Robbar

বিজয়ের পরও বিজয় অর্জন করতে হয়, যে জয় সম্প্রদায়ের চিহ্নহীন এক দৃপ্ত সংস্কৃতির

Published by: Robbar Digital
  • Posted:December 16, 2024 8:46 pm
  • Updated:December 16, 2024 8:46 pm  

২০২৪-এর তথাকথিত আগস্ট বিপ্লব সেই বিজয় দিবসকে এক ভয়ংকর প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ‘বিজয় দিবস’ উদ্‌যাপনে বাংলাদেশের বাঙালি আজ দ্বিধাবিভক্ত, এক দল, এবং আপাতদূষ্টিতে তারাই সম্ভবত সংখ্যাগরিষ্ঠ, শুধু যে এই উদ্‌যাপন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে তাই নয়, তারা একে আক্রমণ করছে, ইতিহাসের চাকা পুরো উলটোদিকে ঘুরিয়ে ‘বিজয়’কে পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত করছে, বিজয়ের সব চিহ্নকে, তার নেতা ও নেতাদের, এমনকী জীবন-উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্ত কীর্তিকে ধ্বংস করার, স্মৃতিকে মুছে ফেলার খেলায় মেতেছে। এখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া নাকি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, মুক্তিযুদ্ধ নাকি আসলে স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ বা ভারতের দাসত্ব প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ।

পবিত্র সরকার

বিজয় একদিনের ঘটনা নয়। বিজয় মানে যুদ্ধে বিজয়। সব বিজয়ের আগে একটা যুদ্ধ থাকে, তার নানা রকমের চেহারা।  প্রতিবাদ, মিছিল, দমনপীড়ন, বঞ্চনা, লাঞ্ছনার বিরুদ্ধের পথে প্রতিরোধ, শাহাদাত, নির্বাচনি যুদ্ধ, পথবিদ্রোহ– চলতে চলতে এক সময় অস্ত্রশস্ত্র গুলিগোলা ট্যাঙ্ক জাহাজ নিয়ে যুদ্ধ– কতদিন চলবে তার ঠিক নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ মরবে, মানুষের সম্পত্তি ধ্বংস হবে, পশুপাখির জীবন বিপন্ন হবে, অত্যাচার হবে মানুষের ওপর, প্রকৃতি-প্রতিবেশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। তার পরে তা একদিন শেষ হবে। বিজয় আসে, কখনও সাময়িক, কখনও চিরকালীন। দেশ স্বাধীন হবে, নতুন দেশের জন্ম হবে। ভূমানচিত্র বদলে যাবে।

মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও কথাসাহিত্য
নতুন বাংলাদেশের আহ্ববান

যেমন হয়েছিল ৫৩ বছর আগে, বাংলাদেশের। এই যুদ্ধটাও ছিল অন্যরকম। অন্যান্য বঞ্চনা নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু পুব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী নাগরিকদের কাছে যে বঞ্চনা সবচেয়ে বড় হয়ে বেজেছিল, তা হল তার ভাষার প্রতি বঞ্চনা আর অপমান। তা যেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে উঠেছিল। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলার দাবি অগ্রাহ্য করে দর্পী শাসক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে, ঢাকার রাজপথে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহিদদের হত্যা ঘটে। সেই যুদ্ধ এক সময় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেহারা নেয়, স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভব ঘটে। এ ইতিহাস সকলের জানা। এ ইতিহাসও জানা যে, তখন পৃথিবীর পরিস্থিতি এই নতুন রাষ্ট্রের প্রতি খুব অনুকূল ছিল না। প্রাক্তন সোভিয়ের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের তাবৎ মহাশক্তিরা, এমনকী চিনও, বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে প্রথম দিকে খুব প্রীতির চোখে দেখেনি, তা ইতিহাসে নথিবদ্ধ আছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ সচিব কিসিঞ্জার তো বলেই দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশ একটা ‘ফুটো ভিক্ষের ঝুলি’ (International Basket Case) হতে চলেছে, আর তার প্রেসিডেন্ট বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবহর মোতায়েন করে রেখেছিলেন, বাংলাদেশ আর তার বন্ধু ভারতকে ভয় দেখানোর জন্য।

