।
সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয় যে, বিশ্বায়ন ও ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার ফলে কাঁটাতারের এপার-ওপারে মিডিয়া মেটেরিয়াল ও কনটেন্টের চলাচল অনেক বেশি সরল হয়েছে। যেমন শাহরুখ খানের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা। তা হয়েছে বটে এবং এই ভাবনা কিছুটা যথাযথ হলেও সবটা সত্যি নয়। কারণ, তার অনেক আগে নাজিয়া ও জোহেব হাসানের ‘ডিস্কো-দিবানে’ (১৯৮১) আমাদের মাতিয়েছে, বা হাসান জাহাঙ্গীরের ‘হাওয়া-হাওয়া’ (১৯৮৭) গান বাতাসে ভেসেছে, অথবা ‘মুঘল-এ-আজম’-এর (১৯৬০) মতো ছবি সীমানা ছাড়িয়েছে। এইরকম উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে।
যেমন, ১৯২০-র সময় ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন-এগজিবিশন যেভাবে সংগঠিত ছিল তাতে ‘লাইট অফ এশিয়া’-র (১৯২৫) মতো ছবি বর্মা (মায়ানমার), বেঙ্গল, ইউনাইটেড প্রভিন্স, কাশ্মীর, সিলন-এর (শ্রীলঙ্কা) মানুষের কাছে অনায়াসে পৌঁছেছে। এই ম্যাপ অবশ্যই ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার ম্যাপ, ফলে এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয় (সূত্র: ইন্ডিয়ান সিনেমাটোগ্রাফ কমিটি রিপোর্ট, ১৯২৭-’২৮)। কিন্তু যেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি, তা হল সীমান্ত ও সীমারেখার পেরিয়ে সিনেমা বা গানের গমনের দীর্ঘ ইতিহাস।
উদাহরণস্বরূপ, সাদাত হাসান মান্টোর ছবি লেখা, ছবি করা ও ফিল্ম সংক্রান্ত কাহিনিগুলির কথা বলি। হ্যাঁ, এখানে মান্টোর ‘ফিল্মি’ দুনিয়ার কথাই বলছি। ১৯৩৭ এবং ১৯৪৮ সালের মধ্যে, মান্টো বাবুরাও প্যাটেলের ‘কারওয়ান’-র পত্রিকায় লিখেছেন, ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’-র (দিল্লি) জন্য নাটক লিখেছেন এবং প্রাথমিকভাবে ইম্পেরিয়াল ফিল্ম কোম্পানিতে চিত্রনাট্য এবং সংলাপ লিখেছেন (সম্ভবত সরোজ মুভিটোন, চিত্রা প্রোডাকশন এবং হিন্দুস্তান সিনেটোনেও কাজ করেছেন)। এছাড়া, পরের দিকে পুনর্নির্মিত বোম্বে টকিজ-এ যোগ দেন।
অল ইন্ডিয়া রেডিও-র সঙ্গে কাজ করার পরে, ১৯৪২ সালে তিনি বোম্বেতে ফিরে আসেন এবং প্রবাদপ্রতিম ফিল্মিস্তানের (শশধর মুখার্জি, অশোক কুমার, জ্ঞান মুখার্জি এবং অন্যান্যদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত) সঙ্গে যুক্ত হন। ফিল্মিস্তানে কাজ করার সময়ে, মান্টো ‘চল চল রে নৌজওয়ান’ (জ্ঞান মুখার্জি, ১৯৪৪), ‘আট দিন’ (অশোক কুমার এবং ডিএনপাই, ১৯৪৬), ‘শিকারি’ (এস. বি. ভাচা, ১৯৪৬) ইত্যাদির চিত্রনাট্য এবং গল্প লিখেছেন। সোহরাব মোদির বিশ্বজয়ী ছবি ‘মির্জা গালিব’-এর( ১৯৫৪) গল্প লেখার জন্য তাকেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যদিও ছবিটি দেশভাগের পরে তৈরি হয় এবং ছবিটি মুক্তির প্রায় এক মাসের মধ্যে মান্টো মারা যান।
