নাটক, সিনেমা, গান, স্বপ্ন-আড্ডার সেই চায়ের কাপ পেরিয়ে প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং শেষ পর্যন্ত যা পড়ে থাকে, তা হল চাকরি চাই। আমরা সে জন্যই মেসে এসেছি। আর তার জন্য মোটা মার্কস চাই। তখনও বিনয় ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। হলে জানতাম, মেট্রোপলিটন মন আর মধ্যবিত্তের জীবন কোন সুতোয় বাঁধা। শ্রেণির গল্প ভোলানো সংগ্রামহীন রূপকথার ঠোঙায় আমরাই আবশ্যিক মুড়ি-চানাচুর। মিশে যাওয়াই আমাদের ভবিতব্য। অন্য জীবনের মৌতাতের ভিতরও তাই জানতাম, আমাদের টিকি বাঁধা আছে সেমিস্টারের নম্বরে।
১৪.
‘একের পর এক পণ্ডিতেরা সব ভস্ম হয়,/ মূর্খেরাই শুধু দেখেছি সোজাসুজি উতরে যায়’– মহাত্মা কবীর কখনও সেমিস্টারে বসেননি ঠিকই, তবে সারসত্যি তিনিই বলে গিয়েছেন। বিশ্বায়িত কলিযুগ, ভক্তি আর চাকরির এই নবজাগরণে এসে আমরা আবিষ্কার করলাম, সেমিস্টার আমাদের জীবনদেবতা। তার সঙ্গে আমরা কথোপকথন ঘনিয়ে তুলতে পারি। আক্ষেপ, অনুরাগ, দ্রোহ। হৃদয়ে সেমে-র শীর্ষ। এমনকী অনেককিছুই লিখে আসতে পারি, যা যা আদৌ লেখার কথা ছিল না। তা দেখে শিক্ষকগণ স্বভাবতই চটে যেতেন; তবে, তাতে কী! সেমিস্টার আমাদের নিজের মুখোমুখি হওয়ার সেই বিরল ধ্যানমুহূর্ত, যখন আপনাকে খনন করে সৃষ্টির উৎস সন্ধানে অব্দি আমরা পৌঁছে যেতে পারি, প্রশ্নের উত্তর তো সেখানে নেহাতই ছাপোষা ছুতো। তা যে লাগসই হতেই হবে, এর কোনও মানে নেই। না হোক, নিজের স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ-কে এমন অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করার সৌভাগ্য কমই হয়।
তো এই সেমিস্টার কাছে এলে প্রকৃত মেস উড়ে যায়। আসলে হয়েছে কী, গ্রামগঞ্জের স্কুল থেকে ভালো পড়ুয়ার রসকলি কপালে আমরা যারা কলেজে এলাম, প্রথমেই ইংরেজি বলা আর পড়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দেখি জালে দশ গোল। লর্ড ক্লাইভ বা মীরজাফর যাকে হোক কাঠগড়ায় তুলে সাত দিনের ফাঁসি দেওয়া যাক না কেন, ইংরেজির কামড় যেন মেঘ না-ডাকলে ছাড়ে না। এদিকে মেঘ আর ডাকেও না। কাজেই, নিউটনের তৃতীয় সূত্র থার্ড ল’ হয়ে যেতেই আমরা তুতলে অস্থির। উপরন্তু আমাদের সকল অহংকার চোখের জলে ডুবিয়ে মেকানিকস্ ক্লাস টেস্ট ঘোষণা করল, ভারতবর্ষে আর্যভট্টই চিরসত্য। সবার উপরে এক না দেড় নম্বর, তাহার উপরে নাই! এ কী রে ভাই! সকলেই সকলের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। ইংরেজি, বাংলা মাধ্যমের শ্রেণি বিভাজন তখন মুছে দিয়েছে টকটকে লাল কালির শূন্যতা। এবং আমরা বুঝতে পারছি এ তুফান ভারি দিতে হবে পাড়ি, কিন্তু তরী পার করিয়ে নেওয়ার জায়গায় নৌকাডুবি হয়ে বসে আছে গোড়াতেই। তবে, সূত্র হোক আর ল’, নিউটন তো আর মিথ্যে বলতে পারেন না, অতএব, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় আমরা ঠিক করে নিলাম, পড়ে যখন পাশ করা যাচ্ছে না, পাশ করার জন্য পড়া একেবারেই গর্হিত। তা ছাড়া পড়াশোনা মায়া বই কিছুই নয়। ততদিনে মেস আর সিনিয়ররা মায়াবইয়ের হদিশ দিয়ে দিয়েছে। আদতে সহায়িকা। প্রতি পরীক্ষার আগে বেরোয়, গোটা সিলেবাসের একটা সংক্ষিপ্তসার, নাম ম্যাট্রিক্স। মাস দুয়েকে সেটা আয়ত্ত করলেই যথেষ্ট। বেডের ওপর সাজানো বইপত্র এবার তাই ধীরে ধীরে তাকে উঠে যাবে। মোটা বই নিচে, রোগা বই উপরে; অনেকদিন পর হঠাৎ একদিন তাদের দিকে তাকিয়ে খেয়াল হবে, নইহর মেরা বাবুল ছুট হি গয়া!
