বছর ২৩-এর গীতিকার সঙ্গে আরও একঝাঁক মেয়ে চাকরি পেয়েছিলেন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের নানা শাখায়। সময়টা ১৯৬৪। প্রথম প্রথম ব্যাঙ্কের মহিলা কর্মীদের সঙ্গে ব্যবহারে গ্রাহকদের যেন অস্বস্তি ছিল কিছুটা। ঠিক যেন ভরসা করতে পারতেন না তাঁরা ব্যাঙ্কের মহিলা কর্মীদের। তবে গীতিকাদের পুরুষ সহকর্মীরা তাঁদের পাশে ছিলেন সেই সময়ে। ‘‘প্রথম প্রথম দু-একবার [কোনও গ্রাহক অবজ্ঞা] করেছেন। কিন্তু আমাদের অফিসাররা সবসময়ে তাঁদের বলতেন– ‘আপনারা যা আশা করছেন এঁরা তার ডবল কাজের’। খুবই প্রশংসা করতেন মেয়েদের। বলতেন মেয়েরা ভালো কাজ করে, ব্যবহারও খুব ভালো।… কাস্টমাররাও পরে বলতেন মেয়েদের কাজ ভালো”– গীতিকার মনে পড়ে।
প্রচ্ছদ: দীপঙ্কর ভৌমিক
তখন ১৯৬৪ সাল। বছর তেইশের গীতিকা এন্টালির একটা স্কুলে পড়ান সেই সময়ে। এক আত্মীয় মারফত হঠাৎ খবর পেলেন যে, এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে প্রথমবার মেয়েদের চাকরিতে নেওয়া হবে। স্কুল দিদিমণির চেয়ে ব্যাঙ্কে চাকরির মাইনে অনেকটা বেশি। তাই ব্যাঙ্কের পরীক্ষায় বসবেন মনস্থির করলেন গীতিকা। পরীক্ষা ভালোই হল; তিনি এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে পেয়ে গেলেন কেরানির চাকরি। প্রথমে পোস্টিং হল দক্ষিণ কলকাতা শাখায়। ছয়-সাত বছর পরই গ্রেড ওয়ান অফিসার পদে প্রমোশন হল তাঁর।
গীতিকা-র সঙ্গে আরও একঝাঁক মেয়ে চাকরি পেয়েছিলেন তখন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের নানা শাখায়। প্রথম প্রথম ব্যাঙ্কের মহিলা কর্মীদের সঙ্গে ব্যবহারে গ্রাহকদের যেন অস্বস্তি ছিল কিছুটা। ঠিক যেন ভরসা করতে পারতেন না তাঁরা ব্যাঙ্কের মহিলা কর্মীদের। তবে গীতিকাদের পুরুষ সহকর্মীরা তাঁদের পাশে ছিলেন সেই সময়ে। ‘‘প্রথম প্রথম দু-একবার [কোনও গ্রাহক অবজ্ঞা] করেছেন। কিন্তু আমাদের অফিসাররা সবসময়ে তাঁদের বলতেন– ‘আপনারা যা আশা করছেন এঁরা তার ডবল কাজের’। খুবই প্রশংসা করতেন মেয়েদের। বলতেন মেয়েরা ভালো কাজ করে, ব্যবহারও খুব ভালো।… কাস্টমাররাও পরে বলতেন মেয়েদের কাজ ভালো”– গীতিকার মনে পড়ে।
প্রথম দিকের মহিলা চাকুরে হিসাবে নানা পরিকাঠামোগত অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছিলেন গীতিকারা। দক্ষিণ কলকাতা শাখায় যেমন মেয়েদের আলাদা বাথরুম ছিল না। গীতিকাদের সমবেত দাবিতেই কিছুদিন পর তৈরি হয় তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগার। তবে কিছু সুবিধাও পেতেন মহিলারা। ব্যাঙ্কের চাকরি বদলির চাকরি। কিন্তু মেয়েদের সাধারণত দূরে বদলি করা হত না। গীতিকা যেমন সারা জীবনই প্রায় দক্ষিণ কলকাতারই নানা শাখায় কাজ করেছেন। একটু বেশি বয়সে মা হন গীতিকা। নানা জটিলতাও ছিল শরীরে। তার ওপর তাঁর স্বামীও মারা যান যখন মেয়ে বেশ ছোট। একরকম দিশাহারা অবস্থা তাঁর। