সেই ১৯৯৯ সালে যে ছ’জন সমকামী/সমপ্রেমী নারীর যূথবদ্ধতায় কলকাতায় ‘স্যাফো’-র সূত্রপাত হয়, তাদের মধ্যে দু’জন হল ‘ইনফেমাস ফাইভ’-এর মালবিকা-আকাঙ্ক্ষা, যাদের ভালো নাম মীনাক্ষী সান্যাল ও শুভাগতা ঘোষ। ওদের নিয়েই আজ লিখতে বসেছি। ‘স্যাফো’-র বাকি চারজন প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য হলেন আবির-সাগরিকা ও পিয়া-কিকি। মালবিকা-আকাঙ্ক্ষা-আবির-সাগরিকা-সুমিতা-রঞ্জিতাদের আমি কবে কোথায় প্রথম দেখেছি, সেটা আর মনে নেই। হয়তো ময়দানে যখন কলকাতা বইমেলা হত আর মালবিকারা ‘স্যাফো’ থেকে প্রকাশিত ওদের পত্রিকা ‘স্বকণ্ঠে’ হাতে হাতে ফেরি করত, সেই সময়ে।
এনিড ব্লাইটনের ‘দ্য ফেমাস ফাইভ’-কে মনে আছে? ছোটবেলায় আমার খুব প্রিয় ছিল এই সিরিজের বইগুলো। জুলিয়ান-ডিক দুই ভাই, ছোট বোন অ্যান, তাদের ‘কাজিন’ বা তুতো বোন জর্জ, যার পোশাকি নাম জর্জ্জিনা এবং জর্জের চারপেয়ে বন্ধু টিমি। এরা নানা জায়গায় যেত আর এদের নানা অ্যাডভেঞ্চার নিয়েই ‘দ্য ফেমাস ফাইভ’ সিরিজ।
এদের কথা আবার মনে পড়ল কয়েকদিন আগে, যখন হঠাৎ জানলাম আমার চেনাশোনার মধ্যেই নিজেদের ‘ইনফেমাস ফাইভ’ নাম দিয়ে আমারই কাছাকাছি বয়সের পাঁচজন মানুষ এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে জারি রেখেছে নানা জরুরি সংলাপ। সুমিতা-নীহারিকা-মালবিকা-আকাঙ্ক্ষা-রঞ্জিতা– দীর্ঘদিনের বন্ধু এরা এবং যৌনসংখ্যালঘু মানুষদের অধিকার আন্দোলনের সহযোদ্ধা। তাই গ্রিস বেড়াতে গিয়ে তারা যে স্যাফোর জন্মভূমি লেসবসে একবার মাথা ঠেকিয়ে আসবে, সেটা আর আশ্চর্য কী! এদের কামারেডারি এমনই যে তিন-চারদিন লেসবসে ছুটি কাটানোর সময় এক সান্ধ্য আড্ডায় পাঁচজনের মধ্যে থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে উঠে আসে নিজেদের স্বপ্নের সংস্থা ‘স্যাফো ফর ইকুয়ালিটি’-র পরবর্তী আবাসিক কর্মশালার সবিস্তার পরিকল্পনা। আর সেটা মনে পড়লে বেজায় খুশি হয়ে যায় এই ‘ইনফেমাস ফাইভ’।
সেই ১৯৯৯ সালে যে ছ’জন সমকামী/সমপ্রেমী নারীর যূথবদ্ধতায় কলকাতায় ‘স্যাফো’-র সূত্রপাত হয়, তাদের মধ্যে দু’জন হল ‘ইনফেমাস ফাইভ’-এর মালবিকা-আকাঙ্ক্ষা, যাদের ভালো নাম মীনাক্ষী সান্যাল ও শুভাগতা ঘোষ। ওদের নিয়েই আজ লিখতে বসেছি। ‘স্যাফো’-র বাকি চারজন প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য হলেন আবির-সাগরিকা ও পিয়া-কিকি।
