সমস্ত লোকদেখানো আচ্ছাদন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সত্যজিতের সংলাপে
Published by: Robbar Digital
Posted on: September 30, 2023 5:28 pm
Updated: September 30, 2023 8:58 pm
আমরা সত্যজিৎ রায়ের একটির পর একটি ছবিতে শিশুদের দিয়ে প্রায় অকল্পনীয় সাবলীল অভিনয় করাতে দেখেছি, নানা পরিবেশে নানা শ্রেণির শিশু, বালক-বালিকা ও কিশোর-কিশোরী– প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ থেকে শেষ ছবি ‘আগন্তুক’, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ‘টু’ থেকে ‘পিকু’ পর্যন্ত। ‘টু’ ছবিতে দু’টি আলাদা জগতের দু’টি শিশুকে না দেখলে হয়তো সত্যজিতের জীবনদৃষ্টিকে অনুধাবন করা যাবে না।
চিন্ময় গুহ
বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সমালোচক এবং হিচকক, বার্গম্যান, আন্তোনিওনি ও সত্যজিৎ রায় বিশেষজ্ঞ রবিন উড তাঁর ‘অপু ট্রিলজি’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘‘Ray is arguably the cinema’s greatest director of children.’’ (সত্যজিৎ রায়-ই সম্ভবত চলচ্চিত্রে শিশুদের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালক।)
আমরা তাঁকে একটির পর একটি ছবিতে শিশুদের দিয়ে প্রায় অকল্পনীয় সাবলীল অভিনয় করাতে দেখেছি, নানা পরিবেশে নানা শ্রেণির শিশু, বালক-বালিকা ও কিশোর-কিশোরী– প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ থেকে শেষ ছবি ‘আগন্তুক’, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ‘টু’ থেকে ‘পিকু’ পর্যন্ত। কিন্তু সাহস ও অভিনিবেশের অভাবে অপ্রস্তুত বাঙালি চলচ্চিত্র সমালোচকেরা ওপরের কথাটি বলার হিম্মত দেখাননি।
উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমারের রক্ত সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে, কিশোর সাহিত্যের এক নতুন ধারার স্রষ্টা তিনি। শিশুমনকে তিনি অন্তর দিয়ে বুঝতেন, তাঁর অধিকাংশ ছবিতে শিশুরা উপস্থিত। প্রতিটি শিশু যেন তাঁর সমবয়সি সহোদর।
শিশুদের ছবিও তাই তাঁর হাতে প্রকৃত শিশুদের ছবি হয়। ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’ ভারতীয়, তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রে স্বপ্নের রূপকথা, যা পিতা-পিতামহের উত্তরাধিকার আঁকা। কে ভুলবে হাত-পা নেড়ে বিদঘুটে পোশাকের জাদুকর বরফির সেই গররর্ গরগর্ পিস্ (‘এক চিমটে নিতে হবে’), নিরুগগ্ গুম্ম্ গুশ্শ্ (‘মাটিতে ঢালতে হবে’), কিমুশ্ গুম্ম্ গুশ্শ্ (‘তাতে অগ্নিসংযোগ করতে হবে’), উন্ডশ্শ্ ভুশ্শ্ মুশ্শ্ (‘ধোঁয়ায় ভরে যাবে। সেই ধোঁয়াতে সবাই কথা বলতে পারবে!’), মিরুশতি (‘রাজা কি মরে গেল নাকি?’), ওঁশ্ (‘তিন দিন ঘুমবে। এর মধ্যে কাজ সেরে ফেলতে পারব, বাঃ বাঃ’)।
কখনও এই অনাবিল হাস্যরসের মধ্যে মিশে গেছে এক অমোঘ সমাজচিত্র। যেমন–
হাল্লার সেনাপতি: উট উঠো? উট উঠো?
সৈন্যরা সেনাপতির কথায় অংশগ্রহণ করছে না। রাজামশাই বিরক্ত হয়ে পায়চারি করছেন। স্ল্যাপস্টিকের মতো পিছন পিছন অনুসরণ করছে একজন বামন। রাজার সঙ্গে মন্ত্রীও।
হাল্লার রাজা: এসব কী হচ্ছে?
