ব্যবহারিক জগৎ নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত এতটাই ব্যস্ত থাকি, যে, এ জগতের খবর রাখি না। ধর্মের ঊর্ধ্বতর বিকাশের এই জায়গাটাকে ‘আধ্যাত্মিকতা’ বলতে পারি। আমাদের এই অন্তররাজ্যের নীরবতায় রয়েছে সকল সুন্দরের অবস্থান। এই রাজ্য আমাদের মধ্যেই রয়েছে, তা অনুভব করার চেষ্টা করলে অনেক কাজ হয়। অন্তরে একটা স্থান করতে হয়। জীবন, শরীর, মন– এক তালে চলে।
আমরা জীবন গঠনের কথা বলি। জীবন স্বাভাবিকভাবে কী? এই জীবনে উন্নতির প্রকৃত পন্থা কী, এই প্রশ্নও ঘুরে-ফিরে বারবার করে আসে, এসেছে যুগে যুগে, বিভিন্ন আবহে। জীবন একটা শিল্প, সূক্ষ্মতম শিল্প। সময় বা কালের নিরিখে এই শিল্পের উপাদান বিস্তৃত। কোনও শিল্পকে সার্থক করে তোলার জন্য যেমন উপাদান প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন সুচিন্তিত পরিকল্পনা। ধর্ম সেই বিজ্ঞান, যা এই জীবনশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। জীবন নিয়েই যার কাজ। ধর্ম জীবনকে একটা মহৎ সুরে বেঁধে দেয়, তাকে গড়ে তোলে।
চাওয়া-পাওয়া, দেওয়া-নেওয়া আমাদের জীবন জুড়ে আছে। আর তা যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, জীবনে বিশৃঙ্খলা না আসে, তাই প্রতি ধর্মেই বেশ কিছু রীতিনীতির কথা বলা হয়ে থাকে। এর সহায়ে শরীর, মন, পরিবার, সমাজ সুগঠিত থাকে, স্থিতিশীল থাকে। এইসব রীতিনীতি অনেক সময় কোনও গ্রন্থকেন্দ্রিকও হয়ে থাকে। এর সঙ্গে থাকে এক বা একাধিক মহাপুরুষের জীবন। এই সকল আদর্শ পুরুষের নির্দেশে চালিত হয় অনেক মানুষ। তাদেরকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয় অনেক মানুষ।
তবে এইসব রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার– ধর্মের একটা দিক, যাকে বলা যায় ‘বহিরঙ্গ’। এরা রক্ষা করার কাজটুকু করে। তবে এই সব কিছু ছাড়িয়ে আরও এক ঊর্ধ্বতর বিকাশের জায়গা রয়েছে, তা আমাদের অন্তররাজ্য। মানুষের অস্তিত্ব শুধু দৈহিক নয়, তার গভীরে আছে আরেক জগৎ। আছে আমাদের আরেক সত্তা। ব্যবহারিক জগতের উপরে এই ভাবজগৎ। ব্যবহারিক জগৎ নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত এতটাই ব্যস্ত থাকি, যে, এ জগতের খবর রাখি না। ধর্মের ঊর্ধ্বতর বিকাশের এই জায়গাটাকে ‘আধ্যাত্মিকতা’ বলতে পারি। আমাদের এই অন্তররাজ্যের নীরবতায় রয়েছে সকল সুন্দরের অবস্থান। এই রাজ্য আমাদের মধ্যেই রয়েছে, তা অনুভব করার চেষ্টা করলে অনেক কাজ হয়। অন্তরে একটা স্থান করতে হয়। জীবন, শরীর, মন– এক তালে চলে। আমাদের জীবনে একটা আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ তৈরি হয়। বুঝতে পারি, জীবনে কী চাই। মানুষ বুঝতে পারে, জীবনে কী চায়। তখন সে এমন কিছু করে না, যা তাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারে। বাইরের জীবনের সঙ্গে অন্তর জীবনের একটা যোগসূত্র তৈরি হলে অনেক কিছু সহজ হয়।
বীরভূমের লেখক-গবেষকেরা মনে করেন, বীরভূমের লাভপুরের কাছে দেবী ফুল্লরাতেই সেই পীঠের অধিষ্ঠান আবার বর্ধমানের গবেষকেরা দাবি করেন, ঈশানী নদীর বাঁকে বর্ধমানের দক্ষিণডিহিতেই দেবীর ওষ্ঠপাত ঘটেছিল। তবে ভক্তদের কাছে দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র এবং অলৌকিক শক্তি দুই জায়গাতেই বর্তমান।