ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সমস্ত ফরমানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গান ধরেন ইকবাল বানো। পরনে নিষিদ্ধ কালো ভারতীয় শাড়ি। মেয়েদের ‘চাদর-চার দেওয়ালের’ লক্ষণ রেখা ডিঙিয়ে মঞ্চে এসে পঞ্চাশ হাজার মানুষের সামনে গেয়ে ওঠেন, ‘হম দেখেঙ্গে, লাজিম হ্যাঁয় কি হম ভি দেখেঙ্গে, উয়ো দিন থে জিসকা ওয়াদা হ্যাঁয়…’। গানের মধ্যেই শোনা যায় সেই স্টেডিয়াম জুড়ে ভেঙেচুড়ে থাকা মানুষের একটু একটু করে জুড়তে থাকার আওয়াজ। সেই আওয়াজের জোরে প্রায়ই থেমে যেতে হয় শিল্পীকে। চিরাচরিত কনসার্টের মোড়ক ভেঙে গজলের সুরের সঙ্গেই মিশে যেতে থাকে স্লোগানের আওয়াজ। ক্ষমতাবানদের মসনদ থেকে টেনে নামানোর অঙ্গীকারের সঙ্গেই ইকবালের সুরের সঙ্গে মিশে যেতে থাকে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’-এর ডাক। গানের রচয়িতা ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের সেদিন মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিন।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬। লাহোর স্টেডিয়াম। প্রায় ৫০,০০০ মানুষের কলরব। জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসনে একের পর এক নাগরিক, রাজনৈতিক অধিকার হারিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ। সমস্ত রকম ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ হয়ে ভেঙে পড়া অজস্র মুষ্টিবদ্ধ হাত। ফ্যাসিস্ট হুকুমতের হাতে স্বাধীন রাজনৈতিক মত প্রকাশের হক খুইয়ে জ্বলতে থাকা শিল্পীদের চোখ। চাদর আর চার দেওয়ালের শেকলে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়তে না চাওয়া অগুনতি অবাধ্য মেয়েদের জান লড়াইয়ের জেদ। এই সমস্ত কিছুর সামনে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সমস্ত ফরমানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গান ধরেন ইকবাল বানো। পরনে নিষিদ্ধ কালো ভারতীয় শাড়ি। মেয়েদের ‘চাদর-চার দেওয়ালের’ লক্ষণরেখা ডিঙিয়ে মঞ্চে এসে পঞ্চাশ হাজার মানুষের সামনে গেয়ে ওঠেন, ‘হম দেখেঙ্গে, লাজিম হ্যাঁয় কি হম ভি দেখেঙ্গে, উয়ো দিন থে জিসকা ওয়াদা হ্যাঁয়…’ (আমরা দেখে যাব, একদিন না একদিন আমরা দেখে যাবই সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়ে এসেছি…)।
গানের মধ্যেই শোনা যায় সেই স্টেডিয়াম জুড়ে ভেঙেচুড়ে থাকা মানুষের একটু একটু করে জুড়তে থাকার আওয়াজ, আবার আবারও মুখরিত হওয়ার আওয়াজ। মুষ্টিবদ্ধ হাতগুলোর আবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে আকাশে উঠতে থাকার আওয়াজ। সেই আওয়াজের জোরে প্রায়ই থেমে যেতে হয় শিল্পীকে। চিরাচরিত কনসার্টের মোড়ক ভেঙে গজলের সুরের সঙ্গেই মিশে যেতে থাকে স্লোগানের আওয়াজ। একসঙ্গে তৈরি করে নতুন সুর গানের, প্রতিরোধের। ‘সব তাজ উছালে জায়েঙ্গে সব তখত গিরায়ে জায়েঙ্গে…’ ক্ষমতাবানদের মসনদ থেকে টেনে নামানোর অঙ্গীকারের সঙ্গেই ইকবালের সুরের সঙ্গে মিশে যেতে থাকে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’-এর ডাক। গানের রচয়িতা ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের সেদিন মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিন। সেই অনুষ্ঠানেই ইকবালের গলায় নতুন প্রাণ পায় জিয়ার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে লেখা ফয়েজের সেই কবিতা।
