বলেছিলেন কৃষ্ণগোপাল মল্লিক। অধুনা প্রেসের কর্ণধার। সাধ্যমতো কৃষ্ণগোপালদাকে ‘কাল্টিভেট’ করতেও শুরু করছিলাম ১৯৬৯ সালের আশপাশের সময় থেকে। টের পেতে থাকি তাঁর ভৌতিক ব্যাপার-স্যাপার। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকার সাব-এডিটর, পরনে ধুতি। মাথায় কদমছাঁট, চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। নিশাচর। সারারাত্তির প্রেসের কাজ দেখাশোনা করেন, গুছিয়ে তোলেন। প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন। প্রুফ দেখেন। পরবর্তী সংখ্যা-র পরিকল্পনা করেন। লেখকদের চিঠি লেখেন। ভোররাতে ঘুমোতে যান।
পিছন ফিরে দেখি, ছাপাখানার ভূতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ পুরনো। স্কুল, হাফপ্যান্ট ও বাল্যাবস্থা বিদায়ের আগে থেকেই। বাড়ির কাছেই ছিল অবিবাহিত ৩-৪ ভাইবোনের একটি বাসস্থান-কাম-ছাপাখানা। সেই সময় ‘ছাপাখানা’ মানে খোপকাটা খুপরিতে সিসের অক্ষর, গ্যালি আর ট্রেডল্ মেশিনের ধাতব শব্দ– যা অন্য লোকেদের কেমন লাগত জানি না, আমার কাছে তা মোহনবাঁশির ইশারা। সেই ছাপাখানার নাম ‘যুগমানব প্রেস’। বড় ভাই সুশীল মুখোপাধ্যায় ছিলেন লেখক ও আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। আনন্দবাজারে ওঁর লেখা কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না, তবে প্রায় প্রতি সংখ্যায় ‘দেশ’ পত্রিকায় ওঁর বইয়ের বিজ্ঞাপন থাকত। ‘নওগাঁর প্রাসাদ’ আর ‘ইস্পাত’। অন্যান্য বইও সম্ভবত ছিল, কিন্তু সুশীল মুখোপাধ্যায় বলতে ওই দু’টি বইয়ের নাম এবং সৌম্যদর্শন ও সুদর্শন ভাইবোনদের কথা মনে পড়ে।
ছাপাখানার জানালায় উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে একদিন উনি আমাকে ভিতরে ডাকেন। হয়তো-বা আমি এই ডাকের অপেক্ষাতেই ছিলাম। আমার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে, লেখালিখিতে উৎসাহ আছে জেনে আমাকে কয়েকটি কবিতা নিয়ে যেতে বললেন। বলতে ভুলেছি, ‘যুগমানব প্রেস’ থেকে একটা পাতলা পত্রিকা (এখন জানি, এক ফর্মার) প্রকাশিত হত, তার নামও ‘ভাবীযুগ’। কোনও এক স্বল্পপরিচিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সুশীল মুখোপাধ্যায়ের যোগাযোগ ছিল। কোন দল কিছুই মনে নেই, আর উনিও সে সম্পর্কে কোনও দিন আমাকে কিছুই বলেননি। ৫-৬টা লেখা থেকে বেছে পরপর দু’টি সংখ্যায় দু’টি লেখা ছাপাও হল। তখন আমি ‘কল্যাণকুমার বসু’ অর্থাৎ আধার কার্ডের নামেই লিখি। ওই একই নামে আরেকজন লেখক নিয়মিত লেখালিখি করার কারণে বুদ্ধদেব বসুর একটি গল্পের নায়কের নাম ‘অরণি’-তে আমার লেখক-নাম বদলে নিই। সুশীলবাবুরও ‘অরণি বসু’ নামটি পছন্দ হয়। ছাপাখানার ভূত ঢুকে পড়ল আমার জীবনে!