আগস্ট মাস ১৯৭১ , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিবস ভিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ - History GLive [ ইতিহাস জিলাইভ ] truth alone triumphs
আহ্বান, শোনো আহ্বান
কিছুতেই কিছু হয়নি। জনগণমনঅধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে (যুদ্ধের সময় তিনি দূর পাকিস্তানের জেলে বন্দি, তবু যেন তাঁর অদৃশ্য সেনাপতিত্ব দুর্জয় হয়ে উঠেছিল সেই যুদ্ধে) বিজয় ছিনিয়ে নিল বাংলাদেশের অকুতোভয় বাঙালিরা, কাপুরুষতার কিংবদন্তিকে চিরকালের মতো কবরে পুঁতে দিয়ে।

২.

এই বিজয় মানুষকে অনেক কিছু দেয়, যেমন দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে। দেয় অহংকার, দেয় আত্মবিশ্বাস, দেয় নতুন এক আত্মপরিচয়, স্বাধীনতার আনন্দময় আর উত্তেজক স্বাদ। নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা, উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য নতুন দিগন্ত। কিসিঞ্জারের কথা মেলেনি, বাংলাদেশের মানুষ তাঁর ওই দম্ভোক্তির সমুচিত জবাব দিয়েছে। এককালের অবিশ্বাসীরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, কারণ শেখ মুজিবের ওই সংক্ষিপ্ত নেতৃত্বকালের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রায় সারা পৃথিবীর সম্মানিত স্বীকৃতি পেয়েছে। ছিল দুর্যোগ, ছিল বন্যা, ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও খাদ্য সংকট, তা পার হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। জাতিসংঘে ১৯৭৪ সালে সম্ভবত প্রথম বাংলাভাষা উচ্চারিত হল, বাংলাদেশ পা দিল প্রগতির এক তুমুল স্বপ্নের পথে।

বীর মুক্তিবাহিনীর শত্রুর বিরুদ্ধে অবস্থান: ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হেমায়েতউদ্দীন একটি গোপন ক্যাম্প থেকে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন।

কিন্তু বিদেশি রূপকথার যে উপসংহার থাকে, And they lived happily ever after— ‘তাহার পরে সকলে সুখে বসবাস করিতে লাগিল’, এমন কখনওই ঘটে না। বাংলাদেশ হোক– এটা যেমন বাংলাদেশেই অনেকে চায়নি, তেমনই বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলবে– সে সম্ভাবনাও অনেকের কাছে চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল। তাই উচ্চাকাঙ্ক্ষী সহচররা শত্রু হয়ে উঠল, জাতির পিতাকে তীব্র নৃশংসতায় হত্যা করা হল, বাঙালির এক অংশ বাংলার যা কিছু গৌরবময় অর্জন, তাকে ধ্বংস করার চেষ্টায় নেমে পড়ল। প্রায় দুই দশকের জন্য বাংলাদেশের শাসকেরা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়ল। শাসক আর শাসকের সমর্থক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি গণতন্ত্রকে কোণঠাসা করে রাখল বেশ কয়েক বছর।

মাত্র ১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে প্লাটুন: ১৩ নভেম্বর ১৯৭১-এ সময়ে ফরিদপুরে রাইফেল হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। ৭০ সদস্যের একটি প্লাটুন গড়া হয়েছিল সেখানে। সেই প্লাটুন দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক ও চিকিৎসা দ্রব্য সরবরাহ করত। একদম বামে থাকা ১৯ বছর বয়সি তরুণটি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ৭০ জনের প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় যে বাঙালি জেগে উঠেছিল, তাকে দমিয়ে রাখা তো অত সহজ নয়। না, আমি এমন কথা বলি না যে কোনও পর্বেই বাঙালির যে শাসক অপছন্দ সে শাসক তার বিশ্বাস, কল্পনা আর সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। পূর্ব পাকিস্তান পর্বেও মূল প্রেরণা হয়েছে তার ভাষা আন্দোলন, যার উৎস থেকে নতুন বাঙালি সাহিত্যিক ও কবিরা উঠে এসেছেন, নির্মাণ করেছেন এমন এক সাহিত্য, যা নিয়ে সমগ্র বাঙালি গর্ব করতে পারে। শিক্ষায়-গবেষণায় নতুন কীর্তি স্থাপন করেছেন কত বাঙালি গবেষক, প্রসিদ্ধ প্রবীণদের উত্তরাধিকার সমৃদ্ধ করেছেন নবীনের দল। বাঙালি চিত্রকররা দেশ-বিদেশে খ্যাতি প্রতিষ্ঠা করেছেন, বাঙালি স্থাপত্যশিল্পীরা সারা বিশ্বী সম্মান কুড়িয়েছেন।

