সেই ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে চলমান নারী আন্দোলনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতেই আট ঘণ্টা শ্রম দিবস, সপ্তাহান্তে ছুটি, বাথরুম বিরতি, খাবার বিরতি ইত্যাদি আদায় করা গেছে, এমনকী নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোনোর অধিকারের জন্যও কম লড়াই হয়নি। আর এই সমস্ত জয়কেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনা ‘কাজের সময় নষ্ট বা বলা ভালো টাইম স্টোলেন লেবার টাইম’ অভিধায় অভিহিত করে থাকে। তাই পিরিয়ড লিভও যে একই ধাঁচায় নিন্দিত হবে, তাতে আর আশ্চর্য কি?
মহুয়া মিত্র, রাহুল গান্ধী– একের পর এক বিরোধী সাংসদকে তাড়িয়ে সংসদকে বিরোধী শূন্য করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তারই মধ্যে নতুনভাবে তোলপাড় শুরু হল কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির একটি বক্তব্য ঘিরে। ১৩ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পিরিয়ড লিভসের কোনও প্রয়োজন নেই। তা সমান সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। আর মহিলাদের জীবনে এটা খুবই একটা স্বাভাবিক ঘটনা, কোনও বাধা নয়।’ ঠিক এই জন্যই এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, নারী অধিকার বা নারী ক্ষমতায়ন কোনও ‘কোয়ান্টিটিভ’ প্রশ্ন নয়, এটি সামাজিক এবং ‘কোয়ালিটিটিভ’ প্রশ্ন। যেটা স্মৃতি ইরানি বা ফ্যাসিস্ট সরকারের কোনও মুখপাত্রের পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়, কারণ তারা নারী ক্ষমতায়নকে দেবীকরণ প্রক্রিয়া, শুদ্ধতা জাতীয় মাপকাঠিতেই বোঝেন। পুরুষের পিরিয়ড হয় না। তাই তাদের সঙ্গে সমান সুযোগের অধিকার লড়ার নামে নিজেদের শরীর নিয়ে কথা বলা যাবে না– এহেন যুক্তি নারীর স্বতন্ত্রতা ও বেখফ জীবন যাপনের বিরোধী। ঋতুকালে সবেতন ছুটি এবং মহিলাদের রিপ্রোডাক্টিভ লেবার বা প্রজনন সংক্রান্ত শ্রমের স্বীকৃতির দাবি নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে– লড়াইয়ের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বহুপথ অতিক্রম করে এসে বর্তমানে যতটুকু সমানাধিকার মহিলারা আদায় করে নিতে পেরেছে, তা এই অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে ধুলোয় মিশে যাবে না তো! অথবা, বায়োলজিক্যাল সমস্যার জন্য তো মেডিক্যাল লিভ আছেই, তেমন হলে মেডিক্যাল লিভের এক্সটেনশন হোক; সমস্ত মহিলার জন্যই যে ঋতুকালীন ছুটি আবশ্যিক, এটা ভেবে নেওয়া হয় কেন, অতিপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তো মেডিক্যাল লিভের এক্সটেনশনই যথেষ্ট। আর তা যদি এক্সটেনডেড হয়ই, তাহলে তা পুরুষদের জন্যও কেন নয়। কারণ পুরুষদেরও স্বাস্থ্যের কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যা হয়তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অজানা– ইত্যাদি। কিন্তু মেডিক্যাল লিভ বাড়ানো-কমানোর সঙ্গে ঋতুকালীন ছুটির কোনও সম্পর্ক নেই। ঋতুকালীন ছুটি স্বতন্ত্র ও নির্দিষ্ট স্বাধীনতার দাবী। ঋতুস্রাব বা তজ্জনিত দুর্বলতা বা অস্বস্তি তো মেডিক্যাল ইস্যু নয়, বরং ঋতুস্রাব স্বাভাবিক ও ধারাবাহিক বিষয় এবং এটা কোনও রোগ নয়। ঋতুস্রাবের সঙ্গে মহিলাদের স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতার ওতপ্রোত সম্পর্ক, যার সম্মান ও স্বীকৃতিই হল ঋতুকালীন ছুটি।
