১১ ডিসেম্বর, ১৯৬১, প্রয়াত হয়েছিলেন তুলসী চক্রবর্তী। আমরা যাকে বলি ‘হওয়া’, সেটা সেইভাবে তুলসী চক্রবর্তীর হল না। মানে, নামডাক, পয়সা, মর্যাদা– সেসব কিছুই হয়নি। তা নইলে ১৯৫৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পরশ পাথর’-এর নায়ক ১৯৬১ সালে হতদরিদ্র অবস্থায় মারা যান! তারপর ৩৫ বছর তাঁর স্ত্রীকে প্রায় ভিক্ষুকের জীবন যাপন করতে হয়! এর কারণ হিসেবে বলা হয় যে, তুলসীবাবু নিজেকে খুব শস্তায় বিক্রি করেছিলেন। আশৈশব দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে চলার ফলে তিনি সব সময় ভয় পেতেন যে, বেশি পয়সা চাইলে প্রোডিউসাররা ফিরে যাবে। সারা জীবন প্রায় কোনও চরিত্র রিফিউজ করেননি। ফলে গাদাগাদা হাজিবাজি চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছেন, দর বা সম্মান বাড়েনি।
আজকের দিনে এমন একজন বাঙালি অভিনেতাকে নিয়ে লেখা খুব মুশকিল, যিনি ১৯৬১ সালেই চলে গিয়েছেন। তিনি তো উত্তমকুমার নন যে, ১৯৮০ সালে মৃত্যুর ৪৪ বছর পরেও বাংলার এক নম্বর নায়ক হয়ে থেকে যাবেন। ক’জন জানবে যে, ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির পর্দায় অভিনেতাদের নামের ঘোযণায় উত্তমকুমারের আগে এবং বেশি বড় হরফে তুলসী চক্রবর্তীর নাম এসেছিল। কিন্তু তারপরে একমাত্র ‘পরশ পাথর’ ছাড়া তাঁকে মাথায় রেখে বাংলা চলচ্চিত্রে চরিত্র ভাবা হল কই? অথচ সমসাময়িকদের শ্রদ্ধা এমনকী, সমীহ তিনি আদায় করে নিয়েছিলেন। শোনা যায়, যে, ছবি বিশ্বাস তেমনভাবে স্ক্রিপ্ট না পড়ে, সংলাপ না মুখস্থ করে, তুমুল আত্মবিশ্বাস নিয়ে অভিনয় করে যেতেন, তিনিও নাকি তুলসীবাবুর সঙ্গে সিন থাকলে বলতেন, ‘ওহে ডায়লগগুলো একটু ঝালিয়ে দাও তো, তুলসীর সঙ্গে সিন রয়েছে।’ উত্তমকুমার নিজে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ প্রসঙ্গে বলেছেন বলে শুনেছি, আমি যে নায়ক, আমি তো পাত্তাই পাইনি। তুলসীদা তো ফাটিয়ে বেরিয়ে গেলেন! সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, এই পোড়ার দেশে না জন্মালে তুলসীবাবু অস্কার পেতেন।
কাকার হাত ধরে সেই কোন ছোটবেলায় নাটকের জগতে এসেছিলেন তুলসীবাবু। বোস সার্কাসের সঙ্গে বর্মা চলে গিয়েছিলেন, কলকাতায় পাইস হোটেলে বেয়ারার কাজ করেছেন, গান গাইতে, নাচতে শিখেছিলেন। নাটক হয়ে সিনেমায় এসেছিলেন। যদি গুগল করেন দেখবেন তিন, চার, পাঁচের দশক জুড়ে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। উত্তমকুমার নাকি প্রোডিউসারদের বলতেন, ‘আমাকে নিলে প্লিজ তুলসীদাকেও নেবেন।’ সুচিত্রা বলেছিলেন, তাঁর প্রিয় অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তী। ওই সময়ের সুচিত্রা-উত্তমের বেশ কিছু ছবিতে ওঁদের সঙ্গে সমান তালে চুটিয়ে অভিনয় করেছিলেন তুলসী। কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি পাশে সরে যান।
আমরা যাকে বলি ‘হওয়া’, সেটা সেইভাবে তুলসী চক্রবর্তীর হল না। মানে, নামডাক, পয়সা, মর্যাদা– সেসব কিছুই হয়নি। তা নইলে ১৯৫৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পরশ পাথর’-এর নায়ক ১৯৬১ সালে হতদরিদ্র অবস্থায় মারা যান! তারপর ৩৫ বছর তাঁর স্ত্রীকে প্রায় ভিক্ষুকের জীবন যাপন করতে হয়! এর কারণ হিসেবে বলা হয় যে, তুলসীবাবু নিজেকে খুব শস্তায় বিক্রি করেছিলেন। আশৈশব দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে চলার ফলে তিনি সব সময় ভয় পেতেন যে, বেশি পয়সা চাইলে প্রোডিউসাররা ফিরে যাবে। সারা জীবন প্রায় কোনও চরিত্র রিফিউজ করেননি। ফলে গাদাগাদা হাজিবাজি চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছেন, দর বা সম্মান বাড়েনি।