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির কাছে অফিস হওয়াতে খুব সুবিধা হয়েছিল গীতিকার। এই অফিস থেকেই ঋণ নিয়ে কসবা অঞ্চলে একটা ফ্ল্যাট কিনে রেখেছিলেন গীতিকা। তখন কসবা শুনশান, কলকাতা বলে মনেই হয় না। বহু বছর পর সেখানে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন গীতিকা ও তাঁর মেয়ে। কিন্তু চাকরি করে, ঋণ নিয়ে, নিজের নামে ফ্ল্যাট কেনা– ক্ষমতায়নের চিহ্ন তো বটেই।
অবশ্য সবার অভিজ্ঞতা যে একইরকম ছিল তা নয়। ব্যাঙ্ক অফ বরোদার প্রথম দিকের মহিলা কর্মী ছিলেন ছায়া সেন। দিল্লির প্রবাসী বাঙালি পরিবারে জন্ম, সেই শহরেই লেখাপড়া ও চাকরি জীবনের সূত্রপাত। ১৯৬৫ সালে শুরু করেন চাকরি। দু’ বছরের মাথায় তাঁর বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ি হয় কলকাতায়; আর কলকাতাতেই স্বামীর অফিসও। ‘আমাদের তো উপায় নেই, হাজব্যান্ডরা তো ওখানে যাবেন না, আমাদেরকেই আসতে হবে’, একটু হেসে জটিল সত্যটা ছায়া বলেন আমাদের। অগত্যা শুরু হয় তাঁর দিল্লি থেকে কলকাতা বদলির চেষ্টা। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল ছায়াকে। বিয়ের পর গোটা একটা বছর লেগেছিল কলকাতায় পোস্টিং পেতে। সেই এক বছরে চাকরি রাখতে কয়েক মাসের জন্য দিল্লি ছুটতে হয়েছিল নববধূকে। বাকি সময়টা মেডিকেল লিভ নিয়ে নিয়ে থাকতেন শ্বশুরবাড়িতে। সে যুগে, সম্ভ্রান্ত পরিবারের বউ হিসাবে এত ছোটাছুটি না করে চাকরি ছেড়েই দিতে পারতেন ছায়া। কিন্তু ব্যতিক্রমী পরিবারের মেয়ে ছিলেন তিনি। ছোট থেকে শুনেছেন মেয়েদের চাকরি করা দরকার। তাঁর বউদিও চাকরি করেছেন সারাজীবন। ছায়ার বিয়েও হয়েছিল প্রগতিশীল পরিবারে। শাশুড়ি ছিলেন স্কুল-শিক্ষিকা। তাই চিঠি-চাপাটি, দৌড়োদৌড়ি করে বদলি আদায় করেছিলেন ছায়া, চাকরি ছাড়ার কথা ভাবেননি। ছায়ার সেই বদলি আরও অনেকের স্বস্তির কারণ হয়েছিল। ওঁর উদাহরণ দেখিয়ে ওঁর পরপরই গৌহাটিতে বদলি নেন একই ব্যাঙ্কের এবং একই শহরের অন্য এক শাখার এক ভদ্রমহিলা; দুই তামিল ভদ্রমহিলাও ওঁর উদাহরণ দেখিয়ে ব্রেবোর্ন রোড শাখা থেকে বদলি নেন তাঁদের শ্বশুরবাড়ির শহর মাদ্রাজে (চেন্নাই)।
এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক বা ব্যাঙ্ক অফ বরোদার অনেক আগে, ১৯২৫ সাল নাগাদ, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে চাকরি করেছিলেন ইয়াসমিন সার্ভেয়ার। এশিয়ার প্রথম মহিলা কমার্স গ্র্যাজুয়েট ছিলেন ইয়াসমিন। উপমহাদেশের প্রথম মহিলা ব্যাঙ্ককর্মীও বটে। তবে এরকম এক-দু’জন হাতে গোনা মেয়েকে বাদ দিলে, ব্যাঙ্কের চাকরিতে মহিলা আর কই? ছয়ের দশকের শেষে এসে দৃশ্যটা একটু পালটায়। নির্দিষ্টভাবে মহিলাদের নিয়োগ করতে শুরু করে অনেক ব্যাঙ্ক। ১৯৬৯-এ সমস্ত ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ব হয়ে যাওয়ার পরে মেয়েদের উপস্থিতি অবশ্য আরেকটু বাড়ে।
ব্যাঙ্কের মতোই প্রতিরক্ষা বিভাগের নানা পদে মেয়েদের আনাগোনা মূলত স্বাধীনতার আশপাশেই। ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে বেরনো যুগান্তরের একটি খবর অনুসারে, দেশরক্ষা বিভাগ ও সেনাবাহিনী-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান বিভাগে শতকরা ১৫% ছিলেন মহিলা। সম্মুখ সমরে এই বিভাগের কর্মীরা যুক্ত না থাকলেও, সামরিক কলা-কৌশল স্থির করাতে তাঁদের গুরুত্ব ছিল। যুগান্তরে পড়ি,
‘বর্তমানে আণবিক যুগে গতির গুরুত্ব সর্বাধিক। সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে নির্ভুল ও চলতি পরিসংখ্যান তথ্যের উপর গতি নির্ভরশীল। সাধারণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় তথ্য উদ্ঘাটন সময়সাপেক্ষ বলিয়া অবিলম্বে নির্ভুল ফল পাওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবশ্যক হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমান তালে চলিবার জন্য, ন্যূনতম সময়ে দেশরক্ষা সমর বিভাগ সম্বন্ধীয় সমস্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিনিময় কার্যে ভারতকেও এই আধুনিক পদ্ধতির আশ্রয় লইতে হইয়াছে।’
………………………………………………..
ব্যাঙ্ক অফ বরোদার প্রথম দিকের মহিলা কর্মী ছিলেন ছায়া সেন। দিল্লির প্রবাসী বাঙালি পরিবারে জন্ম, সেই শহরেই লেখাপড়া ও চাকরি জীবনের সূত্রপাত। ১৯৬৫ সালে শুরু করেন চাকরি। দু’ বছরের মাথায় তাঁর বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ি হয় কলকাতায়; আর কলকাতাতেই স্বামীর অফিসও। ‘আমাদের তো উপায় নেই, হাজব্যান্ডরা তো ওখানে যাবেন না, আমাদেরকেই আসতে হবে’, একটু হেসে জটিল সত্যটা ছায়া বলেন আমাদের। অগত্যা শুরু হয় তাঁর দিল্লি থেকে কলকাতা বদলির চেষ্টা। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল ছায়াকে। বিয়ের পর গোটা একটা বছর লেগেছিল কলকাতায় পোস্টিং পেতে। সেই এক বছরে চাকরি রাখতে কয়েক মাসের জন্য দিল্লি ছুটতে হয়েছিল নববধূকে। বাকি সময়টা মেডিকেল লিভ নিয়ে নিয়ে থাকতেন শ্বশুরবাড়িতে। সে যুগে, সম্ভ্রান্ত পরিবারের বউ হিসাবে এত ছোটাছুটি না করে চাকরি ছেড়েই দিতে পারতেন ছায়া। কিন্তু ব্যতিক্রমী পরিবারের মেয়ে ছিলেন তিনি। ছোট থেকে শুনেছেন মেয়েদের চাকরি করা দরকার।
………………………………………………..