ফয়েজের মেয়ে সালিমা হাসমির স্মৃতিকথায় জানা যায়, সেই দিন এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল তাঁদের। শাসকের রক্তচক্ষু এড়িয়ে প্রায় কোনও জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে লাহোরের আলহামবরা আর্টস কাউন্সিলে জায়গা পেলে মানুষকে বসতে দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না প্রায়। অডিটোরিয়ামের দরজা খোলা রাখতে হয়, সিঁড়িতে, দরজার ভেতরে-বাইরে অসংখ্য মানুষ। ইকবাল বানো কালো শাড়ি পরে মঞ্চে এসে দাঁড়ানোর পর কী হয়েছিল, কী না হয়েছিল– তা প্রায় মিথে পরিণত হয়েছে। কারও বয়ানে শোনা যায়, গানের শেষের দিকে মঞ্চের আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবু গান থামাননি ইকবাল বানো। তাঁর সঙ্গেই কণ্ঠ মেলান গোটা অডিটোরিয়াম। গান শেষেও চলতে থাকে স্লোগান। ফয়েজের নাতি, আলি মাদিহ হাসমির স্মৃতিচারণে জানা যায়, গান শেষ হলে আবারও শ্রোতারা বলতে থাকেন, ‘আরেকবার, আরেকবার!’ আবার গান শুরু করেন ইকবাল। স্লোগানের তোড়ে মাঝে মাঝেই গান থামিয়ে দিতে হয় তাঁকে। তারপর আবারও গাইতে থাকেন।
সেই দ্বিতীয়বার গাওয়ার একটি মাত্র রেকর্ডিং করা হয়। কবিতা পাঞ্জাবীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালিমা হাসমি জানান, সেই রাতেই জিয়ার বাহিনী হানা দেয় সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বহু মানুষের বাড়িতে। শুধুমাত্র সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যই গ্রেপ্তার হন বহু মানুষ। সেই সময়ের পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঠুমরি ও গজল গায়িকা ইকবাল রাতারাতি নিষিদ্ধ হন। তাঁর সমস্ত গানের অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয় রাষ্ট্র। তবে একপ্রকার নির্বাসিত হয়েও ইকবাল পরের দিন ভোর ৬টায় সালিমাকে ফোন করে জানান, সারা রাত আনন্দে ঘুমোতে পারেননি তিনি। গান গেয়ে এত প্রশংসা এর আগে কখনও পাননি তিনি। ইকবালের সেই প্রতিবাদ যেন সাড়া দেশে জিয়ার স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নতুন ঢেউ তুলেছিল।
১৯৭৭-এ জিয়া উল হকের সামরিক শাসন তখন মেহনতি মানুষের একের পর এক রাজনৈতিক, নাগরিক অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। মেয়েদের নতুন করে শেকলে আবদ্ধ করার ফরমান জারি করছে। মেয়েদের গণ পরিসরে চলাচলে লক্ষণরেখা টানছে। কর্মক্ষেত্রে, সামাজিক, রাজনৈতিক স্তরে নিজেদের হক বুঝে নেওয়া মেয়েদের আবারও অন্দরমহলের চার দেওয়ালে বন্দি করার নিদান দিচ্ছে। মেয়েদের স্বাধিকারের অপরাধীকরণ করে জারি করছে একের পর এক আইন। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা নারী-পুরুষের ১০০ ঘা বেত ও পাথরের ঘায়ে মৃত্যুর আইন ঘোষণা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনের দাঁড়িপাল্লায় কোনও ধর্ষণ, লিঙ্গ-হিংসার ঘটনায় নারীদের সাক্ষ্য, বয়ানের মূল্য পুরুষের অর্ধেক ধরা হবে– এভাবেই লিপিবদ্ধ হয়েছে।
