‘উৎপল দত্ত আমার মগজটা তৈরি করেছেন…। আমি যে রাজনৈতিক দীক্ষায় বড় হয়েছি, তাতে সামাজিক অন্যায় থেকে রাগ তৈরি হবে। আমার দৃষ্টিভঙ্গি এইটাই। মানুষটাকে ‘মানুষ’ হিসেবে দেখতে হবে। আজকের সময়ে সারা পৃথিবীর যা অবস্থা, তাতে ‘প্রোপাগ্যান্ডিস্ট’ থিয়েটারের আরও বাড়বাড়ন্ত হওয়া উচিত। আর, হচ্ছেও তাই। বাংলার থিয়েটার আগে একটা ‘প্রতিস্পর্ধী’ জায়গায় ছিল। সেটার আঁচ বামফ্রন্ট বুঝতে পেরেছিল নয়ের দশকে।’ টুকরো-টুকরো কথা। যেন সংলাপ। অথচ একসুতোয় বাঁধা। একান্ত সাক্ষাৎকারে এভাবেই ধরা দিলেন চন্দন সেন, তাঁর সঙ্গে কথালাপে উদয়ন ঘোষচৌধুরি।
আমার প্রথম প্রশ্ন, আপনাকে ‘চন্দনদা’ বলতে পারি তো?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
আচ্ছা, চন্দনদা, ‘মানিকবাবুর মেঘ’-এর সেট ডিজাইন, কস্টিউম এসব দেখে মনে হয় এটা একটা বাস্তবধর্মী ছবি। আবার, সেখানেই একটা মানুষের সঙ্গে এক টুকরো মেঘের প্রেম হয়। এই রিয়েলিটি থেকে ফ্যান্টাসির দিকে যাওয়ার জায়গাটা কীভাবে ধরলেন?
আমি আসলে ওটাকে ‘ফ্যান্টাসি’ হিসেবে ভাবিনি, একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষ বা মানুষীকেই কল্পনা করেছি। দেখুন, এটা একদম নিটোল প্রেমের গল্প। ওই ‘মেঘ’ ব্যাপারটা মাথাতেই রাখিনি আমি। সেটাই সুবিধা হবে বলে আমার মনে হয়েছিল।
প্রথম যখন এই স্ক্রিপ্টটা শুনেছিলেন, তখন কি জাস্ট একটা নিটোল প্রেমের গল্প মনে হয়েছিল, না আরও কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন?
কী জানেন তো, আমাদের মতো বেশ কিছু লোকের মধ্যে বিভূতিভূষণ, রবীন্দ্রনাথ, মার্কেজ এইসব পড়ার একটা খারাপ অভ্যেস আছে। সেই খারাপ অভ্যেসের জন্য জাদুবাস্তবতা বা ম্যাজিক-রিয়েলিজম জিনিসটা কোথাও যদি পাই, সেটা আমার কাছে খুব মজার হয়। অভিনন্দন (বন্দ্যোপাধ্যায়) যখন প্রথম এটা আমাকে শোনায়, তখন ওর বয়স মাত্র ২৩ বছর। আমি প্রথমে বেশ সন্দিগ্ধই ছিলাম, এটা কি সত্যিই এ লিখেছে! পরবর্তীকালে দেখেছি, এ তো লিখেইছে, আর একেবারে শিওর হয়ে ছবিটা বানানোর কাজে হাত দিয়েছে! ক্যামেরা কোথায় বসবে, ঠিক কী দেখবে– সবকিছু ওর মাথায় একেবারে ক্লিয়ার…
প্রথমবার স্ক্রিপ্ট শুনে আমার খুব আনন্দ হয়েছিল দুটো কারণে। এক, এরকম একটা সম্পূর্ণ আলাদা ধাঁচের সিনেমা এবং তাতে আমিই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করব। আর দুই, এর থেকেও বেশি আনন্দ, অনুচ্চারিত সংলাপ তৈরি করতে হবে। হাজার হাজার অনুচ্চারিত সংলাপ। এটা যে কোনও অভিনেতার কাছে একটা স্বপ্নের জায়গা। এই ৯৬ মিনিটের ছবিতে প্রায় ৯০ মিনিট ওই ব্যাপারটা তৈরি করতে হবে– এর থেকে মজার তো আর কিছু হতে পারে না…
এই অনুচ্চারিত সংলাপের ইঙ্গিতগুলো কি স্ক্রিপ্টে দেওয়া ছিল?
খুব বেশি নয়। চরিত্রটা এদিক থেকে ওদিক হেঁটে গেল, এটা করল, ওটা করল– এরকম সব ঘটনার বিবরণ ছিল… কিন্তু, দেখুন, কোনও মানুষ অপ্রয়োজনে নড়ে না। জিন তাকে নড়তে দেয় না। জিনের চেষ্টা থাকে, যতটা পারে কম শক্তি ব্যয় করবে। তাছাড়া, ব্রেনের একটা সমস্যা আছে। সে ভাবে, আবার বেশি খাটতে হবে। এই পা-কে বলো রে, হাত-কে বলো রে, কোমর-কে বলো রে… ফলত, ব্রেনও চায় না এত খাটাখাটনির মধ্যে থাকতে। তাই, ঘরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়ার যে কারণটা, সেটা দর্শককে দেখতে পেতে হবে, আর শুনতে পেতে হবে। সেইটা খুব জরুরি।
এবার, উচ্চারিত সংলাপের অনেকগুলো সুবিধা আছে। কিন্তু, অনুচ্চারিত সংলাপ যদি দর্শককে দেখানো আর শোনানো যায়, সেটা একজন অভিনেতার কাছে তূরীয় আনন্দ হয়ে ওঠে। এটা কতদূর করতে পেরেছি, কীরকম হয়েছে– সেসব দর্শক বিচার করবে। কিন্তু, আমার কাছে খুব আনন্দের বিষয় ছিল ওটাই।
আপনার নিজের মধ্যে ‘মানিকবাবু’ কতটা আছে? বা, একদমই নেই?
আমি মনে করি, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী আর আদানি-আম্বানির মতো লোকজন ছাড়া, এই পৃথিবীতে সকলের মধ্যে কিছু না কিছু ‘মানিকবাবু’ আছে। সেটা কখনও হতে পারে প্রকৃতির প্রতি প্রেম, বা কখনও একাকিত্বের আনন্দ। এবার, এই একাকিত্বের যেমন আনন্দ আছে, তেমন যন্ত্রণাও আছে। কিন্তু, ওই আনন্দটা যারা বোধ করে, অনেক মানুষের মধ্যে বসেও একা হতে পারে, নিজের জগতে চলে যেতে পারে– এরকম অনেকেই আছে। ধরুন, কেউ ছাদে একা চুপ করে বসে থাকতে পছন্দ করে। কেউ বই পড়তে পছন্দ করে। কেউ কিচ্ছুটি না করে গাছের ছায়ায় শুয়ে থাকতে পছন্দ করে। এই ব্যাপারগুলো ‘মানিকবাবু’-র মধ্যে আছে, আর কিছু না কিছু সকলের মধ্যেই আছে।
‘মানিকবাবু’ চরিত্রটা করতে আলাদা কোনও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? মানে, কিছুদিন একা থাকা ইত্যাদি ধরনের কিছু?
