২০১৩-র ১৩ নভেম্বর দিনটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ১০০ বছর আগে এই দিনেই রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তির সংবাদ ঘোষিত হয়। ‘সকাল সকাল’ অনুষ্ঠানে আমরা এই দিনটিকে উদযাপন করলাম। তথ্যে ও গানে ভরপুর ছিল সে সকাল। কবে কোন অবস্থায় শিলাইদহে বসে অসুস্থ শরীরে অনুবাদ শুরু করলেন, কেমন করে দু’টি ছোট খাতা ভরে এল, তারপর ইংল্যান্ড যাত্রা, শিল্পী রদেস্টাইনের ব্যবস্থাপনায় ‘Hampstead Heath’-এ থাকা, ইয়েটসের সঙ্গে পরিচয়, ‘Song Offerings’ (ইংরেজি গীতাঞ্জলি)-র প্রকাশ ইত্যাদি সব ছিল তাতে, তারপরের ইতিহাসটুকু তো বটেই।
২০.
‘সকাল সকাল’ নামে এক প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু হল এবং কিছুদিনের মধ্যেই জনপ্রিয়ও হল। প্রথম দিন থেকেই শাশ্বতী উপস্থাপনা করত। কী যে সুন্দর এক একদিন এক একটা গল্প বলে শুরু করত, যাঁরা দেখেছেন তাঁরাই জানেন। বিশেষ কিছু দিনে আমি এসেছি ‘সকাল সকাল’-এ। তেমনই কয়েকটা অনুষ্ঠানের কথা বলি।
কোনও এক বছর ২৫ নভেম্বর ‘সকাল সকাল’ হয়েছিল কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনকে ঘিরে। ওইদিন কবি অমিতাভ দাশগুপ্তরও জন্মদিন। তাঁদের কথা ও কবিতার মধ্যে দিয়েই পালন করা হল জন্মদিন। রত্না মিত্র ছিলেন আমার সঙ্গে। একবার সকালে শাশ্বতী, আমি– দু’জনেই ছিলাম, আর অতিথি ছিলেন মমতা শংকর।
২০১৩-র ১৩ নভেম্বর দিনটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ১০০ বছর আগে এই দিনেই রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তির সংবাদ ঘোষিত হয়। ‘সকাল সকাল’ অনুষ্ঠানে আমরা এই দিনটিকে উদযাপন করলাম। তথ্যে ও গানে ভরপুর ছিল সে সকাল। কবে কোন অবস্থায় শিলাইদহে বসে অসুস্থ শরীরে অনুবাদ শুরু করলেন, কেমন করে দু’টি ছোট খাতা ভরে এল, তারপর ইংল্যান্ড যাত্রা, শিল্পী রদেস্টাইনের ব্যবস্থাপনায় ‘Hampstead Heath’-এ থাকা, ইয়েটসের সঙ্গে পরিচয়, ‘Song Offerings’ (ইংরেজি গীতাঞ্জলি)-র প্রকাশ ইত্যাদি সব ছিল তাতে, তারপরের ইতিহাসটুকু তো বটেই। ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’, ‘নৈবেদ্য’, ‘খেয়া’র যেসব কবিতা ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে স্থান পেয়েছে, তারই মধ্যে থেকে কিছু গান গেয়েছিল রাজশ্রী ভট্টাচার্য।
কথা প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, অনেকদিন আগে একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম তার নাম ছিল ‘গীতাঞ্জলির গান’, সে অবশ্য বাংলা গীতাঞ্জলিকে কেন্দ্র করে।
সকালের কথা থেকে একেবারে রাতের কথায় চলে যাই। দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে মা ভবতারিণীর যে ঐতিহ্যবাহী পুজো, তার সরাসরি সম্প্রচার। তরুণ চক্রবর্তী ও আমি সেই সারারাত্রিব্যাপী সম্প্রচারের উপস্থাপক। মন্দির প্রাঙ্গণে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়। আলোয় সাজানো মন্দিরকে কি অপরূপ লাগছে! তাকে পেছনে রেখে একটা উঁচু চাতালে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করছি এ মন্দিরের মাহাত্ম্য, গর্ভগৃহে রাখা ক্যামেরা যখন দেবীমূর্তিকে শটে নিচ্ছে, তখন বলছি ভবতারিণীর বিষয়ে। সে এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা।
সারারাত ধরে উচ্চাঙ্গসংগীতের অনুষ্ঠান হয়েছিল ইজেডসিসি-তে(EZCC), শাশ্বতী ও আমি দু’জনেই ছিলাম সঞ্চালনায়। সম্ভবত জাতীয় সম্প্রচার (National Telecast) হয়েছিল। তখন আমাদের অধিকর্তা ছিলেন টি. কে. দাস, ওঁর সময়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেয়েছিলাম। রবীন্দ্র জন্মোৎসব উপলক্ষে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম আগরতলায়। সরাসরি সম্প্রচার ছাড়াও কিছু অনুষ্ঠান রেকর্ড করে আনা হয়েছিল। ওখানেই আমি প্রথম কবিতা কৃষ্ণমূর্তির রবীন্দ্রসংগীত শুনি। কাজের পর হোটেলে বসল আমাদের জমায়েত, যে ঘরে হৈমন্তীদি (শুক্লা) আর আমি ছিলাম সেখানে। সৈকত মিত্র এল, ওদের গানে-গপ্পে রাত কাবার!