মোদ্দা কথা, কলেজে কেউ পড়ার কথা মুখ ফুটে বলতেই চায় না। যেন, এ আর এমন কী ব্যাপার যে পড়তে হবে, আর বলতেই হবে! যারা সিরিয়াস, তারা অবশ্যই এ গোত্রে পড়ে না। তবে সংখ্যাগুরুর ব্যালটেই সরকার চলে কি-না! সেই হেতু বলা যায়, গরিষ্ঠের সাধারণ গুণে পড়া বাদে পৃথিবীর যাবতীয় আলোচনাই পড়ে। ব্যাপারটা ক্রমে এমন দিকে গড়াল যে, যে পড়ে, সে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে। হঠাৎ একদিন খবর পাওয়া যায় অমুক আর অমুক মিলে নাকি ইলেক্ট্রনিক্স পড়ছে, তাও আবার প্রাইভেট টিউটরের কাছে। কে আবার ডেটা স্ট্রাকচারের জন্য দল বেঁধেছে গোপনে। সেই সব গুপ্তসমিতি ধরা পড়ে গেলে প্রথমে খুব মাথা নেড়ে অস্বীকার করত, তারপর ‘পৃথিবীতে কে কাহার’ উদাসীনতায় জানাত, নেহাতই কৌতূহলে যাওয়া, নইলে কি আর…!
……………………………………………..
পুরো গ্রুপ-এর ভাইবা শেষ হওয়ার পর আমরা তাকে ছেঁকে ধরে জানতে চাইলাম, কেসটা কী! সে প্রায় কিছুই হয়নি এমন মুখ করে জানাল, টিভি আঁকার কথা বলেছিলেন স্যর, তো সে প্লাগ পয়েন্ট থেকে শুরু করে আস্ত একটা টিভি সেট এঁকে দেখিয়েছিল। ইলেকট্রনিকসের ষোল কলা পূর্ণ। আর তাতেই স্যর কুপিত হয়ে তাকে এতক্ষণ বসিয়ে রেখেছিলেন। আমরা ভাবি, স্যর বিশ্বামিত্র হলে এতক্ষণে বোধহয় ভস্ম-টস্মই হয়ে যেত বেচারি। হায় সার্কিট! কোন মুন্নাভাই যে কখন কোথায় খেল দেখায় খোদ রাজকুমার হিরানির তা জানতে এখনও ঢের বাকি!
……………………………………………..