না, না, একেবারেই না। আমি আসলে এ ধরনের মানুষদের দেখেছি। আমার জীবনে একটা সুবিধা হয়েছে, খুব ছোটবেলাতেই আমার বাবা-মা আমাকে একা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য দীর্ঘদিন– ছয়ের দশকের শেষ থেকে সাতের দশক প্রায় পুরোটা– আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকতে হয়েছে। তাই, খুব ছোট বয়স থেকেই একা রাস্তায় বেরিয়েছি। তখন তো অত আর্টিকুলেট করতে পারতাম না। পরে, যখন ৩০-৩৫ বছর বয়েস হয়েছে, তখন স্মৃতি থেকে ওইসব নানা মানুষকে জড়ো করেছি।
তাছাড়া, অভিনেতার অন্যতম কাজ হল পাঁচজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটু আলাদা একটা মানুষকে খেয়াল করা… হয়তো সে আলাদাভাবে হাঁটে, বা আলাদাভাবে কথা বলে, বা আলাদাভাবে চোখের পাতা ফ্যালে… এরকম মানুষের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া এবং সেগুলো মনে রাখা। এটা খুব জরুরি। কিন্তু, ওদের নকল করা যাবে না। কারণ, ওই মানুষটা আর স্ক্রিপ্টের চরিত্রটা দু’জন আলাদা ব্যক্তি। তাই, পর্যবেক্ষণ করে শুধু ওই নির্যাসটুকু গ্রহণ করতে হবে।
নাসিরউদ্দিন শাহ অনেক জায়গায় বলেছেন, শুরুর দিকে তিনি মেথড অ্যাক্টিংয়ে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু, পরে রিয়েলাইজ করেছেন, একজন অ্যাক্টর পারফর্ম করার সময় সম্পূর্ণ ভুলে যেতে পারে না যে, সে পারফরম্যান্স করছে। সুতরাং, একটা কনসাসনেস থাকে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘পার’ বা ‘স্পর্শ’-এর কথা বলেছেন। ওইসব চরিত্রে কাজ করার সময়ে তিনি সচেতন ছিলেন যে, অভিনয় করছেন। আপনি যখন ‘মানিকবাবু’ করলেন, তখন চরিত্রের সঙ্গে আপনার এই অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাপারটা কেমন ছিল?
আমি জানি না, আজকে যদি এই আলোচনাটা নাসিরউদ্দিন শাহ আর ড্যানিয়েল ডে-লুইসের মধ্যে হত, তাহলে কী হত! মানে, আমি অন্তত, কোনও চরিত্র হয়ে ওঠার জন্য, ড্যানিয়েল ডে-লুইসের কাছাকাছি পৌঁছনোর মতো স্বপ্নও দেখতে পারি না। ‘স্পর্শ’ করার সময়ে নাসিরউদ্দিন সারা বাড়ি জুড়ে অন্ধ মানুষদের ছবি রেখেছিলেন। অন্ধ মানুষের মতো সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াতেন। এমনকী, সেটেও লোকজন দেখেছে, তাঁর দৃষ্টিশক্তি প্রায় নেই বললেই চলে। তো, এইসবের ফলে ‘স্পর্শ’ হয়েছে।
আবার, একইসঙ্গে এই কথাও অস্বীকার করতে পারি না… যেমন, যত বড় শোকই হোক, সেই শোককে ২৪ ঘণ্টার বেশি টেনে নিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল, যদি না সেটা একটা মানসিক অবসেশন বা অভিঘাতের জায়গায় চলে যায়, যেখানে জীবনের স্বাভাবিক বৃত্তিগুলো লোপ পেয়ে যাবে… যেমন, পরদিন সকালে টয়লেট যাওয়া, বা দাঁত মাজা, বা খাওয়া– এগুলো মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুব লজিক্যাল কিছু কাজ। খাওয়ার সময়ে হাতের আঙুলগুলোকে ভাঁজ করে ঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, মুখ পর্যন্ত গ্রাস তোলার জন্য হাতের মুঠোকে ঠিক রাখতে হবে, চোয়াল ঠিক রেখে চিবোতে হবে– এইসব করতে গেলে, যত বড় শোকই হোক, একটা সময়ের পর মানুষকে এইসব স্বাভাবিক বৃত্তির মধ্যে আসতে হয়।
তেমনই, অভিনেতাকেও কোন পজিশন থেকে কোন পজিশনে চলতে হবে, নিজের সংলাপ, অন্যান্য অভিনেতার সংলাপ, লেন্স– এসব মাথায় রাখতে হয়। কিন্তু, এইসব তৈরি হয়ে গেলে, ২-৩ মিনিটের একটা সময়ের মধ্যে যদি ঢোকা যায়, তখন ওই চরিত্রটা হয়ে ওঠা যায়। এটা আমার এই সামান্য ৪০ বছরের ছাত্রাবস্থায় ৩-৪ বার অনুভব করেছি…
অ্যাঁ! মাত্র ৩-৪ বার?
হ্যাঁ। দেখুন, এই বছর দশেক হল, আমি জঙ্গল-টঙ্গলে গিয়ে ছবি তোলা শিখছি। ছবি তোলার জন্য ঠিক যেমন অ্যাপারচার, শাটার স্পিড এবং আইএসও মনে রাখতে হয়– এই তিনটে যদি একটা জায়গায় এসে দাঁড়ায়, তবেই ছবিটা ভালো হয়। এই ব্যাপারটা সারা জীবনে হয়তো ওই ৩-৪ বারই ঘটে। তেমনই, অভিনেতার ওই শোনানো, দেখানো এবং বিশ্বাসযোগ্যতা– এই তিনটে বিন্দু একটা জায়গায় আসবে, ওই পার্টিকুলার মুহূর্তে, এটাও সারা জীবনে ওই ৩-৪ বারই হয়। আর, এটা শুধুমাত্র আমার বোধ নয়। আমার গুরু, উৎপল দত্তের কাছ থেকেও এটা শুনেছি। ভিক্টর ব্যানার্জিও একবার আমাকে এটাই বলেছিলেন। বিদেশের বেশ কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীর লেখা পড়েও এটাই জেনেছি…
তো, মূল যে প্রশ্নটা ছিল, নাসিরউদ্দিন যেটা বলেছেন, সেটাকে যেমন ফেলে দেওয়া যায় না… আবার, এই ঘটনা আমার জীবনে ৩-৪ বার ঘটেওছে। আসলে, আমার এখন খুব ইচ্ছে করছে, যদি এই আলোচনাটা নাসিরউদ্দিন আর ড্যানিয়েলের মধ্যে হত… উফ! তাহলে পৃথিবীর কত ছাত্র-ছাত্রী যে উপকৃত হত!
