সিলভার স্ক্রিনে ৫০তম সিনেমা আসতে চলেছে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির। টলিউডের এই সফল জুটির হাফসেঞ্চুরির নেপথ্যে জড়িয়ে রয়েছে উভয়ের দুরন্ত বোঝাপড়া, সম্পর্কের সুমধুর রসায়ন। ৭ জুন প্রেক্ষাগৃহে আসতে চলেছে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির অভিনীত সিনেমা ‘অযোগ্য’। তার আগে জুটির সাফল্য নিয়ে নানা কথায় অকপট প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা। নিজেদের ভাবনা উন্মুক্ত করলেন রোববার.ইন-এ। তারকা-জুটির একান্ত সাক্ষাৎকার নিলেন শম্পালী মৌলিক।
আমরা এমন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি মানুষের সম্পর্ক ভাঙছে অহরহ, বন্ধুত্ব ভাঙছে, বিয়ে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তখন তিন দশক ধরে আপনাদের জুটি টিকিয়ে রাখলেন কী করে? ম্যাজিকটা কোথায়?
ঋতুপর্ণা: এটাই তো জানি না। দ্যাট ম্যাজিক ইজ আননোন। টিকিয়ে রাখার থেকেও বড় কথা, আমার মনে হয়, দর্শক তাদের মনের মধ্যে এটা ধরে রেখেছে। জুটি কখনও নিজেরা বানানো যায় না। জুটি তখনই তৈরি হবে যখন দর্শক তাদের বারবার স্ক্রিনে ফিরে আসা দেখতে চাইবে। মনে হয়, যখন আমরা নিয়মিত একসঙ্গে ছবি করেছি, তখনও যেমন চাহিদা পেয়েছি এবং যখন ১৪-১৫ বছর পর আবার একসঙ্গে ছবি করেছি, তখনও দর্শকের মধ্যে সেই আলোড়ন, আমাদের দেখার উৎসাহ টের পেয়েছি। এমনও হয়েছে, ‘প্রাক্তন’-এর পর শুনেছি, অনেকে তাদের সম্পর্ক নিয়ে আবার নতুন করে ভেবেছে। অনেক ভাঙা সম্পর্ক ফের জুড়ে গেছে। সেটাই বোধহয় আমাদের প্রাপ্তি, যে এতটা প্রভাব আমরা ফেলতে পেরেছি জুটি হিসেবে।
প্রসেনজিৎ: কবিতা পর্যন্ত লিখেছে কেউ কেউ (হাসি)। ঋতু যেটা বলল, ম্যাজিকটা আমরা কেউ তৈরি করিনি। এর দুটো দিক আছে। সিলভার স্ক্রিনে জুটি হিসেবে এটা আমাদের ৫০ তম ছবি। ইটস আ টাইম অফ সেলিব্রেশন। কিন্তু সেটা আমরা একা করতে পারব না। সেলিব্রেশনের জেনারেশন হয়তো পাল্টে গিয়েছে। এমন পরিবার দেখতে পাবে, যেখানে মা আমাদের দু’জনের প্রচুর ছবি দেখতেন, রান্নাবান্না শেষ করে দুপুরের শোতে। তারপর তার মেয়েরা বড় হয়ে দেখছে, আবার যারা কলেজে যাচ্ছে তারাও আমাদের ছবি দেখছে। সে ‘প্রাক্তন’ কিংবা ‘দৃষ্টিকোণ’। বা আমাদের আলাদা-আলাদা ছবিও দেখছে। তার মানে আমরা তিনটে প্রজন্মকে কেটার করছি জুটি হিসেবে। যারা গত ২০-২২ বছর ধরে দেখেছে, আমি মনে করি এটা তাদের কনট্রিবিউশন। আর একটা বড় দিক হল, আমার যারা প্রযোজক-পরিচালক, কলাকুশলী, সহ-অভিনেতা-অভিনেত্রী, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তারা এই জুটিটা তৈরি করেছে।
ঋতুপর্ণা: ইটস আ টিমওয়ার্ক।
একটা সময় প্রায় ১৪ বছর পরে ‘প্রাক্তন’-এর মাধ্যমে বড়পর্দায় ফিরেছিলেন আপনারা।
প্রসেনজিৎ: ওটাও ব্লেসিংস। ওটা জুটির লংজিভিটি বাড়িয়ে দিয়েছে।
তারপর ২০১৮ সালে ‘দৃষ্টিকোণ’, আপনারা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করলেন। ফের ওঁর পরিচালনায় আরও একবার। ‘অযোগ্য’-র মধ্যে কী এমন পেলেন যে, একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হলেন?