কালজয়ী নারীবাদী লেখক, ইসমত চুঘতাই, যিনি তাঁর স্বামী (লেখক-পরিচালক) শহিদ লতিফের সঙ্গে ‘জিদ্দি’ (১৯৪৮), ‘আরজু’ (১৯৫০), ‘সোনে কি চিড়িয়া’ (১৯৫৮) মতো ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এই লতিফ ও চুঘতাই মিলেই মান্টোকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসে কাজ করার আহ্বান জানান। এইসব তথ্য মান্টোর নিজের লেখায়, চুঘতাইয়ের লেখায় ও উপেন্দ্রনাথ অসখ-এর লেখায় পাওয়া যায়।
মান্টোর তীব্রভাবে সচেতন দেশভাগের কাহিনির সঙ্গে অনেকে পরিচিত, কিন্তু তার ১৯৪০-এর বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আখ্যানগুলি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই গল্পগুলিই সেই পিরিয়ডের সবচেয়ে জরুরি দলিল। যেমন ‘জানকি’, ‘মাই নেম ইজ রাধা’, ‘শিকারি আউরাতে’ এবং অসামান্য ব্যঙ্গাত্মক লেখা (সিরিজ) ‘গঞ্জে ফরিসতে’– অর্থাৎ ‘নেড়া দেবদূত’ (ইংরেজি টাইটেল: ‘স্টার্স ফ্রম আনাদার স্কাই’)।
‘জানকি’ ও ‘রাধা’র মতো কাহিনিতে মান্টো বিভিন্ন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেত্রীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা বলেছেন। যেমন, ‘জানকি’ তে এক মহিলা (অভিনেতা) প্রথমে পেশোয়ার থেকে পুনে আসেন, এবং তারপরে বম্বে যান। প্রসঙ্গত, মান্টো উল্লেখ করেছেন, কীভাবে জানকি প্রথমে ‘ফ্রন্টিয়ার মেইল’-এ পুনে আসেন এবং পরে পুনে থেকে বোম্বে যাওয়ার জন্য ‘ডেকান মেইল’ নেন। উল্লেখ্য, এই দুটিই ফিয়ারলেস নাদিয়ার অ্যাকশন ছবির নাম।
……………………………………………………………..
অল ইন্ডিয়া রেডিও-র সঙ্গে কাজ করার পরে, ১৯৪২ সালে তিনি বোম্বেতে ফিরে আসেন এবং প্রবাদপ্রতিম ফিল্মিস্তানের (শশধর মুখার্জি, অশোক কুমার, জ্ঞান মুখার্জি এবং অন্যান্যদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত) সঙ্গে যুক্ত হন। ফিল্মিস্তানে কাজ করার সময়ে, মান্টো ‘চল চল রে নৌজওয়ান’ (জ্ঞান মুখার্জি, ১৯৪৪), ‘আট দিন’ (অশোক কুমার এবং ডিএনপাই, ১৯৪৬), ‘শিকারি’ (এস. বি. ভাচা, ১৯৪৬) ইত্যাদির চিত্রনাট্য এবং গল্প লিখেছেন। সোহরাব মোদির বিশ্বজয়ী ছবি ‘মির্জা গালিব’-এর( ১৯৫৪) গল্প লেখার জন্য তাকেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যদিও ছবিটি দেশভাগের পরে তৈরি হয় এবং ছবিটি মুক্তির প্রায় এক মাসের মধ্যে মান্টো মারা যান।
……………………………………………………………..
যাই হোক, একাধিক ব্যর্থ স্ক্রিন টেস্টের পর, জানকি মান্টোর সুপারিশ নিয়ে বোম্বে পৌঁছন এবং অবশেষে কাজ ও একাধিক প্রেমিক জোটে। কিন্তু এই আখ্যান দ্রুত জানকির শারীরিক ক্ষয়ের কাহিনি হয়ে ওঠে এবং দেখা যায় সে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া ও গর্ভপাতের নিয়ে লড়াই করছে। শেষমেশ অবশ্য তার এক লম্পট প্রেমিকের চুরি করে নিয়ে আসা পেনিসিলিন-এর দ্বারা তার প্রাণ বাঁচে। মান্টোর এই কাহিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মেয়েদের শ্রম, শোষণ, যন্ত্রণা ও লড়াইয়ের কথা জানায়।