হ্যাঁ, কিছু কিছু চরিত্র করতে হলে, একটা যাপনের প্রয়োজন হয়। ধরুন, আমাকে যদি কয়লাখনির শ্রমিকের চরিত্র করতে হয়, তাহলে আমাকে কয়লাখনিতে গিয়ে ওই জীবনটা যাপন করতে হবে। সেটা করার পর, ফিরে এসে, আমাকে আমার পার্ট মনে রাখতে হবে। সহ-অভিনেতার সংলাপ মনে রাখতে হবে। ক্যামেরা মুভমেন্ট, আলো– এগুলো মনে রাখতে হবে। এসব করার পর, ওই যে যাপনটা, ওটা ধরুন, ওই শটের যে মিনিট খানেক সময়, সেটাতে কাজে লাগবে। ওই শটের আগে কিছুটা সময়ের যে নীরবতা চলে (মানে, চলা উচিত, আমাদের এখানে চলে না), ওই সময়ে ওই চরিত্রের যাপনের বোধগুলো মাথায় নিয়ে আসা যায়…
আচ্ছা, যখন শুটিংয়ের পর সেট থেকে বেরিয়ে গেছেন, বাড়ি ফিরেছেন, তখন কি সঙ্গে ‘মানিকবাবু’ থাকত?
আমি রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশোনা করেছিলাম। ওখানে একটা জিনিস করানো হত, সারা দিনে কী কী করলাম, সেগুলো রাত্তিরে লিখে রাখতে হত। সেই অভ্যেসটা চলে গিয়ে, পরে যেটা হল, যখন ক্রিকেটের বা অভিনয়ের ছাত্র হলাম, তখন সারা দিনে কী কী ভুল করলাম, সেটা আমার মাথার মধ্যে চলতে থাকে। মানে, আমার মাথায় এটা ঘটে। এবার, সেটা করতে গিয়েই হয়তো ‘মানিকবাবু’-র সঙ্গে আমার থাকা হয়েছে। তবে, একটা কথা বলতে পারি, ওই সেটে গিয়েও আমি খুব একটা ‘আমি’ হওয়ার চেষ্টা করতাম না।
আপনার থিয়েটার করা শুরু তো সাতের দশকের শেষদিকে, তাই না?
হ্যাঁ, ১৯৭৮ থেকে। তবে, আমি কিন্তু জন্মাবধি থিয়েটারের সঙ্গেই ছিলাম। কারণ, বাবা-মা দু’জনেই আইপিটিএ-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তো, কেউ হয়তো স্টেজে উঠবেন, হয়তো দীপালি চক্রবর্তী (লিলি চক্রবর্তীর মা) বা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়… আমাকে বললেন, ‘এই, এটা একটু ধর তো!’ বা, কোনও ছোটো বাচ্চার চরিত্র আছে, তখন আমাকে নিয়ে ঢোকা হল। ফলত, থিয়েটারের মধ্যে আমি বরাবরই ছিলাম।
আরেকটা ব্যাপার, ওই রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ার সুবাদে, ওখানে ১২০০ নম্বরের পরীক্ষা হত। ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান এগুলো নিয়ে ১০০০ নম্বর। আর, ২০০ নম্বর থাকত সিসিএ (কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ)। এর মধ্যে থাকত পোলট্রি পরিষ্কার করা, কচুরিপানা পরিষ্কার করা, সুতো কাটা, খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। আর, প্রত্যেক শনিবার দু’ঘণ্টার ক্লাস হত, যেখানে আবৃত্তি, অভিনয়, গান এসব করতে হত। এই ২০০ নম্বরের মধ্যে অন্তত ৭৫ না পেলে, সেই ছাত্রের রেজাল্ট উইথহেল্ড করে দেওয়া হত। তো, এটা আমার একটা বড় সুবিধা হয়েছিল। আমি রেগুলার বেসিসে ওইসব বিষয়ে পার্টিসিপেট করতাম। বাকি অন্যান্য বিষয়ে এমন কিছু নম্বর পেতাম না, কিন্তু সিসিএ-তে প্রায় ১২০-১২৫ পেতামই…
অন্যান্য বিষয়ে এমন কিছু নম্বর পেতেন না?
হ্যাঁ, কারণ বাবা বলতেন, ৬০-এর বেশি পেতে হবে না। কেন-না, ওই নম্বরটুকু পেলেই হোস্টেলে থাকতে দেবে। তো, ওই ৬০-৬৫ পেলেই হবে। কিন্তু, লীলা মজুমদার বা সুকুমার রায় যদি শেষ না করি, তাহলে পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেবেন। এরকম শিক্ষাতেই আমি শিক্ষিত হয়েছি।
বাবা বলতেন, বিকেল চারটে বাজে, খেলতে যাওনি কেন! সন্ধে ছ’টা বাজে, পড়তে বসোনি কেন! দু’বারেই মার খেয়েছি আমি… নর্দমায় দারুণ রঙিন মাছ ঘুরছে, স্কুল থেকে ফেরার পথে সেগুলো ধরিনি কেন! অন্যের হাতে মার খেয়ে বাড়ি ফিরেছি কেন! অন্তত একটা চড় মারিনি কেন! এভাবেই বড় হয়েছি, আর কী…
মানে, এ তো একেবারে যাকে বলে ‘হোলিস্টিক’ ব্যাপার-স্যাপার…
হ্যাঁ, আমার নানা চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে একটা বড় সুবিধা হয়েছে, আটের দশকের শুরু থেকে ২০০৫ পর্যন্ত পার্ক সার্কাস সিআইটি রোডে থেকেছি। ওখানে আমার যৌবনের মূল সময়টা কেটেছে। ওটা একটা সত্যি-সত্যি কসমোপলিটান এরিয়া। ওখানে বিহারি মুসলমান আর বাঙালি মুসলমান, প্রচুর ক্রিশ্চান, চাইনিজ, পার্শি– এরকম সবাই পাশাপাশি আছে। যাদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছি, পরবর্তীকালে তাদের অধিকাংশই মাফিয়া বা জিগোলো হয়েছে। এদের সঙ্গে জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছি। ফলত, কত রকমের মানুষ দেখতে পেরেছি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে একবার বলেছিলাম, আপনারা আন্ডারওয়ার্ল্ডের মানুষ চেনেনই না! ওদের চিন্তা-ভাবনা, চাল-চলন কিচ্ছু জানেনই না! ওদের নিজস্ব রীতিনীতি আছে। ওরা এত্ত ‘হিউম্যান’ হয়, সেসব আপনাদের কল্পনার বাইরে। যারা মনে করে, এদের মাথায় সব সময় কু-জিনিস ঘোরে, তারা সাংঘাতিক ভুল। এদের মতো সু-চিন্তা করতে পারে, এমন মানুষ আমাদের এই তথাকথিত ‘সুস্থ’-দের মধ্যে নেই। সেইসব অভিজ্ঞতা আমার অভিনয়ের কাজে লেগেছে।
উৎপল দত্তের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রপাত কোথায়? কীভাবে?