আজ তুলসী চক্রবর্তী চলে যাওয়ার ছয়-সাত দশক বাদে আমরা কীভাবে তাঁর কাজ নিয়ে ভাবব বা ভাবছি? প্রথমেই বলে রাখা ভালো, ভাবছি না। তুলসী চক্রবর্তীকে মনে রেখেছে– এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি হবে না। মূলত ‘পথের পাঁচালী’, ‘পরশ পাথর’ আর কিছুটা ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর দৌলতে কিছু কমবয়সিরা হয়তো পরবর্তী কালে তাঁর অভিনয় দেখেছে। কিন্তু তেমন অনুরণন সৃষ্টি হয়েছে কি? আমার মনে হয় না। তার কারণ কী? যত দূর মনে হয়, তার কারণ হল তুলসী চক্রবর্তী যে অভিনয় করতেন সেটা ভালো লাগতে হলে সেই সময়ের সমাজটাকে খানিকটা চিনতে হয়, তাকে বুঝতে হয়। এটা কেবল তুলসীবাবু সম্পর্কেই মনে হয় না, রাজলক্ষ্মী দেবী, মলিনা দেবী, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণকুমার– এরকম কিছু অভিনেতার অভিনয় নিয়েও মনে হয়। উত্তম অকল্পনীয় অভিনেতা হলেও তাঁর ফ্রেমিংটা পুরোটাই নায়ক হিসেবে হত বলে তাঁকে ঠিক সাধারণ মানুযের প্রতিনিধি বলে চেনা যেত না। যাঁদের কথা বলছি তাঁদের চরিত্রের রূপায়ণের ভিত সেই সময়ের সমাজের নানা চরিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তার মানে কী?
তুলসী চক্রবর্তী ছিলেন প্রথমে চরিত্রাভিনেতা। তারপর আস্তে আস্তে পরিচালকরা তাঁকে ‘কমেডিয়ান’ বলে তৈরি ও বিক্রি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমাদের জীবনে নিছক কমেডিয়ান বলে কিছু হয় না। হাসিকান্না জীবনের বুনটেই দক্ষ টানে ফুটে ওঠা। তুলসী চক্রবর্তীর ‘পথের পাঁচালী’র দোকানি-পণ্ডিতমশাই আর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর বাড়িওলা ও তাঁর গিন্নির ‘অভিসারের’ সিন দুটো যদি মনে থাকে, তবে বুঝতে সুবিধে হবে যে, আমি কী বলতে চাইছি। ‘পথের পাঁচালী’তে দোকান চালাতে চালাতে তিনি পড়ানোও চালিয়ে যাচ্ছেন। ওজন মাপতে মাপতে বিদ্যাসাগরের ‘এই সেই জনস্থান-মধ্যবর্তী উষ্ণ প্রস্রবণগিরি’ বলে যাচ্ছেন…। তার মধ্যেই আবার ছাত্রদের বকছেন। অভিনয় শিক্ষার ক্লাসে নিশ্চয়ই তাঁর টাইমিং-এর অতুলনীয় সেন্স, ডায়লগ আর অ্যাকশনের সিমলেস চলন পড়ানো হয়, তবে শিখতে পারা খুব সহজ নয়। বলা হয় যে, তাঁর পরবর্তী কমিক অভিনেতারা তাঁকে ‘গুরু’ মানলেও তাঁর কপি করার চেষ্টা করেননি, কারণ সেটা তাঁরা সম্ভব বলে মনে করেননি।
অন্যটা হল ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর সেই সিনটা যেখান তাঁর স্ত্রী রাজলক্ষ্মী দেবী তাঁর জন্য সেজেগুজে আবেদনময়ী হয়ে অপেক্ষা করছেন, আর তিনি কিছুটা পুলকিত, কিছুটা বিস্মিত, কিছুটা বিপন্নও বটে। এর মধ্যে ছানাপোনা বা লেন্ডিগেন্ডিরা ঢুকে পড়ছে, স্ত্রী আবার সপ্রতিভ আর সহজভাবে তাদের বিদায় করে মিষ্টান্নের থালা এগিয়ে দিচ্ছেন, তখন তুলসীবাবুর চোখে লোভ, আনন্দ, বিস্ময়, অবিশ্বাস্য, সৌভাগ্য আর ইন্দ্রিয়ের লাজুক-আহ্লাদের কী খেলা! কমিক তো বটেই কিন্তু যেটা বলতে চাইছি সেটা হল, একটা নানা বুনটের জীবন ছেড়ে এসে কৌতুক ‘নকশা’ নয়, নানা টানাপোড়েনের জীবনের নকশি কাঁথার মাঠ।
………………………………………………..