মন্ত্রী: কুচকাওয়াজ, জাঁহাপনা!
রাজা: তোমার মুন্ডু!
(রাজা অন্যদিকে হনহন করে হেঁটে যান। পিছন পিছন বামন-ভৃত্য এবং মন্ত্রীও হেঁটে যায়)
রাজা: না হচ্ছে কুচ, না হচ্ছে কাওয়াজ– কিচ্ছু হচ্ছে না। যতসব ফিচকেমো আর ধাপ্পাবাজি! শুন্ডিতে গিয়ে যখন মুখ থুবড়ে হোঁচট খেয়ে পড়বে, তখন আমার ইজ্জতটা কোথায় থাকবে শুনি? তোমার ওই উদরের মধ্যে?
(রাজা পায়চারি করতে করতে বলতে থাকেন)
রাজা: যতসব লড়বড়ে ল্যাকপ্যাকে আর খটখটেদের নিয়ে যুদ্ধ করছে– আমি সব ব্যাটাদের গর্দান নেব, সব ব্যাটাদের।
মন্ত্রী: ফস্ করে কিছু করে বসবেন না রাজাধিরাজ। একটু বিবেচনা করে দেখবেন। ধরুন যদি গুপ্তচরের কথা তুচ্ছই হয়, ধরুন যদি শুন্ডির সৈন্য থেকেই থাকে, ধরুন যদি যুদ্ধ করতেই হয়।
রাজা: ধরুন যদি, ধরুন যদি, ধরুন যদি। আর যুদ্ধ কি গুঁতিয়ে করবে যে গর্দানের প্রয়োজন হবে? গর্দান থাকলেও যা, না থাকলেও তা।
সুকুমার রায়ের পুত্র কী জাদু দেখাতে পারেন! যাঁরা খেয়াল করেননি, তাঁদের জন্য আমরা কেবল দুঃখ করতে পারি।
এর আগে (পাঠক, দেখুন, সংলাপ কীভাবে তিলে তিলে নির্মিত হয়)
গুপ্তচর: আজ্ঞে, আমি শুন্ডি থেকে আসছি।
মন্ত্রী: শুন্ডিতেই তো তোমাকে পাঠানো হয়েছিল, তাই না?
গুপ্তচর: হ্যাঁ, মন্ত্রীমশাই।
মন্ত্রী: তা তুমি শুন্ডি থেকে আসবে না তো কি বগদাদ থেকে আসবে?
গুপ্তচর (অপ্রস্তুত): আজ্ঞে… না মন্ত্রীমশাই।
মন্ত্রী: যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম কীর’ম দেখলে?
গুপ্তচর: আজ্ঞে, নেই মন্ত্রীমশাই।
মন্ত্রী (অবাক): নেই?
গুপ্তচর: নেই।
মন্ত্রী: অস্ত্র-শস্ত্র?
গুপ্তচর: নেই।
মন্ত্রী: অস্ত্রও নেই?
গুপ্তচর: নেই।
মন্ত্রী: সৈন্য?
গুপ্তচর: সৈন্যও নেই।
মন্ত্রী: সৈন্যও নেই?
গুপ্তচর: নেই।
মন্ত্রী: লোকেরা কী করে? ওরা কি ঘাস কাটে?
গুপ্তচর: অশ্বও নেই।
মন্ত্রী (খুশিতে ডগমগ): ঘোড়াও নেই। হাতি?
গুপ্তচর: হাতিও নেই।
(মন্ত্রী অট্টহাস্য করে ওঠে–)
মন্ত্রী: নেই।
গুপ্তচর: উটও নেই।
মন্ত্রী: নেই?
(মন্ত্রী সিংহাসন থেকে উঠে হাসতে হাসতে এগিয়ে যায়, গুপ্তচর তার পিছু নেয়)
গুপ্তচর: খেতে ফসল আছে, গাছে ফল আছে, ফুল আছে, পাখি আছে…
মন্ত্রী: হুঁ!