মালবিকা-আকাঙ্ক্ষা-আবির-সাগরিকা-সুমিতা-রঞ্জিতাদের আমি কবে কোথায় প্রথম দেখেছি, সেটা আর মনে নেই। হয়তো ময়দানে যখন কলকাতা বইমেলা হত আর মালবিকারা ‘স্যাফো’ থেকে প্রকাশিত ওদের পত্রিকা ‘স্বকণ্ঠে’ হাতে হাতে ফেরি করত, সেই সময়ে। সেটা ২০০৪-’০৫ হতে পারে। ‘স্যাফো’ নামে কোনও সংস্থা কলকাতায় আছে সেটা বোধহয় ‘স্বকণ্ঠে’ পড়েই প্রথম জেনেছিলাম। কাগজটা হাতে নিয়ে মনে পড়েছিল বাণী রায়ের কথা, তাঁর লেখা ছোটগল্প ‘স্যাফো’-র কথা। বাণী রায়, যাঁর মা ছিলেন লেখিকা গিরিবালা দেবী। বাংলা সাহিত্যে মেয়েতে মেয়েতে প্রেম নিয়ে বাণীদির আগে কারও লেখা গল্প প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা নেই। তিনি ‘লেখিকা মন’ নামে একটি অসাধারণ গল্প সংকলন সম্পাদনা করেছিলেন, যাতে তাঁর মা-দিদিমাদের প্রজন্মের কয়েকজনের দুষ্প্রাপ্য গল্প ছিল। আর সেই কাজটা করেছিলেন সাতের দশকের গোড়ায়, যখন নারীবাদী লেখালিখি বা ইতিহাসচর্চা নিয়ে এখানে কোনও আলোচনাই ছিল না বলা যায়।
আমি বাণীদিকে চিনেছিলাম আমার বন্ধু কৌশিক রায়ের ঠাকুমা– ওর বাবা, অধ্যাপক অনিরুদ্ধ রায়ের পিসিমা হিসেবে। কৌশিক আমাকে পড়িয়েছিল ছোটদের জন্য লেখা বাণী রায়ের চমৎকার কিশোর উপন্যাস। অনেককাল আগে আমার সহপাঠী ও বন্ধু স্বাতীর সঙ্গে বাণীদির কাছে গেছিলাম তাঁর লেখালিখি নিয়ে কথা বলতে। এখন লিখতে লিখতে বাণীদির শেষ বয়সের সেই চেহারাটা মনে পড়ছে– যে চেহারায় নিঃসঙ্গতা, লেখিকা হিসেবে তাঁর প্রাপ্য সম্মান না পাওয়া আর হয়তো ইচ্ছেমতো ভালোবাসতে না পারার স্বাধীনতা ফুটে উঠত।
…………………………………..
যেমন, ‘লেসবিয়ান’ কথাটার সঙ্গে মালবিকার কীভাবে প্রথম পরিচয় হয়, সে কথা সেদিন জিজ্ঞেস করাতে ও বলল যে আটের দশকের কোনও একটা সময় খবরের কাগজে মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার ওপর কোনও লেখায় ‘লেসবিয়ান’ শব্দটা প্রথম চোখে পড়ে ওর। তখনই ওর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ও নিজে কী, যদিও তার কয়েক বছর আগে থেকেই মালবিকা বুঝতে পারছিল ওর যৌন অভিমুখ বা সেক্সুয়াল ওরিয়েনটেশন।
……………………………………
বাণীদির লেখার মধ্যে দিয়েই কলেজ-জীবনে আমি কবি স্যাফোর সঙ্গে পরিচিত হই, তাই এত কথা। নতুন ধ্যান-ধারণা, জীবন-বদলে-দেওয়া শব্দ/শব্দবন্ধ আমাদের মনে কখন, কীভাবে প্রবেশ করে– সেটা যারপরনাই আশ্চর্যের। যেমন, ‘লেসবিয়ান’ কথাটার সঙ্গে মালবিকার কীভাবে প্রথম পরিচয় হয়, সে কথা সেদিন জিজ্ঞেস করাতে ও বলল যে আটের দশকের কোনও একটা সময় খবরের কাগজে মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার ওপর কোনও লেখায় ‘লেসবিয়ান’ শব্দটা প্রথম চোখে পড়ে ওর। তখনই ওর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ও নিজে কী, যদিও তার কয়েক বছর আগে থেকেই মালবিকা বুঝতে পারছিল ওর যৌন অভিমুখ বা সেক্সুয়াল ওরিয়েনটেশন।
আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম। প্রথম যৌবনে একজন পুরুষবন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তার। কিন্তু ওদের রক্ষণশীল পরিবারে তীব্র অমত ছিল অন্য জাতে মেলামেশা করায়। সেই দিনগুলোতে আকাঙ্ক্ষা ওর নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা, মতামত কোনও কিছুই ব্যক্ত করতে পারত না বাড়ির শাসনের চাপে। বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর, ২১-২২ বছরের মেয়েটিকে সংসারের পুরো দায়িত্ব নিতে হয়েছিল, কিন্তু মাসের শেষে মায়ের হাতে আকাঙ্ক্ষাকে তুলে দিতে হত পুরো মাস-মাইনে। নিজের উপার্জনের একটা টাকাও ইচ্ছেমতো খরচ করার স্বাধীনতা ছিল না। এরকম একটা কঠিন সময়ে স্কুলের সহপাঠী মালবিকার সঙ্গে যখন আবার হঠাৎ দেখা হল এবং মন খুলে কথা বলা ও কাছাকাছি আসা শুরু হল, তখনই আকাঙ্ক্ষা বুঝল যে সে কীসের খোঁজে এতদিন ছিল।
সেই থেকে অর্থাৎ প্রায় ৩২-৩৩ বছর পরস্পরের দোসর ও জীবনসঙ্গী মালবিকা-আকাঙ্ক্ষা। সহযোদ্ধা হিসেবে বহু সমকামী মেয়ে ও যৌন সংখ্যালঘু অন্যান্য মানুষজনের হাত ধরে আছে ওরা দু’জন, ওদের ভালোবাসার বারান্দায় চেয়ার/মোড়া/মাদুর পেতে বসে একটি বড় পরিবারের অনেক সদস্য। এমনকী আকাঙ্ক্ষার সেই পুরুষবন্ধুটি পরবর্তীকালে মালবিকা-আকাঙ্ক্ষার সম্পর্ক ও যৌন অভিমুখের কথা জানার পর সেটা মেনে নিয়ে এখন ভালো বন্ধু হয়ে গেছেন।
অনেক বছর ধরে নারী আন্দোলন, ক্যুয়ার ও যৌন-সংখ্যালঘু মানুষদের নানা যৌথ কর্মসূচিতে ওদের দেখছি। দু’-চার বছর আগে অবধি দু’জনেই ছিল সরকারি চাকুরে। একজন একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল টেকনিকাল অফিসার এবং অন্যজন এক বিরাট রাষ্ট্রীয় শিল্প উদ্যোগের প্রশানসিক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মী। প্রকাশ্যে নিজেদের যৌন পছন্দের কথা চাকুরিজীবনে তাদের পক্ষে বলা সম্ভব ছিল না। ২০১৮ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা উঠে যাওয়ার আগে অবধি সমকামিতাকে যেহেতু অপরাধ গণ্য করা হত, ওদের ঝুঁকি ছিল অনেক বেশি। তাই দিনের বেলার মীনাক্ষী সান্যাল ও শুভাগতা ঘোষ অফিসের পর সন্ধেবেলা হয়ে যেত যথাক্রমে মালবিকা ও আকাঙ্ক্ষা; এবং সন্ধে ছ’টার পর মন দিত ‘স্যাফো’র কাজে। প্রায় বছর তিরিশেক এই দ্বৈত পরিচয় বা dual identity ওদের বহন করতে হয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যৌন-সংখ্যালঘু মানুষ কীভাবে সিস্টেমের মধ্যে বেঁচে থাকার কৌশল আয়ত্ত করতে পারে, সেটা নিজেদের জীবন দিয়ে দেখিয়েছে ওরা।