আধুনিক যন্ত্রপাতি নির্ভর এই বিভাগে নানা ধরনের দায়িত্বে ছিলেন কর্মচারীরা। আমরা তার লম্বা, জটিল বিবরণ পাই যুগান্তরের প্রতিবেদনে–
‘বিভিন্ন প্রকারের যন্ত্র আছে, যথা– কী-পাঞ্চ, ভেরিফায়ার, টেবুলেটর, সর্টার, মাল্টিপ্লায়ার, কোলেটর, ইন্টারপ্রেটার এবং রিপ্রডিউসার। কার্ডের উপর তথ্যসমূহ অঙ্কিত করিবার উদ্দেশ্যে কার্ডসমূহ ছিদ্র করিবার জন্য পাঞ্চ যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়।… অতঃপর কার্ডগুলি ভেরিফায়ার নামক যন্ত্রটি দ্বারা পরীক্ষিত হয়।… টেবুলেটর যন্ত্র দ্বারা যোগ, শ্রেণীবিভাগ এবং মুদ্রণ কার্য একসঙ্গে সম্পন্ন হইয়া মুদ্রিত নির্ঘন্ট প্রস্তুত হয়। এই যন্ত্র বিভিন্ন কার্ডের হিসাবগুলি একত্র করিয়া যোগফল নির্ণয় করে। সর্টার নামক যন্ত্রটি কার্ডগুলি শ্রেণি হিসাবে ভাগ করে…। মাল্টিপ্লায়ার নামক যন্ত্রটি দ্বারা সংখ্যাগুলি দুই শ্রেণীতে লিখিত হয় এবং একটি দ্বারা আরেকটিকে গুণ করা হয়। অতঃপর লব্ধ ফল যথোপযুক্ত কলমে পাঞ্চ করিয়া মুদ্রিত হয়। দুই বাণ্ডিল কার্ড হইতে একই তথ্য সম্বলিত কার্ডগুলি বাছিয়া লইয়া একত্র করা ও অন্যগুলি বাতিল করিয়া দেওয়াই হইল কোলেটার নামক যন্ত্রটির বৈশিষ্ট্য। … পাঞ্চিং যন্ত্রটি দ্বারা কৃত ছিদ্রগুলিকে অক্ষরে বা সংখ্যায় রূপান্তরিত করিয়া চেকিং, ফাইলিং প্রভৃতি কাজে সাহায্য করা ইন্টারপ্রেটার নামক যন্ত্রটির কাজ। এক কার্ডে যে সকল তথ্য আছে সেইগুলি আরেক কার্ডে পাঞ্চ করা রিপ্রডিউসর নামক যন্ত্রটির বৈশিষ্ট্য।’
কিন্তু এই একই খবরে সামান্য ছুঁয়ে যাওয়া হয় আরেকটি তথ্য: ‘যন্ত্রবিভাগের পাঞ্চিং শাখায় তাহাদের [মহিলাদের] সংখ্যা অন্যান্যদের অপেক্ষা অনেক বেশী।’ সাংবাদিক স্পষ্ট করেন না এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ব বিভাজনের কারণ। যেমন একসময়ে ধরে নেওয়া হত টেলিফোন অপারেটরের কাজ মেয়েলি; বা আজও আমরা চা পাতা তোলার কাজকে মেয়েদের আঙুলের উপযুক্ত মনে করি; তেমনই কি-পাঞ্চিং-এর কাজকেও ভাবা হত? নাকি, পাঞ্চিং-এর কাজে আপাতভাবে প্রথাগত প্রশিক্ষণ কম লাগত, মাইনেও কম ছিল, তাই মেয়েদের ঠেলে দেওয়া হত? উত্তর যাই হোক, এই শ্রম বিভাজনের পিছনে নিঃসন্দেহে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ছিল।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের অন্য নানা বিভাগেও আমরা মেয়েদের পাই পাঁচের দশক থেকেই। কথা বলেছিলাম আমরা তেমনই একজনের সঙ্গে। তাঁর নাম মায়া ঘোষ (বিয়ের পর মায়া আচার্য)। আদতে পূর্ব বাংলার মেয়ে মায়া, দেশভাগের পর, ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতা চলে আসেন। কলকাতায় কলেজ জীবন শেষ করে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম লেখান। ১৯৫৫-’৫৬ সালে ডাক পান প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি চাকরির ইন্টারভিউয়ে। ভালো হয় সেই ইন্টারভিউ, কেরানি পদে চাকরি পান মায়া। সে সময়ে মায়ার সহকর্মীদের মধ্যে মাত্র ১৩ জন মহিলা ছিলেন। তাঁদের একজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, বেশ কয়েকজন দক্ষিণ ভারতীয়, আর অল্প কয়েক জন মায়ার মতোই পূর্ব বাংলা থেকে আসা হিন্দু বাঙালি মেয়ে। গর্ব করে ৯৩ বছরের মায়া আমাদের বলেন, খুলনার ছোট গ্রাম কোরামারার প্রথম মহিলা ইন্টারমিডিয়েট তিনি; প্রথম চাকুরিরতাও। গর্ব করার মতো ব্যাপার তো বটেই।