বাবার সঙ্গে উৎপলদা-র খুব যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্রে আমাকে তিনি দেখেছিলেন, চিনতেন। রমাপ্রসাদ বণিক যখন আমাকে দল থেকে তাড়িয়ে দেন, তখন সবে ‘নাট্য আনন’ শুরু করেছিলাম। এদিকে, আমি কিন্তু পিএলটি-তে যাওয়াই পছন্দ করেছিলাম। ওখানে দুটো নিয়ম ভেঙে আমাকে নেওয়া হয়েছিল। এক নম্বর নিয়ম ছিল, পার্টি মেম্বার হতে হবে। আর দুই, অন্য দল থেকে কখনও নেওয়া যাবে না। আমার ক্ষেত্রে বলা হল, রমাপ্রসাদ যদি লিখে দেন, আমার সঙ্গে তাঁর দলের কোনও সংস্রব নেই, তাহলে নেওয়া হবে। তো, রমাদা খুবই ভালো করে লিখে দিয়েছিলেন…
রমাপ্রসাদ বণিক আপনাকে ‘তাড়িয়ে’ দিয়েছিলেন কেন?
প্রথমত, তিনি কংগ্রেসি ছিলেন। আর, আমি ভীষণভাবে মার্কসবাদ পড়া, স্টাডি সার্কেল তৈরি করা এসব করছিলাম। ওখানে ওঁর প্রচণ্ড আপত্তি ছিল। উনি কিন্তু আমাকে পছন্দ করতেন। আমাকে অনেক দায়িত্ব দিতেন। সম্মানও পেয়েছি ওঁর সঙ্গে কাজ করে।
দ্বিতীয় ঘটনা, কেউ একজন ওঁকে বলেছিল, ‘চন্দন বলেছে, শালা রমাপ্রসাদের জীবনে কিসসু হবে না!’ তো, পরে রমাদা জানতে পেরেছিলেন যে, ওই কথাটা খুব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যে বলা হয়েছিল। রমাদা তখন আমাকে বলেছিলেন, ‘ওসব শালা-ফালা নিয়ে ভাবতে হবে না, থিয়েটারটা হচ্ছে কি না, সেটা ভাবো।’
এটা কোন সময়ের কথা?
আমি পিএলটি-তে জয়েন করি ১৯৮৮-র শেষদিকে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ। তারপর, ১৯৯৩ পর্যন্ত ওখানে ছিলাম। তবে, মধ্যে মধ্যে এই ‘নাট্য আনন’-এর নাটক নির্দেশনার কাজও করেছি… ওই পিএলটি-তে যে সাড়ে ৪ বছর কাটিয়েছি, ওটা আমার জীবনের খুব উজ্জ্বল একটা অংশ… রমাপ্রসাদ বণিক আমাকে থিয়েটারের যাবতীয় খুঁটিনাটি, অভিনয়ের অনেকগুলো বিভাজন ইত্যাদি শিখিয়েছেন। কিন্তু, উৎপল দত্ত আমার মগজটা তৈরি করেছেন…
শুনেছি, উৎপল দত্তের সংগ্রহে প্রায় ৩৫ হাজার বই ছিল এবং সেই লাইব্রেরি আপনি গোছাতেন!
আমি আর বোস ইন্সটিটিউটে অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির প্রাক্তন হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট শৌভিক রায়চৌধুরী (ডাকনাম, রঙ্গন)– এই দু’জনে মিলে দু’বার ওই লাইব্রেরি গুছিয়েছিলাম।
ব্যক্তি মানুষ হিসেবে উৎপল দত্তকে কেমন দেখেছেন?
একেবারে সরল শিশুর মতো ছিলেন। আমি আর ওই রঙ্গন– দু’জনে তাঁর খুব কাছাকাছি থাকতাম। রিহার্সালের সময়ে স্ক্রিপ্ট ইত্যাদি পড়া এইসব কাজ একসঙ্গে করতাম। আমার কাজকর্মে উৎপলদা খুব খুশি ছিলেন। মানে, এরকম বলতেন, ‘এই যে কমরেড, রেডি হন! নইলে কানের পাশ দিয়ে বুলেট বেরিয়ে যাবে!’
তো, রঙ্গন হয়তো কখনও বলল, ‘চন্দন আপনাকে কাল যে বইটা দিল, ওটা পুরো বোগাস! এই বইটা পড়ে দেখুন!’ উৎপলদা তখন আমাকে ডেকে বলতেন, ‘কমরেড চন্দন! আপনি এসব ভুলভাল বই পড়েন কেন, বলুন তো!’ এবার আমি আরেকটা বই হয়তো পড়ালাম, তখন রঙ্গনকে ডেকে বলতেন, ‘দেখুন কমরেড, এটাও কিন্তু খুব জরুরি একটা বই!’
একটা ঘটনা বলি, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে ওই মানুষটাকে। সালটা এখন মনে নেই, ১৯৯০ বা ১৯৯১ হবে, সারা পৃথিবীর বিখ্যাত ১০ জন থিয়েটার ডিরেক্টর নিয়ে একটা কনফারেন্স হয়েছিল ইংল্যান্ডে। ওই ১০ জনের একজন, উৎপল দত্ত। সেখানে সাইকোলজিক্যাল কিছু বিষয় আর ফ্রয়েড নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়। সেখান থেকে তিনি একটা ভাবনা-চিন্তা নিয়ে ফিরলেন। আমাদের বললেন, ‘মানুষের সভ্যতাকে বাইরে থেকে ধাক্কা দিয়েছেন কার্ল মার্কস, কিন্তু ভেতর থেকে ধাক্কা দিয়েছেন ফ্রয়েড!’