ইতিমধ্যে ত্রৈলোক্যনাথ নাড়াচাড়া করেছি, আনন্দমেলার হাত ধরে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ভালোবাসাময় সহৃদয় সব ভূতদের হাজির করছেন আমাদের সামনে। আমরা বুঝে গেছি, ভূত মানেই ভয় দেখানো, ভয়ংকর নয়। বি.কে.পাল অ্যাভেনিউর মামার বাড়ি থেকে ‘তৃপ্তি’-র ঢাকাই পরোটা খেতে বেরিয়ে শোভাবাজার মোড়ের কাছে যেখানে ট্রাম চিৎপুরের দিকে বেঁকে যায়, সেখানে এক পত্রপত্রিকার ফেরিঅলাকে আবিষ্কার করি। এ-পত্রিকা ও-পত্রিকা উল্টেপাল্টে ২৫ পয়সা দিয়ে ‘ভাবীযুগ’ মাপের একটি পত্রিকা কিনি– ‘কবিতা সাপ্তাহিকী’। কবিতার নিচে আবার কবিতার উৎস বা বীজ সম্পর্কে ৫-৬ লাইন লেখা আছে গদ্যে। সুধেন্দু মল্লিক ও শামশের আনোয়ারের কবিতা– কবিতা বুঝি বা না-বুঝি আমাকে টানে। যে-টানে বঁড়শিতে ধরা দেয় মাছ।
‘কবিতা সাপ্তাহিকী’-তে লেখা পাঠালাম। ছাপাও হল, কিন্তু ভৌতিক কারণে কবির নাম ছাপা হল ‘অরুণ বসু’। ভূতের কিল নীরবে হজম না করে পত্রিকার দফতরে চিঠি পাঠালাম, কিন্তু কাউকে বলতে পারলাম না– ওটা আমারই কবিতা। পরের সংখ্যায় যখন ‘ভ্রম সংশোধন’ ছাপা হল তখন আমার ঘা অনেকটাই শুকিয়ে গেছে।
ছাপাখানার ভূতের পরের ঘটনাটি আপাত বেদনাদায়ক হলেও পরবর্তীতে তার কারণে আমার ভালোই হয়েছিল। বলেছিলাম না, কোনও কোনও ভূত ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’-ও হয়। ‘দৈনিক কবিতা’ বেশ অভিজাত পত্রিকা, তার নতুন সংখ্যা খুলে দেখি, শেষ কবিতাটি আমার, কিন্তু কবির নামের জায়গায় লেখা ‘কার কবিতা?’ নিচের সম্পাদক জানিয়েছেন, ‘কম্পোজ হওয়ার পর কবিতার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যাওয়ায় কবির নাম দেওয়া গেল না। কবিতাটি আমাদের খুব পছন্দ হওয়ায় কবির নাম ছাড়াই কবিতাটি ছাপলাম। কবি যেন অনুগ্রহ করে পত্রিকার দফতরে যোগাযোগ করেন।’
অনুগ্রহ করতে দেরি করলুম না। তখন আমার বেদনাবিধুর অবস্থা! ‘দৈনিক কবিতা’-র সম্পাদক বিমল রায়চৌধুরী হলেও আমরা জানতুম, ‘দৈনিক কবিতা’ কবিতা সিংহের কাগজ। আর কবিতা সিংহ কাজ করেন আকাশবাণী-তে। আমি এর-তার কাছ থেকে পথনির্দেশ জেনে সরাসরি আকাশবাণীতে কবিতা সিংহের দফতরে চলে গেলাম। বললুম। উনি শুনলেন, তাকিয়ে রইলেন স্বল্পক্ষণ। তারপর বললেন, ‘কী করে বুঝব? তোমার পকেটে কবিতা আছে?’ আবার ভূতের ঢেলা! ভাগ্যিস সঙ্গে গোটা চারেক কবিতা ছিল। কবিতার পাণ্ডুলিপি হাতে নিয়ে চোখ বোলালেন, তারপর বললেন, ‘চলো’, ভ্যাবাচ্যাকা আমি তাঁকে অনুসরণ করি। দরজার পর দরজা খুলে কাচ দিয়ে মোড়া একটা ঘরে ঢুকিয়ে আমাকে বসিয়ে দিলেন মাইকঅলা এক টেবিলের সামনে। বললেন, ‘‘কবিতাগুলো দু’-চারবার চোখ বুলিয়ে নাও।’’ এরপর ঘর থেকে বেরনোর সময় আমার থেকে একটু বড় দাড়িঅলা সদ্য যুবক একজনের কাছে আমায় সমর্পণ করে গেলেন। কী যে হচ্ছে! ঘটনার ঘনঘটা। কবিতা পড়লাম। সেই আমার প্রথম যুববাণীর অনুষ্ঠান। তারপর কত-কতবার। সেই দাড়িঅলা ছেলেটার সঙ্গে পরিচয় হল। ও মা, এর নাম তো আমি জানতুম! ‘পঁচিশে বৈশাখের কবিতা’ খ্যাত যোগব্রত চক্রবর্তী। উল্লেখ থাক, মডার্ণ ইন্ডিয়া প্রেসে, যেখানে দৈনিক কবিতা ছাপা হত, যাঁদের অনবধানতায় আমার কবিতার পাণ্ডুলিপি নিরুদ্দেশ হয়েছিল, তাঁদের একজন বন্ধু কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলালের বাবা এবং অন্যজন বন্ধু কবি চন্দ্রদীপা সেনশর্মার বাবা গল্পকার অজয় দাশগুপ্ত। এরপর যখন নিজেরাই কাগজ– ‘উলুখড়’ করতে লাগলাম, তখন তো ছাপাখানার অগুনতি ভূত! কখনও আমি ভূতের পিঠে কখনও আবার ভূত আমার পিঠে।