কেন কে জানে, রাখাল-ছেলের দলকেই শিক্ষকেরা কিঞ্চিৎ বেশি প্রশ্রয় দিতেন। ভাইবার টেবিলে বসে স্যরের প্রশ্নের জবাবে, তাদেরই দু’জন পালটা অনুরোধ করে বসল, ‘একটু বুঝিয়ে দিন না, প্লিজ।’ স্যার রাগবেন না কাঁদবেন বুঝতে না পেরেই বোধহয় স্নেহের বশে পুরোটা ক্লাসের মতো করে সেখানেই বোঝালেন। তারপর জানতে চাইলেন, ক্লাসে যখন বুঝিয়েছিলেন, তখন আমরা কোথায় ছিলাম? আমরা যে জবাব দিতে পেরেছি তা নয়, তবে স্যর বুঝেছিলেন, কলেজে ক্লাস-স্ট্রাগল আমাদের ধাতে সয় না। সকলেই অবিশ্যি এতখানি সহৃদয় হন না। একবার ভাইবা দিতে গিয়ে দেখা গেল, ষোল রোল নম্বরের এক বন্ধু একদিকের চেয়ারে ধ্রুবক হয়ে গিয়েছে। আমরা একে একে যাচ্ছি আর আসছি। পুরো গ্রুপ-এর ভাইবা শেষ হওয়ার পর আমরা তাকে ছেঁকে ধরে জানতে চাইলাম, কেসটা কী! সে প্রায় কিছুই হয়নি এমন মুখ করে জানাল, টিভি আঁকার কথা বলেছিলেন স্যর, তো সে প্লাগ পয়েন্ট থেকে শুরু করে আস্ত একটা টিভি সেট এঁকে দেখিয়েছিল। ইলেকট্রনিকসের ষোল কলা পূর্ণ। আর তাতেই স্যর কুপিত হয়ে তাকে এতক্ষণ বসিয়ে রেখেছিলেন। আমরা ভাবি, স্যর বিশ্বামিত্র হলে এতক্ষণে বোধহয় ভস্ম-টস্মই হয়ে যেত বেচারি। হায় সার্কিট! কোন মুন্নাভাই যে কখন কোথায় খেল দেখায় খোদ রাজকুমার হিরানির তা জানতে এখনও ঢের বাকি!
হাল-দাঁড় দুই-ই যে বেশ বেসামাল তা আমরা নিজেরাই বিলক্ষণ জানতাম। ফলত সেমিস্টারের সামনে এসে মেস তার ঢিলেঢালা আলখাল্লা খুলে রাখত। যাকে বলে মালকোঁচা বেঁধে দৌড়ের মতো আমরা ম্যাট্রিক্সের পাতায় পাতায় চলতাম। ডালে ডালে এগিয়ে আসত সেমিস্টার। দিন-রাতের ভেদ মুছে যাওয়া সে এক অলৌকিক ক্ষণ। এমনকী হোম ডেলিভারির কাকিমা পর্যন্ত হকচকিয়ে গেলেন। মেসের একেবারে কাছে হওয়ায় আমরা তাঁর কাছে খেতে যেতাম বেশিরভাগ দিন। তিনি বললেন, যে হারে পড়াশোনায় আমরা ডুবে গেছি, তাতে এখন আর আসার কোনও দরকার নেই। বিন্দুমাত্র সময় নষ্টের সময় নেই। পরবর্তী সময়েও যে মাসি রান্না করেছেন, তাঁরা আমাদের এই সাধনা দেখে বিস্ময়াবিষ্ট। ডিম নেই কি সোয়াবিন নেই বলে আর বিরক্ত তো হচ্ছেনই না, উলটে দরকার পড়লে নিজেরাই কেনাকাটা করে নিয়ে চলে আসছেন।
পড়ার মহার্ঘ সময় যাতে একটুও বৃথা না যায়, তার জন্য আমাদেরও চেষ্টার কসুর ছিল না। পরীক্ষার আগের রাতে তবু যথারীতি চোখে পড়ত যে, দু-একটা চ্যাপ্টার অন্তর্ঘাত ঘটিয়ে আমাদের চোখের আড়ালে থেকে গিয়েছে। আর গত দশ বছরের হিসাব বলছে, সেখান থেকে প্রশ্ন আসবেই। অতএব রাত চারটেয় আর এক কাপ চা করে নিয়ে আমরা কলম্বাস। এলেম নতুন দেশে, দেখা যাক, কপালে কী থাকে শেষে! পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রটি চিরকালই রহস্যময়- দেখা না-দেখায় মেশা। সে বিদ্যুৎলতা যে ঝড়ের বুকে ব্যাকুলতা জাগাত, সেই ঝড়ের কাছে আমাদের ঠিকানা রেখে চলে আসা ছাড়া আর পথ পেতাম না। সেমিস্টারে সেমিস্টারে চলত সেই আমাদের আত্মদর্শন। তারপর নীলরঙা প্রিন্ট আউটের রেজাল্টখানা হাতে পেয়ে দেখতাম, সোজাসুজি কী করে যেন উতরে গেছি!
