নাম দিয়েছিলাম ‘মেরা নাম জুলিয়েট’। প্রীতীশের খুব ভালো লেগেছিল সেটা। গান, মিউজিক এইসব নিয়ে কথাবার্তাও অনেকটা এগিয়েছিল। আমরা দিল্লি-বোম্বের অনেকগুলো মিটিং করে ফেলেছিলাম, কিন্তু কাস্ট কিছুতেই পছন্দ হল না। না আমার, না প্রীতীশের। মানে, জমছে না আর কী। আমি তখন বললাম, প্রীতীশ, মনে হচ্ছে এভাবে কাজটা করা উচিত হবে না। প্রীতীশও বললেন, রাইট! ফলে এই প্রোজেক্টটা আর হল না।
প্রীতীশের নয়, ওঁর কবিতার সঙ্গেই আমার আলাপ হয়েছিল প্রথম। ওঁর কবিতা খুবই পছন্দ আমার। প্রীতীশের কবিতার বইয়ের মজা শুধু কবিতায় নয়, ছবিতেও। একটা সময় ওঁর শুধু ‘কবি’ হিসেবেই খ্যাতি তৈরি হয়েছিল। খানিক পরে, আরও বিখ্যাত হয়ে উঠলেন একজন মারাকাটারি সম্পাদক রূপে– ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়া’র। শিল্পের ব্যাপারে অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল ছিলেন। তা শুধু ছবি নয়, সিনেমা-থিয়েটারের ব্যাপারেও। খুব কম মানুষই প্রতিভায় অবিশ্বাস্যভাবে বহুমুখী– প্রীতীশ নন্দী ছিলেন সেরকম একজন। একটা শহুরে, ঝাঁ-চকমকে ব্যাপার ছিল ওঁর। কলকাতার যে ম্যাজিক, বহু চরিত্রের কলকাতা, তা প্রীতীশ নন্দীর মধ্যে ধরা পড়ত। যা কখনও একঘেয়ে নয়, বোরিং নয়, ডায়নামিক।
অনেকটা পরে প্রীতীশ গড়ে তুলেছিলেন ‘পিএনসি’-র মতো প্রযোজনা সংস্থা। যা বদল এনে দিয়েছিল ছবি প্রযোজনায়। সুজয় ঘোষের ‘ঝংকার বিটস’ (২০০৩) সেসময়ের ছবির ঘরানাটাকে বদলে দিয়েছিল। আমার ‘বো ব্যারাকস ফরএভার’ কিনে নিয়েছিলেন তিনি, ন্যাশনাল রিলিজের জন্য। সে ছবি বাইরেও পাঠিয়েছিলেন। এবং চমৎকারভাবেই এই কাজগুলো করেন। মার্কেটিং বা প্রমোশন করা ইত্যাদি ইত্যাদি। ছবিটা হয়তো ভালো হত, কিন্তু প্রীতীশ নন্দী না থাকলে আমার ছবিটা সাকসেস পেত না। প্রীতীশ নন্দী এই ছবির মধ্যে পোটেনশিয়াল দেখতে পেয়েছিলেন। এমনকী, ‘ম্যাডলি বাঙালি’র সময়ও উনি বলেছিলেন ছবিটা ওঁকে দিতে। চেয়েছিলেন ন্যাশনালি রিলিজ করতে। অনেকটা ইংরেজি ছিল ওই ছবিতে। ফলে সমস্যা হত না বলেই মনে হয়। সে ছবি দেখবেন বলে কলকাতায় এসেওছিলেন। কিন্তু আমার প্রোডিওসার রাজি হলেন না, শেষমেশ বাংলা ছবি হিসেবেই রিলিজ হল।
পরে, প্রীতীশ নন্দী ওঁর জন্য একটা ছবি করতে বলেছিলেন। আমাকে তখন পিএনসি থেকেই নিয়ে যাওয়া হত বোম্বেতে। কথা হত, আলোচনা হত ওঁর সঙ্গে বসে। একটা স্ক্রিপ্টও লিখেছিলাম, মূলত ইংরেজিতে, আমার স্কুলকে নিয়ে, দার্জিলিং নিয়ে। নাম দিয়েছিলাম ‘মেরা নাম জুলিয়েট’। প্রীতীশের খুব ভালো লেগেছিল সেটা। গান, মিউজিক এইসব নিয়ে কথাবার্তাও অনেকটা এগিয়েছিল। আমরা দিল্লি-বোম্বের অনেকগুলো মিটিং করে ফেলেছিলাম, কিন্তু কাস্ট কিছুতেই পছন্দ হল না। না আমার, না প্রীতীশের। মানে, জমছে না আর কী। আমি তখন বললাম, প্রীতীশ, মনে হচ্ছে এভাবে কাজটা করা উচিত হবে না। প্রীতীশও বললেন, রাইট! ফলে এই প্রোজেক্টটা আর হল না। পরে যদিও অনেকবার প্রীতীশ বলেছিলেন, অন্য একটা স্ক্রিপ্ট লেখো। কিন্তু তখন আমার মাথায় কিছুই আসছিল না। ফলে একসঙ্গে কাজ করায় একরকমের ইতি।
প্রীতীশ নন্দীর মজা হল, প্রীতীশ আর কারও মতো নয়। বাজারে যে এত একরকম লোক, বাজারে একরকম যে এত জিনিস, প্রীতীশ সেসবের বাইরে। শুধু বাইরে নয়, সম্ভবত এসবের বিরুদ্ধেও। অথচ আমার সঙ্গে যখনই প্রীতীশ কথা বলেছে, বলেছে আমার মতো করেই। অ্যাংলোদের কলকাতা, দার্জিলিং, রক অ্যান্ড রোল– এইসব। আবার সুধীর মিশ্রর সঙ্গে যখন কথা বলছেন, তাঁর পরিসর নিয়েই কথা বলছেন। টিপিক্যাল পলিটিক্যাল আলোচনা হত না আমাদের।
কলকাতাকে চমৎকার ভালোবাসতেন প্রীতীশ। পুরনো কলকাতা, যাকে ওঁর ‘ক্যালকাটা’ ভাবতেই ভালো লাগত। বলা ভালো, কলকাতায় এলে ও ক্যালকাটায় থাকত। আবার মুম্বই গেলে থাকত বোম্বেতে। কোলাবায় অফিস ছিল, বাড়িও। ওই পুরনো চমৎকার জায়গাগুলোকেই কিন্তু ও আঁকড়ে রেখেছিল। প্রচুর বাঙালি বন্ধু ছিল। আসা-যাওয়াও করতেন। ওঁর স্ত্রী, মেয়েদের সঙ্গেও কথাবার্তাও হত। আশ্চর্য আন্তরিক বন্ধু। ঘরে সাঁ করে ঢুকে পড়ে একদিন দেখি, মিটিং চলছে। বললাম, বেরব। বললেন, ‘প্লিজ সিট। পরে যেও।’
প্রীতীশ, আপনি আগে চলে গেলেন। না বলেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপে সুপার হিরোদের ‘realistic action figure’ বা বাস্তবধর্মী ছোট সংস্করণ সংগ্রহের ঐতিহ্য রয়েছে। এমনকী, চিনে হলিউড সুপার হিরোদের ব্যাটারিচালিত খেলনা তৈরির একটা বিশাল শিল্প রয়েছে। এত প্রতিকূলতার মাঝেও সমানে লড়ে গিয়েছে বাংলার মৃৎশিল্পীদের তৈরি শক্তিমান পুতুল।