…………………………………………………

পড়ুন অন্য লেখাও: ১৯৭১, ১৬ ডিসেম্বর, বিকেল ৪টে ১ মিনিট, রমনার মাঠ; এক ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণ চুক্তি

…………………………………………………

বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আর বাংলা অ্যাকাডেমি বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের দরজা খুলে দিয়েছেন পৃথিবীবিখ্যাত নানা গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করে, আর বাংলাদেশের বাঙালি ধর্মের বাইরে বেরিয়ে নিজের হাজার বছরের আত্মপরিচয় নির্মাণ করেছে ওই পরাধীন সময়েই, অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলোর সন্ধানে মগ্ন থেকেছেন তাঁরা। আমি জানি অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বমুখী ছিলেন। আগেকার সিলেট, চট্টগ্রাম আর নোয়াখালি থেকে প্রচুর মানুষ লন্ডনে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছেন, কখনও নাবিক হয়ে, কখনও অভিবাসনের লক্ষ্যে। তাঁরাই ছিলেন কিসিঞ্জারের ওই দম্ভপূর্ণ কথার বিরুদ্ধে নতুন দেশের গ্যারান্টি যে, এ দেশ কখনও ফুটো ভিক্ষার ঝুলি হবে না।

আর বাংলাদেশের জন্মের পর এক নতুন রেনেসাঁস বা নবজাগরণ তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশে। কর্মে ও সৃষ্টিশীলতায় বাংলাদেশের মানুষ নতুন নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে। আমাদের মতো মানুষেরা বিশেষভাবে উদ্দীপিত হয়েছিল একটি ব্যাপারে। নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে বাংলাভাষার বন্ধনসৃষ্টিতে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডাক দেওয়া হল, আর বাংলাদেশের বাঙালিরা অদ্ভুতভাবে এগিয়ে গেলেন বাংলা ভাষার জন্য ওই প্রযুক্তিকে বশ করার কাজে। প্রিয় মানুষ মোস্তাফা জব্বারের পথপ্রদর্শনকারী কাজ তো আছেই, সেই সঙ্গে ‘অভ্র’ সফ্টওয়্যার নির্মাণ বাংলা লেখার ফন্ট সকলের হাতে পৌঁছে দিলেন যাঁরা, তাঁদের কাছেও সারা পৃথিবীর বাঙালি কৃতজ্ঞ। আমার ভালো লেগেছে দেখে যে, যে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমির ‘স্বচ্ছ’ ফন্ট, যা এই ব্যক্তির প্রস্তাবে নির্মিত হয়েছিল, তাও অভ্রে প্রাপ্ত বর্ণমালার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।  আর পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশনায় তো বাংলাদেশের ‘বিজয়’ ফন্ট (সম্ভবত জব্বার ভাইয়ের করা) অহরহ ব্যবহৃত হয়ে চলেছে।

সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলনে নব্বইয়ের বছরগুলির গোড়ায় গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটল, এটা ছিল অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের পর আর একটা মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ চলে। গণতন্ত্র টালমাটাল হয়, নির্বাচনে বদল হয়। যাই হোক, এই শতাব্দীর গোড়া থেকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্রে স্থিতিশীলতা এসেছে, নানা উন্নয়নে গতিও তীব্র হয়েছে। শিক্ষায়, বিশেষত স্ত্রীশিক্ষায়, বিদ্যুৎবিতরণে, অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে যেসব অগ্রগতি ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে বাহুল্য হবে। বাংলাদেশের গর্বের পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হতে চলেছে, ঢাকা মহানগরীর পাতাল রেলও অনেকটা অগ্রসর হয়েছে। আমি ডিসেম্বরের গোড়ায় দু’-বছর পরে আবার ঢাকা যাব, নিশ্চয়ই আরও অনেক ভালো পরিবর্তন দেখব।

