Robbar

এক্সক্লুসিভের খোয়াব, এক্সক্লুসিভের রোয়াব

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 25, 2024 6:42 pm
  • Updated:September 25, 2024 6:42 pm  

এভলিউশনই আসলে সলিউশন। সেই বিবর্তিত সময়ে এক্সক্লুসিভ যেমন দুর্লভ, তেমন কেউ কেউ তাকে হাস্যকরও করে তুলেছে। ধরুন, চাঁদ উঠলে সবার উঠোনেই জোছনার ফুল। যতদূর চোখ যায় ততদূর পূর্ণিমা। আপনি কি তাকে এক্সক্লুসিভ দাবি করতে পারেন! আসলে এক্সক্লুসিভ এক বেয়াড়া টাট্টু। টাকা দিয়ে, জোর খাটিয়ে, ধমকে চমকে তাকে বশ করা যায় না। এলে এমনিই আসে, নইলে শত সাধ্যসাধনাতেও ধরা দেয় না।

প্রচ্ছদ শিল্পী: দীপঙ্কর ভৌমিক

অরিঞ্জয় বোস

‘এক্সক্লুসিভ’ অর্থাৎ যা কারও কাছে নেই। একান্ত আমার। অর্থাৎ কি না লালমোহনবাবুর নেপালি ভোজালি। ফেলুদার মগজাস্ত্র। উত্তমের ঠোঁটের কোণে সিগারেট। সুচিত্রার দর্পিণী উপস্থিতি। শ্যাম থাপার ব্যাকভলি। চিত্তবাবুর স্টু। কফিঘরের ইনফিউশন। আর কলকাতার ট্রাম।

এক্সক্লুসিভ আসলে সাংবাদিকের খোয়াব। এবং রোয়াব। খবরের দুনিয়ায় যাঁদের হাতেখড়ি হয়, তাঁরা হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান। একটা খবর যদি হাতে চলে আসে। খবরই নীরা। অতএব, এই হাত ছুঁয়েছে তোমার মুখ– হেন কাব্য যদি একবার বাস্তব হয়ে ওঠে তবে আর পায় কে! এক্সক্লুসিভ বাপ্পা মরিয়া! আর সেই অভিমানিনী যদি গোঁসা ভুলে বারকয়েক চলে আসে, তাহলে তো রীতিমতো কলার উঁচু। সাংবাদিকের দর বাড়ে। অন্য হাউসে দরপত্র দাখিল করতেও সুবিধা হয়। সবথেকে বড় কথা, বাড়ে সম্ভ্রম। দেখবেন, ডাক্তারবাবুদের নামের পাশে ডিগ্রি জ্বলজ্বল। কে কত বড় চিকিৎসক তার একটা প্রাথমিক অনুমান মেলে। বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রে কে কোন মানের স্কলার, তাও ওই প্রতিষ্ঠান ডিগ্রির উপর খানিকটা তো নির্ভর করেই। কিন্তু সাংবাদিক? সে বেচারির হাতে পেনসিল। ভরসা এই এক্সক্লুসিভ। যার হাতে যত বেশি, তিনি তত বড়। সেই হিসেবে এক্সক্লুসিভই সাংবাদিকতার ডিগ্রি।

Embrace or not embrace the exclusive? - Voxus PR
ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

 

সংবাদঘরে মানুষ হওয়ার সুবাদে এক্সক্লুসিভের মূল্য হাড়ে হাড়ে মালুম। নিজে কাজ করতে গিয়ে তো আরও। সময়টার গায়ে নতুন চাদর। ফলে, এক্সক্লুসিভের পুরনো মানে খানিক বদলেছে। অন্তত আমার তাই মত। আজ, একান্ত আমার বলে দাবি করা খবর হাতেগোনা মাত্র। অথচ দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমে মুহুর্মুহু এক্সক্লুসিভ। অর্থাৎ কে আগে ব্রেক করছে, সেই হিসেবে নির্ধারিত হচ্ছে দুষ্প্রাপ্যতা। ডিজিটাল মিডিয়ার রবরবায় ব্যাপারটা আরও জটিল। সব মিডিয়া ছানবিন করলে দেখা যাবে, গোটা দশেক এক্সক্লুসিভ স্ট্যাম্পের খবর রোজ ঘুরছে। এই বাজারে তাই ডাল-ভাত আর বিরিয়ানির পার্থক্য বুঝে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

