মিসোজিনিস্টিক অ্যাংরি হিরোর উদযাপনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে একজন সমতুল্য অ্যাংরি উওমেন দিয়ে প্রতিস্থাপন করা নয়। তার বদলে এই ক্রোধ বা রাগের উৎসকে বোঝা দরকার, এই ইমোশনকে ঘিরে যে স্টিগমা আছে সেটাকে ছাড়ানো দরকার। এবং যে কোনও ক্রোধকে কীভাবে ক্যাওস সৃষ্টি করার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেটা বুঝে ছবি তৈরি করলে, অভিনব গল্পের সৃষ্টি হবে। বললেন পার্বতী থিরুভোথুর। সাক্ষাৎকার নিলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের উদাহরণ আকছার দেখি। ব্যক্তিগত জীবনে এই ইস্যুতে প্রথমবার কবে প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন মনে আছে?
নারী-পুরুষের বৈষম্যের ক্ষেত্রে আমার প্রথম রাগ বা ধাক্কা পাওয়ার কথা যদি বলি, সেটা স্কুলে পড়ার সময়। আমার ক্লাসে একটি ছেলে পড়ত, আমার সহপাঠী। সে স্কুলের ট্যুর-এ তোলা গ্রুপ ছবি থেকে আমার ছবি বের করে সেটা মর্ফ করে অন্যান্য ছেলেদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। ভাইস প্রিন্সিপাল দু’জনকেই ডেকে পাঠান। আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, ছেলেটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে, ম্যাডাম আমাকে তিরস্কার করে বলেছিলেন আরও সাবধান হতে। আমি স্কুলের ট্যুরে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীর মতোই মজা করেছি, নিজের মতো থেকেছি, কিন্তু সেদিন ছেলেটির অন্যায়ের দায়ভার আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
যে কোনও কর্মক্ষেত্রই পুরুষ-শাসিত। আপনার কর্মক্ষেত্রে কোন-কোন অভিজ্ঞতা হতাশ করেছে, অস্বস্তিতে ফেলেছে, রাগিয়ে দিয়েছে?
কর্মক্ষেত্রে এমন বহু জিনিস আছে যেটাতে আমার রাগ হয়। কোনটা দিয়ে শুরু করব। এই যে অনেক সময় কোনও লিখিত কনট্র্যাক্ট না থাকা, এবং মুখের কথার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হওয়া। শুধু তাই নয়, পুরুষরা এতটাই এনটাইটেলড যে তারা এই মুখের কথাকে একটা দারুণ সুযোগ হিসেবে আমাকে দেখতে বলে। আমি যে অভিনেতা হিসেবে আর্টিস্টিক সার্ভিস দেব, সেটা কিছু না। সেট-এ পুরুষশাসিত ‘লকার রুম’-এ যে বার্তালাপ, আড্ডা হয় তা সূক্ষ্ম নয় মোটেই। এবং কদাচিৎ অন্যান্য সদস্য যদি সেই অনুপযুক্ত ‘জোকস’, যা কি না নারী এবং তার শরীরকে টার্গেট করে করা– তাতে যোগদান না করে, তাহলে তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা চলে এবং তাদের রীতিমতো ত্যাজ্য করা হয়। যদিও সময়ের সঙ্গে বদলেছে অনেক কিছু, তবু মনে হয়, আমার মতো হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া ক্রমাগত সরব হন না বাকিরা। আমাদের সেই সরব হওয়ার প্রিভিলেজ আছে।
মেয়েদের ‘রাগ’-কে বেশির ভাগ সময় ‘হিস্টিরিকাল’ বা ‘আনস্টেবল’ হিসেবে দেখা হয়। মেয়েরা মেজাজ দেখালে সেটা যথেষ্ট ‘নারীসুলভ’ নয়, সেটা অশুভ। কী বলবেন!