যেমন ‘রাধা’র কাহিনিতে, মান্টো স্টুডিও-র মধ্যে কর্মজীবনের বিবরণ দেন এবং শুটিং-এর ভিতর দীর্ঘ অপেক্ষার ও অপচয়ের কথা জানান। তবে এই গল্প প্রধানত রাধা ওরফে নীলমের। মান্টো যে ছবিটি লিখছেন, নীলম সেখানে ভ্যাম্পের ভূমিকায় অভিনয় করছে, এবং শেষে ম্যালেরিয়া এবং তীব্র প্রেমের কারণে সে মারা যায়। ফলে নীলমই মান্টোর ‘রাধা’– চিরপ্রেমিকা, চিরসহনশীল; এবং এই প্রেম যতটা মানুষের প্রতি, ঠিক ততটাই ছবি বা কাজের প্রতি। মান্টো মেয়েদের যে ‘রক্ত জল করা’ পরিশ্রমের কথা বলেন, তা আর অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর। মান্টো চিনিয়ে দেন: রাধা এবং জানকির মতো শিল্পীরা কীরূপে শারীরিকভাবে ইন্ডাস্ট্রি এবং অনুন্নয়নের ক্ষয়িষ্ণুতা বহন করে।
‘স্টার্স ফ্রম আনাদার স্কাই’-এ (অনুবাদ ১৯৯৮) অশোক কুমার সংক্রান্ত অধ্যায়ে মান্টো লিখছেন তাঁরা কীভাবে ‘আট দিন’ গল্পটি নির্মাণ করেন। মান্টো (পৃষ্ঠা: ১৬-১৭) লিখেছেন:
অশোক ফিল্মিস্তান ছাড়লেন। …কিন্তু আমি সাভাকের (সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার) জন্য অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম। তিনি ফিরে এসে অশোককে সঙ্গে নিয়ে বম্বে টকিজে গেলে আমিও তাদের সঙ্গে গেলাম। দেশভাগের প্রাক্কালে এ ঘটনা ঘটে। ব্রিটিশরা এইসময়ে উপমহাদেশের মানচিত্রে চূড়ান্ত ছোঁয়া দিয়েছিল যাতে পুরো জিনিসটি যখন ধোঁয়ায় উবে যায়, তারা দূর থেকে দেখতে সক্ষম হয়। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়েছিল এবং ক্রিকেট ম্যাচে যেমন উইকেট পড়ে, তেমনি মানুষ মারা যাচ্ছিল।
এছাড়াও, মান্টো (পৃষ্ঠা: ১৮) আবেগপ্রবণভাবে লিখছেন কীভাবে তিনি এবং অশোক কুমার একটি মুসলিম পাড়ায় প্রবেশ করেন এবং একটি সম্ভাব্য দাঙ্গার সম্মুখীন হন। তবে কিছুই হয় না, এলাকার লোকজন অশোক কুমারকে বলেন: ‘অশোক ভাই, এই রাস্তা আপনাকে কোথাও নিয়ে যাবে না। এই পাশের গলিতে ঘুরলে ভালো হয়।’ দাঙ্গায় অশোক কুমারের প্রাণহানি হয়নি বলে মান্টো হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন; এবং এর সাথে মান্টো সংযোজন করেছেন যে, কিছু দিন পরে একটি নির্দিষ্ট গল্প নিয়ে পরিচালক নাজির আজমেরির সঙ্গে তার বচসা হয়। মান্টো অনেকটা আবেগ ও খেদ নিয়ে লিখছেন (পৃষ্ঠা: ১৯): “এই বিষয়টি আমাকে বিচলিত করেছিল এবং আমি অনুভব করি যে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।… তারপর মনে মনে বললাম, ‘মান্টো ভাই, এই রাস্তাটা আপনাকে কোথাও নিয়ে যাবে না। এই পাশের গলিতে ঘুরলে ভালো হয়। তাই আমি সাইড লেন নিয়েছিলাম, যা আমাকে পাকিস্তানে নিয়ে এসেছিল…।”
প্রশ্ন হল, মানুষ কি ছবি না করতে পারলে দেশ ছেড়ে চলে যায়? বা কাজ না পেলে? বা সম্মানহানি হলে? রাগে? দুঃখে? ভয়ে? অভিমানে? বন্ধুর জন্য?
‘শ্যাম: কৃষ্ণের বাঁশি’ শিরোনাম অধ্যায়ে মান্টো দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে তাঁর ক্ষতি, ভয় এবং যন্ত্রণার তীব্র অনুভূতির কথা লিখছেন। আপনাদের মনে থাকার কথা, গুরু দত্ত-এর ‘পিয়াসা’ (১৯৫৭) ছবির দৃশ্যক্রম, যেখানে মানসিক চিকিৎসালয়ে বন্দি বিজয় শুনতে পায় নার্স তার কবিতা পড়ছে। সে যেন সংজ্ঞা ফিরে পায়, দৌড়ে গিয়ে বইটি ছিনিয়ে নিয়ে বলে: ‘এ আমার বই, আমিই বিজয়’।
মান্টোর বর্ণিত দৃশ্য অনেকটা ঠিক এইরকম– তিনি লিখছেন, তিনি যখন অ্যাসাইলামে ছিলেন (১৯৫১-’৫২ সালে) তখন শ্যামের মৃত্যুর খবর পান। শ্যাম ছিলেন ‘মজবুর’ (১৯৪৮), ‘চার দিন’ (১৯৪৯), ‘পাতাং’ (১৯৪৯), ‘কানিজ’ (১৯৪৯), ‘মীনা বাজার’ (১৯৫০) ছবির নায়ক এবং তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু। অনেকটা ঠিক বিজয় ও সাত্তার তেল-মালিশওয়ালার দোস্তির মতো। সেই সব স্বর্ণালী দিনের কথা, নির্ভরতার কথা, ঝগড়ার কথা, আরও নানা (ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির) ঘটনার কথা, মান্টো বিস্তারিত ভাবে লিখছেন। মান্টো (পৃষ্ঠা: ৫৩) বলছেন:
আমি তখন স্বজ্ঞানে ছিলাম না। কখন হুঁশ থাকছে, কখন নয়, বলা মুশকিল।… হঠাৎ চোখে পড়ল শ্যামের মৃত্যুর খবর, আমি ভাবলাম মদ বন্ধ করার ফল।… আরেকজন বন্দিকে বললাম: ‘জানেন, আমার এক প্রিয় বন্ধু মারা গিয়েছেন’। Iসে জিজ্ঞেস করল: ‘কোথায়? এই গারদের ভিতর?’ মান্টোর পক্ষে বোঝানো সম্ভব ছিল না– না, এখানে। লাহোরে নয়, বোম্বে-তে, অন্য কোনও খানে।
………………………………………………………….
আরও পড়ুন অর্ক মুখার্জির লেখা: ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে
………………………………………………………….
মান্টো (পৃষ্ঠা: ৭৩) আরও লিখেছেন:
একবার দেশভাগের সময়…শ্যাম এবং আমি রাওয়ালপিন্ডির শিখ উদ্বাস্তুদের একটি পরিবারের কথা শুনছিলাম। তারা আমাদেরকে ভয়ঙ্কর গল্প শোনাচ্ছিল কীভাবে তাদের লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম যে শ্যাম গভীরভাবে বিচলিত হয়েছে… আমরা চলে আসার পর আমি তাকে বললাম, ‘আমি মুসলিম, আমাকে খুন করতে তোমার ইচ্ছে হয় না?’ ‘এখন নয়’ সে গম্ভীরভাবে উত্তর দিল, ‘তবে যখন শুনছিলাম… তোমাকে খুন করতে পারতাম।’
শ্যামের কথায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত হলাম। হয়তো আমিও তাকে সে সময় খুন করতে পারতাম।… যে দাঙ্গায় প্রতিদিন হাজার হাজার নিরীহ হিন্দু-মুসলমান খুন হয় তার ভিত্তি আমি হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম।
এই অধ্যায়ের শেষে মান্টো তাঁর করাচি চলে যাওয়ার কথা লিখছেন। তাঁর (পৃষ্ঠা: ৭৬) কথায়:
শ্যাম সেই রাতে শুটিং করছিল।… সে সকালের দিকে এল, এবং শান্তভাবে জিজ্ঞেস করল: ‘যাচ্ছ?’ আমি বললাম: ‘হ্যাঁ’।… সে আমার জন্যে এক বোতল ব্র্যান্ডি এনেছিল…আমাকে আলিঙ্গন করে বলল: ‘শুয়োর’I আমি চোখের জল আটকাবার চেষ্টা করলাম। বললাম: ‘পাকিস্তানী শুয়োর’। ও চিৎকার করে বলল: ‘জিন্দাবাদ পাকিস্তান’ I আমি বললাম: ‘জিন্দাবাদ ভারত’।
হিন্দি ছবিতে আমরা অসংখ্য দোস্ত-ইয়ারির ‘কিস্সা-দাস্তান’ পেয়েছি। মান্টোর ফিল্ম-সংক্রান্ত লেখা যেন তারই পূর্বসূরি। যেমন দেখি, ‘পিয়াসা’য়– যে ছবির কোনও স্টোরি ও স্ক্রিন-রাইটারের ক্রেডিট নেই। তা হলে প্রশ্ন হল: এ গল্প কার? বা কাদের? এর উত্তর হয়তো হাওয়ায় ভাসছে। কিন্তু এরমধ্যেই দেখি, অলিম্পিক্স-এর মঞ্চে আরশাদ নাদিম ও নীরজ চোপড়ার দোস্তি। মান্টো ও শ্যাম যেন বলছেন: ‘জিন্দাবাদ ভারত’, ‘জিন্দাবাদ পাকিস্তান’।
(মান্টোর লেখার বাংলা অনুবাদ লেখকের)
……………………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………………