এবার, রঙ্গন যেহেতু অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি পড়ায়, ওকে বললেন, ‘আমাকে পড়ান।’ হয়তো বিশ্বাস করবেন না, আমি যখন বিকেলবেলায় যেতাম ওঁর কাছে, দেখতাম ছাদের ঘরে বসে তিনি রীতিমতো পরীক্ষা দিচ্ছেন! পড়ানোর পর, রঙ্গন কিছু প্রশ্ন দিয়েছে, উনি খাতাপত্র নিয়ে উত্তর লিখছেন…
তখন তো তাঁর প্রচুর বয়েস!
হ্যাঁ, তাতে তাঁর কিচ্ছু যায় আসে না… তো, ৪ মাস পড়ানোর পর, পরীক্ষা নেওয়ার পর, রঙ্গন বলল, ‘আই অ্যাম ড্রায়েড আপ!’ মানে, রঙ্গন যা কিছু পড়াশোনা করেছে অত বছর ধরে, সব তিনি শুষে নিয়েছেন। উৎপলদা দমেননি কিন্তু! বললেন, ‘বলুন, আর কার কাছে যাব?’ রঙ্গন বলল, ‘বিশ্বাস করুন, এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাইকোলজিস্ট হিসেবে আপনার নম্বর! লিখিত পরীক্ষায় এত ভালো নম্বর আর কারও নেই!’ তিনি বললেন, ‘না, আমাকে আরও জানতে হবে… বলুন, কার কাছে যাব?’ রঙ্গন বলল, ‘তাহলে আমার স্যর আছেন, ডঃ সুবীরলাল চক্রবর্তী…’ উৎপলদা বললেন, ‘হ্যাঁ, তাঁর কাছে যাব।’
রঙ্গন গিয়ে ওর স্যরকে জানাল। তো, তিনি ব্যাপারটা শুনে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘ওঁর কি মস্তিষ্কের গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে!’ রঙ্গন খাতাপত্র দেখিয়ে বলল, ‘আমি এই ৪ মাসে নিঃশেষ হয়ে গেছি, উনি প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর লিখে লিখে দিয়েছেন… এখন আপনার কাছে বাড়িতে এসে আরও পড়তে চান…’ স্যর বললেন, ‘পাগল! উৎপল দত্ত আমার বাড়িতে ঢোকার মানে আমার বাড়ি ভেঙে যাবে! আমিই যাব ওঁর কাছে।’ তো, এই পর্যন্ত হওয়ার পর ব্যাপারটা আর এগোল না। উৎপলদা-র অসুখটা এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়াল, আর ওই ‘আগন্তুক’-এর কাজ শুরু হল… ওই সময়টায় উনি খুব ভালো ছিলেন…
যেটা বলছিলাম, ওই কনফারেন্স থেকে ফিরে, উনি আমাদের নিয়ে ১০ দিনের একটা ওয়ার্কশপ করেছিলেন। বিকেল পাঁচটা থেকে রাত্রি ন’টা পর্যন্ত। ওইসময়ে আমাকে সত্যদা-ও (বন্দ্যোপাধ্যায়) বলেছেন, ‘আমি উৎপলদা-কে এত এনার্জেটিক বহুদিন দেখিনি।’ তো, ওই দশটা দিন আর আরেকটা দিন, এই এগারোটা দিন আমার জীবনের পাথেয়। ওই কয়েকটা দিনের স্মৃতি সম্বল করে আমি আগামী সাড়ে ৩০০ বছর আনন্দে কাটাতে পারি।
ওই যে আরেকটা দিন, ওইদিন ওঁর গুরু এসেছিলেন, জিওফ্রে কেন্ডেল। তখন বিকেল চারটে বাজে। পড়ন্ত আলোয় আমরা সবাই ছাদে আছি। উৎপলদা বললেন, ‘দেখুন কমরেডস, অভিনেতা অনেকটা ম্যাজিশিয়ানের মতো। জাদুকর যেমন মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে অভীষ্ট কাজটা শেষ করে, তেমনই অ্যাক্টর যদি চায়, তাহলে দর্শকের দৃষ্টি পার্টিকুলার সেদিকেই আটকে রাখতে পারে।’ তারপর, জিওফ্রে কেন্ডেল একটুখানি পাউডার হাতে নিলেন। পেন থেকে খানিকটা লাল কালি সেটার মধ্যে ঢাললেন। তারপর, সম্ভবত ‘ইট ইজ দ্য কজ’ বা ‘লেডি ম্যাকবেথ’-এর কোনও একটা অংশ বলতে আরম্ভ করলেন। আমি তাঁর থেকে মাত্র আড়াই ফুট দূরত্বে বসে আছি। কখন যে বুক পকেট থেকে পেনটা নিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, আমরা কেউ টের পাইনি। মানে, দেখতেই পাইনি। ওদিকে, উৎপলদা মুখে রুমাল চাপা দিয়ে হাসছেন…
আচ্ছা, উৎপল দত্ত নিজেকে ‘প্রোপাগ্যান্ডিস্ট’ বলতেন, ওঁর থিয়েটারে সেসব নিয়েই কাজ করেছেন। আপনার কাছে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে সেই ‘প্রোপাগ্যান্ডা’-র অর্থ বা মূল্য কেমন মনে করেন?
এই প্রশ্নের একটাই উত্তর আমি দিতে পারি। পৃথিবীতে ‘অ্যাপলিটিকাল’ বলে কিছুই হয় না। এখন নানা কথা শোনা যায়, ‘অরাজনৈতিক’ ইত্যাদি… ভাবুন, ঠিক এই সময়ে কলকাতায় যে অসম্ভব একটা আক্রমণাত্মক অবস্থা চলছে, সেখানে কেউ কেউ বলছে, ‘অরাজনৈতিক হতে চাই’… কিন্তু, আমার জিজ্ঞাসা, ‘সরকার’ বিষয়টা তো রাজনৈতিক! সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে, কীভাবে ‘অরাজনৈতিক’ হয়? রাজনীতির একটা সামগ্রিক রূপ আছে, আর ‘দলীয় রাজনীতি’ আছে। দুটো আলাদা জায়গা। কেউ বলতে পারে, সে ‘দলীয় রাজনীতি’-তে আস্থা রাখে না। সেখানে আমি একমত হব।
তো, এই প্রশ্নের উত্তরে বলি, এখানে সবার আগে বাদ দিতে হবে শেক্সপিয়ারকে, রবীন্দ্রনাথকে, শ-কে। এঁরা সবাই কিন্তু কোনও না কোনও মতবাদের ‘প্রোপাগ্যান্ডা’ করেছেন। সুতরাং, ‘প্রোপাগ্যান্ডিস্ট’ নয়, এমন কীভাবে কেউ হতে পারে! মাঝখানে একটা সময়ে এখানে ‘রবীন্দ্র ছ্যাদ্দ’ ‘বিবেক ছ্যাদ্দ’ এসব হচ্ছিল। তো, বিবেকানন্দের ১৫০ বছর পূর্তিতে আমরা ‘যুবনায়ক’ করেছিলাম। সেখানে ‘অধ্যাত্মবাদ’ খুব বড় বিষয় হিসেবে ছিল না, জাস্ট একটা আলোচনা ছিল। মূল বিষয় ছিল, সেইসময়ে দাঁড়িয়ে ‘বৈপ্লবিক’ ভাবনা… তো, আপত্তি উঠল, চুরুট খাওয়া নিয়ে। আমি বললাম, ‘ভদ্রলোকের মুখ নর্দমার থেকেও খারাপ ছিল, গালাগালি ছাড়া কথা বলতেন না প্রায়। সেটা বাদ দিয়েছি। আর, বাকিটা একেবারে চিমনি ছিলেন। তো, সেই ‘মানুষ’-টাকে তো দেখতে পেতে হবে কোথাও!’