সেটা করা হয়, কারণ এটাই শ্রেষ্ঠ উপায় নারীর অস্তিত্বকে দমন করার, অস্বীকার করার। নারীর জীবনচর্চা তখনই মূল্যবান যখন সে তার অস্তিত্ব ‘সহজ’ করে তুলবে, অন্যের সুবিধে এবং পছন্দমতো করে তুলবে। এই মূল্যবোধ বা জীবনবোধ যাতে মেয়েদের অন্তরে সিলমোহর হয়ে থেকে যায় সেটা পিতৃতন্ত্র নিশ্চিত করেছে। এখানে ‘সহজ’ মানে হল যে কোনও শোষণের ক্ষেত্রে নারী যেন সম্মতি দেয়, রাস্তা সহজ করে দেয়, বাঁধা না দেয়। তেমনটা না হলে যে ‘গিল্ট ট্রিপ’ তৈরি হয় সেটা বংশপরম্পরাগত ভাবে মেয়েদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আর ঠিক এইভাবেই আমাদের ‘এজেন্সি’ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ‘ফেমিনিন’ কী এবং কেমন তার রূপ– সেটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদের সেই ‘ফেমিনিন’-এর মানে তৈরি করতে দেওয়া হয়নি। এবং সেটা এত দূর পর্যন্ত গিয়েছে যে, যখন নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে আমরা রাগ দেখাই সেটা ‘দোষের’ করে দেখা হয়েছে।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আমি যে অভিনেতা হিসেবে আর্টিস্টিক সার্ভিস দেব, সেটা কিছু না। সেট-এ পুরুষশাসিত ‘লকার রুম’-এ যে বার্তালাপ, আড্ডা হয় তা সূক্ষ্ম নয় মোটেই। এবং কদাচিৎ অন্যান্য সদস্য যদি সেই অনুপযুক্ত ‘জোকস’, যা কি না নারী এবং তার শরীরকে টার্গেট করে করা– তাতে যোগদান না করে, তাহলে তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা চলে এবং তাদের রীতিমতো ত্যাজ্য করা হয়। যদিও সময়ের সঙ্গে বদলেছে অনেক কিছু, তবু মনে হয়, আমার মতো হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া ক্রমাগত সরব হন না বাকিরা। আমাদের সেই সরব হওয়ার প্রিভিলেজ আছে।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আপনার কী মনে হয়, ‘অমিতাভ বচ্চন’-এর মতো কাল্ট ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ আছে অথচ ‘অ্যাংরি ইয়ং উওমেন’ নেই কেন?
আসলে মেয়েদের রাগ বরাবর ভুল ভাবে দেখা হয়েছে, অন্যদিকে পুরুষের ‘রাগ’ সেলিব্রেট করা হয়েছে। এবং এই যে প্যাটার্ন সেটা উভয় ‘জেন্ডার’-কেই উপকৃত করেনি। মিসোজিনিস্টিক অ্যাংরি হিরোর উদযাপনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে একজন সমতুল্য অ্যাংরি উওমেন দিয়ে প্রতিস্থাপন করা নয়। তার বদলে এই ক্রোধ বা রাগের উৎসকে বোঝা দরকার, এই ইমোশনকে ঘিরে যে স্টিগমা আছে সেটাকে ছাড়ানো দরকার। এবং যে কোনও ক্রোধকে কীভাবে ক্যাওস সৃষ্টি করার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেটা বুঝে ছবি তৈরি করলে, অভিনব গল্পের সৃষ্টি হবে।
ভারতীয় সিনেমায় মেয়েদের রাগ কীভাবে রিপ্রেজেন্ট হয় বলে আপনি মনে করেন?
আমি বিশ্বাস করি, ‘ফিমেল রেজ’-এর রিপ্রেজেন্টেশন দুর্দান্ত কিছু উদাহরণ আমাদের কাছে রয়েছে। এটা মাথায় রাখা দরকার যে, সব রাগের আউটকাম পজিটিভ হয় না, কিন্তু তবু সব ধরনের রাগের প্রতিফলন হওয়া জরুরি। মলয়ালম সিনেমায় ‘আদমিন্তে বারিয়েল্লু’ থেকে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’ ছাড়াও আরও অন্যান্য ছবি রয়েছে। আমার মনে হয় ব্যাপারটা খুবই সরল। আমরা মেয়েরা মানুষ হিসেবে নিজেদের রোজকার জীবনে ক্রোধ অনুভব করি– এই বিষয়টাকে সিস্টেম্যাটিকালি ডিফেম বা মানহানির পর্যায়ে না নিয়ে গিয়ে যদি নরমালাইজ করে ফেলা যায় তাহলেই ঠিক দিকে এগনো যায়।
আপনি যখন কর্মক্ষেত্রে রাগ দেখান বা ‘মেল ভায়োলেন্স’ সেলিব্রেট করে এমন ছবির নিন্দে করেন, কী প্রতিক্রিয়া পান?
