সূচিপত্র ঘাঁটলে দেখা যাবে এবারের সংখ্যায় রয়েছে বেশ কিছু বিভাগ ও উপবিভাগ। ছায়াছবি, মঞ্চ, যাত্রা, সংগীত নিয়ে নানাবিধ লেখা। শুরুতেই ‘ছায়াছবি’ বিভাগের ‘কথোপকথন’ উপবিভাগে রয়েছে নিমাই ঘোষের স্মৃতিচারণ। মৃণাল সেনকে নিয়ে। অনুলিখনের ভিত্তিতে রচিত লেখাটি বেশ উপভোগ্য। সম্প্রতি কিংবদন্তি পরিচালককে নিয়ে দু’টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ফলে নতুন করে জনমানসে মৃণাল সেনকে নিয়ে আলোচনায় ঢেউ উঠেছে। এই লেখায় পাঠক পাবেন তাঁর সঙ্গে অভিনেতার ‘ইচ্ছাপূরণ’ ও ‘কলকাতা ৭১’-এ কাজ করার স্মৃতিচারণ।
‘চৌরঙ্গী’ পত্রিকা মানেই বিশেষ সংখ্যা। মনস্বী পাঠকমহলে এমনই ধারণা। কথাটা ভুলও নয়। শেষবার সাধারণ সংখ্যা বেরিয়েছিল বছর সাতেক আগে। সেটি ছিল উৎসব সংখ্যা। আর এবারও নতুন করে তাদের প্রকাশিত সাধারণ সংখ্যাটি উৎসব সংখ্যাই। আর সেই সংখ্যাতেই জায়গা করে নিয়েছে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রচনা।
সূচিপত্র ঘাঁটলে দেখা যাবে এবারের সংখ্যায় রয়েছে বেশ কিছু বিভাগ ও উপবিভাগ। ছায়াছবি, মঞ্চ, যাত্রা, সংগীত নিয়ে নানাবিধ লেখা। শুরুতেই ‘ছায়াছবি’ বিভাগের ‘কথোপকথন’ উপবিভাগে রয়েছে নিমাই ঘোষের স্মৃতিচারণ। মৃণাল সেনকে নিয়ে। অনুলিখনের ভিত্তিতে রচিত লেখাটি বেশ উপভোগ্য। সম্প্রতি কিংবদন্তি পরিচালককে নিয়ে দু’টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ফলে নতুন করে জনমানসে মৃণাল সেনকে নিয়ে আলোচনায় ঢেউ উঠেছে। এই লেখায় পাঠক পাবেন তাঁর সঙ্গে অভিনেতার ‘ইচ্ছাপূরণ’ ও ‘কলকাতা ৭১’-এ কাজ করার স্মৃতিচারণ।
মৃণালের সমান্তরালে সত্যজিৎকে নিয়ে বংশী চন্দ্রগুপ্তর স্মৃতিচারণের মতোই আরও এক আকর্ষণীয় অংশ, পিট মার্টিনের নেওয়া স্যর অ্যালফ্রেড হিচককের অতীব উপভোগ্য এক সাক্ষাৎকার। কতটা উপভোগ্য বোঝাতে একটি অংশ উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না। ‘… আমি কখনও বাঁধা গতের গভীর রাত– ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে দরজা খুলে যাচ্ছে, এই ধরনের রহস্য পছন্দ করি না। আমার কাছে মৃত বেড়াল, নাড়িভুড়ি, আবর্জনা ইত্যাদিতে ভর্তি, অন্ধকার, সংকীর্ণ একটা গলিতে মার্ডারের চাইতে উজ্জ্বল রোদে ধোয়া উচ্ছ্বল শব্দ করা, একটি নদীর পাড়ে মার্ডার অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হয়।’
……………………………………………………….
উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে সোহম দাসের ‘কিছু দৃশ্য, কিছু দর্শন’-এর কথাও। আদতে বাংলা ছবির গুটিকয়েক দৃশ্যকে নিয়ে ধারাবাহিক কলাম। কিন্তু এই সংখ্যার লেখাটিকে অনায়াসে একটি স্বতন্ত্র লেখা বলেও ধরে নেওয়া যায়। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির একটি দৃশ্য, বলা যায় একটি মুহূর্তকে যেভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি তা সত্যিই অভাবনীয়। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে বলা ‘বাত্তিওলা মেয়েরা তো সিন্দুর মাখেই না’ সংলাপটিকে চিরে চিরে দেখিয়েছেন। উঠে আসে বিবাহ-চিহ্ন ধারণের প্রথার গুঢ় সামাজিক ব্যাখ্যা। যে সময়ের ছবি, সেই সময়কে ধরে তিনি বুঝে নিতে চেয়েছেন দর্শকের উদ্দেশে ভানুর বিশেষ ভঙ্গিতে বলা এই সংলাপের চালচিত্রটিকে।
……………………………………………………….
