আফ্রোদিতি হলেন ‘গডেস অফ সেক্সুয়াল লাভ’ এবং ‘গডেস অফ ফার্টিলিটি’। মাটি যেমন চাষ করলে উর্বর হয়, নারীর শরীরও তেমনই পৌরুষের চাষে উর্বর হয়। সেই চাষের শক্তি জোগায় আফ্রোদিতি। আসলে, আফ্রোদিতি গ্রিক দেবী। আর ভিনাস রোম্যান। প্রাচীন গ্রিসের সংস্কৃতির অঙ্গ ছিল বেশ্যাবৃত্তি বা প্রস্টিটিউশন। আর বারবণিতাদের আরাধ্যাদেবী ছিলেন আফ্রোদিতি। কামনা, প্যাশন, সেক্সুয়াল আগুন– এইসব প্রার্থনা করা হয় আফ্রোদিতির কাছে। এবং সেই পুরুষের শক্তি ও নারীর উর্বরতা।
১৫.
ভোরবেলা ঘুম-ভাঙা আর না-ভাঙার মাঝে একটা স্বপ্ন হালকা উড়ানে নেমে এসে জ্ঞানদার কিশোরী বুকের মাঝখানটিতে ল্যান্ড করে। শীতের ভোর আর শীতের রাত– শেমিজের তলায় ভোরবেলার দু’টি অলস বুক– তারই মাঝখানে স্বপ্নটাকে আদরে জড়িয়ে ধরে জ্ঞানদা।
–আমার মনের মধ্যে ‘নতুন’ শব্দটা কোনও দিন পুরনো হবে না নতুন ঠাকুরপো, জ্যোতিরিন্দ্রর হাতটি ভোরের আলোয় তার দু’টি অলস নরম বুকের মাঝখানে ধরে বলে জ্ঞানদা। নতুন কোনও কথা বলে না। শীত রাতের সব ঢাকনা থেকে বেরিয়ে আসা, শুধুমাত্র শেমিজপরা মেজবউঠাকরুণের দিকে সে বিস্মিত বিহ্বলতায় তাকিয়ে থাকে। জ্ঞানদা বুঝতে পারে, এই প্রথম তার নতুন কোনও মেয়ের বুকে ভোরবেলার আলোয় এমন শিশিরভেজা মাটির গন্ধ পেল। নতুনের হাতটি জ্ঞানদা বাঁদিকে আরও একটু সরিয়ে তার হৃদয়ের ওপর নিয়ে এল। নতুনের আঙুল স্পর্শ করল তার ক্রমশ জেগে ওঠা, সাড়াময় বৃন্ত। জ্ঞানদার সমস্ত লজ্জাকে শিরশিরে অন্তঃস্রোতে পরিণত করে আচমকা ঢেউ তুলল ইচ্ছে। নতুনের আঙুল যেন তার বৃন্তের সঙ্গে অস্পষ্ট আদরে কথা বলল, ‘নতুন শব্দটা কেন পুরনো হবে না গো?’
আর জ্ঞানদার সমস্ত মন চুপিচুপি বলল, ‘তুমি এমন সুন্দর, তা-ই। তুমি তাকালে সুন্দর। চোখ বুজে ইজিচেয়ারে ভাবলে সুন্দর। তুমি অভিমানে সুন্দর, আদরে সুন্দর। তুমি পিয়ানো বাজালে সুন্দর, লিখলে সুন্দর, ঘরে ঢুকলেই সুন্দর। আর এই যে তুমি ভোরবেলায় রোদ্দুরের মতো আমার বাগানে ফুল ফোটাচ্ছ– তুমি সুন্দর, সুন্দর, সুন্দর। তাই তুমি সেই নতুন, যে পুরনো হওয়ার নয়।’
ভোরবেলার ঘুমের কি কোনও আক্কেল নেই? ঠিক এই আঁকড়ে-ধরার সময়েই, আলগা হয়ে, ভেঙে গেল? একেবারে চুরমার! বিছানায় উঠে বসে জ্ঞানদা। চুরমার স্বপ্নটার কোনও টুকরো, কোনও চিহ্ন পর্যন্ত নেই কোথাও! কোথায় নতুন? জ্ঞানদা তাকায় তার বুকের দিকে। কী আশ্চর্য! যেখানে নতুনের হাতটি সে চেপে রেখেছিল, যেখানে হঠাৎ কথা বলেছিল নতুনের আঙুল, শেমিজের তলায় ঠিক সেখানেই তো ভোরবেলার অলসবৃন্ত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে উঠেছে! ফুটতে চায়! হবে কি তার ইচ্ছে পূরণ?