হাতে গোনা মানুষ এই বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে ডায়লগ স্থাপন করতে ইচ্ছুক হন। এবং তার চেয়েও কম ইন্ডাস্ট্রির কলিগ, এটার বিরুদ্ধে সরব হন, যদিও তারা অনেকেই আমার সঙ্গে সহমত। আর বেশিরভাগ কলিগ চুপ করেই থাকেন সেটা পাবলিকলি এবং প্রাইভেটলি– দু’-ক্ষেত্রেই।
কাজ করতে গিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হওয়া কতটা জরুরি? ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে, পে-চেক-এও বিশাল ফারাক! কিছু কী বদলেছে?
যে কোনও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাগ চেপে না রাখা খুব জরুরি। আমাদের শরীরে জমে থাকা রাগ নানান ইস্যু তৈরি করতে পারে। অভিনেতা হিসেবে আমি যদি আমার রাগের কারণ না বুঝি এবং সেটাকে সঠিকভাবে অ্যাড্রেস না করি তাহলে অবচেতনে সেটা নানাভাবে আমার পথে বাধা হবে। ব্যক্তি হিসেবে বলব চেপে রাখা রাগ, বেশিরভাগ সময় ভুল জায়গায়, অন্য মানুষের ওপর পড়ে এবং এতে সম্পর্কে ফাটল ধরে। বিশেষ করে আমাদের নিজেদের সঙ্গে নিজেদের যে সম্পর্ক, তাতে প্রভাব ফেলে। নিজের রাগকে রেসপেক্ট করা এবং সেটাকে ভুল তকমা না দেওয়া, অন্যতম উপায় নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখার। অন্তত আমি তাই মনে করি।
কী মনে হয় ‘রাগ’ ছাড়া পরিবর্তন আনা সম্ভব? আমরা মেয়েরা কী এখনও ততটা রেগে নেই পরিবর্তন আনার জন্য?
আমার মনে হয় আমাদের ‘রাগ’ একটা স্টার্টিং পয়েন্ট হতে পারে। ক্রোধ অনুভব করা সেই প্রথম পদক্ষেপ যেখানে আমরা বুঝতে পারি যে, কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে, আমাদের যে সীমারেখা সেটাকে কেউ অমর্যাদা করেছে বা আমাদের সঙ্গে ভুল হচ্ছে। কিন্তু এই ‘রাগ’ বা এনার্জিটাকে আমাদের সঠিক পথে চালিত করতে হবে, বেটার সিস্টেম তৈরি করার জন্য। এই ‘রাগ’ যেন আমাদের নিজেদের ‘ডিমান্ড’ থেকে সরতে না দেয়, নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে যাতে মহিলাদের জন্য সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলা যায়। এই ‘রাগ’ যেন আমাদের ‘ভয়েস’ ততক্ষণ জিইয়ে রাখে যতক্ষণ না পর্যন্ত সমাজ শুনতে বাধ্য হচ্ছে এবং এই সমবেত ক্রোধ-ধ্বনি সমমনস্ক মানুষকে একত্রিত করে ফেলছে! নয়তো এই ‘ক্রোধ’ কেবল আমাদের গিলে ফেলবে, পরিপূর্ণ জীবন বাঁচতে দেবে না। ইটস ক্রশিয়াল টু রেসপেক্ট আওয়ার অ্যাঙ্গার বাট অলসো নট অ্যালাউ ইট টু হিন্ডার আওয়ার প্রোগ্রেস। জানি বলা সহজ, তবু সবাইকে এটাই বলে যেতে হবে।
মহিলাদের নিয়ে মহিলা পরিচালকের কোন ছবি আপনার প্রিয়? এমন কোনও নারীমুখ আছে, ইতিহাসে, সিনেমায় কী সাহিত্যে যা আপনার প্রিয়!
মহিলাদের নিয়ে মহিলা পরিচালকের ছবির কথা বললে আমার অন্যতম প্রিয় ছবি হল ‘ফ্রান্সেস হা’। যদি একজন ‘অ্যাংরি ক্যারেক্টার’ ইতিহাস, সাহিত্য বা সিনেমা থেকে নিতে হয় তাহলে আমি বলব ‘থেলমা অ্যান্ড লুইস’-এর কথা।
সবার থেকে বেশি আক্রমণ নেমে এসেছে কাশ্মীরের সাংবাদিকদের ওপর। একাধিক সংবাদপত্রের সম্পাদক, সাংবাদিকদের শুধু জেলবন্দিই করা হয়নি, ইন্টারনেট লকডাউন করে প্রায় উপত্যকাকেই একটা জেলে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে কোনও রকম সাংবাদিকতাই করাই একসময় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।