প্রসেনজিৎ: আমি ওরকমভাবে প্ল্যান করিনি। কিন্তু আমার আর ঋতুর মধ্যে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিল যে, আমরা দু’জনে আগামী ক’টা ছবি করব গ্যাপ দিয়ে দিয়ে। সৃজিত, শিবু-নন্দিতাদি বা কৌশিকদা– এদের সঙ্গে কাজ করার কারণ, এটা নয় যে অন্য পরিচালকরা পারবেন না, অন্য যাঁরা ভালো পরিচালক তাঁদের সঙ্গে কাজ করতেও পারি। কিন্তু আমাদের দু’জনেরই মনে হয়েছিল, এই যে এতগুলো বছরের ওজন আমাদের সঙ্গে জড়িয়ে। একটা সময়ে আমরা সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের ছবি করতাম, সময় পাল্টে গিয়েছে, সিনেমার ভাষা বদলে গিয়েছে, এই দু’জনকে হ্যান্ডল করার জন্য যে পরিচালক দরকার, তাঁর একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং প্রয়োজন। যিনি এই দীর্ঘ জার্নির ওজনটা বুঝবেন। সেখান থেকে ‘অযোগ্য’ ছিল রাইট স্ক্রিপ্ট। এই ছবিটায় আমরা প্রমাণ করব, একটু হলেও যোগ্যতা আছে আমাদের (হাসি)। এটা নিশ্চয়ই লাভস্টোরি, তবে কৌশিকের স্ক্রিপ্টের মজাটা হল– প্রতিদিনের মানুষের জীবনের গল্প। কিন্তু ভীষণ আলাদা রকমভাবে বলা গল্পটা। কৌশিক গল্প বলতে পারেন, এটা বাঙালি জানে। এবং চরিত্র, তার গঠনও আলাদা।
ঋতুপর্ণা: অ্যাবসোলিউটলি।
এখন তো জুটি-ই তৈরি হয় না। দুটো ছবিতে কোনও দু’জনকে একসঙ্গে দেখলেই মানুষের একঘেয়ে লাগে। সেখানে আপনারা পরস্পরের বিপরীতে ৫০টা ছবি করে ফেলেছেন। সম্ভব করলেন কীভাবে?
ঋতুপর্ণা: এটা একেবারেই অর্গানিক। এখন তো সবকিছু স্ট্র্যাটেজি করে, ডিজাইন করে হয়। কীভাবে পাবলিসিটি, গ্রুমিং হবে, কীভাবে প্রেজেন্ট করা হবে নায়ক বা নায়িকাকে– সবটা পরিকল্পনা মাফিক হয়। একটা সিনেমাতে কেউ আসতে না আসতেই বিলবোর্ডে তার ছবি, ইন্টারনেটে এত সাক্ষাৎকার, এসবের বন্যা বয়ে যায়। আমাদের সময়ে এতকিছু ছিল না। আমি বলতে পারি, আমি আর ও যখন একসঙ্গে কাজ করেছি, ইট ওয়াজ ভেরি অর্গানিক।
প্রসেনজিৎ: কোনও কিছু ভেবে হয়নি।