আমি জীবনে দু’জন সবিশেষ জলজ্যান্ত ছাপাখানার ভূতের দেখা পেয়েছিলাম। একজন কবি শম্ভু রক্ষিত, যার জীবনজুড়ে ‘মহাপৃথিবী’, যার জীবনজুড়ে হাওড়া ও কলেজ স্ট্রিটের অজস্র ছাপাখানা। কতবার নতুন নতুন প্রেসে গিয়ে শম্ভুকে আবিষ্কার করে বিস্মিত হয়েছি। অন্যজন স্বনামধন্য, অবিস্মরণীয় কৃষ্ণগোপাল মল্লিক। ঐতিহাসিক লিটল ম্যাগাজিন ‘গল্পকবিতা’-র সম্পাদক।
১২ এপ্রিল, ১৯৬৯-এর কলেজ স্ট্রিটের ওভারটুন হলে কৃত্তিবাস পুরস্কারের অনুষ্ঠান হয়। ওইদিনই বেলাল চৌধুরী সম্পাদিত ‘কৃত্তিবাস’-এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। সেইখানে আমার কবিতা পড়ে কৃষ্ণগোপাল মল্লিক নিজে থেকে এসে আমার সঙ্গে আলাপ করেন। জানি না, সে কোন পুণ্যের ফলে আমি ‘গল্পকবিতা’য় লিখতে শুরু করি এবং কৃষ্ণগোপালদার কাছাকাছি চলে আসি। সাধ্যমতো কৃষ্ণগোপালদাকে ‘কাল্টিভেট’ করতেও শুরু করি। টের পেতে থাকি তাঁর ভৌতিক ব্যাপার-স্যাপার। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকার সাব-এডিটর, পরনে ধুতি। মাথায় কদমছাঁট, চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। নিশাচর। সারারাত্তির প্রেসের কাজ দেখাশোনা করেন, গুছিয়ে তোলেন। প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন। প্রুফ দেখেন। পরবর্তী সংখ্যা-র পরিকল্পনা করেন। লেখকদের চিঠি লেখেন। ভোররাতে ঘুমতে যান।
কৃষ্ণগোপালদাকে নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়, কিন্তু আমি এখানে তিনটি ঘটনা উল্লেখ করব। ‘উলুখড়’-এর ষষ্ঠ সংখ্যার সব কাজ ও আমাদের সামর্থ্য শেষ হওয়ার মুহূর্তে উদয়ন ঘোষ একটি দীর্ঘ আখ্যান পাঠান। বহু প্রতীক্ষিত সেই লেখা সেই সংখ্যাায় ছাপতে পারব না ভেবে মন তেতো হয়ে যায়। নতুন করে অর্থ সংগ্রহ করার সম্ভাবনা প্রায় নেই তখন। অনেকগুলো টাকার ব্যাপার!
কৃষ্ণগোপালদাকে সমস্যাটা বলায় উনি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। তারপর বললেন, ‘তোমাদের পত্রিকা তো নিয়মিত নয়, পরের সংখ্যা কবে বেরবে কোনও ঠিক নেই। উদয়নদা ততদিন অপেক্ষা করতে চাইবেন বলে মনে হয় না। তোমরা কি সত্যিই পারবে না?’ আমরা– আমি আর প্রিতম মুখোপাধ্যায়, মুখ চাওয়াচায়ি করলুম, আরও একবার আলোচনা করলাম তারপর জানিয়ে দিলাম, ‘না, কৃষ্ণগোপালদা, পারব না।’
কৃষ্ণগোপালদা বললেন, ‘শোনো, এই গল্পটা এই সংখ্যায় ছাপতে অতিরিক্ত যা খরচ হবে তার অর্ধেক আমার, অর্ধেক তোমাদের। তোমরা যদি একান্তই এখন না পারো, পরে মিটিয়ে দিও।’
আমরা হতবাক, আমরা স্তম্ভিত, আমাদের চোখ আর্দ্র।