জ্ঞানদার হঠাৎ মনে হয়, সে যেন প্রাচীন রোমের প্রেমের দেবী– ভিনাস! না না, সে ভিনাস নয়, সে রোমান দেবী আফ্রোদিতি! জ্ঞানদা তার কৈশোরের সমস্ত মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে শেমিজের তলায় বুক দু’টির জাগ্রত রূপ দেখতে থাকে। আর তার সমস্ত মন প্লাবিত বাসনায় বলে ওঠে, নতুন, দ্যাখো, এখুনি এসে দ্যাখো, তোমার মেজবউঠাকরুণকে, সে ভিনাস নয়, কোন দুঃখে সে হতে যাবে ঠান্ডা ভালবাসার দেবী! সে আফ্রোদিতি, জীবন্ত জ্বলন্ত আফ্রোদিতি!
–ভিনাস আর আফ্রোদিতি কি একই? দুটোকে আমি গুলিয়ে ফেলি নতুন, জ্যোতিরিন্দ্রকে একদিন সন্ধেবেলায় ছাদে বেড়াতে-বেড়াতে বলেছিল জ্ঞানদা।
–তুমি কোন দেবীটি হতে চাও, আজই, এখুনি ঠিক করে ফেলো বউঠান, তাহলে আর গুলিয়ে ফেলার ভয় থাকবে না।
জ্ঞানদা একচোখ কপট ‘অবাক’ নিয়ে তাকিয়ে ছিল তার নতুনের দিকে। সে জানে, নতুন এরপরেই বলবে কোনও বিপজ্জনক কথা। তার সমস্ত অঙ্গ শিউরে উঠবে। কেমন যেন ভিজে আগুন দেখা দেবে তার শরীরের কোথাও কোথাও। খুব ভাললাগে তার এই দ্রব দহন।
মেজবউঠাকরুণ পর্ব ১৪: জ্যোতিরিন্দ্রর মোম-শরীরের আলোয় মিশেছে বুদ্ধির দীপ্তি, নতুন ঠাকুরপোর আবছা প্রেমে আচ্ছন্ন জ্ঞানদা
নতুন বলেছিল, এক অর্থে দু’জনেই ভালবাসার দেবী। কিন্তু ভিনাস শুধুই প্রেমের দেবী। আর আফ্রোদিতি আরও প্রাচীনা, যখন প্রেম ছিল শুধুই রক্তমাংসের। আফ্রোদিতি হলেন ‘গডেস অফ সেক্সুয়াল লাভ’ এবং ‘গডেস অফ ফার্টিলিটি’। মাটি যেমন চাষ করলে উর্বর হয়, নারীর শরীরও তেমনই পৌরুষের চাষে উর্বর হয়। সেই চাষের শক্তি জোগায় আফ্রোদিতি। আসলে, আফ্রোদিতি গ্রিক দেবী। আর ভিনাস রোম্যান। প্রাচীন গ্রিসের সংস্কৃতির অঙ্গ ছিল বেশ্যাবৃত্তি বা প্রস্টিটিউশন। আর বারবণিতাদের আরাধ্যাদেবী ছিলেন আফ্রোদিতি। কামনা, প্যাশন, সেক্সুয়াল আগুন– এইসব প্রার্থনা করা হয় আফ্রোদিতির কাছে। এবং সেই পুরুষের শক্তি ও নারীর উর্বরতা।
–আমাদের বাড়ির বারমহলে নারীর চুলখোলা, সম্পূর্ণ নগ্ন যে ছবিটা টাঙানো আছে, ওটা কার ছবি, ভিনাস না আফ্রোদিতি?
–ওটি ভিনাস। পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ এনেছিলেন বিলেত থেকে। কার আঁকা জানো?