তবু যুদ্ধ চলে। ঘরের সঙ্গে, বাইরের সঙ্গে। ঘরের যুদ্ধের সূত্রেই হোলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা বা এবারের দুর্গাপূজায় হাঙ্গামা ঘটে। এই জন্যই বিজয়ের পর বিজয় অর্জন করতে হয়। আমি মাও জে-দং-এর সেই পরিচিত আখ্যানটা দিয়ে শেষ করি, বাংলাদেশের বিজয়কে বার বার কুর্নিশ জানিয়ে। বিপ্লবের সময় এক ক্লান্ত নাগরিক মাওকে জিজ্ঞেস করে, কমরেড, এই বিপ্লব শেষ হয়ে কখন স্বাভাবিক অবস্থা আসবে বলুন তো? মাও বললেন, সে কী কমরেড! বিপ্লবটাই তো সবচেয়ে স্বাভাবিক অবস্থা।

৩.

২০২৪-এর তথাকথিত আগস্ট বিপ্লব সেই বিজয় দিবসকে এক ভয়ংকর প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ‘বিজয় দিবস’ উদ্‌যাপনে বাংলাদেশের বাঙালি আজ দ্বিধাবিভক্ত, এক দল, এবং আপাতদূষ্টিতে তারাই সম্ভবত সংখ্যাগরিষ্ঠ, শুধু যে এই উদ্‌যাপন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে তাই নয়, তারা একে আক্রমণ করছে, ইতিহাসের চাকা পুরো উলটোদিকে ঘুরিয়ে ‘বিজয়’কে পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত করছে, বিজয়ের সব চিহ্নকে, তার নেতা ও নেতাদের, এমনকী জীবন-উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্ত কীর্তিকে ধ্বংস করার, স্মৃতিকে মুছে ফেলার খেলায় মেতেছে। এখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া নাকি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, মুক্তিযুদ্ধ নাকি আসলে স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ বা ভারতের দাসত্ব প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। ইতিহাসের এই হাস্যকর বিকৃত ব্যাখ্যান সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের এখনকার প্রভাবশালী গোষ্ঠী।

Bangladesh Protest | Many injured in violent protests against quota system  in Cumilla of Bangladesh dgtl - Anandabazar
বাংলাদেশের কোটা বিরোধী আন্দোলন

আমরা যারা বাইরে আছি, তারা এই ব্যাখ্যানে বিমূঢ় ও স্তম্ভিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের বাইরেকার বাংলাভাষীরা।  আমরা যারা বিজয় দিবসে পৃথিবীর মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে এক নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ে বিপুল অহংকার ও গৌরব বোধ করেছিলাম, মনে করেছিলাম, রাজনৈতিক সীমানা এক না হোক, সীমানাহীন এক বৃহৎ বাঙালি জাতি আছে, তার সম্প্রদায়চিহ্নহীন এক দৃপ্ত সংস্কৃতি আছে, সর্বোপরি আছে তার ভাষার এক আকাশ-উন্মথিত করা কণ্ঠস্বর, কারণ এ ভাষা রবীন্দ্রনাথের, নজরুলের, বঙ্কিমচন্দ্রের, মীর মশার্‌রফ হোসেনের এবং আরও হাজারো স্রষ্টার, তাদের গৌরববোধকে চুরমার করতে বাংলাদেশের ইতিহাস উল্টো‌ পথে হাঁটছে। বিজয়কে চিহ্নিত করছে পরাজয় হিসেবে, গৌরবকে পরিচায়িত করছে লজ্জা হিসেবে। একাত্তরে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত শব্দগুলি এখন স্থানচ্যুত হচ্ছে প্রতিশোধলাঞ্ছিত বিপ্রতিশব্দের দ্বারা।

জানি না, ইতিহাস আবার কখনও জিভ কেটে নিজেকে সংশোধন করবে কি না। তাতে কত রক্ত যে দাবি করবে কে জানে! শুধু হিন্দুর রক্ত, মুসলমানের রক্ত নয়– মানুষের রক্ত।