ঋতুপর্ণা: একদম নরমাল প্রসেসে হয়েছিল। যে এই ছবিটার স্ক্রিপ্ট ভালো, ওই একজন নতুন পরিচালক এসেছেন, দেখা যাক আমরা নতুন কী করতে পারি, বা একজন ভালো প্রযোজক এসেছেন, আমরা কাজ করে দেখি, এভাবেই হয়েছিল ছবিগুলো। আমরা সবসময় চেয়েছি ইন্ডাস্ট্রি বাঁচুক, ভালো পরিচালক-প্রযোজক আসুক, তাদের সঙ্গে কাজ করি। তখন আমরা অত কনট্র্যাক্ট, কত টাকা পাচ্ছি এগজ্যাক্ট, এগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করিনি।
প্রসেনজিৎ: ঋতু আমার থেকে অনেকটা পরে এসেছে, কিন্তু আমাদের দু’জনেরই ডিরেক্টরস স্প্যানটা ভাবতে হবে। এই মানুষটা (ঋতুপর্ণা) তরুণ মজুমদার, প্রভাত রায় থেকে শুরু করে আজকের দিনের তরুণ পরিচালকদের সঙ্গে পর্যন্ত কাজ করেছে। আমারও তাই, হিউজ বডি অফ ওয়ার্ক। আমি প্রায় একশোর ওপর পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি।
ঋতুপর্ণা: ও চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে আছে। আমিও তিরিশ বছরের বেশি সময় রয়েছি।
প্রসেনজিৎ: এই পরিচালকরা অ্যাক্টরদের পরিণত করে।
ঋতুপর্ণা: বডি অফ ওয়ার্ক এত বড় যে, সেখান থেকে আমাদের ম্যাচিওরিটি বেড়েছে। বিশ্বাস করো, কোনওদিন আমরা ডিজাইনড ওয়েতে স্ট্র্যাটেজি করে চলিনি।
প্রসেনজিৎ: ঘুমোনোর সময় পেতাম না, কখন ডিজাইন করব! দু’ঘণ্টা ঘুমোনোর সময় পেলে বিশাল ব্যাপার ছিল।
কতটা ঝগড়া পেরিয়ে আপনারা ৫০তম ছবিতে পৌঁছেছেন?
প্রসেনজিৎ: গুটি গুটি পায়ে (হাসি)। ঝগড়া হয়েছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তো সংসারের মতো। থাকতে গেলে টুংটাং, গুড়ুম-দুরুম আওয়াজ হবেই।
লাভহেট রিলেশনশিপ? কীভাবে ডিফাইন করবেন আপনাদের সম্পর্কটা?
প্রসেনজিৎ: আগে ঋতু বলুক এটা।
ঋতুপর্ণা: না, তুমি বলো আগে। (হাসি)
প্রসেনজিৎ: লাভ থাকলে, হেট্রেড থাকবে। উল্টোটাও একইরকমভাবে সত্যি।
ঋতুপর্ণা: আমিও তাই মনে করি। এটা একটা অদ্ভুত সম্পর্ক। ঠিক বলতে পারব না।
‘দৃষ্টিকোণ’ ছবিতে প্রেম ছিল। ‘অযোগ্য’-তেও প্রেম রয়েছে তীব্রভাবে। যতটুকু সামনে এসেছে, তার থেকে মনে হচ্ছে, পরকীয়াও রয়েছে। অনস্ক্রিন প্রেমে নিজেদের কীভাবে মোটিভেট করেন? নাকি দূরত্ব আপনাদের প্রেম বাঁচিয়ে রেখেছে?