সাতের দশকে বাংলার জীবন হিংস্র রাজনীতি, পুলিশি অত্যাচার, শিক্ষার বিপর্যয়, শিল্পের বিদায়– এইসব নানা কারণে অনেকটা বদলে যায়। বাংলা সমাজের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা প্রসন্নতা অনেক কমে যায়, পরিবেশ বদলে যায়। তাই সিনেমায় হাসি কল্পনায় উঠে আসে এক ধরনের কৃত্রিম কমেডিয়ান চরিত্র। যার জন্য চিন্ময় রায়, অনুপকুমার, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এমনকী, রবি ঘোষের মতো অভিনেতাকেও জোর করে লোক হাসানোর চরিত্রে অভিনয় করতে হয়, বাস্তবতায় যেই চরিত্রগুলো কোনও দিন ছিল না।
………………………………………………..
এই যে কমেডি, এটা তুলসীবাবু যে পারতেন, (নিজের স্টাইলে ক্ষমতা অনুযায়ী ভানু পারতেন, রবি ঘোষ পারতেন) এবং তখন দর্শকরা এই মজাটা বুঝতেন, তার কারণ তখনকার জীবনে চারপাশে এই রকম অনেক মানুষ থাকতেন। মানুষ সেই মানুষদের চিনতেন, জানতেন। তাই তখনও কমেডি মানে এই নয় যে, একজন অভিনেতা সিনে আসা মাত্র দর্শক ভাববে এই তো হাসাতে এল। চরিত্রটা একমাত্রিক ভাঁড়ামোর নয়। কিছু চরিত্রের মধ্যেই কমিক ভাবটা মিশে থাকত আর সেই কমেডির একটা গভীরতা ছিল, আর পাঁচটা ইমোশন থেকে, এমনকী, চোখের জল থেকেও সেটা খুব দূরে থাকত না। যেমন এই পাঠশালার পণ্ডিত আর বাড়িওয়ালার দৃশ্যগুলোতে কিন্তু জীবনের লড়াই, গ্রামের ভাষা আর জীবনের সঙ্গে ধ্রুপদী সাহিত্যের যোগাযোগহীনতা, আবার মধ্যবয়স্ক মধ্যবিত্তের জীবনে ভালোবাসা বা যৌনতার প্রকাশ নিয়ে অস্বাচ্ছন্দ্য কীরকম হাসির মধ্যে চোখের জল নিয়ে আসে, মেলার স্টলের বেঁকা আয়নায় নিজেদের মুখ তুলে ধরে।
কিন্তু এই জীবনটা হারিয়ে গেল। সাতের দশকে বাংলার জীবন হিংস্র রাজনীতি, পুলিশি অত্যাচার, শিক্ষার বিপর্যয়, শিল্পের বিদায়– এইসব নানা কারণে অনেকটা বদলে যায়। বাংলা সমাজের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা প্রসন্নতা অনেক কমে যায়, পরিবেশ বদলে যায়। তাই সিনেমায় হাসি কল্পনায় উঠে আসে এক ধরনের কৃত্রিম কমেডিয়ান চরিত্র। যার জন্য চিন্ময় রায়, অনুপকুমার, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এমনকী, রবি ঘোষের মতো অভিনেতাকেও জোর করে লোক হাসানোর চরিত্রে অভিনয় করতে হয়, বাস্তবতায় যেই চরিত্রগুলো কোনও দিন ছিল না।