বিশ্বজুড়ে এমনিতেই মহিলারা অসম ব্যবস্থা ও বৈষম্যমূলক পদ্ধতির মধ্যেই কাজকর্ম করে থাকে এবং ঋতুচক্র সেক্ষেত্রে বাড়তি এক বোঝা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই সময়ের শারীরিক কষ্টানুভূতি ও মানসিক চাপ প্রকাশ করলেই কি পিতৃতান্ত্রিক ভাবনাচিন্তা অনুযায়ী এটাই ধরে নেওয়া হবে যে মহিলারা পুরুষদের মতো অতটা কাজের নয়? মহিলাদের পিরিয়ড লিভের অধিকার ও দাবির বিরুদ্ধে চালু লবজ হল– সহকর্মীদের সঙ্গে কর্মদক্ষতায় পেরে না উঠতে পারলে বা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না শেষ করতে পারলেই এই সমস্ত দাবি/অন্যায় আবদার মহিলারা করে থাকে, যা কর্মসংস্কৃতি ধ্বসিয়ে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, মহিলারা যখনই নিজেদের শারীরিক, মানসিক এবং সর্বোপরি বিনা বেতনের রিপ্রোডাক্টিভ শ্রমের দাম চাইতে শুরু করে, ঠিক তখনই এই ব্যঙ্গবাক্যগুলো আসে।
সামাজিক সত্তা তো বটেই, প্রকৃতিগতভাবেই নারী ও পুরুষের শরীরিক গঠন আলাদা হয়। তবে কেন কর্মক্ষেত্রেও সেটা সার্বজনীনভাবে গৃহীত হবে না! নাকি আমরা সেই সনাতনী ক্যাপিটালিস্ট ভাবধারায় ‘এক ধাঁচে সবকিছু ফেলে’ প্রগতির পথের দূরত্ব মাপব? শারিরীক ক্ষমতা ও নিজস্বতার বিভিন্নতা হিসেবে এনে কর্মচারীদের উৎপাদনশীলতা সর্বোত্তম করতে কর্মক্ষেত্রেও বিবিধ পরিসর থাকার কথা যে বলা হয় তার কী হবে? পিরিয়ড বা মাসিক কোনও শারীরিক বিকৃতি/অক্ষমতা নয়। এটি একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক নিরন্তর প্রাকৃতিক এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। মহিলাদের রিপ্রোডাক্টিভ লেবার তো বটেই এবং এই সময়ে মহিলারা যে শারীরিক অস্বস্তি ও যন্ত্রণা ভোগ করে, যা খুব স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক, এর স্বতন্ত্র স্বীকৃতি প্রয়োজন। কাজেই পুরুষের জন্য পুরুষের দ্বারা নির্মিত পুরুষকেন্দ্রিক কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের মানিয়ে নেওয়ার ধারাবাহিকতার বদলে, কর্মক্ষেত্রের পরিকাঠামোগুলোকেই মহিলাদের জন্য বদলে ফেলতে হবে, যাতে মহিলারা স্বতন্ত্র, স্বচ্ছন্দ্য ও সৃষ্টিশীলভাবে কাজ করতে পারে। যেমন এই কথা প্রযোজ্য প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্যেও। স্বচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকার জন্য এবং জীবিকা নির্বাহ করার জন্য তাদের যে বিশেষ সুবিধা দরকার হবে, কর্মক্ষেত্রকে সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত করতেই হবে। পিরিয়ড লিভ হল সেই ইতিবাচক পরিবর্তনেরই একটি জোরালো পদক্ষেপ।
সেই ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে চলমান নারী আন্দোলনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতেই আট ঘণ্টা শ্রম দিবস, সপ্তাহান্তে ছুটি, বাথরুম বিরতি, খাবার বিরতি ইত্যাদি আদায় করা গেছে, এমনকী নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোনোর অধিকারের জন্যও কম লড়াই হয়নি। আর এই সমস্ত জয়কেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনা ‘কাজের সময় নষ্ট বা বলা ভালো টাইম স্টোলেন লেবার টাইম’ অভিধায় অভিহিত করে থাকে। তাই পিরিয়ড লিভও যে একই ধাঁচায় নিন্দিত হবে, তাতে আর আশ্চর্য কি?
ব্যক্তি বিভিন্নতার নিরিখে কর্মক্ষেত্রের পরিসর পরিবর্তনের দাবী তোলার সঙ্গে সঙ্গেই সার্বিকভাবে সারা দেশে ঋতুকালীন সময় নিয়ে যে অসচেতনতা, কুসংস্কার ও ছুৎমার্গ বজায় আছে, তার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলতে হবে। জেনে রাখা ভালো, শুধুমাত্র পৃথক শৌচাগার না থাকা ও শৌচাগারে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার ও বদলানোর ব্যবস্থা না থাকার দরুন ঋতুমতী হওয়ার পরপরই প্রচুর ছাত্রী স্কুলছুট হয়, সারা দেশে সংখ্যার নিরিখে যা প্রায় ২০ শতাংশ। ফলে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে পৃথকভাবে ঋতুকালীন সময়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া সময়ের দাবী এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
আরও পড়ুন: মহিলা সংরক্ষণ বিল কি মহিলাদের ভোটযুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য?