নিষিদ্ধ হয়েছে প্রায় সমস্ত রকমের বিরুদ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচি। সেই সময়ে সেই নৈঃশব্দ ভেঙে জিয়া শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে মেয়েরা। বিভিন্ন নারী সংগঠন ও ব্যক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে গড়ে ওঠে Women’s Action Forum (WAF)। ১৯৮৩-তে আদালতের সামনে জিয়ার রাষ্ট্রযন্ত্রের আনা একের পর এক নারীবিদ্বেষী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন WAF-এর কর্মীরা। সেই মিছিলেই তাঁদের ওপর হামলা চালায় জিয়ার সেনাবাহিনী। মাটিতে ফেলে মারতে থাকে মিছিলে আসা মেয়েদের। গ্রেপ্তার করেন বহু কর্মীকে। তবু সেই মিছিল থামেনি। লাঠি, টিয়ার গ্যাস উপেক্ষা করেই আদালতের দিকে চলতে থাকে সেই মিছিল। যদিও WAF-এর নেতৃত্বে ছিলেন মূলত মধ্যবিত্ত শহুরে মেয়েরা, সেই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন দূরদুরান্ত থেকে আসা বহু শ্রমজীবী মেয়েরাও। মেয়েদের সেই মিছিলের সংহতিতে পা মেলান বহু বামপন্থী প্রগতিশীল মানুষ। মিছিলের একাংশ গ্রেপ্তারি এড়িয়ে আদালতে পৌঁছলে তাঁদের জন্য মালা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন বহু গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল উকিল, মানবাধিকার-কর্মীরাও।
সেই মিছিলই জিয়া শাসনের বিরুদ্ধে নাগরিক, রাজনৈতিক হকের দাবিতে প্রতিরোধী আন্দোলনের সূচনা ঘটায়। সেই আগুনের আঁচেই ১৯৮৩-তে জিয়ার সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামিকরণের লক্ষ্যে দেওয়া একের পর এক ফরমান এবং নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লাহোরে নারী শিল্পীরা একজোট হয়ে এক গোপন ইস্তেহার তৈরি করেন। শিল্পে রাষ্ট্রের জারি করার নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখানোর কসম খেয়ে সেই ইস্তেহারের আগুন প্রতিফলিত হয় বিভিন্ন নারী লেখক-শিল্পীদের ছবিতে, গানে, কবিতায়। যে সময় মালকোষ রাগ, সরস্বতী নিষিদ্ধ করা থেকে শুরু করে শিল্প, সাহিত্য, জামাকাপড় সমস্ত কিছুর ঠিক-বেঠিক ঠিক করে দিচ্ছিল রাষ্ট্র, নিষিদ্ধ হচ্ছিল সমস্ত রকম ‘অপাকিস্তানীয়’ চিহ্ন, স্কুলে কলেজে, কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের চাদরে ঢেকে থাকার নিদান দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় সালিমা হাসমি থেকে ফমিদা রিয়াজ, কিশওয়ার নাহিদদের কলম, তুলির আঁচড় তৈরি করছিল একের পর এক নিয়মভাঙার ইতিহাস। তাই ১৯৮৬-তে যখন ইকবাল বানো নিষিদ্ধ কালো শাড়ি পরে রাজদ্রোহের গান গাইতে মঞ্চে আসেন, তাঁর সুরে মিলে যায় সেই সমস্ত প্রতিরোধ। মুখরিত হয়ে ওঠে নিপীড়িতের সেই সমস্ত নিষিদ্ধ ভাষ্য। ইকবালের সঙ্গেই যেন গলা মেলান সেই সময়ের সেই সমস্ত গুনাহগার মেয়েরা। তাই রাষ্ট্রও রাতারাতি গণপরিসর থেকে এক প্রকার নির্বাসিত করতে বাধ্য হয় সেই সময়কার সব চেয়ে জনপ্রিয় শিল্পীকে।
ঠিক যেমন জিয়ার শাসনকালে এই গানের স্রষ্টা আজীবন শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকা ফয়েজকেও নির্বাসিত হতে হয়েছিল। আশ্রয় নিতে হয়েছিল বেইরুটে। তবে নির্বাসন ফয়েজের কণ্ঠরোধ করতে পারেনি। যে কবিকে কাঁটাতার কখনও বাঁধতে পারেনি, যিনি জাতীয়তাবাদের কুচকাওয়াজকে নাকচ করে ১৪ আগস্ট লিখেছিলেন রক্তাক্ত ভোরের কথা, যিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের দখলদারির ও অন্যায় নিপীড়নের জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে গেছিলেন, যিনি পাকিস্তানে গড়ে তুলেছিলেন একের পর এক শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বারংবার ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে কারারুদ্ধ হয়েছেন, যাঁর কবিজীবনের অধিকাংশ কেটেছে প্রগতিশীল, বামপন্থী লেখকদের সংগঠিত করতে, শেষ জীবনের নির্বাসন তাঁকে নিয়ে গেছিল বেইরুটে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের কোলে। নির্বাসনেও তাই লিখে গেছিলেন, ‘যেখানেই আমি আমার রক্তের নিশান উত্তোলন করব, সেখানেই উড়তে থাকবে ফিলিস্তিনের পতাকা’।
