কড়চা। চারপাশে কী হচ্ছে। কোথায় যাবেন, কী দেখবেন। সংস্কৃতির হাঁড়ির খবর, ভেতরবাড়ির খবর এখন এক ঠিকানায়: ক্ক!
অপ্রকাশিত নজরুল
‘‘যেদিন আমি থাকব নাক’ থাকবে আমার গান’’– বলেছিলেন নজরুল নিজেই। কবির প্রয়াণের এতদিন পরেও তাঁর সুরের ভুবনটি স্থায়ী। কাজী নজরুল ইসলাম-এর ১২৫তম জন্মবর্ষে তাঁরই একটি অপ্রকাশিত গান সেখানে নিয়ে আসছে জীবনস্মৃতি আর্কাইভ। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নজরুলের তত্ত্বাবধানে তাঁরই রচিত প্রায় ১৮টি গানে সুরারোপ এবং কণ্ঠদান করেছিলেন দীপালি নাগ। দীপালি নাগের তত্ত্বাবধানে কাকলী সেনের গবেষণাগ্রন্থ ‘ফৈয়াজী আলোকে নজরুলগীতি’-তে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। আর সেই সূত্রেই জানা যায়, নজরুলের ‘হে শ্যাম কল্যাণ দাও’ গানটি সেসময় দীপালি নাগের সুরে ও কণ্ঠে গ্রামোফোন কোম্পানিতে রেকর্ড হয়েছিল। তাঁর গুরু উস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ-র কাছে শেখা ‘জাত উমরিয়া অব নহিঁ ধ্যান’, শ্যামকল্যাণ রাগ এবং ঝাঁপতালে নিবদ্ধ আগ্রা ঘরানার এই বন্দিশ থেকেই সুরের রূপটি গ্রহণ করেছিলেন শিল্পী। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে তা প্রকাশ পায়নি। তবে শিল্পীর কাছে সযত্নে সংরক্ষিত ছিল সে গানের কথা। ইতিহাস-সচেতন কাকলী সেন দীপালি নাগের কাছ থেকে সেই গান শিখে নেওয়ার পাশাপাশি দীপালি নাগের হাতে লেখা গানের মূল পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি করেন, স্বরলিপি লিখে রাখেন। এই প্রতিলিপিতে স্বয়ং দীপালি নাগের স্বাক্ষর গানটির বাণী ও সুরের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করে। জীবনস্মৃতি আর্কাইভের উদ্যোগে কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবর্ষে ধ্বনিমুদ্রিকায় অপ্রকাশিত এই গানটি কাকলী সেনের কণ্ঠে প্রকাশ পাচ্ছে। অরিন্দম সাহা সরদারের ভাবনা ও রূপায়ণে আর্কাইভের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হবে এ গানের একটি দৃশ্যায়নও। এই উপস্থাপনায় নৃত্য এবং অভিনয় করেছেন বিয়াস ঘোষ। ২৬ আগস্ট, সোমবার, সন্ধ্যা ৬টায় উপস্থাপনাটি প্রকাশ করবেন সংগীত শিল্পী ও গবেষক স্বপন সোম। এছাড়া জীবনস্মৃতি-র সাথীদের নিবেদনে সেদিনের অনুষ্ঠানে থাকবে মন্ত্রপাঠ, এস্রাজ বাদন, গান, নিবন্ধপাঠ ও কবিতাপাঠ।
অতুলনীয়
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন তখনও থিতোয়নি। ব্রিটিশ রাজধানী তখন এক অস্থির সময়ের প্রবাহে। ১২ বছর বয়সে ময়মনসিংহ থেকে এসে পড়লেন অতুল বসু। আন্দোলনের আঁচ এসে পড়ল এই দ্বাদশ বর্ষীয়ের শরীর-মনে। ভর্তি করা হল তাঁকে, জুবিলি আর্ট স্কুলে। সহপাঠীরা পরবর্তী কালের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী– হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার, ভবানীচরণ লাহা। সরকারি আর্ট স্কুলে তিনি পেলেন অবন ঠাকুর এবং পার্সি ব্রাউনকে। শুধু তাই নয়, লন্ডনে ছবির পড়াশোনো ও ইউরোপ যাওয়ার বৃত্তিও তিনি পেলেন। তাঁর শিল্পের মানচিত্রে কোনও কাঁটাতার রইল না আর। এ দেশীয় রাজা রবি বর্মার স্টাইল নয়, পাশ্চাত্যের ইউরোপিয়ান রিয়ালিজম এসে পড়ল তাঁর রং-তুলিতে। প্রতিকৃতি হোক, তৈলচিত্র হোক কিংবা স্কেচ– দেখেই বোঝা যায় অতুল বসুর ঘরানায় পাশ্চাত্য শিল্পকলার ছাপ গুরুতর। তাঁর ছবি, এ কলকাতায়, আজকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ বিশেষ নেই বলাই চলে। ‘দেবভাষা’র উদ্যোগে, আজ, ২৪ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে অতুল বসুর একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘পারসিসটেস্ট অফ টাইম’। চলবে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত– প্রতিদিন দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা।