(মন্ত্রী নাক সিঁটকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। গুপ্তচর বলে চলে–)
গুপ্তচর: দেশে শান্তি আছে, সুখ আছে, হাসি আছে–
শিশুদের জন্য লেখা পিতামহের এক অনন্যসাধারণ রূপকথার থেকে তৈরি ছবির এই সংলাপ থেকে তাঁর দর্শন এখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কয়েদখানায় পচা খাবার দেখে বাঘা বলে– ‘কে খাবে গো’? গুপী জিজ্ঞেস করে: ‘পোষা ইঁদুর-টিদুর আছে নাকি তোমাদের?’ কিন্তু এই বিমল আনন্দকে অতিক্রম করে বিরাট এক আকাশের নীচে দাঁড়ান কথাকার।
গুপীর গানও তো ছবির পর্দায় সত্যজিতের সংলাপ।
গুপী: দুঃখ কীসে হয়?
বাঘা: কীসে হয় বলো তো?
গুপী: অভাগার অভাবে জেনো সুখী নয়।
যার ভাণ্ডারে রাশি রাশি
সোনাদানা ঠাসাঠাসি
তারও ভয়।
দুঃখ যাবে কি?
দুঃখ যাবে কি?
ছবির সারাৎসার গুপীর সেই অবিস্মরণীয় গান, বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা মানব সংলাপ:
ওরে বাবা দেখো চেয়ে
কত সেনা চলেছে সমরে!
কত সেনা! কত সেনা
হাজারে হাজারে হাতিয়ার
বুঝি কাটাকুটি করে!
কাটাকুটি কাটাকুটি
হাজারে হাজারে
হাতিয়ার বুঝি
কাটাকুটি করে
আহা রে! আহা রে!
আহা রে!
পেটে খেলে পিঠে সয়,
এ তো কভু মিছে নয়—
সেনা দেখে লাগে ভয়
লাগে ভয়—
লাগে ভয়! আধপেটা খেয়ে
বুঝি মরে! মরে!
যত বেটা চলেছে সমরে!…
ওরে হাল্লা রাজার সেনা
তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল–
মিথ্যে অস্ত্রশস্ত্র ধরে
প্রাণটা কেন যায় বেঘোরে।
রাজ্যে রাজ্যে পরস্পরে
দ্বন্দ্বে অমঙ্গল,
ওরে রাজ্যে রাজ্যে পরস্পরে
দ্বন্দ্বে অমঙ্গল–
তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল!
সুকুমার রায় দেখলেন না তাঁর ছেলে কীভাবে আবালবৃদ্ধের জন্য চলচ্চিত্রের পর্দায় কী জাদু দেখালেন!
এবার ‘সোনার কেল্লা’-য় আসি।
মুকুল: আমি রুটি খাই, গোল গোল, মোটা মোটা।
ডা. হাজরা: খাও, না খেতে?
মুকুল (উদাস): খেতাম।
মন্দার বোস যখন বলবে ‘আমি যখন স্পেনে ছিলাম…’, দর্শকের মনে পড়বে সেই প্রবচন: ‘Building castles in Spain’. ‘সোনার কেল্লা’ এক প্রতীক শুধু, আমাদের স্বপ্নের মধ্যে, শিশুকালের স্বর্গ, শৈশবের অবচেতন বন্ধন। বন্ধুরা, ময়ূর, হোলিখেলা…! প্রতীক, প্রতীক। দূরে এক হারিয়ে যাওয়া জগতের উপকথা, না ‘সোনার কেল্লা’ এক ইউটোপিয়া? মনে পড়বে ফেলুদার কথা: ‘গুপ্তধন নেই। পূর্বজন্ম থাকলেও নেই, না থাকলেও নেই।’
শিশুরা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-তে আগত চার যুবককে টুবলু প্রশ্ন করে: ‘তোমরা কে?’ প্রকৃতির কোলে এটিই এই ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ। প্রচণ্ড থতমত খেয়ে যায় যুবকরা। ছবির আপাত-ভাঁড় শেখর (রবি ঘোষ) তোতলাতে তোতলাতে বলে: ‘আমরা মা-মা-নুষ’!