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
আরও প্রশ্ন ওঠে, ঋতুকালীন সময়ে যার কোনও অস্বস্তি হয় না, কোনও অসুবিধা থাকে না, তিনিও ঋতুকালীন ছুটি নেবেন? এটি তার ওয়ার্ক এথিক্সের বিরোধী হয়ে পড়বে না? উপরের উদাহরণ যদি ধরি– প্রতিবন্ধীদের কথা ভেবেই ধাপহীন ঢালু সিঁড়ি তৈরি করা হয়। কিন্তু সমস্ত প্রতিবন্ধী মানুষই যে হুইলচেয়ার ব্যবহার করে এমন তো নয়, আবার যারা হুইলচেয়ার ব্যবহার করে না বা ওই নির্দিষ্ট ঢালুপথ ব্যবহার করতে কোনও মানুষের ওপরই কোন নিষেধাজ্ঞাও থাকে না।
যেখানে কর্মচারীদের কোনও লড়াকু সংগঠন নেই, সেখানে এমনকী মাতৃত্বকালীন ছুটিকেই মান্যতা দেওয়া হয় না এবং তা নিয়ে আরও আনুসাঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে জুড়ে মহিলাদের ‘কামচোর’, ‘সুবিধাবাদী’ ইত্যাদি নানা অভিধায় ভূষিত করা হয়, সেখানে জোরদার লড়াই ছাড়া ঋতুকালীন ছুটি আদায় করা এককথায় অসম্ভব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯০-’৯১ সালে বিহার জুড়ে সরকারি কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সিপিআইএমএল, এআইসিসিটিইউ এবং প্রগতিশীল মহিলা মঞ্চ (পরবর্তীতে যা ‘প্রগতিশীল মহিলা সমিতি’ হয়) এই আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। সেইসময় বিশেষত প্রগতিশীল মহিলা মঞ্চের পক্ষে বিহারের জেলায় জেলায় সরকারি মহিলা কর্মচারীদের কাছে পৌঁছানো হয়। সেই সময় অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার সঙ্গে মহিলা কর্মচারীরা জোরের সঙ্গে পিরিয়ড লিভের দাবি তোলেন এবং তাঁরা আরও বলেন যে, ঋতুকালীন সময়ে মহিলা কর্মচারীরা যে ব্যাপক শারীরিক অস্বস্তি এবং অসুবিধা নিয়েই কাজ করেন সেই স্বীকৃতি সরকারকে দিতে হবে।
সরকারি কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে লালুপ্রসাদ যাদবের মুখ্যমন্ত্রীত্বের তৎকালীন বিহার সরকার ১৯৯২ সালের ২ জানুয়ারি সরকারি নোটিফিকেশনে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের স্থায়ীভাবে নিযুক্ত মহিলাদের জন্য মাসে দু’দিনের পিরিয়ড লিভ ঘোষণা করে। যদিও আন্দোলনের দাবি ছিল মাসে তিন দিন পিরিয়ড লিভ। এরপরে এই ছুটি শুধু স্থায়ী সরকারের কর্মচারীদের মধ্যে আবদ্ধ থাকেনি। বিহার জুড়ে বিভিন্ন চুক্তিবদ্ধ মহিলা শ্রমিক এবং বেসরকারি কাজে নিযুক্ত মহিলা শ্রমিকদের পিরিয়ড লিভের সুবিধা উপলব্ধ হয়। পরবর্তীকালে আইপোয়া-র নেতৃত্বে সারা বিহার জুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে খতিয়ে দেখা হয় যে, পিরিয়ড লিভের সরকারি সুবিধা সমস্ত মহিলা কর্মচারীরা পাচ্ছেন কি না।
বিহারের সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪৫ বছর পর্যন্ত মহিলারা ধারাবাহিক ভাবে প্রতি মাসে ছুটি পেলেও, নিজস্ব শারীরিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ৪৫ পরবর্তী মহিলারাও প্রতিমাসে পিরিয়ড লিভের আবেদন করতে পারে। এছাড়া লিভ হিসাবে মহিলারা ঋতুচক্রের কোন দু’দিন ছুটি নেবে, সে বিষয়ে একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বিবেচ্য। অর্থাৎ পিরিয়ড লিভ প্রত্যেক মহিলার মাসিক চলাকালীন নিজস্ব অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আরও পড়ুন: এই দেশ এখনও প্রতিবন্ধকতা-বান্ধব নয়
