খেলাধুলোয় একটা ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, ‘টাইমিং’। ভারতীয় দাবার ক্ষেত্রে, এই মুহূর্তে কথাটা ষোলাআনা খাঁটে। ডি গুকেশকে দেখুন, ক্যান্ডিডেটস দাবায় চ্যাম্পিয়ন। প্রজ্ঞানন্দ, বৈশালী, বিদ্যুৎদের মতো নতুন তারকারা ভারতীয় দাবাকে অন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। ভারতীয় খেলাধুলোয় এখন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে দাবা। ফলে এটাই শুভক্ষণ, ‘দাবাড়ু’র মতো সিনেমার আত্মপ্রকাশের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘দাবাড়ু’ আসলে সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত সময়োপযোগী চলচ্চিত্র।
একটু পুরনো কথা দিয়ে শুরু করি। ‘শচীন: এ বিলিয়ন ড্রিমস’ তখন মুক্তির দোরগোড়ায়, একদিন বাদেই ছবিটা হলে রিলিজ হবে। ঠিক সেই সময় এক পরিচিত আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন– ‘শচীনের ওপর এই সিনেমাটা দেখে কী হবে?’ শচীন অচেনা-অজানা কেউ নয়, ওর জীবন ভারতবাসীর কাছে ‘ওপেন বুকে’র মতো। সেই ‘বিস্ময় বালক’ থেকে ‘ভারতীয় ক্রিকেটে ঈশ্বর’ হয়ে ওঠা, শচীনের বাল্যকাল থেকে সাফল্যের শিখরে পা রাখা, সবটাই ক্রিকেট অনুরাগীদের জানা। তাহলে নতুন কী আছে ফিল্মে? খুব ন্যায্য কথা। ভদ্রলোকের কথায় যুক্তি আছে। শচীন তেণ্ডুলকর আধুনিক ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটব্যক্তিত্ব, তাঁর বায়োপিকে নতুন কী আছে, যা আমরা, তাঁর অনুরাগীরা বিন্দুবিসর্গ জানি না?
প্রথম কথা, বায়োপিক কিংবা ডকুমেন্টারি চিত্রনাট্য সেই মাধ্যমের প্রচার ও পরিসরকে বাড়িয়ে তোলে। এখন মানুষ অনেক বেশি স্মার্টফোনকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। বইপড়ার চর্চাটাও কমে গিয়েছে। ফলে সেই শূন্যস্থানপূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সিনেমা বা বায়োপিক হওয়া খুব দরকার, যা সাধারণকে আকর্ষণ করবে। একটা আট বছরের ছেলের জন্য যে কি না এই ‘স্মার্ট’ ভারতে বেড়ে উঠছে, তার কাছে এই ফিল্ম একটা আকর্ষণীয় মাধ্যম। একটা বায়োপিক-জাতীয় সিনেমার উপস্থাপনা তার কাছে ইউটিউবের ভিডিও কিংবা দু’ছত্র লেখার চেয়ে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে।
খেলাধুলোয় একটা ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, ‘টাইমিং’। ভারতীয় দাবার ক্ষেত্রে, এই মুহূর্তে কথাটা ষোলাআনা খাঁটে। ডি গুকেশকে দেখুন, ক্যান্ডিডেটস দাবায় চ্যাম্পিয়ন। প্রজ্ঞানন্দ, বৈশালী, বিদ্যুৎদের মতো নতুন তারকারা ভারতীয় দাবাকে অন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। ভারতীয় খেলাধুলোয় এখন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে দাবা। ফলে এটাই শুভক্ষণ, ‘দাবাড়ু’র মতো সিনেমার আত্মপ্রকাশের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘দাবাড়ু’ আসলে সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত সময়োপযোগী চলচ্চিত্র। এক মধ্যবিত্ত পরিসর থেকে লড়াই করে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে ওঠার গল্প বলে ‘দাবাড়ু’। সেই সাফল্য অর্জনে সূর্যশেখর ও তাঁর পরিবারের যে আত্মত্যাগ, সেই ‘রিয়াল লাইফ’-কে রিলে ধরার চেষ্টা করেছে এই সিনেমা।
সিনেমার প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত কোনও রকম অতিরঞ্জনের পথে হাঁটেনি ‘দাবাড়ু’। সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় খেলাধুলোয় সাফল্যের দৃষ্টান্ত প্রচুর। সেই সাফল্য ও সফল ক্রীড়াবিদদের নিয়ে ‘চক দে ইন্ডিয়া’, ‘ভাগ মিলখা ভাগ’, ‘মেরি কম’-এর মতো সিনেমা হয়েছে। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয় নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘৮৩’, ‘ময়দান’-এর প্রেক্ষাপটে জায়গা করে নিয়েছে ’৬২-এর এশিয়াডে ভারতীয় ফুটবল টিমেরর সোনা জয়।
নয়ের দশকে দাবাকে ঘিরে যে ঔদাসীন্য, যে বঞ্চনা, জাতীয়তাবাদী প্রেক্ষাপটে রেখে সেই বৈষম্যকে তুলে ধরেছে ‘দাবাড়ু’। দর্শককে মনে করিয়ে দিয়েছে, দাবার ইতিহাস ও সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে। সেটা যে জুয়া খেলার সমার্থক নয়, সেই বস্তাপচা স্টিরিওটাইপ ধারণাকে ভেঙে ফেলতে সচেষ্ট হয়েছে এই বায়োপিক। সেই সব বাধা পেরিয়ে কীভাবে এক দাবাড়ু গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ করে, সেটাই ঠাঁই পেয়েছে ‘দাবাড়ু’-তে।
নিজের কথায় ফিরি। ‘স্পোর্টস ফিল্ম’ আমার বরাবরের পছন্দের। বিষয়টা স্পোর্টসকেন্দ্রিক কিংবা অনুপ্রেরণাদায়ক বলেই শুধু নয়, এই ধরনের ফিল্ম ভারতীয় জনজীবনে খেলার গুরুত্বকে বুঝতে ও অনুভব করতে সাহায্য করে। স্পোর্টস কোনও ৩০ মিনিটের বুলেটিন নয়, রাজনীতির চর্চিত বিষয় নয়। বরং সেটা ভারতের গৌরবময় পরিচয়কে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। ‘দাবাড়ু’ সেই ক্রমবর্ধমান গৌরবে মূল্যবান সংযোজন।
‘দাবাড়ু’ সকলের মনের মতো সিনেমা। এবং এমন একটা সিনেমা, যা সিনেমাহলে বসে স্বপরিবার উপভোগ করা যায়। ‘দাবাড়ু’র সর্বাত্মক সাফল্য আরও বেশি করে স্পোর্টস ফিল্ম তৈরির প্রয়াসে গতি আনবে মনে করি।