চাকরিতে মায়ার সুনাম ছিল। টাইপিং, শর্টহ্যান্ডে তিনি ছিলেন পারদর্শী। প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রত্যেকের হিন্দি পরীক্ষা হত। সকলকে একই প্রশ্ন করা হত– মাতৃভাষায় পড়া কোনও গল্প হিন্দিতে বলো। ‘মহেশ’ গড়গড় করে মুখস্থ বলেছিলেন মায়া। কেরানি হিসেবে চাকরি-জীবন শুরু করলেও, গেজেটেড অফিসার হিসাবে অবসর নেন তিনি। গীতিকার মতোই, চাকরি করার সময়েই অফিস থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেন ক্রিস্টোফার লেনে। তাঁর স্বামীও অবশ্য ঋণ নিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে। তবে সে যুগে কতজন মেয়েই বা অফিস থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি বানিয়েছিলেন? নিঃসন্দেহে অনেক বেড়া টপকেছিলেন মায়ারা।
আগের এক কিস্তিতে লিখেছিলাম মেয়ে-পুলিশদের কথা। পাঁচ-ছয়ের দশকে হয়তো মহিলা-পুলিশ, ব্যাঙ্কের মহিলাকর্মী আর প্রতিরক্ষা বিভাগে চাকুরিরতা মেয়েদের একটা মিল ছিল। এই চাকরিগুলো তার কিছুদিন আগে অবধি ছিল পুরুষদের একচেটিয়া। যখন গীতিকারা চাকরি পান, তখনও সংখ্যায় পুরুষরা অনেক অনেক বেশি। পুরুষ অধ্যুষিত অফিসে কাজ করতে কেমন লাগত মায়া, ছায়া বা গীতিকার? তাঁদের বয়স, পারিবারিক মর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পদ কি ঠিক করে দিত তাঁদের সঙ্গে পুরুষ সহকর্মীদের সম্পর্ক? হাতে-গোনা মহিলা সহকর্মীদের সঙ্গেই বা কেমন সম্পর্ক ছিল তাঁদের? নাকি এইসব অফিসের চৌহদ্দির ভিতর লিঙ্গ-নির্বিশেষে সহজ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার অবকাশ হত কখনও কখনও? সমাজ অথবা পরিবারই বা কী চোখে দেখত এই মেয়েদের, যাঁদের সহকর্মীরা প্রায় সবাই পুরুষ? অন্য কোনও কিস্তিতে উত্তর খুঁজব আমরা এই সব প্রশ্নের।
… পড়ুন চৌকাঠ পেরিয়ে কলামের অন্যান্য পর্ব …
পর্ব ১০: সেলসগার্লের চাকরিতে মেয়েরা কীভাবে সাজবে, কতটা সাজবে, তা বহু ক্ষেত্রেই ঠিক করত মালিকপক্ষ
পর্ব ৯: স্বল্পখ্যাত কিংবা পারিবারিক পত্রিকা ছাড়া মহিলা সাংবাদিকরা ব্রাত্য ছিলেন দীর্ঘকাল
পর্ব ৮: অভিভাবকহীন উদ্বাস্তু মেয়েদের ‘চিরকালীন বোঝা’র তকমা দিয়েছিল সরকার
পর্ব ৭: মেয়েদের স্কুলের চাকরি প্রতিযোগিতা বেড়েছিল উদ্বাস্তুরা এদেশে আসার পর
পর্ব ৬: স্বাধীনতার পর মহিলা পুলিশকে কেরানি হিসাবেই দেখা হত, সেই পরিস্থিতি কি আজ বদলেছে?
পর্ব ৫: প্রেম-বিবাহের গড়পড়তা কল্পকাহিনি নয়, বাস্তবের লেডি ডাক্তাররা স্বাধীনতার নিজস্ব ছন্দ পেয়েছিলেন
পর্ব ৪ : নার্সের ছদ্মবেশে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কেও যৌন হেনস্তার কবলে পড়তে হয়েছিল
পর্ব ৩ : উদ্বাস্তু মেয়েদের রোজগারের সুযোগ মিলেছিল টাইপ-শর্টহ্যান্ডের কাজে
পর্ব ২ : পিতৃতন্ত্রের কাঠামোয় কিছু ফাটল নিশ্চয়ই ধরিয়েছিলেন সে যুগের মহিলা টেলিফোন অপারেটররা
পর্ব ১ : দেশভাগের পর ‘চঞ্চল চক্ষুময়’ অফিসে চাকুরিরত মেয়েরা কীভাবে মানিয়ে নিলেন?