আমার দৃষ্টিভঙ্গি এইটাই। মানুষটাকে ‘মানুষ’ হিসেবে দেখতে হবে। আজকের সময়ে সারা পৃথিবীর যা অবস্থা, তাতে ‘প্রোপাগ্যান্ডিস্ট’ থিয়েটারের আরও বাড়বাড়ন্ত হওয়া উচিত। আর, হচ্ছেও তাই। আমার নিউইয়র্কের বন্ধুরা, ড্রেসডেনের বন্ধুরা, ওসাকার বন্ধুরা, ইরানের পরিচিতরা– তারা আর ওই ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ বলে গলা কাঁপিয়ে কিছু করছে না… দেখুন, আন্দোলনের তিনটে ভাগ আছে– প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং সংঘর্ষ। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ অনেক হয়েছে। কিন্তু, এখন যা অবস্থা, এটা পুরোপুরি মুখোমুখি সংঘর্ষের সময় চলে এসেছে। গাজা-র ঘটনার পর এটার আরও বেশি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
এই সূত্রে বলি, ওই ‘অম্রুৎ মহোৎসব’ শুনে আমার বড় জ্বালা ধরেছিল… ওইটার বিরুদ্ধে আমরা উৎপল দত্তের ‘দিল্লি চলো’ নাটকটাই এখন করি…
যদি উৎপল দত্ত এখন আপনাকে দেখতেন, তাহলে কি তিনি মনে করতেন একজন ছাত্র বা শিষ্য হিসেবে তাঁর ধারাটা আপনি ঠিকঠাক বহন করছেন?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে মুশকিল। তবে, বিভাস চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, পবিত্র সরকার– এরকম ১০-১২ জন আছেন, যাঁরা মনে করেন আমি ওই ধারাতেই আছি।
থিয়েটার ছাড়াও আপনি দীর্ঘদিন টেলিভিশন আর সিনেমায় কাজ করছেন। সিনেমায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ, অঞ্জন দত্ত, সুমন মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়– এঁদের পর, অভিনন্দনের মতো একজন আনকোরা অল্পবয়সি পরিচালক… কাজ করার অভিজ্ঞতাগুলো কেমন ছিল?
অঞ্জন দত্ত একদম আলাদা। আমাকে প্রায় সাত-আটটা ছবিতে সুযোগ দিয়েছেন। ‘আলাদা’ মানে, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ ছাড়া যখন অন্য কিছু করেন আর আমাকে ডাকেন, সেইসময়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্ক্রিপ্ট তো একটা লিখেছি, কিন্তু তুমি কীভাবে করতে চাও?’ এই প্রশ্রয়টা উনি আমাকে, অপুকে (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়), সুদীপাকে (বসু)– এরকম কয়েকজনকে দেন। এই অ্যাপ্রোচটা কিন্তু ‘ব্যোমকেশ’-এর সময়ে রাখেন না। তখন একেবারে যেটা হবে, সেটা স্ক্রিপ্টেই স্থির করেন।
আর, সত্যি কথা, ঋতু আমাকে প্রথমদিকে নিতে চায়নি। পরে, অন্যদের কথায় নিয়েছিল। ‘বাড়িওয়ালি’-তে মাত্র দুটো সিন ছিল। শুটিংয়ের সময়ে ওর ভীষণ সর্দি-ফর্দি হয়েছিল। খুবই তাড়া দিয়ে কাজ শেষ করিয়েছিল।
কিন্তু, অভিনন্দনের ক্ষেত্রে যেটা দেখলাম, আমার এই ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় সেটা সম্পূর্ণ নতুন। স্ক্রিপ্টের পর কিছু না কিছু অ্যাডজাস্টমেন্ট বা চেঞ্জ– এসব শুটিং ফ্লোরে করতে হয়। ‘মানিকবাবুর মেঘ’-এ সেগুলো কিচ্ছু হল না। ঠিক যেমনটা আমাকে ন্যারেশন দিয়েছিল, ঠিক তেমনটাই হল। ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল ইত্যাদি সবকিছু আগে থেকে স্থির করে রাখা ছিল। শুটিংয়ের সময়ে কিচ্ছুটি পাল্টাল না।
টেলিভিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমার মতে, টেলিভিশনে অভিনয় করা সবথেকে কঠিন। কারণ, অধিকাংশ মানুষ ওটা দ্যাখে না, অন্যান্য কাজ করতে করতে শোনে। সিনেমা বা থিয়েটারের ক্ষেত্রে পুরো ঘর অন্ধকার করে দর্শকের মনঃসংযোগ পর্দা বা স্টেজের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, যদি না সেটা ওপেন-এয়ার হয়। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে পাখা চলছে, পাশের বাড়িতে ফোড়ন দিচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করছে– চারিপাশে এইসব চলতে থাকে… অভিনেতার কাজ হল ওইসবের মধ্যে থেকে দর্শককে সামনে টেনে আনতে হবে। এখানে একসঙ্গে তিনটে জিনিস করতে হয়– যাত্রা, থিয়েটার এবং সিনেমা। তো, ওইটা খুব কঠিন।
একই সময়ে, একই ফিল্ডে, একই নামে দু’জন– আপনি ও ‘নাট্যকার’ চন্দন সেন। এই সমনামের কনফিউশনের মুখোমুখি হয়েছেন কখনও?