দাদু সদাশিব ত্রিপাঠী জিজ্ঞেস করেন: দাদু, তুমি এদের বলে দাও কাল হেডলাইটের আলোয় কী দেখেছিলে?
টুবলু: একটা খরগোশ, দুটো বনবিড়াল!
শেখর: যাক, অল্পের ওপর দিয়ে গেছে। (সে ভয় পেয়েছিল শিশুটি স্যানিটারি টুইস্টের কথা ফাঁস করে দেবে!)
শিশুটি অন্ধকারে হেডলাইটের আলোয় চার মাতাল যুবকের নাচ ও বিকারোক্তির কথা বলল না। কেন বলল না? নাকি মানুষেরা আসলে খরগোশ আর বনবিড়াল! যেমন দেখিয়েছেন আল্যাঁ রেনে তাঁর ‘মঁ অঁক্ল্ আমেরিকাঁ’ (আমার মার্কিন কাকা’) ছবিতে? এর উত্তর দেন না সত্যজিৎ।
‘পিকু’ ছবিতে শিশুটি সব বলে দেয়।
পিকু: দাদু, কাউকে বলবে না বলো!
দাদু: কী দাদু?
পিকু: কাল রাত্তিরে মা আর বাবা ফাইট করছিল।
দাদু: বটে?
পিকু: অনেক রাত্তিরে। আমার ঘুম ভেঙে গেল, আর আমি পাশের ঘর থেকে শুনলাম, একবার মা বাবাকে বকছে, একবার বাবা মাকে বকছে। একবার আমায় বিষয়ে বলল, একবার তোমার বিষয়েও বলল।
দাদু: সত্যি? (সম্ভবত কথাটায় গুরুত্ব দেননি।)
পিকু: হ্যাঁ, ওল্ড ম্যান ওল্ড ম্যান বলছিল। আর তারপর সব ইংরিজিতে, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে, আর আমি কিছু বুঝতে পারলাম না, তাই আমার ঘুম এসে গেল।
(নীরবতা)
পিকু: তুমি কাউকে বলবে না বলো?
দাদু: না, বলব না।
ছবির শেষে বাগানে বসে ছবি আঁকতে গিয়ে সাদা রং খুঁজে পায় না। মনে রাখতে হবে এই ছবিতেই আছে সত্যজিতের ছবিতে একমাত্র যৌন-দৃশ্য, পিকুর মা ও অন্য এক পুরুষের। (‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিতে হরি ও সাঁওতাল মেয়ে দুলির ঘনিষ্ঠ দৃশ্যটিতে একটি যৌনতা-উত্তর নিশ্চিন্ততা আছে, তাই সেটিকে ধরছি না।)
পিকু: আমি সাদা ফুল কালো রং দিয়ে আঁকছি মা, সাদা রং নেই।
সে শোবার ঘরে দরজার বাইরে থেকে মা ও হিতেশকাকুর কথাকাটাকাটি শুনে চিৎকার করে বলে: ‘চোপ!’
দাদুর অনড় শরীরের দিকে চেয়ে আছে সে। নাড়ি নেই।
পিকু বেগুনি রং দিয়ে বেগুনি ফুল আঁকছে। সে যেন পৃথিবীর সব অভিজ্ঞান বুঝে গেছে।
বাইরে বৃষ্টি।
বারান্দায় পিকু একা, ছবি আঁকছে।
আর ‘টু’ ছবিতে দু’টি আলাদা জগতের দু’টি শিশুকে না দেখলে হয়তো সত্যজিতের জীবনদৃষ্টিকে অনুধাবন করা যাবে না।
‘শাখাপ্রশাখা’ সেই ছবি, যেখানে এক মৃত্যুপথযাত্রীকে ঘিরে কয়েকটি প্রজন্মকে উন্মোচিত করতে চাইলেন তিনি চার দশক ভাবার পর।
একটি কালো সরীসৃপের পিঠের মতো পারিবারিক খাওয়ার টেবিলের চারপাশে খেতে বসে সমাজের মুখোশ একটু একটু ছিঁড়ে ফেলেন সত্যজিৎ। অসুস্থ প্রশান্ত হাত দিয়ে সজোরে টেবিলের ওপরে বারবার আঘাত করে, আর সমস্ত লোকদেখানো আচ্ছাদন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
আর ‘শাখাপ্রশাখা’ ছবির শিশুটিকে তার মা বলে: একদম জোরে কথা বলবে না!
