আবার পাতপেড়ে। আবারও রসনাতৃপ্তি। বাঙালির পাইস হোটেলে মাঝেমাঝে ঢুঁ মারার বদনাম আছে। রোজকার ডাল-ভাত ছেড়ে, বিরিয়ানি নয়, ইলিশ-পাবদা-পোস্তর বড়ার দিকে লোভী চাউনি। রোববার.ইন-এর এই পর্বের পাতপেড়ের অতিথি বাংলা ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদার। রোববার.ইন-এর তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে আড্ডায় হাজির থাকলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় ও ফোটোগ্রাফার অমিত মৌলিক। এ বারের গন্তব্য হোটেল সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম।
প্রথমে গিয়েছিলুম আমরা, খিদিরপুর ক্যান্টিনে। এক শীত ঘুমের দুপুরে, আলসে রোদ গায়ে মেখে। কবজি ডুবিয়ে খেতে-খেতে মৌজসে আড্ডা দেব বলে। আমরা বলতে, আমরা চার জন। আমি, আমার সতীর্থ ‘স্যর’ আলাপন সাহা, চিত্রসাংবাদিক অমিত (মৌলিক), এবং তিনি– অনুষ্টুপ মজুমদার। যিনি তুখড় ক্রিকেটার। বাংলা অধিনায়ক। ভারত ‘এ’ খেলেছেন এককালে। এখন দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা রনজি টিমের অবিসংবাদী ‘ক্রাইসিস ম্যান’। প্রতিপক্ষ বোলার মাঠে আগুন ছোটালে, ‘দমকল’-রূপে যাঁর অবতরণ ঘটে। কিন্তু মাঠের বাইরে সেই একই মানুষ আবার দীঘির মতো শান্ত, গ্রামবাংলার বৃষ্টিভেজা মাটির মতো নরম। নিপাট, নিখাদ, নির্ভেজাল বাঙালিয়ানা ছেয়ে থাকে যাঁকে। তা অনুষ্টুপের সঙ্গে আমরা প্রথমেই খিদিরপুর ক্যান্টিন বাতিল করে দিলাম। আরে, লক্ষ লোকের চ্যাঁ-ভ্যাঁ-র মধ্যে ‘বাতচিত’ সম্ভব নাকি? আপিসের গাড়ি ছুটিয়ে চললুম সিদ্ধেশ্বরী। আলাপনের পিছনে সমবেত লাগতে-লাগতে। টেবিলে বসে অর্ডার দেওয়া হল, ভাত-ডাল-আলুভাজা-পোস্তর বড়া-লাউ চিংড়ি আর পাবদা মাছ। আলাপন বলল, ওর সেদিন নিরামিষ। পেঁয়াজ-রসুন পর্যন্ত ছোঁবে না। স্রেফ ডাল-ভাত-আলুভাজা আর পাঁপড়। যা শুনে অনুষ্টুপ গম্ভীর মুখে সামনে দণ্ডায়মান বেয়ারাকে বলে বসলেন, ‘দেখো, পাঁপড়ে আবার পেঁয়াজ-টেঁয়াজ দিও না যেন!’ এবং শেষে সে ভদ্রলোকের কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশাকে ফিচেল হাসি উপহার দিয়ে চলতে শুরু করল আমাদের হাত। সঙ্গে অবশ্যই মুখ।
তোমাকে পাইস হোটেলে খেতে যাওয়ার কথা যখন বলি, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলে। এটা কোনও ক্রিকেটার করবে না। যত বন্ধুই হোক, পাইস হোটেলে খেতে যেতে চাইবে না। বাংলা অধিনায়ক তো ছেড়েই দিলাম। কিন্তু তোমায় বলা মাত্র তোমার মনে হয়েছিল, ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। কেন রাজি হয়েছিলে?
অনুষ্টুপ: ওই যে বললে, পুরো ব্যাপারটাই ইন্টারেস্টিং। সচরাচর খেলার সময় পাইস হোটেলে বসে খাওয়ার সুযোগ থাকে না আমাদের। তা ছাড়া আমি বিবিধ ফুড ব্লগ-টগ দেখি। ভালোও লাগে। তা দেখলাম, একটা সুযোগ রয়েছে পাইস হোটেল যাওয়ার। ইন্টারভিউ তো একটা ছুতো ছিল। আগেও দিয়েছি তোমায় (হাসি)।
বুঝেছি।
অনুষ্টুপ: কী বলো তো, খুব ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে একবার গিয়েছিলাম পাইস হোটেলে খেতে। সেই আবহের সঙ্গে পরিচয় করার আর একবার ইচ্ছে ছিল।
একটা অদৃশ্য যোগাযোগও হয়েছিল নাকি? তুমিই একবার বলেছিলে, তোমার জন্ম খুবই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। আবার দেখো পাইস হোটেল, সে-ও বড় মধ্যবিত্ত। তাই না?