দ্বিতীয় ঘটনা। একদিন বিকেলে আমরা ‘উলুখড়’-এর প্রুফ আনতে গেছি। সঙ্গে দলবল। অলোকনাথ মুখোপাধ্যায়, অজয় সেন, অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। দেবপ্রসাদ তখন সিউড়ি থেকে এসে ‘গল্পকবিতা’-য় যোগ দিয়েছে। বন্ধুরা বেশ উচ্চগ্রামে কথা বলছে, কৃষ্ণগোপালদা বললেন, ‘অরণি-প্রিতম থাকো, আর সবাই একটু বাইরে যাও।’ ক্ষুণ্ণ হল সবাই, কিন্তু কৃষ্ণগোপালদা তো, তাই অগত্যা। কৃষ্ণগোপালদা বললেন, ‘শোনো, তোমরা যদি আজ সারারাত্তির সময় দাও, এখানে বসে প্রুফ দেখে দিতে পারো, তো তোমাদের কথামতো নির্দিষ্ট তারিখেই কাগজ বেরিয়ে যাবে। আর তা না হলে দেরি হবে। কাবাসও থাকবে। যদি থাকো রাত্তিরের খাওয়া আমার খরচা। মাংস-রুটি।’
একটু ভেবে রাজি হলাম। কিন্তু আমাদের কারও বাড়িতেই টেলিফোন নেই। বাড়িতে খবর দিতেই হবে। কলেজ স্ট্রিট থেকে শিবপুরের বাড়িতে খবর দিয়ে আমরা আবার ফিরে এলাম। হইচই করে কাজ শুরু হল। কম্পোজিটার কাবাস প্রুফ দিয়ে যাচ্ছে। প্রিতম পড়ছে। আমি মেলাচ্ছি আর প্রয়োজনে সংশোধন করছি। মাঝে মাঝে চা আসছে। রাত্তির ক্রমশ বাড়ছে। উদয়নদার লেখায় অনেক ‘গুলি’। বারোটা নাগাদ কাবাস এসে জানাল আর ‘গু’ নেই। কৃষ্ণগোপালদা আমাদের বললেন, “যাও তো, দু’জনে ৫০ গ্রাম গু নিয়ে এসো। আমহার্স্ট স্ট্রিট পোস্ট অফিসের উল্টোদিকে ‘কালিকা প্রেস’। বন্ধ দরজায় কড়া নাড়বে, যে বেরিয়ে আসবে তার কাছ থেকে আমার নাম করে ৫০ গ্রাম ‘গু’ নিয়ে এসো।”
দূরত্ব বেশি নয়। কলেজ স্ট্রিট থেকে আমহার্স্ট স্ট্রিট পোস্ট অফিস। কিন্তু মধ্যরাত্রে কলকাতার রাস্তায় ঘোরার কোনও অভিজ্ঞতা নেই আমাদের। চারদিক শুনশান। একটু একটু ভয় হয়তো করছে। রোমাঞ্চ লাগছে বেশি। গেলুম, নিয়েও এলুম। অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। কর্মব্যস্ত কলেজ স্ট্রিটের উল্টোপিঠ। অসামান্য নিরাভরণ, নিরালংকার রূপ। সব তুচ্ছ হয়ে প্রথমবারের এই মধ্যরাত্রের কলকাতা চারণার অভিজ্ঞতাই জাগরুক হয়ে রইল সারাজীবনের জন্য। ফিরে কৃষ্ণগোপালদার সঙ্গে কাবাসের রহস্যময় ‘দৃষ্টি বিনিময়’ লক্ষ করে বুঝতে অসুবিধে হল না– ‘গু’ নয়, আমাদের এই অভিজ্ঞতাটুকু অর্জনের সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
তৃতীয় ও আপাতত শেষ। আগের দিন প্রুফ কারেকশন করে দিয়েছি। ফাইনাল কারেকশন। পরের দিন সন্ধ্যায় অফিসের পর ছাপা কপি দেখতে এসেছি। দেখি কবিতার তিনটে জায়গায় প্রুফ কারেকশন হয়নি, ভুলই ছাপা হয়েছে। আমারই কবিতা। উল্টোদিকের চেয়ারে যথারীতি কৃষ্ণগোপালদা। ভীষণ কষ্ট হল, সম্ভবত নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে আসছে। হঠাৎ দেখি, কৃষ্ণগোপালদা আমার হাঁটুর কাছে উবু হয়ে এসে বসলেন। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়! কৃষ্ণগোপালদা বললেন, ‘তুমি আমায় দুটো লাথি মারো কিন্তু কেঁদো না।’ আমি নিঃশব্দে ‘গল্পকবিতা’র দপ্তর থেকে বেরিয়ে এলাম। তখন আমার নিজের জন্য তো বটেই, কৃষ্ণগোপালদার জন্যও খুব মায়া হচ্ছিল। লিখতে লিখতে আজ আবার চোখ ভিজে গেল। মন তুলে দেখি, সেই লোকটা কদমছাঁট চুল, ধুতি, গেঞ্জি, চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। ধুতির খুঁট দিয়ে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে।
ছাপাখানার ভূতেদের হাত থেকে এ জীবনে আমার আর মুক্তি নেই। বেশ কিছুদিন আগে লেখা একটা কবিতার কথা মনে পড়ে গেল–