তারপর আটের দশক থেকে আবার দুটো ঘটনা শুরু হয়, বেড়ে ওঠে। ইংলিশ মিডিয়াম ইশকুল আর প্রোমোটারি। ফলে কলকাতা এবং চারপাশের গরিব এলাকাতেও বাচ্চারা বাংলা ছাড়তে বাধ্য হয়। স্কুলে বাংলা বললে বকা খায়, বিকট দোআঁশলা ভাষার চলন শুরু হয়। আর মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরাও নিজেদের জমিতে প্রোমোটার এনে জি প্লাস থ্রি বা ফোর বাড়িতে থাকতে শুরু করে। মাটির স্তরে বাস করা পাড়ার গরিব কমিউনিটি থেকে ওপরে উঠে আসে। আক্ষরিক অর্থেই ‘আপওয়ার্ডলি মোবাইল’ যাকে বলে। আকাশে ছড়ানো মেঘের কাছাকাছি দেখা যায়, যাদের বাড়ি সেই বাপ মা’রা মাটির স্তরের সমাজকে ভালো মনে করেন না। বাচ্চাদের পাহারা দিয়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, খেলা বন্ধ করে ক্রিকেট কোচিংয়ে নেওয়া শুরু হয়। মাঠ, পুকুর হারিয়ে যায়। আসে টিভি আর তারপর মোবাইল। বাচ্চারা ঘরবন্দি হয়ে যায়, বাইরেটা ভয়ের হয়ে ওঠে। গরিব লোক মানেই সম্ভাব্য ছেলেধরা। ছয়ের দশকে আমরা যেসব ধুনুরি, বাঁদরওয়ালা, ফিরিওয়ালা, বাড়ির বা পাড়ায় কাজ করা রাজমিস্ত্রি, দর্জি, নাপিত, দোকানদারদের সঙ্গে গল্প করে, গল্প শুনে বড় হয়েছি, তাদের মতো চরিত্রদের সঙ্গে, এমনকী, বাড়ির কাজের মাসির সঙ্গেও বেশি মেশা বারণ হয়ে যায়। কাজের মাসির বা পাড়ার দোকানদারের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া তো নৈব নৈব চ। ফলে হারিয়ে যায় কালো মোটা ভুঁড়িওয়ালা বাড়িওয়ালার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক বা তার জীবনে কোনও উৎসাহ। তার নাম এই বলে খ্যাত হয় যে সে ‘আমাদের লোক নয়’। এমনকী, আপদ হিসেবে চিহ্নিত এইসব লোকের বউদের দেওয়া নাড়ুও খাওয়া ‘আনহাইজিনিক’ বলে নিষেধ হয়ে যায়। যদিও বেশিরভাগ মা-বাপ ‘হাইজিন’ বানান জানে না। বাচ্চাদের পাড়ার দোকানে যাওয়া নিষেধ হয়, কারণ সেটা ‘সেফ’ নয়! আর গল্প বলা বা লবেনচুষ দেওয়া দোকানদার মানে তো নিশ্চয়ই গভীরভাবে বিপজ্জনক। ফলে জীবনে চারদিক থেকে ঢুকে পড়া চরিত্ররা, তাদের অদ্ভুত সব গল্প, মজা হারিয়ে যায়। মধ্যবিত্তের কল্পনা দীন হয়ে যায়। এই ফ্ল্যাটবন্দি জীবনে থেকে যায় কেবল শেয়ার বাজার, ইএমআই, স্কুল বা অফিসের পলিটিক্স আর গোপন পরকীয়ার গল্প, যেগুলো বাচ্চাদের বলা হয় না, কিন্তু তারা জানে। বাচ্চারা সিলেবাস নিয়ে আড্ডা মারে! ‘পরশ পাথর’-এর সেই জটিল চাওয়া-পাওয়ার গল্প এই যুগে হয়ে ওঠে হরশাদ মেহতার ‘স্ক্যাম ১৯৯২’! কোথায় ভূমিকা পাবেন তুলসী চক্রবর্তী?
সেই বাচ্চাদের এখন চুয়াল্লিশ বছর বয়স, তাদের নাতিসম্ভব জীবনে তাই হাসি মানে মিম আর রিল।
আমাদের ক্ষমা করবেন তুলসী চক্রবর্তী। আমরা আপনাকে অস্কার এনে দিতে পারিনি। মনেও রাখিনি। আজি দুর্দিনে আপনাকেও আমরা ফিরানু ব্যর্থ নমস্কারে। (রবীন্দ্রনাথকে কোটেশন মার্ক দিলাম না, কারণ, তাহলে আমাদের অনেকের গোটা জীবনটাকেই দিতে হয়!)
………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
………………………………….