এ কথাও ঠিক, বদলে যাওয়া দিনকালে প্রাপ্য আর দুষ্প্রাপ্যের মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই। খবর নিজেই সংজ্ঞায় বদলে গিয়েছে। ফলত, তার গায়ে সেঁটে থাকা এক্সক্লুসিভিটিও খানিক এলোমেলো। যথার্থ এক্সক্লুসিভের বাইরে সে নানা অর্থ খুঁজে নিচ্ছে। আর যেদিন থেকে মোবাইলের গায়ে এঁটুলি হয়েছে ক্যামেরা, সেদিন থেকে ‘মেরা খবর মহান’ বলার ঋতু বদলেছে। এদিকে আবার সুগ্রীব দোসর হয়ে আছে সোশাল মিডিয়া। ফলত সিটিজেন জার্নালিজমের এমন বাড়বাড়ন্ত যে, তথ্য খবর আর প্রেস রিলিজ সব এক কড়াইতে জব্বর শুক্ত। সন্দেহ নেই, এ বেশ বড় চ্যালেঞ্জ! সংবাদের দুনিয়াকে তাই নিত্যনতুন বিবর্তনের সাক্ষী হতে হচ্ছে।

…………………………………………

সংবাদঘরে মানুষ হওয়ার সুবাদে এক্সক্লুসিভের মূল্য হাড়ে হাড়ে মালুম। নিজে কাজ করতে গিয়ে তো আরও। সময়টার গায়ে নতুন চাদর। ফলে, এক্সক্লুসিভের পুরনো মানে খানিক বদলেছে। অন্তত আমার তা-ই মত। আজ, একান্ত আমার বলে দাবি করা খবর হাতেগোনা মাত্র। অথচ দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমে মুহুর্মুহু এক্সক্লুসিভ। অর্থাৎ কে আগে ব্রেক করছে, সেই হিসাবে নির্ধারিত হচ্ছে দুষ্প্রাপ্যতা।

…………………………………………

এভলিউশনই আসলে সলিউশন। সেই বিবর্তিত সময়ে এক্সক্লুসিভ যেমন দুর্লভ, তেমন কেউ কেউ তাকে হাস্যকরও করে তুলেছে। ধরুন, চাঁদ উঠলে সবার উঠোনেই জোছনার ফুল। যতদূর চোখ যায় ততদূর পূর্ণিমা। আপনি কি তাকে এক্সক্লুসিভ দাবি করতে পারেন! আসলে এক্সক্লুসিভ এক বেয়াড়া টাট্টু। টাকা দিয়ে, জোর খাটিয়ে, ধমকে চমকে তাকে বশ করা যায় না। এলে এমনিই আসে, নইলে শত সাধ্যসাধনাতেও ধরা দেয় না। বড়াই করে যে এক্সক্লুসিভ ধরতে যায়, কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, একদিন হাউসের গরিমা তার গলায় ঝোলে। আর এক্সক্লুসিভ গিয়ে গরিমা দান করে কোনও একলব্যকে। সাংবাদিকতায় তো কাটা আঙুলের গুরুদক্ষিণা নেই। খবরে টেক্কা দেওয়াই প্রণামী। এক্সক্লুসিভের পৃথিবী সে কথা অক্ষরে অক্ষরে জানে, মনে রাখে।

.………………………………………….

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

…………………………………………..

অতএব নেই নেই করেও খবরে এক্সক্লুসিভ থাকবে। যেমন বৃন্দাবনের রাস। কতিপয় ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়। শুধু এই জীবনে দেখছি, কতকিছু জিনিস ক্রমে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। এই যেমন, কলকাতায় ট্রাম। কলকাতার এক্সক্লুসিভ ট্রাম, কলকাতাতেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেল। ঠিক আমাদের বন্ধুত্ব কিংবা সরল ভালোবাসার সম্পর্কের মতোই।

অনেক হারিয়ে, অনেক দেনাপাওনা শেষে বুঝি, পাকা রঙের সম্পর্কই বুঝি এ-জীবনে সত্যিকার এক্সক্লুসিভ।

 

……………………… পড়ুন ওপেন সিক্রেট-এর অন্যান্য পর্ব …………………….

পর্ব ৫: শাসন-সোহাগের দ্বন্দ্বসমাস

পর্ব ৪: পাঁকাল সাধনায় নাকাল

পর্ব ৩: দেখা ও না-দেখার সিদ্ধান্ত

পর্ব ২: মহাবিশ্বে যে টোকে না, সে বোধহয় টেকেও না

পর্ব ১: অফিসে দৈবের বশে প্রেমতারা যদি খসে