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
মহিলাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল পিরিয়ড লিভের সরকারি স্বীকৃতি আসলে মহিলাদের ছুটি পাওয়ার অধিকারের সঙ্গে ‘কারণ ও প্রয়োজন’ যাচাইয়ের নীতিপুলিশির অপ্রয়োজনীয় সংঘাতকে বাইরে রাখতে পারছে এবং এ ধরনের ছুটি নিতে গিয়ে মহিলারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গের বাধ্যবাধকতার হাত থেকেও মুক্তি পাচ্ছে।
প্রশ্ন এটা নিয়েও ওঠে যে, এই লিভ কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি বৈষম্যকে আরও জমি দেবে। কিছু উদাহরণ দেখা যাক, ২০০২ সালের পর ইন্দোনেশিয়ায় নাইকি, অ্যাডিডাস কোম্পানির মহিলাদের নিয়ে করা একটি স্টাডি অনুযায়ী, কোম্পানিগুলির মহিলা শ্রমিকরা আইনসম্মতভাবে স্বীকৃত পিরিয়ড লিভ নেওয়ার দাবি জানালে ওই কোম্পানিগুলি মহিলা ডাক্তারদের দিয়ে তাদের মহিলা কর্মচারীদের জামাকাপড় খুলে পরীক্ষা করত। যদি ভারতের ক্ষেত্রেও দেখি ২০১৪ সালে কেরলের একটি ফ্যাক্টরিতে মহিলা কর্মচারীদের জামা কাপড় খুলে পরীক্ষা করা হয়েছিল কারণ বাথরুমে কেউ ভুল করে স্যানিটারি প্যাড ফেলে এসেছিলেন। রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, কর্নাটকে কয়েকটি বস্ত্রশিল্প কারখানার মহিলা কর্মচারীরা বাথরুমে গেলে কোম্পানি তরফ থেকে একজন প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে যায় এবং নজর রাখে যাতে মহিলারা বাথরুমে বেশি সময় না নষ্ট করে। এছাড়া সারা দেশের বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রেই মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট শৌচাগার না থাকা, তাদের প্রতি বৈষম্য, অবাধ শর্ত, বৈরীমূলক পরিস্থিতি, নিয়মকানুন, নিষেধাজ্ঞা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। মহিলাদের প্রতি বৈষম্য যে পিরিয়ড লিভ স্বীকৃত হলে তৈরি হবে তা নয়, বরং পিরিয়ড লিভ মহিলাদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সামাজিক ন্যায়ের অন্যতম প্রথম বৃহৎ পদক্ষেপ হবে।
‘ইফ মেন কুড মেন্সটুয়েট’ প্রবন্ধে গ্লোরিয়া স্টেইন প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, পিরিয়ডের জন্য মহিলারা পুরুষের থেকে কম বা পিছিয়ে পড়ে বা দুর্বল– তা একদমই নয়। যেহেতু পিরিয়ড ও তৎসংক্রান্ত উৎপাদনমূলক শ্রম মহিলারাই শুধু অভিজ্ঞতা করে, তাই পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এটাকে নেতিবাচক হিসেবেই তুলে ধরা হয়। বুঝতে হবে পিরিয়ড লিভ ও মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো বিষয়গুলি মহিলাদের উৎপাদনমূলক শ্রমেরই অংশ। পিরিয়ড চলাকালীন এবং গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদের অস্বস্তি ও যন্ত্রণার বিপরীতে সবেতন ছুটি এনাবেলিং ইনভায়রমেন্ট তৈরি করে, যা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত, সুস্থ, সম্মানজনক এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সুনিশ্চিত করে।
ঘরের মধ্যে ছবি আঁকা শেখানো যত, তার চেয়েও বেশি ছবি নিয়ে কথাবার্তা হত। আসলে ছবি আঁকার চেয়ে বড় কথা, এমনই একটা পরিবেশের মধ্যে উনি রাজনীতির বাইরে থাকতে চাইতেন। কবিতা লিখতেন। ফোটোগ্রাফি করতেন খুব ভালো। ওঁর উর্দু কবিতার বইও এখান থেকেই ছাপা হয়েছিল, যার প্রচ্ছদ আমার।