আমার থেকে বোধহয় মাত্র বছর দু’-তিনেকের বড় মালবিকা-আকাঙ্ক্ষা, কিন্তু ওদের ব্যতিক্রমী যাত্রাপথ আমাকে মুগ্ধ করে। নিজেরা এতদিন একসঙ্গে আছে তো বটেই, নিজেদের নামে জয়েন্ট লোন নিয়ে ২০ বছর আগে একটা ফ্ল্যাট কিনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ওরা। বিসমকামী পরিবারের ধারণাকে উল্টে দিয়ে বন্ধু অথবা সমপ্রেমী হিসেবে দু’জন ‘অনাত্মীয়’ মানুষ নিজেদের নামে গৃহঋণ নিয়ে বাড়ি কিনে থাকবে, এটা আজকেও রাষ্ট্র ও সমাজের অধিকাংশ মানুষ মেনে নিতে পারে না। কুড়ি বছর আগে বিষয়টা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল ভাবা যায় না। যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অফিসার ওদের ইন্টারভিউ নেন, তাঁর দিক থেকেও সেটা ছিল প্রথম এ ধরনের ব্যতিক্রমী গৃহঋণ মঞ্জুর। চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিল ওরা এবং আজও মালবিকা সকলকে বোঝায়, উদ্বুদ্ধ করে, কীভাবে স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই জরুরি পরিবর্তনগুলো আনা সম্ভব।
ব্যারাকপুরের রিফিউজি কলোনিতে বড় হওয়া মালবিকা কলেজের পাট শেষ করেই চাকরি নিয়ে চলে গেছিল বাড়ি থেকে বহু দূরে, পাতিয়ালায়। যে বাবা-মা মেয়ের পায়ে বেড়ি না পরিয়ে, স্নেহ-ভালোবাসা-স্বাধীনতা দিয়ে মেয়েকে বড় করেছিলেন, তাঁদের কাছে নিজের যৌন প্রবণতার কথা বলে বাবা-মা’কে কষ্ট দিতে চায়নি মালবিকা। বাড়িতে বিয়ের কথা হত, কিন্তু কোনও চাপ ছিল না। তাই সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলে গেছিল সুদূর পাঞ্জাবে। চাকরিসূত্রে তারপর কিছুদিন পাটনা, দুর্গাপুর ও সবশেষে কলকাতা। কলকাতা পর্বে যখন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পার্টনারশিপ শুরু হল মালবিকার, বাড়িতে জানাল যে ছোটবেলার স্কুলের বন্ধু শুভাগতা ঘোষ হল তার মনের মানুষ, মাসিমা পুষ্প সান্যাল নাকি বলেছিলেন, ‘এই ভালোবাসাটা পাপ না পুণ্য সেটা বিচার করার আমি কেউ নই। তুই আমার সন্তান, আমি দেখতে চাই তুই ভালো আছিস।’ সেই থেকে মালবিকা ও আকাঙ্ক্ষা, দু’জনকেই স্নেহমমতায় আগলে রেখেছেন উনি। আকাঙ্ক্ষার ভাই-ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গেও মালবিকা-আকাঙ্ক্ষার খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক রয়েছে, যদিও আকাঙ্ক্ষার মা কখনওই মন থেকে মেনে নিতে পারেননি মালবিকার সঙ্গে তাঁর মেয়ের ভালোবাসায় জুড়ে থাকা।
ছোটবেলা থেকে প্রবল পারিবারিক শাসনের চাপে আকাঙ্ক্ষার কোনও বন্ধু ছিল না বলা যায়। দু’জনেই ব্যারাকপুরে এক স্কুলে, এক ক্লাসে পড়লেও আকাঙ্ক্ষার টিফিনে রোজ বরাদ্দ থাকত বাড়ি থেকে আনা পাউরুটি-জ্যাম আর মালবিকা ২৫ পয়সা দিয়ে আলুকাবলি কিনে বন্ধুদের সঙ্গে হই হই করে খেত! আকাঙ্ক্ষা বরাবর খুব ভালো ছিল পড়াশোনায়, ফার্স্ট বেঞ্চে বসত, স্কুলের পর তার বাড়ি ফেরার টাইম ছিল বাঁধা। ওদিকে মালবিকা অত ভালো ছাত্রী ছিল না। আড্ডাবাজ মেয়েটি স্কুলের পরে পাড়ায় বন্ধুবান্ধদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বাড়ি ঢুকত দেরিতে। একজনের মুখ দিয়ে প্রায় কথাই বেরোত না, আর অন্যজনের ছোট থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল সহজাত। এতটাই অন্যরকম ছিল ওরা দু’জনে।
