লেখক যেন প্রশ্ন ছুড়ে দেন পাঠকের উদ্দেশে– দৈনন্দিন জীবনে তথাকথিত ‘স্বাভাবিক’ আর পাঁচজনের মতো ‘ভাল থাকা’-র মুখোশ যদি খুলে গিয়ে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে আমাদের আদি ও অকৃত্রিম ‘র-নেস’, তখন তা আমরা সামাল দিতে পারব তো? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আমরা নিজের অজান্তেই ঢুকে পড়ি– ‘deeper and deeper into the heart of darkness.’
জটিল জীবনের পাকদণ্ডীতে দাঁড়িয়ে চরিত্ররা। কেউ মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন অহর্নিশ। কারও কল্পনার জালে বাস্তব আর পরাবাস্তব অবিন্যস্ত। কোনটা আসল, কোনটা নকল, কোনটা ঠিক-ভুল গুলিয়ে যাচ্ছে তাদের, বারবার।
স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত অনুরাধা। সারাক্ষণ তাকে তাড়া করে বেড়ায় নানা আতঙ্ক। ভয়ের তাড়নায় অবশ হয়ে আসে হাত-পা। কাছের মানুষ তাকে বোঝায় যা সে দেখছে-শুনছে, তা মোটেও বাস্তব নয়। কিন্তু সে যে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, স্পর্শ করতে পারছে, অনুভব করছে– সবটাই মিথ্যে!
‘Anuradha turned around in darkness. A sliver of light from somewhere filtered into the room. She could hear her heartthrob….Anuradha’s heart almost stopped. She felt an icy chill run down her spine. Terror-stricken, she slowly turned towards the bed. just then someone crept up behind her back surreptitiously and put a hand on her shoulder.’
আরও পড়ুন: দু’মলাটে জোছন দস্তিদারের পুনর্জন্ম
নিক ও ঐষী। কলেজের আর পাঁচটা প্রেমের মতোই উত্তেজনায় সবুজ-সতেজ। পাকেচক্রে সম্পর্কে ঘুণ ধরে তাদের। অপরিণত বয়স প্রেম ভেঙে যাওয়ার প্রবল কষ্ট সামাল দিয়ে উঠতে পারে না। উপচে ওঠা আবেগ, শীর্ণ মন নিয়ে এক নিকষ অন্ধকারে ক্রমশ ডুবে যায় সে। যতদিনে নিখিলেশ ফিরে আসতে চায়, ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে অনেকখানি।
‘…he felt responsible for Oishi’s death. Inside him told him he was evil, vile, self-centered. He cried out no… I am not that bad. I really thought you will find your way out of that setback. Millions of people break off. Do they all die? Why did you have to? …I pushed you to death, Oishi. I killed you….’
প্যারাসোমনিয়ায় ভুগছে ঈশিতা। দু’-চোখে ঘুম নেই বহু রাত। কিন্তু শরীর তো যন্ত্র মাত্র। সে বিশ্রাম দাবি করে। তা না পেলে সমস্ত পরিস্থিতেতে ঠান্ডা, র্যাশনাল থাকতে পারে না সে। ফলে ক্রমে অপ্রাকৃত, অস্বাভাবিক আচরণে ফুলে-ফেঁপে ওঠে রোজনামচা। এমন এক র্যাবিট হোলে ঢুকে পড়ে ঈশিতা যেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ তার অজানা।
‘she took a painkiller and went off to sleep. She must have been asleep for a while when she found it difficult to breathe. She opened her eyes only to see two hands with gloves on trying to choke her… she felt her heart pound as she dropped into a freefall.’
আরও পড়ুন: জীবনবিজ্ঞান না, এক টাকার ব্যাঙ যখন জীবন দেখায়
কেউ তাসের ঘর বানাতে বানাতে ভুলে যায় যে, তা ভেঙে পড়ার জন্য মৃদু বাতাসটুকুই যথেষ্ট, দমকা হাওয়া অপ্রয়োজনীয়। স্বভাবের বশে মিথ্যের পিঠে চড়ে বসে মিথ্যে। আর সেই চক্রবূহ্যেই বন্দি হয়ে থেকে যায় চরিত্ররা।
এমনই টানটান উত্তেজনার মোড়কে আষ্টেপৃষ্টে মোড়া অরিন্দম বসুর ছোট ও বড় গল্প সংকলন ‘আ বক্স ফুল অফ ডার্কনেস’। আমাদের মনের ভিতর যে রাতের অন্ধকার ঘাপটি মেরে বসে থাকে, সুযোগ মিললেই যে রাগ, ক্ষোভ, ভয়, সংশয়, ঘৃণা, উদ্বেগ, হিংসা বা বিদ্বেষের বেশে উগড়ে দেয় বিষ, এ বইয়ের ছত্রে ছত্রে তারই উপস্থিতি। প্রমাণ করে, ‘Happiness is an occasional episode in the general drama of pain’.
লেখক যেন প্রশ্ন ছুড়ে দেন পাঠকের উদ্দেশে– দৈনন্দিন জীবনে তথাকথিত ‘স্বাভাবিক’ আর পাঁচজনের মতো ‘ভাল থাকা’-র মুখোশ যদি খুলে গিয়ে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে আমাদের আদি ও অকৃত্রিম ‘র-নেস’, তখন তা আমরা সামাল দিতে পারব তো? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আমরা নিজের অজান্তেই ঢুকে পড়ি– ‘deeper and deeper into the heart of darkness.’
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে যা কিছু চোরা, নিকষ তারই দলিল অরিন্দম বসুর বইয়ের চরিত্ররা। যা গোপন রাখার তাগিদে আমাদের রোজকার স্বাভাবিক থাকার লড়াই, যে সমস্ত ভয় আমাদের তাড়া করে বেড়ায় তার বাস্তবায়নে মানুষের দুরমুশ হয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসের কথাই সোচ্চারে প্রকাশিত বইয়ের পাতায় পাতায়।
আ বক্স ফুল অফ ডার্কনেস
দ্য রাইট অর্ডার পাবলিকেশন্স
মূল্য ৪৯৯