মি. দাস-এর সময় পুজোতে রাতভর অনুষ্ঠান হয়েছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঠানো কভারেজ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্টুডিও থেকে এই উৎসবের বর্ণনা কেবল দিচ্ছিলাম, তাই নয়, নানা তথ্যে ভরে তুলেছিলাম অনুষ্ঠান। স্নেহাশিস শূর ছিল আমার সঙ্গে, বোধহয় একদিন রাজীব ভট্টাচার্যও ছিল। ফ্লোরের ছেলেরা খুব সুন্দর সেট বানিয়েছিল, বৈঠকী ভাব যেমন ছিল, তেমনই ছিল পুজো পুজো আমেজ।
পুজোর চারদিন বা কালীপুজোয় কোনও ছুটি তো ছিলই না, বরং ব্যস্ততা ছিল অনেক বেশি। পুজোমণ্ডপ থেকে লাইভ করেছি বেশ কয়েকবার, তার মধ্যে একবার যোধপুর পার্কের এক পুজোয় মানুষের ঢল এমন ছিল যে, তাদের ঠেলে কিছুতেই শুটিং স্পটে পৌঁছতে পারছিলাম না, অথচ লাইভ টেলিকাস্টের সময় এগিয়ে আসছিল, কোনও রকমে পৌঁছেই ক্যামেরার মুখোমুখি দাঁড়ালাম!
আবার এর উল্টোটাই হল শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোর লাইভ টেলিকাস্টে। পৌঁছে দেখি সবে তখন পুজোর প্রস্তুতিপর্ব চলছে। পুজো শুরু হওয়ার আগে ওখানকার বিশাল ঠাকুরদালানে ক্যামেরা সেট আপ করা হল, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি কথা বলব, তা নির্দিষ্ট করা হল। সম্প্রচারের সময় হয়ে গেলে বিশদে বলতে শুরু করলাম। বলার ছিলও অনেক কিছু। কলকাতার এটি প্রাচীনতম পুজো। ১৭৫৭-তে পলাশীর যুদ্ধের পরে রাজা নবকৃষ্ণ দেব এই পুজো শুরু করেন। উত্তর কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির এই পুজোয় লর্ড ক্লাইভ এসেছিলেন। সেসব নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত আছে। তারমধ্যে যতটুকু বলা যেতে পারে, সেটুকুই বললাম। ততক্ষণে পুজো শুরু হয়ে গেছে, ক্যামেরা আমার দিক থেকে প্রতিমার দিকে ফিরল। সেদিনের প্রযোজক ছিল চম্পা ভৌমিক। পুজো মণ্ডপ বা ঠাকুরদালান থেকে আবার ফিরি স্টুডিও-তে।
যে রাতভর অনুষ্ঠানের কথা বলেছি, সে ছাড়াও কোনও কোনও বছর স্টুডিও ফ্লোরে পুজোর সন্ধেতে বসিয়েছি আড্ডা, এসেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত মানুষজন, ফুটবলার থেকে সাহিত্যিক, কবি থেকে সঙ্গীতশিল্পী। আড্ডার মাঝে মাঝে বিভিন্ন পুজো-প্যান্ডেল থেকে লাইভ কভারেজ দেখানো হচ্ছে, পুরো জমজমাটি ব্যাপার। মনে আছে, কোনও এক বছর সপ্তমীর সন্ধ্যার আড্ডায় ছিল কবি শ্রীজাত, চটজলদি পদ্য বানিয়ে বলছিল।
..………………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
………………………………………………..
২৫ বৈশাখের সময় যেমন অনেক সময়েই সঞ্চালক হিসেবে থেকেছি স্টুডিও-তে, কখনও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কখনও রবীন্দ্র সদনের অনুষ্ঠান দেখানোর ফাঁকে ফাঁকে বলেছি রবীন্দ্রনাথের কথা, পড়েছি তাঁর রচনা থেকে, ঠিক সেই ‘গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড’ পদ্ধতিতে পুজোর বৈঠক সম্প্রচারিত হত। ‘ঘরে বাইরে’তেও করতাম পুজো নিয়ে অনুষ্ঠান। একবার পুজো সাহিত্য নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন বাণী বসু। সেবার আমি আর শাশ্বতী দু’জনেই বসেছিলাম একসঙ্গে।