প্রসেনজিৎ: আমাদের এই ছবিতে কী আছে, তার জন্য আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। ৭ জুন পর্যন্ত। যদি ভালো করে দ্যাখো, ‘প্রাক্তন’-এ আমি, ঋতু ছাড়া আরেকজন তৃতীয় ব্যক্তি ছিলেন। ‘দৃষ্টিকোণ’-এ আমি ঋতু ছাড়া আরেকজন তৃতীয় মানুষ ছিলেন। ‘অযোগ্য’-তেও আমি-ঋতু ছাড়া আরেকজন তৃতীয় ব্যক্তি আছেন, যিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আমাদের জন্যও ইমপর্ট্যান্ট। এর বেশি বলা যাবে না (হাসি)।
প্রেমের দৃশ্যের মোটিভেশনটা কী? জানতে চাই। যখনই আপনারা একসঙ্গে সামনে আসেন, ইউনিক কেমিস্ট্রি কাজ করে।
প্রসেনজিৎ: এই প্রসঙ্গে আমি ছোট্ট একটা গল্প বলি। তারপর ঋতু কথা বলুক। এখানে আমরা কথা বলছি, ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ। আমাদের মনে রাখতে হবে ‘প্রফেশনালিজম’ কথাটা। আমরা দু’জনে মিলে এই পেশাদারিত্বটাকে একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছি। আমি বলতে পারি, উই রিপ্রেজেন্ট প্রফেশনালিজম। ঋতুর লেট-টা ছাড়া (হাসি)। চাকরি করলে যতটা প্রফেশনাল হতে হয়, আমি অভিনেতা হিসাবে সেইরকম প্রফেশনাল, কোনও ফাঁকি নেই সেখানে। ঋতুও তাই। যখন আমি আর ঋতু শেষের দিকে কাজ প্রায় আর করব না, একটা প্যাশনেট লাভ সং-এর শুটিং করেছিলাম, ‘প্রতিহিংসা’ বলে ছবিটা। এখনও বলতে পারি, ইউটিউবে গিয়ে লোকে দেখুক। শট-এর পর ঋতু এদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়, আমি ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাই। দ্যাট ইজ ওয়ান অফ দ্য মোস্ট প্যাশনেট লাভ সংস এভার হ্যাপেন্ড ইন বাংলা সিনেমা। আমার মনে আছে, গোপীর প্রথম কথা, যখন আমরা ‘প্রাক্তন’-এ শট দিচ্ছি, ক্যামেরা ট্রলি করে আমাদের প্রোফাইল ধরছে, ও শট-টা নিয়ে বলল– “মনে হল ‘উৎসব’-এ শট দিল”। ওটা ছিল আমাদের ফার্স্ট শট।
ঋতুপর্ণা, আপনি বলুন, কোন মোটিভেশনে এই কেমিস্ট্রি বাঁচিয়ে রেখেছেন?
প্রসেনজিৎ: দর্শকরা বাঁচিয়ে রেখেছে।
ঋতুপর্ণা: দর্শক তো বটেই। আমার মনে হয়, আমরা যখন মুখোমুখি দাঁড়াই, তখন আমরা সব কিছু ভুলে যাই, ওই মুহূর্তটার সঙ্গেই বাঁচি। ওই জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা প্রফেশনালিজম-ই বলো বা এত বছর একসঙ্গে দু’জনের কাজের জায়গা থেকেই বলো, বা সম্পর্ক থেকেই বলো। ওই মুহূর্তটাই মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়।
প্রসেনজিৎ: ম্যাক্সিমাম পরিচালক, যাঁরা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, সেটা শিবু হতে পারে, কৌশিক হতে পারে, বা এর আগেও হর (হরনাথ চক্রবর্তী) বা যাঁরা কাজ করেছেন আমাদের নিয়ে, সিনটা বুঝিয়েই বলতেন, ‘টেক করি?’ ওরা একটা পয়েন্টে বুঝত এটা টেকেই হয়ে যাবে। মনিটরে হবে না।
ঋতুপর্ণা: একদম। আমরা যে ভীষণ রিহার্সাল-টিহার্সাল করেছি তা নয়। এটা জাস্ট হয়ে যায়, যখন দু’জনে দু’জনের সামনে দাঁড়াই।
এই ছবিতে মনে হয় ‘পরকীয়া’-র একটা জায়গা রয়েছে। পরকীয়া প্রসঙ্গে আপনাদের মতামত কী?
প্রসেনজিৎ: ‘অযোগ্য’-তে পরকীয়া খুব হাইলাইটেড জায়গায়, তা নয়। একদম ডিফারেন্ট সাবজেক্ট। ছবিতে দেখতে হবে। তবে ওই আগে যেটা বললাম, দু’জন মানুষের মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তি আছে।
ছবির নামটা খুব ইউনিক।
প্রসেনজিৎ: ওটা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের।
ঋতুপর্ণা: আমারও খুব ইউনিক লেগেছে।
আর ওই থাম্ব ইমপ্রেশনের রহস্য কী?
ঋতুপর্ণা: এখন বলছি না প্লিজ, সিনেমার জন্য তোলা থাক। (হাসি)
আপনাদের জীবনে কখনও এমন মুহূর্ত এসেছে, যেদিন নিজেকে ‘অযোগ্য’ মনে হয়েছে?
ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ, আমার মনে হয়েছে বেশ কয়েকবার। একটা লাইট মোমেন্ট বলছি। আমি একটা হিন্দি ছবি করেছিলাম– ‘ম্যায় মেরি পত্নী অউর ও’। তখন আমি তেমন গাড়ি চালাতে পারি না। আমাকে বেশ কিছুদিন গাড়ি চালানো শেখানো হল। কিন্তু আমি তাও তেমন পারলাম না। তারপর পরিচালক একটা শট নিলেন অন্য একজনকে দিয়ে। আমি তার পিছনে বসলাম। মাথাটা তার দেখা গেল! তখন আমার নিজেকে এত অযোগ্য মনে হল, কী বলব (জোরে হাসি)। আমার মতো একজন অভিনেত্রী গাড়ি চালিয়ে এইটুকু যেতে পারল না।
প্রসেনজিৎ: ঋতুর গাড়ি চালানোর প্রচুর গল্প আমি জানি। আর ও স্ট্রেট বলে দেয়, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ হয়ে যাবে’। ওই গাড়িতে যে উঠবে সেই জানে তার কী হবে (হাসি)।
ঋতুপর্ণা: কিন্তু জানো, এখন আমি ভালো গাড়ি চালাতে পারি। তবে অ্যাম নট আ সুইমার।
আর প্রসেনজিৎ, আপনার তেমন মুহূর্ত?
প্রসেনজিৎ: আমি অনেক ব্যাপারে অযোগ্য। আমারও সুইমিং-এ দুর্বলতা আছে। যদিও আমি ‘লালন ফকির’ করে নিয়েছি। সুইমিং আমি পারি, কিন্তু কোথাও একটা ভয় করে। জলে একটা অস্বস্তি।
ঋতুপর্ণা: আমি ভেসে থাকতে পারি কিন্তু আমার বাচ্চারা আমাকে বলে, মা তুমি হিরোইন, সাঁতার কাটতে পারো না!
প্রসেনজিৎ: মিশুককে (ছেলে) দেখি চোখের সামনে সাত-আটবার পুল এপার-ওপার করে ফেলেছে। তখন অনেক ছোট। বাইরে গেছি কোথাও, ও বলত, চলে এসো বাবা। আমি গিয়ে একটা পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকতাম (হাসি)।
ঋতুপর্ণা: কিন্তু সুইমিংয়ের শটে আমাদের দেখে কেউ বুঝতে পারবে না। ইনফ্যাক্ট ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এই আমাদের ওইরকম শট আছে।
প্রসেনজিৎ: ঋতু থাকলে আমি এক্সট্রা টাকা নিতাম। যখন কমার্শিয়াল ছবি করতাম। জানো?
ঋতুপর্ণা: (অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন)
কারণটা কী?
প্রসেনজিৎ: কারণ, ঋতু থাকা মানে সেই সময় কমার্শিয়াল ছবিতে একটা বৃষ্টির গান থাকবেই। আর ওই বৃষ্টির গানে আমাকে অহেতুক সারা রাত ধরে ভিজতে হবে। আর ওই শট অবধারিত রাত্তিরেই হত। আমাকে জামা পরে ভিজতে হবে বলে, এক্সট্রা টাকা দাবি করতাম (হাসি)।
‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘উৎসব’, ‘জামাইবাবু জিন্দাবাদ’, ‘প্রাক্তন’, ‘দৃষ্টিকোণ’– দু’জনের একসঙ্গে ইমপর্ট্যান্ট ফিল্ম। কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
প্রসেনজিৎ: এটা বলা খুব শক্ত। ‘উৎসব’ আমাদের হৃদয়ের খুব কাছের। আবার ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ মাইলস্টোন। ‘প্রাক্তন’ আমাদের কাছে অদ্ভুত ইমোশন। এই ছবিগুলোর মধ্যে এগিয়ে বা পিছিয়ে বলা মুশকিল। এগুলো ছাড়া ঋতুর আর আমার ‘দায়দায়িত্ব’, ‘খেলাঘর’ খুব প্রিয়।
ঋতুপর্ণা: আর প্রত্যেক পরিচালকের সঙ্গেই এত কাজ করেছি, কী বলব। ঠিকই, প্রভাতদার ‘খেলাঘর’ খুব প্রিয়। এছাড়া ‘তুমি এলে তাই’ ইজ আ বিউটিফুল ফিল্ম। প্রত্যেকটার সঙ্গে আলাদা আবেগ জড়িয়ে।
দীর্ঘদিন আপনারা একসঙ্গে ছবি করার পর একটা পয়েন্টে এসে আর একত্রে নয়। সেই ফেজে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত শক্তপোক্ত প্রযোজক বা তেমন নায়ক ছাড়াই, একা লড়াই করেছেন। কী বলবেন?