যাত্রা দুনিয়ার কিংবদন্তি অভিনেতা যাত্রাসম্রাট শান্তিগোপালের ‘কার্ল মার্কস সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনয়’ এক চমৎকার স্মৃতিচারণ। যদিও পুনর্মুদ্রণ, তবুও এই লেখাটি এই সংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ। অধুনাবিস্মৃত প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর বলা কথাগুলি ফিরিয়ে নিয়ে যায় পুরনো দিনে। মার্কসের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় প্রায় মিথে পর্যবসিত হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে শিল্পী জানাচ্ছেন, খিদেয় কাতর ছোট মেয়েকে ভোলাতে তাকে পিঠে নিয়ে মার্কসের ঘোড়া ঘোড়া খেলার দৃশ্যের মতো মর্মস্পর্শী দৃশ্যে অভিনয় করার কথা।
…………………………………………………
আরও পড়ুন রণিতা চট্টোপাধ্যায়-এর লেখা: তোমার কবিতার ঘোরগ্রস্ত খেলার পুতুল নই কেউ আমরা
………………………………………………….
একইভাবে দিলীপ কুমারের এক বহু পুরনো সাক্ষাৎকারও এখানে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। শচীন ভৌমিকের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি চমৎকার। কিন্তু এরই পাশাপাশি, এই ২০২৪ সালে বসে তা পড়তে পড়তে পাড়ি জমানো যায় অতীতেও। বিশেষ করে যখন জানা যায়, সাক্ষাৎকার শেষে ‘মুঘল-এ-আজম’ ছবির শুটিং করতে যাবেন দিলীপ কুমার তখন সত্যিই এক স্মৃতিমেদুরতা ঘিরে ধরে।
তবে কেবলই স্মৃতিচারণ নয়, দেবপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আকাশ-কুসুম আপনি ফোটে’র মতো রচনায় ফুটে উঠেছে সম্প্রতি সাড়া ফেলে দেওয়া বাংলা ছবি ‘মানিকবাবুর মেঘ’-এর মতো সিনেমা এবং ২০১৮ সালে কৌশিক সেন নির্দেশিত ‘তারায় তারায়’ নাটক প্রসঙ্গ। মানুষ ও তার মাথার ওপরে ‘শরীর-মন রাঙিয়ে ক্ষণে ক্ষণে চমক’ জাগানো আকাশের সম্পর্ক নিয়ে এক আশ্চর্য এই রচনা। যা ভাবায়। ভাবতে বাধ্য করে।
উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে সোহম দাসের ‘কিছু দৃশ্য, কিছু দর্শন’-এর কথাও। আদতে বাংলা ছবির গুটিকয়েক দৃশ্যকে নিয়ে ধারাবাহিক কলাম। কিন্তু এই সংখ্যার লেখাটিকে অনায়াসে একটি স্বতন্ত্র লেখা বলেও ধরে নেওয়া যায়। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির একটি দৃশ্য, বলা যায় একটি মুহূর্তকে যেভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি, তা সত্যিই অভাবনীয়। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে বলা ‘বাত্তিওলা মেয়েরা তো সিন্দুর মাখেই না’ সংলাপটিকে চিরে চিরে দেখিয়েছেন। উঠে আসে বিবাহ-চিহ্ন ধারণের প্রথার গুঢ় সামাজিক ব্যাখ্যা। যে সময়ের ছবি, সেই সময়কে ধরে তিনি বুঝে নিতে চেয়েছেন দর্শকের উদ্দেশে ভানুর বিশেষ ভঙ্গিতে বলা এই সংলাপের চালচিত্রটিকে।
…………………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………………….
এবারের সংখ্যার আর এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ‘বিশেষ পাঠ’। সম্রাট মুখোপাধ্যায়ের লেখা পালা ‘সাইলক সংহার কাব্য’। ‘দ্য মার্চেন্ট অফ ভেনিস’-এর প্রেরণাকে মাথায় রেখেই রচিত হয়েছে পালাটি। এমনই নানা ধরনের রচনায় সমৃদ্ধ এবারের সংখ্যাটি। সবগুলি নিয়ে আলোচনা সামান্য পরিসরে সম্ভব নয়। কিন্তু সব মিলিয়ে নিশ্চিতভাবেই বাংলা বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য অজস্র উৎসব সংখ্যার ভিড়ে চমৎকার ছাপা, সুন্দর প্রচ্ছদে সাজানো ‘চৌরঙ্গী’র এই সংখ্যাটি আলাদা করে যে নজর কাড়বেই, তা বলাই যায়।
চৌরঙ্গী
উৎসব সংখ্যা
সম্পাদক: শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
২৭৫ টাকা