অহোমরাজ শিব সিংহের (১৭১৪ – ১৭৪৪) মদতে সুকুমার বরকাইথ রচনা করেন ‘হস্তীবিদ্যার্ণব’ পুঁথি। হাতির শরীরবিজ্ঞান, শুশ্রূষা, যত্ন ইত্যাদি নিয়ে চিত্রিত পুঁথি। তাতে ছবি এঁকেছিলেন চিত্রকরদ্বয় দিলবর এবং দেসাই। এঁদের মধ্যে দিলবর এসেছিলেন পশ্চিম ভারত থেকে। হস্তীবিদ্যাই শুধু নয়, চিত্রবিদ্যার জগতে এই প্রাণীবিদ্যার পুঁথিচিত্র এক অসামান্য সম্পদ। বর্তমানে গৌহাটি স্টেট মিউজিয়ামের লাইব্রেরিতে একটি সংগৃহীত আছে। ওটিই আকরগ্রন্থ। দেবশিল্পীর বাহনের যথাযথ চিত্ররূপ।
৬.
দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। দেবকূলের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারও বটে। তার বাহন হাতি। দেশের ক্ষুদ্র থেকে ভারী শিল্পের অবস্থা যাই হোক না কেন, হাতির ওজন কমে না। কাঠামোয় একবার ফিট হয়ে গেলে বাহনদের বদলানো মুশকিল। তবে কুমোরপাড়ার শিল্পীরা ম্যাজিক জানে। না বিক্রি হওয়া বিশ্বকর্মার হাতি কীভাবে যেন লোপাট করে দেয়। সাথে চার হাতের দু’টো হাতও। হাতিবাহন হারিয়ে বিশ্বকর্মা কার্তিক ঠাকুর হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন সরস্বতীর পাশে, ময়ূরবাহন হয়ে। বাংলার বিশ্বকর্মা কার্তিক ঠাকুরের মতো দেখতে, সরু গোঁফ আর বাবরি চুলের। কিন্তু পৌরাণিক ভাষ্যে বিশ্বকর্মা অতিবৃদ্ধ। তার চুলদাড়ি সাদা। হাতিবাহন অবশ্য সবখানেই স্থবির।
অমৃতের সন্ধানে সমুদ্রমন্থন শুরু হয়েছিল। ওদিকে দেব-দানবের টানাটানিতে বাসুকীর অবস্থা টাইট। নাগরাজের বিষবমি কণ্ঠে ধারণ করে শিব নীলকণ্ঠ হলেন। তার আগে একে একে উঠেছিল হাতি, ঘোড়া, মণি-মানিক্য, পারিজাত, লক্ষ্মী, মহাবৈদ্য ধন্বন্তরি আর অমৃত। সেই হাতিটাই ঐরাবত। চিরকালের নিয়মমতে আহরিত মহার্ঘ্য বস্তুর যেমন রাজভাণ্ডারে ঠাঁই হয়, তেমনই ঐরাবতও দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন হয়ে গেল।
হাতি চারপেয়ে বিশালকায় জীব। পর্বতের মতো। আপাত নিরীহ, নিরামিষাশী, স্তন্যপায়ী, বিশাল মস্তিষ্কের জন্য প্রখর স্মৃতিধর, গর্ভকালীন সময় বাইশ মাস। সবকিছুই বড় বড়, বেশি বেশি। এই না-হলে রাজার বাহন হয়!
রাজার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। সবই সম্পদের প্রতীক। বিশাল ভারবহনকারী মহামাতঙ্গ সারাদিন প্রায় তিনশো কেজি খেলেও একটা ফুলপাঞ্জাব গাড়ির থেকেও বেশি সার্ভিস দেয় আমাদের। জঙ্গলের কাঠকলের ইজারাদারদেরও প্রধান বাহন হাতি।
অহোমরাজ শিব সিংহের (১৭১৪ – ১৭৪৪) মদতে সুকুমার বরকাইথ রচনা করেন ‘হস্তীবিদ্যার্ণব’ পুঁথি। হাতির শরীরবিজ্ঞান, শুশ্রূষা, যত্ন ইত্যাদি নিয়ে চিত্রিত পুঁথি। তাতে ছবি এঁকেছিলেন চিত্রকরদ্বয় দিলবর এবং দেসাই। এঁদের মধ্যে দিলবর এসেছিলেন পশ্চিম ভারত থেকে। হস্তীবিদ্যাই শুধু নয়, চিত্রবিদ্যার জগতে এই প্রাণীবিদ্যার পুঁথিচিত্র এক অসামান্য সম্পদ। বর্তমানে গৌহাটি স্টেট মিউজিয়ামের লাইব্রেরিতে একটি সংগৃহীত আছে। ওটিই আকরগ্রন্থ। দেবশিল্পীর বাহনের যথাযথ চিত্ররূপ।
শীতের সার্কাসের তাঁবুতে হাতি দেখার ভীড় হত সারাদিন। ওরা খোলা আকাশের নীচেই থাকত। সন্ধেরাতে ঐ হাতিরাই কসরত দেখাত মাহুতের নির্দেশে। তখনও কলকাতায় রাশিয়ান সার্কাসের রমরমা শুরু হয়নি। দ্রষ্টব্য ছিল হাতি, বাঘরাই। পেল্লায় এক বল ছুঁড়ে খেলা দেখানো হাতির ছবি দিয়ে পোস্টার হত সার্কাসের।
হাতিরা মায়াদেবীর স্বপ্নেও আসে, সার্কাসের তাঁবুতেও আসে, দলমা পাহাড় ছেড়ে বাঁকুড়ার ধানমাঠেও আসে। বিশালদেহীরা তখন তাদের দুলকি চালে বিশ্বকর্মার নাম ভুলিয়ে দেয়। তবে বিশ্বকর্মা এখন থার্ড বেঞ্চের ঠাকুর। প্রথম বেঞ্চে হাতিমুখো সিদ্ধিদাতার অধিষ্ঠান।
ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট এক মহাশিল্পদ্যোগ নিয়েছে সম্প্রতি। তামিলনাড়ুর ২০০ জন হস্তশিল্পী মিলে একশোটা প্রমাণ আকারের হাতি নির্মাণ করেছেন। মাধ্যম বেত। সেই প্রকাণ্ড হাতিগুলো সাড়ে তিন হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে গেছে ব্রিটেনে। ২০২১-এ প্রদর্শিত হয়েছে সেখানকার বিভিন্ন শহরে। এবার আগামী ৪ জুলাই থেকে এক বছরের জন্য আমেরিকার বিভিন্ন শহরে তারা ঘুরবে। হস্তশিল্প, হস্তশিল্পী এবং হস্তী সংরক্ষণের চূড়ান্ত শৈল্পিক নিদর্শন। দেবশিল্পীর বাহনের জয়গাথা।
খেলিফের প্রতি নেটিজেনের বিরুদ্ধতার কারণ তাই, আর যাই হোক, তা ‘মেয়েদের সমানাধিকারের’ দাবিতে নয়। সমস্যা অবশ্যই খেলিফের লম্বা, পেটানো পেশিবহুল চেহারা– যা বহু মানুষের মতে ‘নারীসুলভ’ নয়। অর্থাৎ, অলিম্পিক খেলার যোগ্যতা অর্জন করা ক্রীড়াবিদ পাশ করতে পারেননি আমাদের বিউটি প্যাজেন্টে। দুইক্ষেত্রেই লজ্জা আমাদের। তবুও খেলিফ জিতলেন, সোনা ছাড়া আর কীই বা পেতে পারতেন তিনি?