অনুষ্টুপ: হা হা হা। তা যা বলেছ। ঠিকই, একটা ‘কানেকশন’ তো অবশ্যই রয়েছে। দেখো, অত্যন্ত মধ্যবিত্ত অবস্থা থেকে উঠে আসা আমার। বলছি না, সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছি। কিন্তু যেটুকু যা করেছি, তাতে বিত্ত নামক মুদ্রার দু’টো পিঠই আমার দেখা হয়ে গিয়েছে। একটা সময় শীতকালে ভোর সাড়ে পাঁচটার ট্রেন ধরে কলকাতা আসতাম খেলতে। চন্দননগর থেকে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি। রনজি খেলার সময়ও আমার সেটা দৈনন্দিন রুটিন ছিল। জীবনে কত লোক দেখলাম, কত মানসিকতা দেখলাম। মেটেরিয়ালিস্টিক কিংবা বস্তুবাদী আকর্ষণ আমার নেই বললে চলে। অনেক বন্ধুবান্ধবকেই বলতে শুনি, অমুক জিনিসটা চাই, তমুক জিনিসটা চাই। আমায় সে সমস্ত টানে না।
তাই?
অনুষ্টুপ: হুঁ। তুমি বলতেই পারো, হাতে তো আই ফোন। তা হলে কথাটা বলছি কী করে? কিন্তু এটাও আমার এক বন্ধু ঝুলোঝুলি করে কিনিয়েছিল। আগে ৫,০০০ টাকার পাতি একখানা ফোন ব্যবহার করতাম। দিব্য চলে যেত।
চন্দননগরের কোথায় থাকতে তুমি?
অনুষ্টুপ: উত্তর চন্দননগরে কুণ্ডুঘাট বলে একটা জায়গায়। পড়তাম কানাইলাল বিদ্যামন্দিরে। বাড়ির পাশেই গঙ্গা ছিল। ছুটির দিন সেখানে অবধারিত ছুটতাম। সাঁতারও শিখেছি গঙ্গায়। সঙ্গে অসম্ভব ডানপিটেমি করতাম।
শুনি একটু বৃত্তান্ত। শুনি, কী কী করতে?
অনুষ্টুপ: বাবা-মায়ের কথা শুনতাম না মোটে। ছেলেবেলায় একটা বিদ্রোহী-বিদ্রোহী ভাব ছিল। ক্রিকেটেও তো। তুমি যদি আমার খেলা দেখো, দেখবে আমি সব সময় এগেইনস্ট দ্য স্পিন খেলি। অথচ ব্যাটারদের শেখানো হয়, উইথ দ্য স্পিন খেলতে। আমার মনে হত, কেন, স্পিনের বিরুদ্ধে খেললে কী অপরাধ? তার পর ধরো, ফুটবল পেটানো। নৌকো চুরি করে চালানো। ফলমূল পেড়ে কিংবা চুরি করে খাওয়া। এখন বাজার থেকে ফল-টল কিনে খাই। ছোটবেলায় মনে পড়ে না কখনও ফল কিনে খেয়েছি বলে! এর-ওর গাছ থেকে পাড়তাম। কিংবা চুরি করতাম!
নৌকোও চুরি করেছ!
অনুষ্টুপ: করিনি আবার? করেছিলাম বলেই তো নৌকো বাইতে জানি আমি। পুরো গল্পটা বলি শোনো। শীতের দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর গঙ্গার ঘাটে আমাদের বন্ধুবান্ধবদের একটা আড্ডা বসত। বসে-বসে দেখতাম, গঙ্গায় নৌকো বেয়ে একটা লোক আসে। নামার পর হালটা লুকিয়ে রাখে। তারপর আবার সন্ধের পর ফিরে আসে লোকটা। তক্কে-তক্কে ছিলাম আমরা। লোকটা দুপুরে আসার সময় গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতাম। যাতে আমাদের দেখতে না পায়। দু’তিন লক্ষ করেছি প্রথমে যে, হালটা লুকোয় কোথায়? ব্যস, সেটা আবিষ্কারের পর শুরু হয়ে গেল আমাদের নৌকো-বিহার! প্রথমে হাল খুঁজে বের করলাম, তার পর আস্তে-আস্তে শিখে গেলাম কী করে বাইতে হয়। তিন-চার দিনে পুরোটা রপ্ত করে ফেললাম। আরও বন্ধুবান্ধবদের ডাকা শুরু হল। আড়াই-তিন ঘণ্টার জন্য ওই নৌকো আমাদের হয়ে যেত।
তারপর?