স্রষ্টার মতোই তাঁর গানকেও তাই কোনও কাঁটাতার বেঁধে রাখতে পারেনি। সেই গান ইকবাল বানোর কণ্ঠে স্লোগান হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র উপমহাদেশে। রাষ্ট্রের নজরদারি এড়িয়ে সেই গানের রেকর্ডিং মুহূর্তে একের পর এক কপি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে, রেকর্ডিং বাজেয়াপ্ত করেও তার ছড়িয়ে পড়া আটকাতে পারেনি রাষ্ট্র। সেই রাজদ্রোহের সুর তাই সঞ্চালিত হয়েছিল ১৯৮৭ এর WAF-এর কর্মীদের প্রতিরোধে।
জিয়ার ‘চাদর-চার দিওয়ারি’ ক্যাম্পেনের বিরুদ্ধে লাহোরের রাস্তায় মেয়েরা তাঁদের চাদর, ওড়না প্রকাশ্যে পুড়িয়েছিল। কাঁটাতার পেড়িয়ে সেই গানের প্রতিরোধী ঢেউ এসে পরেছিল এদেশেও। ২০০২-এ গুজরাট গণহত্যার প্রতিবাদে হওয়া মহারাষ্ট্রের একটি প্রতিবাদ সভা শেষে গাওয়া হয়েছিল ‘হম দেখেঙ্গে’। পড়শি দেশের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যারিকেড গড়া গান সুর দিয়েছে এদেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে। মজার ব্যাপার হল, পড়শি দেশের ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোরানের আয়াতকেই হাতিয়ার করেছিলেন ফয়েজ। লিখেছিলেন মেহনতি মানুষের পায়ের তলায় নিপীড়নের পাহাড় ভাঙার গল্প। জামিয়া থেকে যাদবপুর, শাহিনবাগ থেকে পার্ক সার্কাস– তিন দশক পেড়িয়ে নাগরিকত্বের হকের দাবিতে রাস্তার দখল নেওয়া মানুষ আবারও সেই গানের আশ্রয় নিলে এদেশের রাষ্ট্র সেই গানকেই সাম্প্রদায়িক ঘোষণা করে! আইআইটি-র এক পড়ুয়া এনআরসি, সিএএ আন্দোলনের সংহতিতে ফয়েজের এই কবিতা পাঠ করলে তাই নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। আবারও গানটি কাঠগড়ায় ওঠে। অভিযোগ ওঠে তার ‘অভারতীয়’ হওয়ার। যে গান পড়শি দেশে ইসলাম বিরোধী হওয়ার দায় অভিযুক্ত ছিল। এদেশে সেই গান অভিযুক্ত হয় হিন্দু-বিরোধী হওয়ায়। তবে রাষ্ট্রের ফরমানকে নাকচ করেই এই গান নিপীড়িতের সেতু বন্ধন করে দুই দেশে। এক তারে বেঁধে রাখে দক্ষিণ এশিয়ার উপমহাদেশের প্রতিরোধের সুরকে। রাষ্ট্রের জারি করা কাগুজে নাগরিকত্বে নয়, পড়শি দেশের মানুষদের সংগ্রামের সংহতিতে লেখে এক অন্য ‘imagined community’-র কথা। তাই মিউজিকের ঝকুমারি দিয়েও কোক স্টুডিও সেই গান আত্মসাৎ করতে পারে না। রাষ্ট্রের প্রোপাগান্ডা ছবি ‘টুকরে টুকরে গ্যাং-এর ‘জাতীয় সঙ্গীত’ বলে দাগিয়ে দিয়ে বিদ্রুপ করলেও সেই গান মুখরিত হতে থাকে শোষিতের ব্যারিকেডই। ইকবাল বানোর সেই গানের সঙ্গে ইনকিলাবের স্লোগান মিশে ততদিনে তা এক নতুন কবিতা হয়ে গেছে, যার প্রতিটা সুরে বেসুরে চিরকালীন হয়ে আছে দিনবদলের স্বপ্নে মানুষে মানুষে ব্যারিকেড গড়ার কথা।
‘জব আর্জ-এ-খুদা কা কাবে সে, সব বুট উঠায়ে যায়েঙ্গে
হাম আহলে-এ-সফা মরদুদ-এ-হারাম, মসনদ পে বিঠায়ে যায়েঙ্গে
সব তাজ উছালে যায়েঙ্গে, সব তখত গির যায়েঙ্গে, হম দেখেঙ্গে…’
(যখন স্বৈরাচারী শাসকদের ঈশ্বরের স্থান থেকে টেনে নামিয়ে আনা হবে, যখন সেই মসনদে সব হারানো মেহনতি মানুষকে বসানো হবে, সব মুকুট খসে পড়বে, সব ক্ষমতাবানের পতন হবে, আমরা দেখে যাব, সেই দিনের অপেক্ষায়…)।