তিনি লেখক, শিল্পী– তদুপরি বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আর্ট কালেকটর। তাঁর সংগ্রহের কথা কিংবদন্তির মতো ঘোরে মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু এই একুশ শতকেও আমাদের নতজানু হতে হয় ‘সুন্দরম্’-এর মতো পত্রিকার সামনে। এমন তার গঠনসৌষ্ঠব, এমন সম্পাদকীয় পরিকল্পনা। আর লেখা ও লেখকের বৈচিত্রও তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সম্পাদকের গর্বিত সচেতনতা ছিল নিজের পত্রিকা সম্পর্কে।
ছাব্বিশ বছর বয়সে ঘর ছাড়লেও জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি তাঁর পিছু ছাড়েনি আজীবন। নিজেই লিখেছেন, অমন বাড়িতে জন্মালে না কি শিরায়-শিরায় দুরারোগ্য ব্যাধি ছোটে। যতই লোককে চমকে দিন জোড়াসাঁকোর বাড়ি আর ‘পয়েট টেগোর’কে নিয়ে কয়েক ছত্রের ছড়া লিখে– ‘বাবার খুড়ো যে হন শুনিয়াছি,/ মোর কেহ হয় নাক’। ঠাকুরবাড়ির উনপঞ্চাশ বায়ু তাঁর ধমনিতেও বেগবান ছিল। নইলে ১৯৫৬-র ১৫ অগাস্ট তাঁর সম্পাদনায় ‘বাংলা ভাষায় ও বাংলা দেশে একমাত্র কলা বিষয়ক মাসিকপত্র’ প্রকাশিত হত না।
এর আগে তিনি বেশ কিছুদিন কলিকাতা নামক ধ্যাদ্ধেড়ে গোবিন্দপুর (তাঁর ভাষায় ‘গণ্ডগ্রাম’) ছেড়ে রাজধানী দিল্লি ও ‘উপরাজধানী’ বোম্বাইয়ের নানা ঘাটের জল খেয়ে ভারতের আধুনিক শিল্পীদের একটা বড় অংশের সংস্পর্শে আসেন। আবার বেশ কিছুদিন স্বাধীন ভারতের সরকারি প্রতিনিধি হয়ে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী নিয়ে আমেরিকা-রাশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য করে বেরিয়ে– সন্ধের পার্টিতে ভদকা, মার্টিনির ফোয়ারা তুলে, ‘ককটেলের কাতুকুতু’ হজম করে স্থির বিশ্বাসে উপনীত হন যে, বাংলায় একটি আর্ট জার্নালের, সাদা বাংলায় কলা বিষয়ক একটি পত্রিকার নিতান্তই অভাব! কেননা ততদিনে তাঁর ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, এদেশের রবীন্দ্র-পরবর্তী আধুনিক সাহিত্যের মতোই অবনীন্দ্রনাথ-উত্তর আধুনিক শিল্পকলার সূত্রপাতও ‘এই গণ্ডগ্রাম সুতানুটী-গোবিন্দপুর’ থেকেই। ‘কল্লোল’-এর লেখকেরা যেমন বাংলায় এক ধরনের আধুনিকতার ভগীরথ, ক্যালকাটা গ্রুপের শিল্পীরা অবনীন্দ্র-পরবর্তী শিল্পে নতুন ধারা বইয়ে দিয়েছেন– সুভো ঠাকুরের এমনটাই ছিল বিশ্বাস। কিন্তু শিল্প আবার কবে রাজনীতি-অর্থনীতির নীল নকশার বাইরে গেল! দেশভাগের পর বাংলা আদৌ তখন ফুল্ল কুসুমিত ছিল না। নৈমিত্তিকের দায়ে বাঙালির নাভিশ্বাস দশা! হিরোশিমা-নাগাসাকির পর দেশ-দেশান্তরের ফুলদানিতে ঘর সাজানো ছেলেমানুষিও মনে হতে পারে কখনও, বিশেষ করে সমাজে ন্যায়-অন্যায়ের হিসেবে আয়-ব্যয় একাকার অবস্থা যখন। অগণিত উদ্বাস্তুর হাহাকারে আর্ট জার্নালের কথা ঠাট্টার মতো শোনাতে পারে। কিন্তু সুভো ঠাকুরের অগাধ আস্থা ছিল শিল্পের ওপর। কণ্ঠে সুর নিয়ে বিপ্লবীদের ফাঁসির মঞ্চে যাওয়া কিংবা বিশ্বযুদ্ধের কোনও সৈনিকের ঘাড়ে করে যামিনী রায় নিয়ে যাওয়ার কথা মনে করে তিনি সিদ্ধান্ত করেন আলোড়ন, পরিবর্তন এবং সবচেয়ে দুঃসময়ের মধ্যেই মহৎ শিল্পের আবির্ভাব হয়। এই ছিল বাংলা আর্ট জার্নাল ‘সুন্দরম্’-এর গোড়ার কথা।
যদিও বন্ধু-বান্ধবেরা তাঁকে নিরস্ত করার কম চেষ্টা করেননি। সুভো ঠাকুরের শুভচিন্তকও তো ছিলেন কেউ কেউ! তাঁরা আপত্তি তুললেন বাংলায় কাগজ করা নিয়ে। আর্টের কাগজ ইংরেজিতে করলে তাও কিছু বিলিতি কোম্পানির বিজ্ঞাপন পাওয়া সম্ভব ছিল, বিদেশেও পাওয়া যেত বিক্রির বাজার। কিন্তু সুভো ঠাকুর অনড় রইলেন সিদ্ধান্তে। ঠাকুরবাড়ির ওই দুরারোগ্য ব্যাধি (নাকি ঘোড়ারোগ!) সারাবে কে ?
সুভো ঠাকুরের বহুকালের নেশা কাগজ বের করা। তাঁর এক বন্ধু না কি বলেছিলেন, ‘কাগজ বের করার নেশা, মদের নেশার চেয়েও নিকৃষ্টতর। সাসপেন্ড হয়, কিন্তু ডিসমিস হয় না।’ সুভো ঠাকুর সারাজীবনে ডজনখানেক না হলেও আধ ডজনের কাছাকাছি কাগজ বের করেছেন। প্রথম বেরয় মাসিক ‘চতুরঙ্গ’। এ-‘চতুরঙ্গে’র রণরঙ্গ হুমায়ুন কবির-আতাউর রহমানের ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার অনেক আগের কথা। তিনি তখন সরকারি আর্ট ইশকুলের ব্ল্যাকবোর্ড ক্লাসের ছাত্র। অমন বয়সে পত্রিকা বের করার ভূত বহু বাঙালির মাথাতেই সওয়ার হয়। কিন্তু তাই বলে একেবারে মাসিক পত্রিকা ! সে-কাগজের এন্তেকালের পর ফের আরেকটা মাসিক পত্র– ‘ভবিষ্যৎ’। ‘ভবিষ্যৎ’কে দাফন করে বের করলেন সাপ্তাহিক ‘অগ্রগতি’। ‘অগ্রগতি’ অবশ্য বছর পাঁচেক চলেছিল। কিন্তু ততদিনে সুভো ঠাকুর নন, তাঁর বন্ধু আশু চট্টোপাধ্যায় সম্পাদনায় নেমে কাগজটিকে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছিলেন। ‘অগ্রগ্রতি’র পরে আসে ‘অতিক্রমা’। শিল্পী রথীন্দ্র মিত্রের সঙ্গে তাঁর যৌথ সম্পাদনার কাগজ, যার মাত্র একটাই সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরই এল ‘সুন্দরম্’– ‘চিত্র, কারুকলা, সংগীত, নৃত্য, নাট্য ও চলচ্চিত্রের সংস্কৃতিমূলক মাসিক পত্র’। প্রচ্ছদসজ্জা ও লেটারিং সত্যজিৎ রায়ের। ৫৪ নম্বর গণেশচন্দ্র অ্যাভেনিউ থেকে প্রকাশিত এবং ২৪ নম্বর রিপন স্ট্রিট ঠিকানার আর্টাইন প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড থেকে মুদ্রিত অভিনবত্বে ভরপুর কাগজটির মাপ ছিল ২৩.৫ সেমি X ১৭.৫ সেমি।
………………………………………………………………………………………..
যদিও বন্ধু-বান্ধবেরা তাঁকে নিরস্ত করার কম চেষ্টা করেননি। সুভো ঠাকুরের শুভচিন্তকও তো ছিলেন কেউ কেউ! তাঁরা আপত্তি তুললেন বাংলায় কাগজ করা নিয়ে। আর্টের কাগজ ইংরেজিতে করলে তাও কিছু বিলিতি কোম্পানির বিজ্ঞাপন পাওয়া সম্ভব ছিল, বিদেশেও পাওয়া যেত বিক্রির বাজার। কিন্তু সুভো ঠাকুর অনড় রইলেন সিদ্ধান্তে। ঠাকুরবাড়ির ওই দুরারোগ্য ব্যাধি (নাকি ঘোড়ারোগ!) সারাবে কে ?
………………………………………………………………………………………..
‘সুন্দরম্’-এর খামখেয়ালও তাঁর সম্পাদকের মতোই মজ্জাগত ছিল। পত্রিকার আকার, কাগজ, দাম, প্রকাশকাল, বিজ্ঞাপন– কোনও কিছুরই বাঁধাধরা কোনও নিয়ম ছিল না। ছিল না ট্যাঁকের জোরও। ‘সুন্দরম্’-এর প্রথম সংখ্যায় সুভো ঠাকুরের মেজোভাই সিদ্ধীন্দ্রনাথের নাম ছাপা হয় পত্রিকার কার্যাধ্যক্ষ হিসেবে। সিদ্ধীন্দ্রনাথের নামেই ‘সুন্দরম্’-এর নিয়মাবলি হিসেবে ছাপা হয়– এই কাগজ প্রতি ইংরেজি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হবে, ‘শারদীয়া’ আর ‘খৃস্টমাস’ যুগ্ম সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হবে। প্রতি সংখ্যার দাম হবে এক টাকা আর যুগ্ম সংখ্যার দাম হবে দু’-টাকা। শ্রাবণ তেরোষো তেষট্টিতে প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ায় পরের সংখ্যাটাই ছিল শারদ সংখ্যা। ভাদ্র-আশ্বিনের (যুগ্ম দ্বিতীয়-তৃতীয়) সেই শারদ সংখ্যায় ‘লেখা ও লেখক সম্পর্কে’ ছাপা হল– ‘লেখক নয়, লেখাই আমাদের একমাত্র বিবেচ্য। খ্যাত অখ্যাত তরুণ প্রবীণ নির্বিশেষে সকলের লেখাই প্রকাশে আমরা আগ্রহশীল। শিল্পী এবং শিল্প সম্পর্কে প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প আমরা গ্রহণ করি।’ এই সংখ্যা থেকে ‘সুন্দরম্’-এর অঙ্গসজ্জায় হাত লাগালেন রঘুনাথ গোস্বামী, দ্বিতীয় বর্ষের চতুর্থ-দ্বাদশ সংখ্যা থেকে যে-দায়িত্ব সামলেছেন রণেণ আয়ন দত্ত।
চতুর্থ-দ্বাদশ সংখ্যা কথাটি পড়ে যদি খটকা লাগে তাহলে মানসিক দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য জানাই শুরুর বছর থেকেই ‘সুন্দরম্’ তার নিয়মিত প্রকাশের প্রথম প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়। চতুর্থ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল চতুর্থ-পঞ্চম সংখ্যা হিসেবে। আর ‘সুন্দরম্’-এর প্রকাশ চূড়ান্ত গোঁত্তা খায় তার ঠিক পরেই। ফলত ষষ্ঠ আর একাদশ সংখ্যা একসঙ্গে প্রকাশিত হয়। বাংলা পত্রিকার ইতিহাসে অনিয়মিত প্রকাশ খুব নতুন কিছু নয় কিন্তু গুণমানে অদ্বিতীয় হওয়া চাই। ‘সুন্দরম্’ হয়তো সে-কথাটাই বিশ্বাস করত। প্রথম শারদ সংখ্যার লেখক তালিকায় ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, অশোক মিত্র, বিনয় ঘোষ, রঘুনাথ গোস্বামী, জি. ভেঙ্কটাচল্ম, রঘুনাথ গোস্বামী, অর্ধেন্দুকুমার গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। এই সংখ্যা ছাপা হয় লালাচাঁদ রায়দের গসেন এণ্ড কোং (প্রিণ্টার্স) প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। সুভো ঠাকুর সেই সময়ের কথা শুনিয়েছেন একটি লেখায়:
‘‘‘সুন্দরম্’-এর সময়েই আমার পুজো সংখ্যা বের করার বাস্তব হাতে-কলমে শিক্ষা হয়। নিজের প্রেস না থাকলে, ভালো কাগজ সময়মত বের করতে হলে প্রেসেতেই করতে হবে ঘর-বাড়ি। নতুবা মহালয়ার আগে কাগজ বেরুনো অসম্ভব। আমি তখন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কাজ করি– যখন ‘সুন্দরম্’ বের হয়। চাকরিতে কোনো রকমে একটা ঢ্যাঁড়া মেরে পালিয়ে আসতুম প্রেসে। তারপর সারাদিন তো বটেই, রাত্তির কে রাত্তির, কত রাত্তির যে লালদার প্রেসের সেক্রেটারিয়েট টেবল-এ শুয়ে রাত ভোর করে বাড়ি ফিরেছি, তার ইয়ত্তা নেই। রাত্তিরে ছাপা হবে আমাদের কাগজ। সারাদিন চলছে বাটা কিম্বা টাটার কোনো পাঁচ লক্ষ কিম্বা দশ লক্ষ কাগজ ছাপার টানা কাজ। সেটা শেষ হবে যে সময়, সেই ফাঁকে যদি আমাদের কাজটা মেশিনে না ওঠে, তবেই তো সর্বনাশ। তাই জেগে বসে, কখন মেশিন খালি হবে, কখন আমাদের কাজটা মেশিনে তুলতে পারব-উদগ্রীব উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করে আছি। মেশিনম্যানকে প্রেয়সীর অধিক খোশামোদ– শুধু খোশামোদই নয়, তার সঙ্গে বকশিস-এরও ইঙ্গিত।’’
এই হল বাঙালির পত্রিকা-বিলাসের চূড়ান্ত, পত্রিকা-রোম্যান্টিকের হৃদ্স্পন্দন। সুভো ঠাকুরের কাছে অবিশ্যি এসবই ছিল যাপনের জন্য জরুরি। দিনানুদিনের প্রতিষেধক। আট প্রহরের আর্ট কালেকটরের কারুবাসনা।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের নাতি ঋতেন্দ্রনাথের ছেলে সুভোগেন্দ্রনাথ ওরফে সুভো ঠাকুরের নিজের বয়ানে তাঁর ‘বিদ্যে পুঁথিগত নয়, পদগত’। হাতে করে পুথির পাত না উল্টে পায়ে করে পৃথিবীর পাতা ওল্টানোর দম্ভ ছিল তাঁর। শেষ বয়সেও স্বপ্ন দেখতেন পায়ে হেঁটে আফগানিস্তান ঘোরার। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ‘ছাপাখানার ছারপোকা’। হ্যান্ড কম্পোজিংয়ে হাতেখড়ি, প্রুফে কাটাকুটি না থাকলে হাত নিশপিশ করত। তারপর আসে মনো আর লাইনো কম্পোজ। ‘সুন্দরম্’ ছাপা হত লাইনোয়। অফসেট ব্যবহার করা হত শুধু ছবি ছাপতে। লাইনো ছাপায় প্রুফে সংশোধন অথবা কাটাকুটির জায়গা নেই। সুভো ঠাকুরের মেজাজ যেত বিগড়ে। কিন্তু পত্রিকার দায় বড় দায়! সব মেনে নিয়েই শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে নাগাড়ে আট বছর চলেছে ‘সুন্দরম্’।
ছাপাখানার জলহাওয়ায় তাঁর পুষ্টি। স্কটিশ চার্চ কলেজে ফোর্থ ক্লাসে ভরতি হয়েই তাঁর লেখা গল্পের বই ‘মঞ্জরী’ প্রকাশিত হয়। তাতে স্নেহপরবশ হয়ে ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন অমৃতলাল বসু। ধীরে ধীরে তাঁর নিজের লেখা বইয়ের সংখ্যাও বাড়ে। প্রকাশিত হয়– ‘নীলরক্ত লাল হয়ে গেছে’, ‘ডিকেণ্টার’, ‘মায়ামৃগ’, ‘কাঁকড়া’, ‘রুদ্ররাজ’, ‘অলাতচক্র’, ‘পট ও ভূমিকা’ ইত্যাদি। অনেক পরে দু’টি পত্রিকার পাতা থেকে সংগ্রহ করে প্রকাশিত হয়েছে– ‘আর্ট কালেকশনের অষ্টপ্রহর’ এবং ‘বিস্মৃতিচারণা’।
তিনি লেখক, শিল্পী– তদুপরি বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আর্ট কালেকটর। তাঁর সংগ্রহের কথা কিংবদন্তির মতো ঘোরে মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু এই একুশ শতকেও আমাদের নতজানু হতে হয় ‘সুন্দরম্’-এর মতো পত্রিকার সামনে। এমন তার গঠনসৌষ্ঠব, এমন সম্পাদকীয় পরিকল্পনা। আর লেখা ও লেখকের বৈচিত্রও তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সম্পাদকের গর্বিত সচেতনতা ছিল নিজের পত্রিকা সম্পর্কে। সপ্তম বর্ষের (এই বছরই বন্ধ হয়ে যাবে ‘সুন্দরম্’) ‘সুভো ঠাকুর উবাচ’ কলামে লিখছেন : ‘সুভো ঠাকুরের সনির্বন্ধ অনুরোধ যাঁরা খেলো সিনেমা, সাহিত্য এবং শিল্প একাকার কোরে ভালো-মন্দ বালাই বর্জিত শস্তায় কিস্তিমাত করেন এবং সাংস্কৃতিক বনতে চান– সে-রকম পণ্ডিতরা দয়া কোরে যেন সুন্দরম্ না পড়েন। সুন্দরম্ সাময়িক পত্রিকা মহলে নব্যবাংলার পঞ্চাশ-হাজারি মনসবদার হোতে চায় না– এই ওর বক্তব্য।’ এভাবেই কবচকুণ্ডলহীন সুভো ঠাকুর নেমেছিলেন বাংলায় আর্ট জার্নাল প্রকাশ করতে। ১৩৬৩ থেকে ১৩৬৯ পর্যন্ত মোট ২৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। তুলনায় অর্বাচীন একটি পত্রিকার তরফে ‘সুন্দরম্’-এর সূচির কাজে জড়িয়ে গিয়ে এই নিবন্ধকার সপ্তম বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যাটি বাদে বাকিগুলি চাক্ষুষ করার সুযোগ পেয়েছিল। এদিকে সপ্তম বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় বিজ্ঞাপিত হয়েছে পরের সংখ্যা প্রকাশিত হবে ‘মার্চ মাসের মধ্যে’। সে-সংখ্যারও সন্ধান করতে পারিনি। যদিও প্রয়াত গ্রন্থাগারিক অরুণ ঘোষ জানিয়েছিলেন সে-সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল।
‘সুন্দরম্’-এর মতো পত্রিকা প্রকাশ করতে গেলে স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়, বুকের পাটা লাগে। সুভো ঠাকুরের তাতে কমতি ছিল না। তাঁকে বলা হয় ঠাকুরবাড়ির বিদ্রোহী সন্তান। তাঁকে ঠাকুরবাড়ির শেষ ‘ঠাকুর’ বললেও অত্যুক্তি হয় না।