–না তো! কী সুন্দর! কিন্তু শিল্পী কে? জানতে চেয়েছিল জ্ঞানদা।
–ইতালিয়ান শিল্পী বত্তিচেল্লির, ছবিটার নাম, ‘দ্য বার্থ অফ ভিনাস’। খুব বিখ্যাত ছবি।
–খুব সুন্দর ছবি, কিন্তু…
–কিন্তু কী? জানতে চেয়েছিল নতুন।
অনেকক্ষণ ভেবে, সামান্য হেসে বলেছিল, ‘কিন্তু কিছু না’ আর বলেই সরে গিয়েছিল অনেকটা দূরে।
–‘কিন্তু কিছু না’– বলে সরে গেলে চলবে না বউঠান।
বলতেই হবে, পরের কথাগুলো।
–আমাকে আফ্রোদিতির ছবি দেখাতে পারো? বলেছিল জ্ঞানদা।
পরের দিন আফ্রোদিতির ছবি দেখিয়েছিল নতুন। তার নিজের কল্পনার আফ্রোদিতি। পেনসিল স্কেচ। জ্ঞানদার মনে আছে সেই স্কেচ। হুবহু। ছাদের এক কোণে পূর্ণিমার আলোয় নতুন মেলে ধরে ছিল তার নিজের কল্পনার গডেস অফ সেক্স-কে। কী জ্যান্ত, জীবন্ত, প্রাণময়, বাসনাজ্বলন্ত আফ্রোদিতি! সম্পূর্ণ নগ্ন। কণাটুকু লজ্জার চিহ্ন নেই কোথাও। কোথাও নেই আবরণহীনতার আড়ষ্টতা। নদীর স্রোতের মতো, নানা, নদীর জোয়ারের মতো বয়ে চলেছে নারীর বাধাহীন উন্মুক্ত অনন্ত অনম্বরতা। আফ্রোদিতির উপচে পড়া বুক দু’টি যেন জ্বাল দেওয়া দুধ, মনে হল জ্ঞানদার। কিন্তু সে একটি কথাও বলল না।
–চুপচাপ কেন? কিছু বলবে না? বলল নতুন।
–নতুন, তুমি অ্যাতো ভাল আঁকতে পারো? অথচ নিজেকে চেপে রেখেছ? কিছুক্ষণ পরে গভীর আবেগে বলল জ্ঞানদা। নতুন কিছু বলল না। হঠাৎ ছবিটাকে কুচিকুচি করে চাঁদের আলোয় জোড়াসাঁকোর বাড়ির ছাদ থেকে ভাসিয়ে দিল সে।
মেজবউঠাকরুণ পর্ব ১৩: বিলেতে মেয়েদের গায়ে কী মাখিয়ে দিতে, জ্ঞানদার প্রশ্ন সত্যেন্দ্রকে
কেঁদে ফেলেছিল জ্ঞানদা। আর নতুনকে জড়িয়ে ধরেছিল, না জড়িয়ে পারেনি, তা-ই!
আর নতুন? নতুন চুমু খেয়েছিল জ্ঞানদার ঠোঁটে। জ্ঞানদার মনের সিন্দুকে তোলা আছে সেই চুমু।
সব মনে পড়ে যায় জ্ঞানদার। ছবির মতো কিছুদিনের অতীত থেকে ভেসে আসে ছবিগুলো। জ্ঞানদা উঠে যায় আয়নার সামনে। সমস্ত শরীরে তার জাগছে সাড়া। জ্বলছে ইচ্ছে। হিলহিল করছে সাপের মতো। ফণা তুলছে।
আয়নার সামনে জ্ঞানদা শরীর থেকে নামিয়ে দেয় শেমিজ। কোনও আড়াল নেই আর। দু’টি বুকের ওপর ফুলের মতো ফুটে উঠেছে ঘন খয়েরি সাড়া। বৃন্ত দু’টি গায়ে কথার মতো ছড়িয়ে পড়া দানা। নাভি থেকে তলপেট বেয়ে নেবে যাচ্ছে সাপ। জ্ঞানদা আর তাকিয়ে থাকতে পারে না আয়না-ভরা তার নগ্নতার দিকে। সে দু’-হাত দিয়ে মুখ-চোখ ঢাকে। তার সমস্ত আকুল অবদমন চিৎকার করে ওঠে, ‘নতুন, আমি ভিনাস নয়, তোমার আফ্রোদিতি হতে চাই, তুমি এসো নতুন, তুমি এসো।’
ঠিক সেই সময়ে ঘরের দরজায় মৃদু ঠকঠক! নিশ্চয়ই নতুন। এই সকালে আর কে হবে? সাতসকালে ছাদবাগানে ঝারি দেওয়ার ডাক?
খুলে দেব দরজা? ঠিক এইভাবে? এই থইথই ইচ্ছে আর ডাক নিয়ে? ভাবে জ্ঞানদা।
আরও একবার ঠকঠক!
জ্ঞানদা পায়ে-পায়ে এগোতে থাকে দরজার দিকে।
(চলবে)