Robbar

আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক… মাটিতে পুজোর ডাক

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 12, 2023 9:00 pm
  • Updated:September 12, 2023 9:00 pm  

বিশ্বকর্মা পুজো হল দুর্গাপুজোর ফাইনাল অ্যালার্ম কল। এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গে দুর্গাপুজোর দিনের দূরত্ব বেশ খানিকটা। ফলে, হাতে সময় আছে। তবে অন্যান্য বছরে তা থাকে না। প্রায় পিঠোপিঠি চলে আসে দুটো পুজো। তুমুল ব্যস্ততার ভিতরও হঠাৎ পাওয়া একটা দিন যেন অন্যরকম মুক্তির নিশান হয়ে চলে আসে।

অরিঞ্জয় বোস

রথ টানলেই পুজো শুরু। আর বিশ্বকর্মা পুজো হল দুর্গাপুজোর ফাইনাল অ্যালার্ম কল। অর্থাৎ, যা যা বাকি আছে সব কিছুতে আর একবার ফাইনাল চোখ বুলিয়ে নাও। পুজোর ঘণ্টা বাজল বলে!

বাঙালির কর্মসংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বকর্মা পুজোর নাড়ির টান। আবার সুতোর টান জড়িয়ে আছে বাংলার সংস্কৃতিতেও। হাজারও ঘুড়ির ঝাঁক আকাশ জুড়ে। আর সেদিকে চোখ রেখে মশগুল বাঙালি। যেন আকাশ জুড়েই চুপিচুপি একে অন্যের সঙ্গে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে অচেনা ঘুড়িরা। আর সে-ঘুড়ির সঙ্গে যোগ তো একজন মানুষের। অতএব চেনা হোক বা অচেনা কত মানুষই যে সুতোয়-সুতোয় বাঁধা পড়ে আছে, ঘুড়ির মেলা যেন সে কথাই বলতে থাকে।

বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ির মজায় মেতে ওঠা বাঙালির দীর্ঘকালের অভ্যাস। পুজোর ব্যস্ততা যতই থাক, শান দেওয়া মাঞ্জায় পেটকাটি-চাঁদিয়ালকে ভোকাট্টা করার লোভ কি সামলানো যায়! ঠাকুরদালানের পাঠকরা ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছেন যে, বাড়িতে যাঁদের পুজো, তাঁদের প্রস্তুতি এই সময় ঠিক কোন পর্যায়ে থাকে। একদিকে বাড়ির সরঞ্জাম সাজিয়ে-গুছিয়ে তৈরি করে রাখা। ওদিকে কুমোরটুলিতেও চূড়ান্ত ব্যস্ততা। হাজার কাজের ফাঁকেও সেখানে ঢুঁ মেরে প্রতিমার নির্মাণে নজর রাখা। সেসবের ফাঁকেই হঠাৎ পাওয়া একটা দিন যেন অন্যরকম মুক্তির নিশান হয়ে চলে আসে।

 

বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গেই বাঙালির সংস্কৃতিতে জড়িয়ে আছে রান্নাপুজো। অনেকের কাছেই তা ‘অরন্ধন দিবস’ বলে পরিচিত। বাঙালির নিজস্ব এই সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মা মনসার পুজো। বিশ্বকর্মা পুজোর ঠিক আগের দিন রাতভর ধরে চলে রান্নাবান্না। যে কোনও রান্না নয়, তারও নির্দিষ্ট ‌‘পদাবলি’ আছে। পরদিন পান্না, অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন উনুনের ছুটি। সেদিন আর রান্নার পাট নেই, খাওয়া হয় গতরাতের রান্না করা খাবারই। আজকের ব্যস্ত শহুরে দিনকালে রান্নাপুজো প্রায় উধাও হয়ে যেতে বসেছে। গ্রাম-মফস্‌সলে অবশ্য এখনও নিষ্ঠা সহকারেই এই প্রথা মেনে চলা হয়। আমি কিন্তু শৈশব থেকেই আমাদের বাড়িতে রান্নাপুজো হতে দেখেছি। এখনও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। দুর্গাপুজোর ব্যস্ততা এতখানি থাকে যে, আলাদা করে রান্নাপুজোর প্রস্তুতি আর ততখানি কঠিন মনে হয় না। তবে, অরন্ধনের কারণে পান্নার দিনে খানিকটা ছুটির হাওয়া খেলে যায়। আর সেই অবসরেই আকাশে উড়ান দেওয়া মুক্তির ঘুড়িরা এই ছেলেটাকেও ডাক পাঠায়।

এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গে দুর্গাপুজোর দিনের দূরত্ব বেশ খানিকটা। ফলে, হাতে সময় আছে। তবে অন্যান্য বছরে তা থাকে না। প্রায় পিঠোপিঠি চলে আসে দুটো পুজো। মেঘ-মেঘ আকাশে রোদের ঝলক দেখলেই বোঝা যায় শরতের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে ঘরদুয়ারে। তার মাঝেই আকাশ জুড়ে ঘুড়ির রঙিন আনন্দমেলা। মনে হয়, এই বাংলার জল-হাওয়া-মাটিতেই মিশে আছে অপূর্ব এক মাদকতা। পুজোর আনন্দযজ্ঞের আমন্ত্রণ যেন প্রকৃতিতেই। উড়ে যাওয়া ঘুড়ির দিকে চোখ রাখতে রাখতেই তাই মনে পড়ে যায়, কুমোরটুলিতে এতক্ষণে হয়তো মায়ের চোখ আঁকা শুরু হয়ে গিয়েছে। মা তো সারা বছরই আমাদের দেখছেন। আর আমরা পাঁচদিন প্রাণভরে দেখব মা-কে। মায়ে-পোয়ে বাঙালির সেই নিভৃত অথচ সোচ্চার কথোপকথনের দিন ঘনিয়ে এল। চলে যেতে যেতে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনখানা যেন সেই কথাই মনে করিয়ে দিয়ে যায়। আর আমি ফিরে আসি আমার প্রাণের ঠাকুরদালানে।