মনে রাখবেন, কাঠ আর কাঠঠোকরার ফ্রেন্ডশিপ হতে পারে না। ‘বাংলা সিনেমা’ আর ‘পাশে দাঁড়ান’-রও তাই। হলায়-গলায় বন্ধুত্ব হতে পারে না গোমূত্র আর বিফ রোলের। ব্রন এবং খুঁটে দেওয়ার। মশা আর মশারির। প্রেমিকার সঙ্গে প্রেমিকের পাশবালিশের। মদ্যপ চালকের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের। রাতজাগা পেঁচা আর সকালবেলার আলোর। রবীন্দ্রনাথ আর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর।
মাথাগরম গঙ্গার হাওয়ার সঙ্গে মিনমিনে দেশলাইকাঠির বন্ধুত্ব হতে পারে না। যেমন হতে পারে না চাকলা-ওঠা মেসবাড়ি আর আককুটে প্রোমোটারের। অকাল-পর্নোগ্রাফির সঙ্গে আলগা ছিটকিনির জানাশোনা থাকলেও, একটা অবিশ্বাসের সম্পর্ক থাকবেই। জোৎস্নাওলা ২টো ৪৫-এর পাড়াজাগানিয়া টনিকখোরের সঙ্গে যেমন রাতকুকুরের। ছ্যাঁচড়া বিড়ালের সঙ্গে যেমন টেটিয়া মাছবিক্রেতার। শীতপ্রেমিকের সঙ্গে বাৎসরিক হাঁপানির তো একেবারে এসপার-ওসপার সম্পর্ক! পাতিলেবুর সঙ্গে জাঁতি আঙুলের অতিরিক্ত ব্যায়ামেও বন্ধুত্ব কেঁচে গণ্ডুষ, তিতকুটে। আদা যে পাড়ায় থাকে, সে পাড়ার ধারেকাছে যায় না কাঁচকলা। তেলের সঙ্গে মিশতে চায় না জল। দাড়ির আর ক্ষুরেরও সেই একই কেস! ইয়ারদোস্তি নেই পেটখারাপ আর তেলেভাজারও। মানি ও মানিব্যাগেরও। আলিমুদ্দিন আর কালীঘাটেরও। চাঁদিভরা টাকের সঙ্গে চিরুনির। চিয়া সিডসের সঙ্গে চিলি পর্কের। শীতকালের সঙ্গে ঠোঁটের। টায়ারের সঙ্গে রাস্তা-পেরেকের। ঘোড়ার সঙ্গে ঘাসের। একই রুটের বাস এবং বাসের।
মনে রাখবেন, কাঠ আর কাঠঠোকরার ফ্রেন্ডশিপ হতে পারে না। ‘বাংলা সিনেমা’ আর ‘পাশে দাঁড়ান’-রও তাই। হলায়-গলায় বন্ধুত্ব হতে পারে না গোমূত্র আর বিফ রোলের। ব্রন এবং খুঁটে দেওয়ার। মশা আর মশারির। প্রেমিকার সঙ্গে প্রেমিকের পাশবালিশের। মদ্যপ চালকের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের। রাতজাগা পেঁচা আর সকালবেলার আলোর। রবীন্দ্রনাথ আর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। ছৌ-নাচ আর কংক্রিটের। আদি কৃত্তিবাস আর নতুন কৃত্তিবাসের। শীতকাল আর দশ বালতি স্নানের। অঙ্ক-ভিতু আর কেসি নাগের। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ সঙ্গে লেপ-বালাপোশের। নুন আর জোঁকের। খালিপেটের সঙ্গে মদের। জলতেষ্টার সঙ্গে মরীচিকার। আইসক্রিমের আর টনসিলের। রবিবার আর ডানা-ছটফটে মুরগির। যুদ্ধ আর সভ্যতার। সুপ্রিম কোর্ট আর সমপ্রেম বিবাহর। সত্যি ‘খবর’ ও ফেক নিউজের। সিনেমা হলের সঙ্গে জাতীয় সংগীতের। হামবড়াই ভাব আর মুখচোরার। কাজের সঙ্গে মাইনের। কলতলার সঙ্গে গাল পাড়ার। প্রচ্ছদশিল্পী ও প্রিন্টার্স লাইনের (ইদানীং কিঞ্চিৎ সখাভাব জেগেছে)। বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষায় কাজ পাওয়ার– মাইরি, এই পশ্চিমবঙ্গেও!
তবু, বাসের টিকিট আর হাতঘড়ির বন্ধুত্ব হয় বেশ। যৌবনের সঙ্গে অভিশপ্ত হওয়ার। আগুনের সঙ্গে অনেক আগে সভ্যতার বন্ধুত্ব, এখনও দিব্যি অটুট। লোডশেডিংয়ের সঙ্গে মোমের আলোরও বন্ধুত্ব হয়। শীতকালের সঙ্গে হয় সুপর্ণার। কথা বলার সঙ্গে নিশ্চুপ থাকার। যুক্তির সঙ্গে আবেগের। গদ্যকারের সঙ্গে অ্যাকাডেমিশিয়ানের। কমলকুমারের সঙ্গে সত্যজিতের। বন্ধুত্ব হয় পুরুষ ও গৃহকর্মের। ছাদ আর গৃহপায়রার। আকাশ আর জল জমার। নিরঞ্জন আগারের ডিমের ডেভিল আর হাপিত্যেশ সন্ধেবেলার। মুড়ি-চানাচুর আর কাঁচালঙ্কার। লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে প্রুফ দেখার। বাৎসল্য়ের সঙ্গে প্রেমবৈচিত্তর। রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে সিগনালের। ছাদের সঙ্গে লাল লেপের। ইশকুল বেঞ্চের সঙ্গে কাঠখোদাইয়ের। যামিনী রায়ের সঙ্গে বিষ্ণু দে’র। পাঁচিলের সঙ্গে দেওয়াল লিখনের। রাজনীতির সঙ্গে কার্টুনের। বুড়ো লোকের সঙ্গে ছেলে-ছোকরার। টালির ছাদের সঙ্গে জল পড়ার।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, ওই লখনউয়ে, সেদিন ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে, ১৬ ওভারের মাথায় কুলদীপের হাত থেকে বের হওয়া ওই ঘূর্ণি-বল আর ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারের ব্যাটের কখনও কখনও কখনও বন্ধুত্ব হতে পারে না।
জীবনের বাকি শাখা-প্রশাখা থেকে বাদুড়ের মতো ঝুলতে দেখা যায়, ‘অকৃতজ্ঞ’, ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘তঞ্চক’ নামের নানা কুটিল শব্দবন্ধকে। যারা উদর নয়, হৃদয়কে তাক করে। বারবার। যন্ত্রণার ক্ষেপণাস্ত্র চালিয়ে বুকের বাঁ দিকটা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিতে থাকে সুযোগ পেলে।