এই কেজো পড়ার বাইরে মেস আমাদের অন্য একটা জীবনের হাতছানি দিয়েছিল; তখন সবাই সদ্য হাতে কমপিউটার পেয়েছি। সাইবার ক্যাফে বা স্কুলের কমপিউটার রুমে হাত মকশো পেরিয়ে আস্ত আপন জগদ্দল। ইন্টারনেট তখনও ক্যাফেতেই। খোপ কাটা ডেস্কে প্রাইভেসির নিশ্চিত আশ্বাস। ডেটার ডাকাতি তখন ধারণার বাইরে। অহোরাত্র নেটের দরকারও পড়ে না। বরং কমপিউটার থাকার দরুন পড়াশোনার যৎসামান্য কাজের পাশাপাশি আমাদের কাছে সিনেমা-গানের দরজা গেল খুলে। ‘তাহাদের কথা’, ‘চরাচর’ দেখে রাতের পর রাত কাবার। কখনও ‘অ্যাপোক্যালিপ্টো’র জীবনের আদিম লড়াই তো কখনও ট্রয়-এ আকিলিস ব্র্যাড পিটের গোড়ালিতে বিঁধে যাওয়া বর্শা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে জীবন এরকমই। অথবা মাজিদি বলছেন, ‘ম্যাজিক দেখো।’ যা পাই তা-ই দেখি। সিডি ভাড়া করে আনি। নাকের উচ্চতা নিয়ে আমাদের কোনওকালেই তেমন কোনও ধারণা নেই। অতএব স্নব নয় বৈষ্ণবও নয় আমরা নীল নির্জনে থেকে নীল ছবি সর্বত্রই চরে বেড়াচ্ছি।
এদিকে সুমন, অঞ্জন, নচিকেতা, চন্দ্রবিন্দু একযোগে আক্রমণ শানাচ্ছেন ছুটির সকালে। বন্ধুরা এসে তর্ক জমাচ্ছে এই বলে যে, ফসিল্স ছাড়া ফেস্ট হয় না। অরিজিৎ সিং নামের ঘটনা তখনও নেই; আছে শ্রেয়া-সুনিধি আর সোনু নিগম নামের একটা বিস্ময়। গুলাম আলির সিডি কিনে আনা হয়। একটা গিটার জোগাড় হয়েই যায়। সিনেমা বানানোর স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছেড়ে মেসে এসে বসে থাকে বন্ধুটি। কেউ আবার লেখে, কেননা, পরীক্ষায় লেখার থেকে লেখার পরীক্ষায় ডুব দেওয়া আরও রোমাঞ্চকর।
তবে বাল্যপ্রেমের মতো এসব শখ-স্বপ্নেও বুঝি অভিসম্পাত আছে। একদিন দেখব তাই, অপ্রাপ্তির ভাঙা টুকরোর মধ্যে হাতে আছে শুধু প্রাপ্তবয়স্কের ভোটার কার্ড। স্বপ্নের ভিতর একবুক টক-জল। অতএব নাটক, সিনেমা, গান, স্বপ্ন-আড্ডার সেই চায়ের কাপ পেরিয়ে প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং শেষ পর্যন্ত যা পড়ে থাকে, তা হল চাকরি চাই। আমরা সে জন্যই মেসে এসেছি। আর তার জন্য মোটা মার্কস চাই। তখনও বিনয় ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। হলে জানতাম, মেট্রোপলিটন মন আর মধ্যবিত্তের জীবন কোন সুতোয় বাঁধা। শ্রেণির গল্প ভোলানো সংগ্রামহীন রূপকথার ঠোঙায় আমরাই আবশ্যিক মুড়ি-চানাচুর। মিশে যাওয়াই আমাদের ভবিতব্য। অন্য জীবনের মৌতাতের ভিতরও তাই জানতাম, আমাদের টিকি বাঁধা আছে সেমিস্টারের নম্বরে।
অচিরেই মেসে এমন দিন আসবে, যখন এই যৌথযাপনের মধ্যে দুই বর্গ স্পষ্ট হয়ে উঠবে– চাকরি হ্যাভস আর হ্যাভ নটস। ক্যাম্পাসিং-এর মায়াহরিণ ডাক দিয়ে গেলে আমরা ছুটব অরণ্যে অরণ্যে। ফর্ম্যাল পোশাকে ঢেকে ফেলব আমাদের স্বাভাবিক চামড়া। তবু কখনও কারও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে, বাকি সময় মুখ কালো করে ফিরতে হয় বাকিদের। যেন এ-এক তীর্থযাত্রা। যদি দর্শন না হয়, তবে খামতি তোমার। পাপ আর পুণ্যের গল্প পোশাক পালটে ফিরে আসে কর্পোরেটে। রিসেশন বলে কাউকে আমরা চোখে দেখিনি, শুধু তার গল্প শুনেছি মাত্র; গল্প এই যে, আমাদের জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতাগুলো যে নিয়ন্ত্রণ করছে, তা সে-ই রিসেশন, একেবারে আদত গ্লোবাল।
