আমাদের মধ্যেকার শ্বাস-প্রশ্বাসকে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মনকে দখলে আনা সুবিধে হয়। মনের শক্তিগুলির সঙ্গে এর সম্বন্ধ রয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ বড় ইঞ্জিনের উদাহরণ দিয়েছেন। বলছেন যে, বড় ইঞ্জিনে এক বিশাল চাকা ঘুরছে, যার গতি সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর যন্ত্রে সঞ্চারিত হয়ে তাকে গতিশীল করে। আমাদের শরীরে শ্বাসপ্রশ্বাসের ভূমিকা এই বড় চাকার মতো।
দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে আমাদের মন। মন নিয়ন্ত্রণে থাকলে যে কোনও কাজে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করা যায়। কিন্তু বাস্তবে সবসময় তা হয়ে উঠে না। মনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার বৃত্তি গড়ে উঠতে থাকে। তা মনকে অশান্তও করে তোলে। সে কারণেই এই অশান্ত মনকে নিয়ন্ত্রণে আনা খুব জরুরি। আমাদের মধ্যেকার শ্বাস-প্রশ্বাসকে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মনকে দখলে আনা সুবিধে হয়। মনের শক্তিগুলির সঙ্গে এর সম্বন্ধ রয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ বড় ইঞ্জিনের উদাহরণ দিয়েছেন। বলছেন যে, বড় ইঞ্জিনে এক বিশাল চাকা ঘুরছে, যার গতি সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর যন্ত্রে সঞ্চারিত হয়ে তাকে গতিশীল করে। আমাদের শরীরে শ্বাসপ্রশ্বাসের ভূমিকা এই বড় চাকার মতো। শরীরের সর্বত্র তা শক্তি জুগিয়ে থাকে। বহু প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে এই বিষয় জানা রয়েছে। বিবেকানন্দ রাজযোগ আলোচনায় সহজে এই বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন।
আরও পড়ুন: নিকটজনের অন্যায্য আবদারে রাজধর্মে বিচ্যুত হওয়া যায় না
রাজার এক মন্ত্রী কোনও কারণে তাঁর বিরাগভাজন হওয়ায় রাজা তাকে এক উঁচু দুর্গের চূড়ায় থাকে বন্ধ করে রাখেন। সেখানে তিনি মৃত্যুর অপেক্ষায়। এক রাতে তার সহধর্মিণী দুর্গের কাছে এসে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি কোনও সাহায্য করতে পারেন কি না। মন্ত্রী তাঁকে পরের দিন রাতে একটি লম্বা কাছি, এক গাছি শক্ত দড়ি, এক বান্ডিল সুতাে, কিছুটা সূক্ষ্ম রেশমের সুতাে, একটা গুবরে পোকা ও কিছু মধু আনতে বললেন। স্বামীর কথা শুনে অবাক হলেও পরদিন রাতে মন্ত্রীর আজ্ঞা অনুযায়ী সব দ্রব্য নিয়ে হাজির হলেন তিনি। নির্দেশ অনুযায়ী, গুবরে পোকার সঙ্গে রেশমের সুতাে বাধা হল, আর তার শুঁড়ে একবিন্দু মধু লাগিয়ে দুর্গের উপরের দিক করে ছেড়ে দেওয়া হল। মধুর গন্ধে সে উপর দিকে চলতে শুরু করল। তার পশ্চাতে রেশমের সুতাে। পোকা দুর্গের চূড়ায় পৌঁছল। মন্ত্রী পোকাটি ধরলেন। তার হাতে রেশম সুতােটিও এল। তিনি স্ত্রীকে রেশম সুতাের আরেক প্রান্তে শক্ত শক্ত সুতাে বাঁধতে বললেন। তাও তার হাতে এল। একই উপায়ে অবশেষে তার হাতে এল মোটা লম্বা কাছি। তিনি তাঁর সহায়তায় দুর্গ থেকে নেমে পালালেন।
আরও পড়ুন: কামনা-বাসনার পৃথিবীতে আকস্মিকভাবেই বৈরাগ্য জন্মায়
এ কাহিনি বলে বিবেকানন্দ বলছেন যে, আমাদের দেহের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি রেশমের সুতাের মতো। তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে স্নায়বীয় শক্তিপ্রবাহ-রূপ শক্ত সুতাে, মনোবৃত্তিরূপ শক্ত দড়ি এবং শেষে প্রাণরূপ রজ্জুকে ধরা সম্ভব হয়। প্রাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মুক্তিলাভ সম্ভব। শ্বাসপ্রশ্বাস প্রাণশক্তির প্রত্যক্ষ প্রকাশ। শরীর যন্ত্রের এইসব অনেক বিষয় আমাদের অজানা। এই জ্ঞান থাকলে এবং ঠিক উপায়ে চেষ্টা করলে শরীর-মনের উপর আধিপত্য করা অনেক সহজ হয়।