অনুষ্টুপ: তারপর আর কী? ধরা পড়লাম একদিন! কেউ একজন বলে দিয়েছিল ওই লোকটাকে যে, ও চলে গেলে, ওর নৌকো চুরি করে আমরা চালাই! তা একদিন নৌকো চেপে ঘাটে ফেরার সময় দেখি, লোকটা পাড়ে দাঁড়িয়ে। আমাদের দেখামাত্র সুললিত মাতৃভাষা প্রয়োগ করা শুরু করল! গতিক সুবিধের নয় বুঝে রানা নামের আমার এক বন্ধুকে বললাম, শোন, ওকে চেঁচিয়ে বলে দে যে, পরের ঘাটে নৌকো বেঁধে যাব আমরা। এখানে নামলে কপালে দুঃখ আছে। ও পৌঁছনোর আগে আমরা পগার পার হয়ে যাব!
সে দিনই তা হলে নিষিদ্ধ নৌকো বিহারের শেষ?
অনুষ্টুপ: হ্যাঁ। পরে দেখতাম, একজন লোককে পাহারায় রেখে যেত দুপুরে। ততদিনে দিন ১৫-২০ চালানো হয়ে গিয়েছে আমাদের।
অবিশ্বাস্য, সত্যি! ছোটবেলায় ফুটবল পেটাতে বলছিলে। সেটা কি ক্রিকেটেরও আগে?
অনুষ্টুপ: দেখো, আমি চন্দননগরের ছেলে হলেও ক্রিকেটের হাতেখড়ি চুঁচুড়ায়। চন্দননগরে কখনও সে ভাবে খেলিনি বা প্র্যাকটিস করিনি। তবে দস্যিপনাটা করেছি চন্দননগরে। জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য দুর্গাপুজোয় পাওয়া জামা-কাপড়ের সেট বাঁচিয়ে রাখতাম। বাড়ি-বাড়ি চাঁদা তুলে বেড়াতাম। এখন আমার দশ বছরের ছেলেকে দেখে খারাপই লাগে। ক্লাস ফাইভেই কী পড়াশোনার চাপ। কতক্ষণ করে স্কুল! আমাদের সময় এত কড়াকড়ি ছিল না। ফুটবল না খেললে পেটের ভাতই হজম হত না আমার। কেন কে জানে, ফুটবল আমাকে বরাবর আলাদা আনন্দ দিত। অথচ ক্রিকেট ততদিনে শুরু করে দিয়েছি। কম্পিটিটিভ ক্রিকেট চলছে। কিন্তু বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ফুটবল মাস্ট! ক্রিকেট প্র্যাকটিস তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলে পড়ি-মড়ি করে ছুটতাম, ফুটবল খেলব বলে!
ক্রিকেট হল। ফুটবল হল। নৌকোও হল। ফেলুদার সঙ্গে প্রেমটা হল কবে থেকে?
অনুষ্টুপ: বছর দশ-এগারো বয়স তখন। ফেলুদার কথা তার আগে শুনেছিলাম বটে। কিন্তু অত আমল দিইনি। সে সময়ই একদিন জন্মদিনে ঘুম থেকে উঠে দেখি, মাথার পাশে একটা বই রাখা। বাদশাহী আংটি। বাবা দিয়েছিল। বলল, পড়ে দ্যাখ। ব্যস, পড়লাম এবং প্রেমে পড়লাম! বইটা আজও রাখা আছে। জরাজীর্ণ অবস্থা এখন, তবু।
কী বলছ!
অনুষ্টুপ: হ্যাঁ। আসলে আমাদের সময় তো আর পৃথিবী সম্পর্কে জানতে গেলে, বই ছাড়া উপায় ছিল না। টিভিতে দু’-একটা চ্যানেল আসত। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বলে কোনও বস্তু ছিল না যে, খুললেই আফ্রিকায় পৌঁছে যাব। তখন চাঁদের পাহাড় পড়েই আফ্রিকা ভ্রমণে বেরোতাম আমি। ফেলুদাকে ভালো লাগার কারণ অনেকখানি সেটা–অ্যাডভেঞ্চার! তা ছাড়া ছোট-ছোট বিষয়, টুকটাক ইনফর্মেশন, কী সুন্দর দেওয়া থাকত তাতে। যেমন ধরা যাক সোনার কেল্লা। সিধু জ্যাঠার কাছে গিয়েছে ফেলুদা। সেখানে উইলিয়ামস জেমস হার্শেলের নাম জানতে পারলাম, যিনি প্রথম হাতের ছাপ দেখে অপরাধী ধরেছিলেন। র্যাটল স্নেক কাকে বলে, ফেলুদা পড়েই জানা। তা ছাড়া বাঙালি হয়েও ভদ্রলোক কী পুরুষালি, কী অপার জ্ঞান!