ডিঙ্গো: খালি ফিসফিস?
এই সরল প্রশ্নকে কি সামাজিক প্রশ্ন হিসেবে দেখব আমরা? ওটা সত্যজিৎ।
সে অসুস্থ দাদুকে জিজ্ঞেস করে, ‘খাটটা নতুন?’ যিনি শিশুদের চেনেন, তিনি ছাড়া এমন প্রশ্ন একজন অসুস্থ মানুষকে কে করতে পারতেন?
সকলে খানিকটা সুস্থ হয়ে ওঠা আনন্দমোহনকে ফেলে চলে যাওয়ার সময় পুরো পরিবারে সর্বপ্রথমে ডিঙ্গো ঢোকে।
আনন্দমোহন: এসো দাদু, এসো–
ডিঙ্গো: আমি সবচেয়ে আগে এসেছি।
আনন্দ: তা তো আসবেই, তুমি যে বড় হয়ে গেছ!
ডিঙ্গো: হ্যাঁ, আমি অনেক কিছু জানি।
আনন্দ: অনেক কিছু?
ডিঙ্গো: ইয়েতি! –টিনটিন ইয়েতি দেখেছি, মা আমায় গল্প বলেছে–
আনন্দ: ইয়েতি জানো?
ডিঙ্গো’ আমি আরও জানি–
আনন্দ: আরও জানো?
ডিঙ্গো: আমি ম্যাকেনরো জানি, উইন্ডিলবম্ জানি–
আনন্দ: কী, কী বললে?
ডিঙ্গো: উইন্ডিলবম্, যেখানে টেনিস খেলে!
আনন্দমোহন হাসেন।
ডিঙ্গো: আমি এক নম্বরি জানি, দু’নম্বরি জানি–
আনন্দ (গলা ধরে আসছে): কী করে জানলে দাদু?
ডিঙ্গো: বাবা জেঠুকে বলছিল খুব জোরে জোরে– তোমার দু’নম্বরি আছে…
(দূরাগত) আমার দু’নম্বরি আছে, এক নম্বরি আছে– আমি শুনেছি–
আনন্দ চেয়ে আছেন।
ডিঙ্গো: তোমার কী আছে দাদু, তিন নম্বরি, চার নম্বরি?
আমাদের মনে পড়বে ছবিতে প্রশান্তর আর্তচিৎকার: Zero, zero, zero, zero, zero… শেক্সপিয়রের ‘কিং লিয়র’ নাটকের ‘Nothing will come of nothing. Speak again.’
আমাদের ঝাঁপ বন্ধ করতে হবে। সত্যজিতের সমগ্র শিল্পকর্মে কার ছবি মনে পড়ছে আমার?
একটি পাহাড়ি ছেলের গান। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবির শেষ দৃশ্যে সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করা নেপালি বিস্ময়-বালক অনন্ত প্রকৃতিকে আলোড়িত করে গান গাইছে। তার প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে আকাশে বাতাসে, পাহাড়ের ঢালে। আর এক অনিঃশেষ সমুদ্রের ঢেউ শিরা-ধমনি বেয়ে আমাদের রক্তের ভিতরে ঢুকে পড়ছে, কেবলই ঢুকে পড়ছে।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হলেও ভারভারা রাওয়ের কবিতায় কোনও হিংসা নেই
মুম্বইয়ে তাঁর বইয়ের উন্মোচন অনুষ্ঠানে কোনও কথা বলেননি কবি, কেবল কয়েকটি কপিতে সই দিয়েছিলেন, তাতেও তদন্তকারী সংস্থা আপত্তি জানায়। আজ, ৩ নভেম্বর, ভারভারা রাও-এর জন্মদিন।