সেই সব দিনে মেস যেন বন্ধুর কাঁধ। কোনও কৈফিয়ত চায় না। বাড়ি বরং তখন অস্বস্তিকর প্রশ্নবোধক। খানিক স্বপ্নভঙ্গ, হতাশা। কালমেঘ গেলা বিস্বাদ। পালাতে পারলে যেন বাঁচি। মেস তখন পালটে ফেলেছে নিজেকে। আবাস, আশ্রয়ের বাইরে সে যেন এমন এক আকাশ, যেখানে যে-মেঘে বৃষ্টি নেই, সে-ও দু’দণ্ড ভেসে থাকতে পারে নিশ্চিন্তে। একতলার সেই মেস আমাদের সিঁড়ি চেনে না, সিঁড়িভাঙা অঙ্কের খাতার হিসাবে সে আমাদের মার্জিনে ঠেলেনি কখনও। সমস্ত পরাভবের ভিতর মেস, সেই ঘরটা আর মানুষগুলো মিশে যে মেস, কোন এক অন্ধ স্নেহে যেন বলে ফেলত, ‘যা ঘুমিয়ে পড়। উঠিস দেরিতে।’ যুবকের অভিমানী চোখের গোপন মেঘ, মেস ছাড়া আর কে-ই বা দেখেছে তেমন করে!
……………………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………………
বৃত্তের দুই বন্ধু প্রথম দফায় চাকরি পেয়ে গেল। বাকি দু’জন আমরা এক ঘরে চাকরিহীন। সেদিন সেই দু’জন বোধহয় আমাদের থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছিল। তারা ধরে ধরে আমাদের বোঝাতে, পড়াতে, দেখাতে শুরু করল যে, আর একটু বেশি কী করলে এই প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারি। বকাবকি শুরু করল যে, পড়া ছেড়ে আমরা যেন না উঠি। রিসেশনের সেই বকরাক্ষস থেকে আমরা সহজে নিষ্কৃতি পাইনি। তবে, আমাদের বন্ধুদের সেই চেষ্টা বৃথাও যায়নি। জীবনের এ-ঘাট ও-ঘাট পেরোতে পেরোতে দেখি একদিন কোনক্রমে উতরে গেছি বন্ধুদের হাত ধরে।
হা চাকরি, সেই সব দিনে আমরা খুব পরিচিত মেসকে চিনেছিলাম নতুন করে। বুঝেছিলাম, মেস সামাজিক বড়, মূর্খ নয়।
অলংকরণ দীপঙ্কর ভৌমিক
…পড়ুন মেসবালক-এর অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ১৩। মেস আমাদের শিখিয়েছে, দেশ অনেক রকম
পর্ব ১২। মেসবাসীর হিসাবশাস্ত্র এমন কুটিল যে স্বয়ং কৌটিল্যও তল পান না
পর্ব ১১। ছেড়ে যাওয়া ঘরে মেরা কুছ সামান থেকেই যায়
পর্ব ১০। বই বন্ধ করলেও, বন্ধ হয় না কিছু কিছু বই
পর্ব ৯। বোবার শত্রু নেই, বন্ধু তো আছে
পর্ব ৮। মেস কি কোনও নারীচরিত্রবর্জিত একাঙ্ক নাটক!
পর্ব ৭। যে ভাতের হোটেলে মাছকে ‘তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া’ বলতে হবে না, সেখানেই রোজের বেঞ্চি বুক করতাম
পর্ব ৬। মেসের বাড়ি না থাকলে দেশের বাড়িকে ঠিক চেনা যায় না
পর্ব ৫। মেসে থাকতে গিয়ে বুঝেছিলাম বিছানা আর বেডের মধ্যে বিস্তর তফাত
পর্ব ৪। ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ কখনও মেসে থাকেননি
পর্ব ৩। মেস আসলে জীবনের ক্রিকেট-সংস্করণ
পর্ব ২। আদরের ঘরের দুলালদের সদর চেনাল মেস
পর্ব ১। মেস এমন দেশ যেখানে বাঁধাকপির পৃথক আত্মপরিচয় চিবিয়ে নষ্ট করা যায় না
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved