সেই পরিচালক আমি। আমার ছবি ‘অন্তর্জলী যাত্রা’র স্পেশাল স্ক্রিনিং দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। আমাকে তলব করেছিলেন বাড়িতে। সেদিন অনেক প্রশ্ন করেছিলেন। যেন এক কৌতূহলী ছাত্রই জিজ্ঞেস করছে। ওঁর এই অপূর্ব বিনয়ে আমি যথেচ্ছ লজ্জায় পড়েছিলাম উত্তর দিতে গিয়ে। পরে সেন্টার অন্তর্জলীকে ছাড়পত্র দিচ্ছিল না যখন তখন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, এম জে আকবরের সঙ্গে তপনদাও প্রতিবাদ করেছিলেন। পরে ছবি মুক্তির ছাড়পত্র মেলে। তারিখও ঠিক হয়। জানতে পারি, ‘উত্তরা-পূরবী-উজ্জ্বলা’ ও নানা হল-এ মুক্তি পাবে। সেসময়ই তপনদার হিন্দি ছবি ‘আজ কা রবিনহুড’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তপনদা ডিস্ট্রিবিউটারকে ডেকে বললেন, ‘আমার ছবির মুক্তি পিছিয়ে দাও।’
তপন সিনহা আমার কাছে বিস্ময়! ১৯৫৪ সালে, ‘পথের পাঁচালী’র এক বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর প্রথম ছবি ‘অঙ্কুশ’। এই সহস্রাব্দের প্রথম দিকেও তপনদা ছবি বানিয়েছিলেন, বানিয়েছিলেন কিছু টেলিফিল্মও। সারাজীবনে ৪০টি কাহিনিচিত্র ও টেলিফিল্ম মিলিয়ে তপন সিনহা এমন সব বিষয় নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন, যা বাংলায় এবং ভারতীয় ছবিতে ‘বিরল’।
যিনি এত কাজ করেছেন, যাঁর কাজের এত ব্যপ্তি, লোকপ্রিয় হয়েছে তাঁর ছবি– তারপরও তিনি আত্মসমালোচনা করে গিয়েছেন। এ এক বিরল গুণ। ‘কাবুলিওয়ালা’র মতো ছবি, যা বাণিজ্যিকভাবে দুরন্ত সাফল্য পেয়েছিল, পেয়েছিল রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও– কিন্তু তপনদা বলেছিলেন, টেকনিক্যালি ‘কাবুলিওয়ালা’ খুবই নিম্নমানের ছবি। তাঁর নিজের ছবি নিয়ে যখন আলোচনা হত, অনেক সময়ই উনি বলতেন, ওটা খুব একটা ভালো হয়নি।
ভাগলপুরে বড় হয়েছেন তপনদা। ভাগলপুরে প্রচুর বাঙালি থাকতেন। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েছিলেন তিনি। গানবাজনা শিখেছেন, সাহিত্য সম্পর্কেও গড়ে উঠেছে আগ্রহ। কিন্তু চারপাশের পরিস্থিতি যেমন ছিল, সেখানে অন্য পেশার প্রতিই মানুষের মোহ ছিল বেশি। আমার শাশুড়ি তপন সিনহার আত্মীয় ছিলেন, ওঁর মুখে শুনেছি যে, সকলে ওঁকে একটু ‘বখাটে’ই বলত, কারণ গতানুগতিক পড়াশোনায় মন ছিল না। মাথায় ঢুকেছিল সিনেমার পোকা। প্রচুর হলিউডের ছবি দেখতেন।
যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় কলকাতায় হলিউডের ছবিই শুধু আসত। কলকাতায় এসেই ছবি দেখতেন। পড়াশোনা করেছেন বিজ্ঞান নিয়ে। উইলিয়াম ওয়াইলার, জন ফোর্ড ওঁর খুব প্রিয় চিত্র পরিচালক। তপনদা ওয়াইলারের খুবই ভক্ত ছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি নিজে নানারকম বিষয়ের ছবির পরিচালনা করেছি কারণ– উইলিয়াম ওয়াইলার। তিনি বেন-হুর করছেন আবার রোমান হলিডেও করছেন। তারপরই কোনও একটা মিউজিকাল ছবি করতে হয়তো চলে গেলেন কোথাও!’
পরিবারের সাহায্য নিয়েই তিনি ‘পাইনউড স্টুডিও’তে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। সিনেমা নিয়ে, বিশেষ করে, সাউন্ড নিয়ে। কিন্তু আমাকে বলেছেন, ‘আমি খুব একটা শিখিনি জানো তো এবং বুঝতেও পারিনি, সেই প্রাথমিক শিক্ষা এখানে এসে কাজে লাগাব কী করে! দর্শকই বা কীভাবে নেবে?’ এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব ওঁর প্রথম থেকেই ছিল। কিন্তু ঘটনাচক্রে ব্যাপারটা ঘটল অনেকটা মানিকদার মতো। মানিকদা ডি জে কেমারে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর ইউরোপিয়ান ছবি দেখেছিলেন। ‘বাইসাইকেল থিফ’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে যে ‘পথের পাঁচালী’ করেছিলেন, বলেছিলেন নিজেই। সত্যজিতের বিশ্বাস হয়েছিল যে, রাস্তাঘাটে নেমে নন-অ্যাক্টরদের নিয়ে সিনেমা তৈরি করা যায়। পরিচিত মুখ নেওয়ার দরকার নেই। তপনদাও রোসেলিনির ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সেই ছবি– ‘রোম, ওপেন সিটি’। নয়া বাস্তবতার প্রবর্তক যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন রবার্তো রোসেলিনি। দেখেছিলেন রোসেলিনির ‘পাইসান’ বলে ছবিটিও। এই দুটো ছবিই তপন সিনহার মনকে ছবির দিকে আরেকটু ঠেলে দিয়েছিল।
দেশে ফিরে এসে তিনি সাউন্ডের কাজ শুরু করেছিলেন বাণী দত্তর সহকারী হিসেবে। তখনকার দিনে যাঁরা সাউন্ডের কাজ করতেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন অত্যন্ত শিক্ষিত। অনেকেই তাঁরা বিজ্ঞানের ছাত্র, এমনকী, গোল্ড মেডেলিস্টও। তপনদা তাঁদের কাছেই কাজ শিখেছিলেন। কাজ তো শিখলেন, এদিকে নিজেরও ছবি করার ইচ্ছে। কিছু কিছু স্ক্রিপ্টও লেখেন তিনি। ওঁর গদ্য চমৎকার, ‘মনে পড়ে’ বইতে ছেলেবেলার কথা বলেছেন তুলনাহীন এক গদ্যভঙ্গিতে।
তপনদার প্রথম ছবি ‘অঙ্কুশ’, সে কথা বলেছি আগেই। সেই প্রথম আউটডোরে গিয়ে, অদ্ভুত বিস্ময় নিয়ে একটা ছবি বানানোর চেষ্টা করলেন তিনি। তপনদার ক্যামেরাম্যান অনিল বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছবি বানানোর টাকাপয়সা জোগাড় করেন। শুটিং হয়েছিল ঝাড়গ্রামে। আটডোরের জন্য যে-ক্যামেরা কেউ ব্যবহার করত না, সেই ধরনের ক্যামেরাই নিয়ে গিয়েছিলেন অনিল বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিক থেকে দেখতে গেলে, স্টুডিও বাইরে বেরিয়ে ছবি করা তিনি শুরু করেন। ছবির বিষয়বস্তুটাও খুব অদ্ভুত! একজন তার পৈতৃক সম্পত্তির পুরনো ঐতিহ্যময় যত জিনিস বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সে তার হাতিটাকে বিক্রি করতে পারছে না। কিন্তু ছবিটা ’৫৪ সালে মুক্তি পাওয়ার পর একদিনও চলেনি। যাকে বলে, ‘ডাহা ফ্লপ’। এই সময়টায় তপন সিনহা ভাবতে শুরু করেন, কীভাবে দর্শককে হলমুখী করা যায়।
ধীরে ধীরে তপনদার ছবির মধ্যে ঢুকে পড়েন উত্তমকুমার-সাবিত্রী– ‘উপহার’ (১৯৫৫) বানালেন। ‘টনসিল’ (১৯৫৬)-এর মতো আদ্যন্ত মজার ছবি খুব হিট করে! এরপরে ওঁর জনপ্রিয়তা শীর্ষে ওঠে ‘কাবুলিওয়ালা’ (১৯৫৭) দিয়ে। রবীন্দ্রনাথের গল্প নিয়ে ছবি করায় যদিও অনেকের আপত্তি ছিল। আসলে ওঁর আগে রবীন্দ্রনাথের গল্প নিয়ে যে-সমস্ত ছবি হয়েছিল, তা বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়নি। কাবুলিওয়ালা ‘হিট’ করায় রিঙ্কু ঠাকুর এবং ছবি বিশ্বাসকে লোকে বুকে টেনে নেয়। তপনদা চমৎকার ন্যারেটিভ তৈরি করেছিলেন এই ছবিটার। পরপরই শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প নিয়ে সিনেমা করলেন ‘ঝিন্দের বন্দী’ (১৯৬১) । ফিরে এলেন রবীন্দ্রনাথের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এ, মুক্তি পেল ১৯৬০-এ। মাঝে করলেন ‘কালামাটি’র (১৯৫৮) মতো ছবি যখন বাঙালি দর্শক মজে আছে রোমান্টিক প্রেমের গল্পে, জমিদার বাড়ির গল্পে। ‘কালামাটি’ কয়লাখনি অঞ্চলের জীবন নিয়ে। আবার প্রেমের ছবিও কি করেননি? ‘ক্ষণিকের অতিথি’ (১৯৫৯)! আমার অত্যন্ত প্রিয়। ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’র (১৯৬২) সময় তারাশঙ্কর এত উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন যে তপন সিনহার জন্য সমস্ত গান লিখে দিয়েছিলেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সুর দিয়েছিলেন তাতে। পরবর্তীকালে দিব্যেন্দু পালিতের গল্প নিয়েও ছবি করেছেন। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলোকেই তিনি চলচ্চিত্রায়ণ করেছিলেন। এবং বুঝেছিলেন, মানুষের তা ভালো লাগছে। নিজেরও ভালো লাগছে। হাঁসুলী বাঁকের প্রথম দৃশ্যটা, পালকি আসার দৃশ্য, আমি ভুলতে পারব না কোনও দিন! বিমলবাবু, ক্যামেরাম্যান, লম্বা একটা ট্রলি চেপে ওই শট নিয়েছিলেন। এখনও ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর আউটডোর দেখলে অবাক হয়ে যাই, সেসময় কী করে ব্যাপারটা সম্ভব করেছিলেন তপন সিনহা! ‘জতুগৃহ’ (১৯৬৪) করলেন সুবোধ ঘোষের গল্প নিয়ে, প্রোডাকশন ছিল উত্তমকুমারের। এরকম কত বিচিত্র বিষয় ও ছবি বাংলায় এনে ফেলেছিলেন তপন সিনহা।
‘হাটেবাজারে’ (১৯৬৭) সিনেমার কথা আলাদা করে বলতে হয়। কারণ ‘হাটেবাজারে’ কিন্তু কোনও গল্প নয়, একটা বিবরণ। হাটবাজারের নানা দেখার বিবরণী, যেমন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘বাজার সফর’। বনফুল জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হাটেবাজারে থেকে তুমি কী করে ছবি করবে?’ তপন সিনহা আত্মবিশ্বাসী গলায় বলেছিলেন, ‘আমি ঠিক করব।’ করেছিলেন এবং চমৎকার করেছিলেন। ফিচার থেকে তৈরি হওয়া ছবি। গানগুলোও হয়েছিল চমৎকার, সংগীত রচনা তপনদারই।
মনে করুন, ‘সাগিনা মাহাতো’র (১৯৭০) কথা। সে গল্পে একটা রাজনৈতিক গন্ধ আমরা পাই। ট্রেড উইনিয়নের লিডারকে কোরাপ্ট করে দেওয়া হয় কীভাবে, দেখি আমরা। আমাদের যৌবনের যে উত্তাল কলকাতা, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, নকশালবাড়ির উত্থান– এই পর্বে উনি ‘আপনজন’ (১৯৬৮) , ‘এখনই’ (১৯৭১), ‘আতঙ্ক’ (১৯৮৬) বানিয়েছিলেন। সাহিত্য নিয়ে যেমন কাজ করেছেন, তেমন নিজের লেখা নিয়েও বানিয়েছেন ‘গল্প হলেও সত্যি’ (১৯৬৬)। বাংলা ছবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ মিউজিক্যাল ছবি ‘হারমোনিয়াম’ (১৯৭৬), ছবির ফর্মটাই কী ইন্টারেস্টিং! ওই সময় তপনদা নিজের ছবির মিউজিক ও সংগীতরচনাও করছেন। সুরারোপ এবং আবহসংগীতও। ‘অতিথি’ (১৯৬৫) ছবির সময়কাল থেকেই এ ব্যাপারটা তিনি করতে থাকেন। এর আগে, রবিশঙ্কর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আলি আকবর খাঁ-কে দিয়ে কাজ করিয়েছেন। ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এ আলি আকবর খাঁ এই ছবির সংগীত করেন। ওস্তাদ আমীর খাঁ গান গেয়েছিলেন, ‘ক্যায়সে ক্যাটেগা জিন্দেগি’ আর ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’ মিলিয়ে।
সেসময়কার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চমৎকারভাবে ব্যবহার করেছিলেন। বিশেষত অভিনেত্রীদের। সমসময় যে বড় মুখদের নিয়েই কাজ করেছেন, এমন না। যেমন সুচিত্রা সেন নিয়ে কাজ করেননি। তখন তৃতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, এখন যেটা গোয়াতে হয়, সেখানে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন যাঁরা, প্রত্যেকেই অভিনেত্রী। যেমন ছায়াদেবী, রেণুকাদেবী, রুমাদি, শর্মিলা, আরতিদি– প্রত্যেক অভিনেত্রীর ছবিই একসঙ্গে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিল। অভিনয় এবং চরিত্রচিত্রণ ছিল এইরকমই।
তপনদার ছবি নানা সময় বিদেশে গিয়েছে। কিন্তু ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালের মোহ খুব একটা ছিল না তপনদার। মিডিয়া নিয়েও মাতামাতি ছিল না। আমার মনে হয়, যেভাবে চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখকরা সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক– এঁদের ত্রয়ী হিসেবে একটা বন্ধনী করে দিয়েছে বাংলা ছবির, তা একেবারেই ঠিক কাজ নয়। প্রত্যেকেরই শৈলী তো আলাদা। নিজের রুচিকে অক্ষুণ্ণ রেখে তপন সিনহা কাজ করে চলেছিলেন।
‘মূল্যায়ন’ শব্দটা আসলে খুবই আপেক্ষিক। কীসের মূল্যায়ন? মনে রাখা উচিত, কত ধরনের ছবি তপনদা তৈরি করেছেন, কী কী সিনেম্যাটিক এক্সপেরিমেন্ট করেছেন, ফর্মেরও এবং দুর্দান্ত অভিনয়ও করিয়েছেন। এই শতবর্ষে যাতে ওঁর ছবিগুলো ভালোভাবে রেস্টোর্ড হয়, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। এখন ছবি রি-রিলিজ হচ্ছে। ক’দিন আগেই যেমন সত্যজিতের ‘মহানগর’ দেখানো হল, তেমনই। পুরনো এই ছবিগুলো দেখানো হলে একটা ধারাবাহিকতা তৈরি হবে। এখন সিনেমার চর্চা কমে গিয়েছে নানা কারণে। প্রযুক্তি একটা কারণ। সিনেমা দেখাটাও বদলে গিয়েছে। কিন্তু বড়পর্দার জন্য সিনেমা তৈরি হয়ে চলেছিল। সেই ছবিগুলো যদি রি-রিলিজ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে তপন সিনহার ছবির বিষয়বৈচিত্রকে। কতটা আবেগ ছিল, যুক্তি-বুদ্ধি ছিল একজন এই মাপের সংবেদনশীল পরিচালকের।
………………………………………………
আরও পড়ুন পৃথু হালদার-এর লেখা: তেলুগু সংস্কৃতির ছোঁয়ায় শরৎচন্দ্র হয়ে উঠেছিলেন শরথবাবু
………………………………………………
তপনদার অনেক সুখস্মৃতি রয়ে গিয়েছে। তপনদার শতবর্ষে, এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে আমরা তপন সিনহা রেট্রো করব। চেষ্টা করছি, এনএফআই থেকে রেস্টোর্ড প্রিন্ট আনানোর। তাছাড়া, একটা আলোচনাসভাও।
শেষ করি তপন সিনহাকে নিয়ে একটা ব্যক্তিগত কথা দিয়ে। আমার ছবি ‘অন্তর্জলী যাত্রা’র স্পেশাল স্ক্রিনিং দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। আমাকে তলব করেছিলেন বাড়িতে। সেদিন অনেক প্রশ্ন করেছিলেন। যেন এক কৌতূহলী ছাত্রই জিজ্ঞেস করছে। ওঁর এই অপূর্ব বিনয়ে আমি যথেচ্ছ লজ্জায় পড়েছিলাম উত্তর দিতে গিয়ে। পরে সেন্টার অন্তর্জলীকে ছাড়পত্র দিচ্ছিল না যখন তখন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, এম জে আকবরের সঙ্গে তপনদাও প্রতিবাদ করেছিলেন। পরে ছবি মুক্তির ছাড়পত্র মেলে। তারিখও ঠিক হয়। জানতে পারি, ‘উত্তরা-পূরবী-উজ্জ্বলা’ ও নানা হল-এ মুক্তি পাবে। সেসময়ই তপনদার হিন্দি ছবি ‘আজ কা রবিনহুড’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তপনদা ডিস্ট্রিবিউটারকে ডেকে বললেন, ‘আমার ছবির মুক্তি পিছিয়ে দাও।’ গৌতমের এই ছবিটা ভিন্নধর্মী ছবি। এটা দর্শকদের দেখা উচিত। আমি তো এস্ট্যাবলিশড পরিচালক, আমার ছবি তো দেখবেই, আমার দর্শক তৈরি আছে। মনে রাখতে হবে, দর্শক যেন ভাগাভাগি না হয়। একজন তরুণ পরিচালকের প্রতি এক প্রতিষ্ঠিত পরিচালকের এই সংবেদনশীলতা আজকালকার দিনে হয়তো অকল্পনীয়!
.………………………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………………………..