হ্যাঁ, অনেক ঘটেছে। ওঁকে খুঁজতে গিয়ে কেউ কেউ আমাকে ফোন করেছে। আমি যদিও দশ-বারোটার বেশি নাটক লিখেছি, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, সবগুলো নাটক আমারই লেখা… তো, আমাকে তখন বোঝাতে হয় যে, উনি অত্যন্ত সিনিয়র প্লেরাইট। একবার একটা ছেলে আর মেয়ে এসে আমাকে খুব প্রণাম-টনাম শুরু করল। আমি অবাক, এমন কিছু তো করিনি যাতে এই আক্রমণটা হতে পারে! তারা বলল, “আপনার ‘দায়বদ্ধ’ দেখলাম…’’ বললাম, ‘‘ওটা আমি লিখিনি, ওটা ‘বড়’ চন্দন সেনের লেখা! ব্যারাকপুরে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করা দরকার!’’ ইদানীং, ওইসব কারণে অনেকে আমার ক্ষেত্রে ‘অভিনেতা’ চন্দন সেন লেখে…
আপনি যে সময় থেকে থিয়েটার চর্চা শুরু করেছেন, আর এখন নতুন যারা আসছে– আপনাদের সময়ের সেই আগ্রহ বা পরিশ্রম কি এখনও দেখতে পান?
কিছু ক্ষেত্রে আছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেই। কিছু ক্ষেত্রে দলের ডিরেক্টর ওদের বাধ্য করে। কিন্তু, আমাদের স্বতঃপ্রণোদিত ইচ্ছে ছিল। সেটার অভাব এখন দেখতে পাই। এর একটা বড় কারণ, ২০১১-এর পর থেকে ব্রাত্যরা (বসু) হঠাৎ করে ‘কোম্পানি থিয়েটার’ নামের একটা চেষ্টা করলেন। এটা খায় না মাথায় দেয়, কিচ্ছু বুঝিনি। ব্রাত্য-কে বলেছিলাম, ‘এর জন্য তো একজন প্রযোজক লাগে, যে লগ্নি করবে এবং লগ্নির লভ্যাংশ বুঝে নেবে… এখানে কে লগ্নিকারী? কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান? তাহলে, কেন্দ্রীয় সরকার প্রযোজক?’
আগে লোকে ‘নাটক’-টা দেখতে আসত। মোটামুটি ২০০১-এর পর থেকেই ধীরে ধীরে পুঁজির দাপট বাড়তে শুরু করল। ফলত, পুঁজির নিজস্ব সংস্কৃতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। সেখানে, ভীষণভাবে ‘ব্যক্তি’-কে প্রাধান্য দেওয়া এবং ‘সাফল্য’-এর মাপকাঠিটা ‘টাকা’-র অঙ্কে মাপা শুরু হল। ইদানীং শুনছি, ইন্সটাগ্রামের ফলোয়ার দিয়েও মাপা হয়। তো, ‘বিক্রি’ হওয়াটাই মূল লক্ষ্য দাঁড়াল। বাংলার থিয়েটার আগে একটা ‘প্রতিস্পর্ধী’ জায়গায় ছিল। সেটার আঁচ বামফ্রন্ট বুঝতে পেরেছিল নয়ের দশকে। ওই সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর থিয়েটার করেছি। সেই ‘প্রতিস্পর্ধী’ ব্যাপারটা ২০১১-এর পর থেকে একেবারে ‘অনুপ্রাণিত’ এবং ‘অনুগৃহীত’ জায়গায় পৌঁছে গেল। তাই, ‘বিক্রি’ হওয়ার জন্য কয়েকটি পরিচিত মুখ, স্ক্রিপ্টে নাচ-গান এসবের ঝোঁক… সেই স্পর্ধাটাই কমে গেছে…
অবশ্য, আমি আশাবাদী, ওটা আবার আস্তে আস্তে বাড়বে। সেটাই সভ্যতার ইতিহাস। এখন এই বাংলায় যে ‘হাঁসজারু’ অবস্থা, এর প্রতিফলন সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ঘটছে। তবে, ধীরে ধীরে নতুন যেসব ছেলে-মেয়ে আসছে, তাদের দেখে ভালো লাগছে যে, তারা অনেক বেশি সচেতন। অবশ্য, আমার দেখা বা জানাটা খুবই সীমিত। গোটা পশ্চিমবঙ্গের চেহারাটা বলতে পারব না।
দর্শকদের দিক থেকে আগ্রহ বা উৎসাহ আগের মতোই আছে?
দর্শকের ঝোঁক হয়েছে, কে অভিনয় করছে, কোন স্টার আছে– এই খবরটা নেওয়া। আগে, মানুষ দলের নামে থিয়েটার দেখতে আসত। এখন সেটা নেই। খুবই হাস্যকর লাগে, একটা ভীষণ প্রান্তিক অবস্থায় পড়ে থাকা বাংলার থিয়েটার না কি ‘স্টারডম’ তৈরি করতে চায়!
আবার, আমরা যে ধরনের নাটক করি, সেই ধরনের বাইরে গেলে গালও খেয়েছি… কী হয়, কোনও ঘটনা ঘটলে সব জায়গায় সেই গল্পটা বলবে, সেই নৃশংসতার চূড়ান্ত বিবরণ দেবে, কিন্তু ‘কেন’-টা বলবে না। ওই ‘কেন’-টা বললেই, কোনও কমিটমেন্টে যেতে হবে। বলতে হবে, কোন ব্যবস্থায় কোন ব্যক্তির জন্য ওই ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং, সবথেকে ভাল উপায়, ‘সিল্পি’ হয়ে থাকা… ওতে কোনও ‘কেন’ বলতে হবে না… বরং সরকারি অনুদান, কার্ড ইত্যাদি সহজে পাওয়া যায়…
বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে আপনাকে প্রায়ই দেখেছি, পত্র–পত্রিকা খুঁজে দেখতে দেখেছি। এই যে বাণিজ্য–বিরোধী বা অন্য স্বরের সাহিত্যের চর্চা– এসব কি কিছু পালটেছে আগের তুলনায়?
স্টলের সংখ্যা কমেনি। যেটা হয়েছে, এখনের বেশ কিছু পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখা যায়। কারণ, না হলে চলছে না। অর্থনৈতিক অবস্থা এমন একটা স্তরে চলে গেছে, মানুষের দু’বেলা বাঁচা মুশকিল। কিন্তু, লিটল ম্যাগাজিনের কর্মকাণ্ড কমেনি। যখন শিলিগুড়ি, বর্ধমান, নদীয়া বা আমতলার বইমেলাতে যাই, তখন দেখি পুরনো স্টলও আছে। সেসব উবে যায়নি।
মানে, লেখার বা চর্চার মান আগের মতোই আছে?
এটা আমি বলতে পারব না। কারণ, আমার খুব বেশি লিটল ম্যাগাজিন পড়ার সময় হয় না এখন। অন্যান্য বইপত্র পড়ে, কাজকর্ম করে বাড়তি সময় পাই না।
অভিনয় জীবনে কোনও অপ্রাপ্তি আছে? এমন কোনও চরিত্র, যেটা এখনও কেউ দিল না? বা, অন্য কারও অভিনীত চরিত্র দেখে মনে হয়েছে, সেটা আপনি করলে দুর্দান্ত করতেন?
শেষে যেটা বললেন, ওটা আমার সারা জীবনে কখনও মনে হয়নি। বরং, সব সময়ে মনে হয়েছে, ওরে বাবা! আমি পারব না! আমাকে কেউ কোনও নতুন চরিত্র দিলে, সেটা আমার কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’ মনে হলে, সেটুকুই আমার আনন্দের জায়গা। চরিত্রটা হয়ে উঠতে পারলাম কি না, সেটা নিজের কাছেও বোঝা জরুরি। বহু ক্ষেত্রে, দর্শক মনে করে, অভিনয়টা বা চরিত্রটা দারুণ হয়েছে। কিন্তু, একজন অভিনেতা হিসেবে, আমি জানি কোথায় কোথায় হয়নি। এটা সব অভিনেতারই মাথায় থাকা উচিত।
আসলে, আমি এত কম পেয়েছি যে, অপ্রাপ্তির অশান্তিটা তৈরিই হয়নি। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে, ওই কেরানি-বৃত্তিটা এখনও ভুলতে পারিনি। এই ডেইলি-সোপের কাজে মাস গেলে যে টাকা পাওয়া যায়, এতেই আমি খুব সন্তুষ্ট থেকেছি… পাশাপাশি আমার থিয়েটার, বেড়াতে যাওয়া, পাহাড়ে বা জঙ্গলে যাওয়া– এসব করতে পেরেই আনন্দে থেকেছি…
পাহাড়, না জঙ্গল– দুটো অপশন দিলে কোথায় যাবেন?
যেখানে পাহাড় আর জঙ্গল দুটোই আছে, সেখানে আগে যাব। যেমন, করবেট…
আরেঃ বাঃ! ঘটনাচক্রে, বছর দুই আগে করবেটের জঙ্গলে, একটা রিসর্টে, ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়ে প্রথম ‘মানিকবাবুর মেঘ’ দেখেছিলাম…
বাঃ! তাহলে তো নিশ্চয়ই আরও চমৎকার অভিজ্ঞতা!
হ্যাঁ, ইন ফ্যাক্ট, আমার বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করছিলাম, ওরকম একটা জায়গায় ছবিটা দেখে কি ওরকম প্রভাবিত হলাম! তারপর, এখন আবার দেখে বুঝলাম, ছবিটার মধ্যেই একটা ম্যাজিক আছে…
আচ্ছা, বেশ বেশ…
চন্দনদা, এখন চারিপাশে যেরকম ডিপ্রেসিং ঘটনা আর সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি সবাই, সেখানে দাঁড়িয়ে আপনি রোজ কীভাবে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন?
আমি যে রাজনৈতিক দীক্ষায় বড় হয়েছি, তাতে সামাজিক অন্যায় থেকে রাগ তৈরি হবে। সেই রাগকে পর্যবসিত করতে হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। আপনি যদি ডিপ্রেসড না হয়ে, রেগে যান– তাহলেই দেখবেন, খুব পজিটিভ হয়ে উঠছেন। রেগে গেলে, যুক্ত হবেন। ডিপ্রেশনে গেলে ওটা হবে না, ওটা মানুষকে বিযুক্ত করে। এটা আমার আজীবনের, মানে এই ৬২ বছরের প্র্যাকটিস…
এবার একটা সংবেদনশীল প্রশ্ন, আমার নিজেরই একটু কিন্তু–কিন্তু লাগছে… আপনি ষাটোত্তীর্ণ, একটা ভয়ানক অসুখ পেরিয়ে এসেছেন… মৃত্যুচিন্তা মাথায় আসে?
না, এখনও না। ওইসব চিন্তা মাথায় রেখে কোনও লাভ নেই। বরং, একটা বড় সুবিধা হয়েছে, আমি তো এক্সট্রা টাইমে খেলছি। তাই, যতক্ষণ ভালো খেলা যায়, খেলব…
যখন ওই দেখলাম, কত কী জানি না, আর ‘আমি জানি’ বলে হামবড়াই করতাম, তারপর দেখলাম ‘জানি না’-র মহাসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছি… তখন, বাকি ওইসব ভেবে কোনও লাভ হয় না… যতদিন আছি, থাকব– জানব আর জানাবার চেষ্টা করব…
উৎপলদা-র একটা এক্সপ্রেশন দেখেছিলাম, জানি না আমি কোনও দিন ওটা দিতে পারব কি না! যখন ওঁর ডায়ালিসিস চলত, তখন ওই প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে উনি কানে হেডফোন লাগিয়ে বাখ শুনতেন। আমি আর রঙ্গন দরজার কাছে বসে থাকতাম। একদিন, হঠাৎ কাছে ডাকলেন। বললেন, ‘কোনও প্রশ্ন নেই? প্রশ্ন করো, প্রশ্ন করো!’ এই যে জানাতে চান, দিয়ে যেতে চান– এই শিক্ষার থেকে বড় শিক্ষা আর কিছু হয় না।
আমার বা আপনার কাজ বা জ্ঞান বা চিন্তা-ভাবনা যদি পরবর্তী প্রজন্মের কাজে না লাগে, তাহলে ‘বেঁচে থাকা’-টার কোনও মানে নেই। অন্তত আমি তাই মনে করি। শুধু নিজের সন্তানের জন্য কিছু করে গেলাম, এতে এমন কিছু নেই… যে কারণে ‘প্রজন্ম’ শব্দটা ব্যবহার করছি…
এটাকে এক ধরনের ‘এগজিস্টেনশিয়ালিজম’ বলতে পারেন। কিন্তু, এইভাবেই আমি ভেবে এসেছি বিগত ৪০ বছর। শুনতে হয়তো বড় বড় কথা লাগে, কিন্তু একটু প্র্যাকটিস করলেই হয়ে যায়, করা যায়।
সত্যিই খুব তৃপ্তি পেলাম এতক্ষণ ধরে কথা বলে। অনেক কিছু জানলাম। সময়টা খুব সুন্দর কাটল…
আমারও… সবসময় এরকম সব প্রশ্ন পাই না…
অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন…
হ্যাঁ, আপনারাও সবাই ভালো থাকবেন।
……………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার.ইন
……………………………………………