ব্যোমকেশ বক্সী পড়নি?
অনুষ্টুপ: গুলে খাওয়া। কিন্তু ফেলুদার মতো অত অ্যাডভেঞ্চার পাইনি ব্যোমকেশে। ব্যোমকেশও অসাধারণ। তবে মগজের প্রয়োগই সেখানে মুখ্য। আসলে বললাম না, আমি একটু ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম। তাই বোধহয় ফেলুদা টানত বেশি।
খেতে ভালো লাগত? কী খেতে সবচেয়ে ভালো লাগে?
অনুষ্টুপ: আমি সর্বভুক। মাছের মধ্যে পাবদা ভালো লাগে। ইলিশ। চিংড়ি।
ইলিশ ভাপা?
অনুষ্টুপ: ভাপার চেয়েও বেশি প্রেফার করি ঝোল আর ভাজা। মা আবার অন্যরকম করে ইলিশ রান্না করে। ছোট-ছোট গোল-গোল পেঁয়াজ দিয়ে। ভেতরে সরষে-পোস্ত কী কী সব থাকে যেন। দারুণ খেতে। আর একটা মাছও আমার দুর্ধর্ষ লাগে। তবে খুব একটা লোকে খায় না।
কী?
অনুষ্টুপ: তেলাপিয়া।
খায়, খায় অনেকেই খায়। অনেকেরই ফেভারিট। তা, অনুষ্টুপ মজুমদার বাজার করে?
অনুষ্টুপ: দু’দিন আগেই গেলাম। ট্যাংরা, পমফ্রেট, ফল কিনে ফিরলাম।
স্পেনসার্স?
অনুষ্টুপ: আরে না, না। বালিয়া বাজার। গড়িয়া স্টেশনের কাছে।
মিষ্টি খাও?
অনুষ্টুপ: খাও কী আবার, বলো ভালোবাসি। বিশেষ করে গুড়ের মিষ্টি। পাটিসাপটা আমার অসম্ভব প্রিয়। পিঠেও দারুণ লাগে। ছোটবেলায় মা-ঠাকুমা বানাতেন পিঠে। আমিও টুকটাক সাহায্য করতাম। পুলি-পিঠেই বেশি হত আমাদের বাড়িতে। জানি না, তুমি সহমত হবে কি না? তবে একটা জিনিস দেখেছি।
কী, বলো?
অনুষ্টুপ: চন্দননগর তো মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। সেখানে অনেক ছোটখাটো দোকানের মিষ্টিও খেতে অসাধারণ হয়। সব সময় বড় কিংবা নামী দোকানেই ভালো মিষ্টি পাওয়া যাবে, তার কোনও মানে নেই। উত্তর কলকাতায় তবু আছে ব্যাপারটা। কিন্তু আমি যেখানে থাকি, সেই দক্ষিণ কলকাতায় সে ভাবে পাই না। চন্দননগরের সঙ্গে যোগাযোগটাও অনেক কমে এসেছে, জানো। ২০১১ সাল নাগাদ পুরোপুরি শিফট করে এলাম কলকাতায়। বিয়ের পর-পর। ২০১২-র আইপিএলে চান্স পেলাম। চন্দননগর যাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি কমতে থাকল ক্রমশ।
আর কী কী আক্ষেপ আছে?
অনুষ্টুপ: আক্ষেপ ঠিক বলব না। তবে একটা বিষয় ভুগিয়েছে আমাকে। আসলে খেলার মধ্যগগনে ছিলাম যখন, নিজেকে আরও আপডেট করা উচিত ছিল। কিন্তু কম্পিটিটিভ ক্রিকেটে ভালো ভাবে ঢুকে পড়ার পরেও চেতনা হয়নি যে, আমাকে ভারতের হয়ে খেলতে হবে। তা ছাড়া সে স্বপ্ন দেখানোরও কেউ ছিল না।
ঠিকই। তখন তো এখনকার মতো ক্রিকেট এতটা স্ট্রাকচার্ড ছিল না। এখন পাঁচ বছরের বাচ্চাও জানে যে, তাকে ভারত খেলতে গেলে কী কী করতে হবে?
অনুষ্টুপ: এগজ্যাক্টলি। আমাদের সময় যেটা ছিল না। মনে হত, একটা অনন্ত পাকদণ্ডী বেয়ে শুধু ঘুরছি। নিরর্থক ঘুরেই চলেছি। ভালো খেলছি। রান করছি। কিন্তু পরের ধাপে কী করে পৌঁছব, জানা নেই। তবে কাউকে দোষ দিই না। যে জায়গা থেকে আসা আমার, সেখানকার সিনিয়ররাও ফার্স্ট ডিভিশন খেলেছে বড়জোর। তারাও বা জানবে কী করে? আমায় পথ দেখাবে কী করে?
বাংলা ৫০-৫ হয়ে গেলে যে সেঞ্চুরিগুলো তোমাকে গত কয়েক বছর ধরে করতে দেখি, তার নেপথ্যে কী সেই না পাওয়ার যন্ত্রণা কাজ করে?
অনুষ্টুপ: না, না সে রকম কিছু না। তার নেপথ্যে অন্য একটা গল্প আছে।
কী রকম?
অনুষ্টুপ: দেখো, গত ১০ বছর ধরে আমি একটু স্পিরিচুয়াল দিকে গিয়েছি। সেটা কী, বিশদে বলছি না। তবে উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছি। ধরো, এই যে তুমি বললে, ৫০-৫। এই পরিস্থিতিকে দু’ভাবে সামলানো যায়। এক, অজান্তে। দুই, জেনেবুঝে। এ রকম পরিস্থিতিতে আমি আগেও পড়েছি। তখনও রান করেছি। কিন্তু সেটা করেছি, অজান্তে। আর এখন করি, জেনেবুঝে। দেখো, প্ল্যান-ক্যালকুলেশন সমস্ত থাকবে। আমিও তা করি। কিন্তু সঙ্গে এটাও থাকে। দেখো, রান পাওয়া না পাওয়া, কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিন্তু যেটুকু রানই এখন করি, জেনেবুঝে করি। বাংলা ৫০-৫ হয়ে গেলে এখন সেটাকে আমি সুযোগ হিসেবে দেখি। আমার ব্যাপারটা কী এখন হয়েছে জানো? ধরা যাক, যে পরিস্থিতি হয়ে আছে, যে পরিস্থিতিতে নামছি আমি, তার প্রভাব আমার মনের ওপর পড়বে না। কিন্তু আমার মনে যা চলছে, তার প্রভাব পরিস্থিতির ওপর পড়বে!
এটুকু বুঝলাম, একটা লেখায় তোমাকে নীরব ক্রিকেট-সন্ন্যাসী লিখে কিছু ভুল করিনি। তা, সিদ্ধেশ্বরীর খাওয়াদাওয়া সেই নির্মোহ ক্রিকেট-সন্ন্যাসীর চিত্তচাঞ্চল্যের কারণ হতে পারল?
অনুষ্টুপ: (হাসি)। মাছটা বেড়ে করেছে। ডাল-পোস্তর বড়াটাও ভালো। কিন্তু লাউ-চিংড়িটা অত ভালো হয়নি।
ঠিক। জমেনি। কত দেবে দশে সিদ্ধেশ্বরীকে?
অনুষ্টুপ: সাত-সাড়ে সাত। লাউ চিংড়িটা ভালো হলে আট দিতাম। ওটা আর একটু ভালো আশা করেছিলাম। এখানে আসতে-আসতে ভাবছিলাম, মাংস খাব। তারপর মনে হল, নাহ্, পাইস হোটেল যখন মাছই খাই। এত বড় সাইজের পাবদা দেবে, ভাবিনি।
হুঁ। যা রাক্ষুসে সাইজ, সাত দিন ধরে খেতে হবে।
অনুষ্টুপ: একদম। আচ্ছা শোনো, একটা কথা বলা হয়নি খাওয়া নিয়ে কথায়-কথায়।
বলো।
অনুষ্টুপ: বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িটায় একবার যেতে হবে। যাব-যাব করে আজও যাওয়া হল না।
সে তো রনজি ট্রফি জিতলে যাওয়ার কথা ছিল। কথা তো হয়েছিল যে, রনজি জেতার পরের দিনই সোজা ফেলু মিত্তিরের স্রষ্টার বাড়ি ঢুঁ মারা হবে।
অনুষ্টুপ: না, না। রনজি জিতি বা না জিতি, যেতে হবে। ওই আফসোস জীবদ্দশায় রাখা যাবে না, বুঝলে!