একদিন কলেজ স্ট্রিটে আনন্দ পাবলিশার্সের অফিসে গেলাম। পৌলমীদি বলে রেখেছিলেন। তাই কয়েক মাসের মধ্যেই প্রকাশিত হল আমার দ্বিতীয় বই: ‘রাপ্পা রায় ও বাদামি চেয়ার’, যা আসলে আমার প্রথম বই-ও বটে। কারণ, এটি আমারই মৌলিক গল্প এবং চরিত্র নিয়ে তৈরি করা গ্রাফিক নভেল। তাই প্রথম বইয়ের তুলনায় দ্বিতীয় বই নিয়ে আমার উত্তেজনা ছিল অনেক বেশি!
এই যে দ্বিতীয় বই নিয়ে লেখার সুযোগ পেলাম, তাতে লেখক হিসেবে আমার বেশ একটা সুবিধেই হল। কারণ, আমার জীবনের দ্বিতীয় বইটাই লেখক হিসেবে আমার প্রথম বই! ব্যাপারখানা অনেকটা ‘সোনার পাথরবাটি’র মতো শোনালেও এই সত্যিটাকে অগ্রাহ্য করার কোনও উপায় নেই।
বই, লেখক, লেখা, মৌলিক গল্প– এই সমস্ত কিছুর ব্যাকরণগত অর্থ অনুসরণ করলে তা-ই দাঁড়াচ্ছে ব্যাপারটা। যেহেতু আমি একজন কমিকস শিল্পী, পেশাগত কারণে আমরা মৌলিক গল্প ছাড়াও অন্যান্য প্রথিতযশা লেখকের গল্প ও তাঁদের সৃষ্ট চরিত্রকে নিয়ে গ্রাফিক নভেল বা কমিকস তৈরি করে থাকি। ঠিক এভাবেই একবার আমার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পাতালঘর’ নিয়ে একটা আস্ত গ্রাফিক নভেল তৈরির বরাত পেলাম, সেটা বোধহয় ২০০৭ সালের প্রথম দিক। ২০১০ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘পাতালঘর’। কচিকাঁচাদের ভালো লেগেছিল। সে কারণেই বই বিক্রি হয়েছিল ভালো। সেই বইয়ের প্রকাশক যদিও ব্যাজার মুখে জানিয়েছিলেন বিক্রি ‘মোটামুটি’।
প্রথম বইটি আমার নিজের গল্প নয়, যদিও ততদিনে গোটা তিনেক মৌলিক গল্প নিয়ে গ্রাফিক নভেল ইতিমধ্যে প্রকাশিত। কিন্তু দ্বিতীয় বইয়ের বেলায় অবশ্য ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরল। একদিন সকালে ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক পৌলমী সেনগুপ্ত ফোন করলেন।
–আপনি কি চান না যে আপনার বই প্রকাশিত হোক?
–হ্যাঁ, চাই!
–তাহলে যান, আনন্দ পাবলিশার্সে! পাণ্ডুলিপি জমা দিন।
–আমি নিজেই গিয়ে বলব যে ভালো লিখি, আমার বই বের করুন?
–ওফ্! কিচ্ছু করতে হবে না! গিয়ে বলবেন আমি আপনাকে পাঠিয়েছি। ব্যস।
বিশেষ কিছুই করতে হল না। সত্যিই একদিন কলেজ স্ট্রিটে আনন্দ পাবলিশার্সের অফিসে গেলাম। পৌলমীদি বলে রেখেছিলেন। তাই কয়েক মাসের মধ্যেই প্রকাশিত হল আমার দ্বিতীয় বই: ‘রাপ্পা রায় ও বাদামি চেয়ার’, যা আসলে আমার প্রথম বই-ও বটে। কারণ, এটি আমারই মৌলিক গল্প এবং চরিত্র নিয়ে তৈরি করা গ্রাফিক নভেল। তাই প্রথম বইয়ের তুলনায় দ্বিতীয় বই নিয়ে আমার উত্তেজনা ছিল অনেক বেশি!
……………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………..
সেই ক্লাস নাইন-টেন থেকেই আমার কমিকস তৈরির স্বপ্ন। তখন থেকেই ভাবতাম ফেলুদার মতো আমার চরিত্রেরও একটা আলাদা কাঠের তাক থাকবে, যেখানে সাজানো থাকবে রাপ্পা রায়ের বই। পাঠকরা হাসি-হাসি মুখে তুলে নিয়ে দেখতে থাকবেন কচিকাঁচা থেকে ধেড়ে– সব্বাই। দ্বিতীয় বই আমার জীবনে এসবেরই একটা শুরুয়াৎ।
তবে এখন বয়স হয়েছে, বুঝতে পারি এসব স্বপ্ন-টপ্ন এক ধরনের ছেলেমানুষি। ভালোবেসে কাজ করে যাওয়াটাই আসল।
অশোক ঘোষ মনে করতেন, ট্রাম আন্দোলন কলকাতার হকারদের একটি রাজনৈতিক চেতনা জুগিয়েছিল। এই আন্দোলন ছিল ছাত্র, শিক্ষক, কেরানি, হকার, আর উদ্বাস্তুদের লড়াই। আর ট্রাম-ডিপো মানেই হকার। এইসব দোকানেই আন্দোলনকারীদের আড্ডা বসত। দেশ-বিদেশের নানা ধরনের কথা আলোচনা হত। সকালে হয়তো কোনও এক চায়ের দোকানে জটলা পাকিয়ে খবরের কাগজ পড়া হত।