প্রসেনজিৎ: তরুণ মজুমদার শক্তপোক্ত পরিচালকই…
নিশ্চয়ই। তাছাড়াও ওঁর দীর্ঘ লড়াই তো রয়েছে?
প্রসেনজিৎ: শিবপ্রসাদ-নন্দিতাদিও তো ছিল ঋতুর। শিবু আর নন্দিতাদি ঠিকই করেছিলেন প্রসেনজিৎকে তখনই কাস্ট করবেন, যখন ছবিতে ঋতু থাকবে। ঠিক তেমনই কৌশিক গাঙ্গুলি ঠিক করেছিলেন ঋতুকে তখনই কাস্ট করবেন, যখন প্রসেনজিৎ থাকবে।
ঋতুপর্ণা: (জোরে চেঁচিয়ে) তুমি তো কাজ করেছ কৌশিকদার সঙ্গে কত ছবিতে আমাকে ছাড়া।
প্রসেনজিৎ: এইগুলো হচ্ছে ডেস্টিনি। ক্যালকুলেশনের বাইরে।
লড়াইটাকে কুর্নিশ করবেন না?
প্রসেনজিৎ: নিশ্চয়ই করব। ঋতু একটা সময়ে কাজ কমিয়ে দিয়েছিল। তারপর আবার শুরু করে। ‘মুক্তধারা’-র মতো ছবি করার জন্য গাট্স দরকার। সেটা ঋতুর আছে। সেটার জন্যই ৫০তম ছবি এবং আমি বসে আছি ৩০ বছর পরেও এই সাক্ষাৎকার দিতে।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, এই বয়সেও ‘শেষপাতা’র মতো ছবি করছেন বা ‘দশম অবতার’। ‘জুবিলি’-র মতো হিন্দি সিরিজ করছেন। এই যে উত্তরণ, আপনি কীভাবে দ্যাখেন?
ঋতুপর্ণা: হ্যাটস অফ টু হিম। ‘জুবিলি’-র পরে আমি নিজে ফোন করে ওকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। সিঙ্গাপুরে ছিলাম তখন ‘জুবিলি’ আসে, একটানে বসে দেখে ফেলেছিলাম। অ্যাম সো প্রাউড অফ হিম। ওইরকম একটা জায়গায় আইকনিক চরিত্রে অভিনয় সহজ ছিল না। তার ওপর ওয়েব সিরিজ। অনেক পুরস্কার, স্বীকৃতিও এসেছিল এই কাজগুলোর জন্য। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।
আপনারা দু’জনেই কেরিয়ারের এমন পর্যায়ে যখন খুব বেছে কাজ করতে হয়। আগামী দিনে কীসের দিকে তাকিয়ে?
প্রসেনজিৎ: ঠিক জানি না। কাজ করে যেতেই হবে। অভিনয়, পরিচালনা, কাজ আমাকে চালনা করে। সংখ্যা মেপে চলব ঠিকই। এবারে পরিচালনা করার ইচ্ছে আছে। ঋতু আমার পরিচালনায় কাজ করেছে।
ঋতুপর্ণা: আবারও করতে চাই।
প্রসেনজিৎ: (হাসি) আমার সকাল থেকে রাত্তির সিনেমা নিয়েই কাটে। ওটা ছাড়া চলতে পারব না।
ঋতুপর্ণা আপনি ওটিটি করছেন না কেন?
ঋতুপর্ণা: একটা ‘জুবিলি’ পাই করব (জোরে হাসি)।