বছর কয়েক পর যখন ওদের আবার দেখা হয় কোনও বন্ধুর বিয়েতে, ততদিনে মালবিকা চাকরিবাকরি করে স্বাবলম্বী ও স্বাধীন জীবনের পথে পা বাড়িয়েছে, আর আকাঙ্ক্ষাকে কেমিস্ট্রি নিয়ে স্নাতক হয়ে ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বাবার চিকিৎসায় প্রায় নিঃস্ব-হয়ে-যাওয়া পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে। যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সে পরবর্তীকালে বায়ো-ইনফরম্যাটিক্সে ডক্টরেট করে, সেখানেই বি.এসসি পাশ মেয়েটি কোনওমতে জুনিয়ার টেকনিকাল অ্যাসিসটেন্টের চাকরি জোগাড় করেছিল সংসারের প্রয়োজনে। দিনে চাকরি করে, রাতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো মনের অবস্থা একেবারেই ছিল না আকাঙ্ক্ষার। মালবিকা ওর জীবনে এসে ভালোবাসা ও সাহস না দিলে, চাকরি করতে করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাইটে এম.এসসি পড়া হয়তো হতই না আকাঙ্ক্ষার।
সেসব অবশ্য অনেককাল আগের কথা। এখন তো দু’জনেই চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছে। ‘স্যাফো ফর ইকুয়ালিটি’-র পরিচালনার ভার পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে ওরা কখনও কলকাতার ফ্ল্যাটে আবার কখনও বা বীরভূমের রূপপুরে ওদের নতুন আস্তানায় সময় কাটায়। গত বছর রোদেজলে দাঁড়িয়ে থেকে সে বাড়ি তৈরির কাজ তদারক করেছে মালবিকা, নাম দিয়েছে ‘রূপকথা’। বাড়ির চারপাশের জমিতে কোথায় সবজি-ফুল-ফল লাগানো হবে, তার পরিকল্পনা আকাঙ্ক্ষার। নিজের পছন্দমতো নাম দিয়েছে সে গাছেদের। শুনলাম তিনটে আম গাছ বড় হচ্ছে ‘রূপকথা’ চত্বরে। একটা শিমুল গাছও। সেই শিমুলতলায় দু’দণ্ড জিরিয়ে নিতে একদিন চলে যাব শিগগির।
সম্প্রতি যোধপুর পার্কে প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষের ওপর পাড়া-প্রতিবেশীর আক্রমণ। হেলমেট দিয়ে মেরে, মাটিতে ফেলে ধর্ষণের হুমকি। কোনও বচসার সময় যৌন সম্পর্কিত গালাগাল হচ্ছে তীব্রতম আক্রমণ, এবং ট্রান্স কুইয়ার সম্প্রদায়ের প্রতি এই আক্রমণের উদ্দেশ্য তাঁদের অন্যরকম যৌনতাকে অস্বাভাবিক, অসুস্থ প্রমাণ করা।
কিন্তু কেন আমরা এত হিংস্র হয়ে উঠলাম? কেন তাকে পিটিয়ে মারার আগে খেতে দিলাম? কী জানি, একেক সময় মনে হয়, পথের ধারে যে মাংসর দোকানের সামনে দিয়ে আমরা যাতায়াত করি আর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি, সেখানেও কাটার আগে পাঁঠাকে কাঁঠাল পাতা খেতে দেওয়া হয়।