ছোটদের ছবি
ছোটরা কি স্রেফ কার্টুন দেখে? উত্তরটা বোধহয় না। সিনেমা জগতের বড় একটা অংশও খুদেদের জন্য বরাদ্দ থাকে। প্রতি বছর হাজার হাজার সিনেমা তৈরি হয় স্রেফ ছোটদের জন্য। তাও প্রায় সমস্ত ভাষাতেই। গোয়েন্দা থেকে ইতিহাস,অ্যাডভেঞ্চার কিংবা দমফাটা হাসি, কী নেই ছোটদের ছবিতে! বাংলা সিনেমাতেও ছোটদের জন্য ছবির সংখ্যা অগুনতি। ফেলুদা, নন্টে-ফন্টে থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব সাহিত্যের চরিত্র সিনেমার পর্দায় জীবন্ত হয়েছে। একইভাবে বেবিস ডে আউট, চার্লি চ্যাপলিন কিংবা হ্যারি পটারের কথাও না বললেই নয়! এইসব সিনেমা নিয়েই এবার হতে চলেছে সিনেমা উৎসব। তবে বড়দের নয়, খুদেদের জন্য। এলএক্সএম ফাউন্ডেশন (LXL Foundation) আয়োজন করছে স্কুল সিনেমা ইন্টারন্যাশালান ফিল্ম ফেস্টভ্যাল। সিনে উৎসবের সপ্তম এডিশনে অংশ নেবে ৩০ হাজারেরও বেশি স্কুলের পড়ুয়ারা। থাকছে কলকাতার প্রায় সমস্ত নামীদামী স্কুল। খুদেদের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হবে ৮০টিরও বেশি সিনেমা। ১৫-রও বেশি ভাষার সিনেমা দেখানো হবে এই উৎসবে। থাকবে বিদেশের সিনেমাও। পড়ুয়াদের কথা ভেবে বিশেষ কিছু থিম রাখা হয়েছে। যেমন সোশাল জাস্টিস, মেন্টাল অ্যাওয়ারনেস-সহ অনেক কিছু। বিশেষ জোর দেওয়া হবে পরিবেশ ভাবনাতেও। অ্যানিমেটেড সিনেমাও দেখানো হবে এই উৎসবে। শুধু তাই নয়, খুদে পড়ুয়াদের জন্য থাকছে সিনেমা তৈরির প্রতিযোগিতাও। তাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে স্কুল পড়ুয়ারা। অনুষ্ঠানে জুরি হিসেবে থাকবেন সিনে জগতের কলাকুশলীরা। থাকবেন অভিনেত্রী সায়নী গুপ্ত। এছাড়া সংস্থার কর্ণধার-সহ আরও অনেকেই থাকবেন এই সিনেমা উৎসবে।
বিনোদিনী: আলোর পথযাত্রী
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ মাত্রেই কি ভোগ্যপণ্য? সমকালে ঘটে যাওয়া যৌননিপীড়নের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা যেন সেই অস্বস্তিদায়ক প্রশ্নকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। সামাজিক অবক্ষয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বর্তমান সময় মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘সেকেলে’ অতীতকে। মনে করিয়ে দিচ্ছে বাংলা রঙ্গমঞ্চের নটী বিনোদিনীর কথা। থিয়েটারকে মনপ্রাণ দিয়ে বসা মেয়েটি ‘স্টার থিয়েটার’-এর নাম ‘বি-থিয়েটার’ হবে এই মর্মে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছিল অক্লেশে। সেই আত্মত্যাগকে অশ্রদ্ধা, অবহেলায় উপেক্ষা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি নাট্যাচার্য গিরিশ ঘোষ। পুরুষতন্ত্রের সেই আস্ফালনে বোঝা গিয়েছিল থিয়েটারে লোকশিক্ষে হয়নি মোটেই।
আজকের নতুন সময় তুলে ধরবে সেই পুরনো সময়ের কথা। বিস্মৃতপ্রায় বিনোদিনীর সময়ের সুর ধরেই করবে অন্ধকার থেকে অসুরবিনাশী আলোর সন্ধান, ‘কারিগর’-এর উদ্যোগে। ‘কারিগর’-এর ১৫ বছর পূর্তিতে ২২ আগস্ট, সন্ধে ৬টায় উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী স্টার থিয়েটার হলে আয়োজিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। উপস্থিত থাকবেন স্নিগ্ধদেব সেনগুপ্ত, দূর্বা সিংহ রায়চৌধুরী, বিভবেন্দু ভট্টাচার্য, স্নিতা প্রামাণিক, বনানী দে, আরাত্রিকা ভট্টাচার্য, শ্রুতি গোস্বামী, সঞ্চারী গোস্বামী, দীপ্তি মুখার্জি মিশ্র, অর্জুন রায়, দেবপ্রিয়া দাশগুপ্ত ও দেবলীনা ঘোষ। কিবোর্ডে থাকবেন সুব্রত (বাবু) মুখোপাধ্যায়, এসরাজে দেবাশিস হালদার, তালবাদ্যে পার্থ মুখোপাধ্যায়, পারকর্শনে অমল সরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ঐতিহ্য রায়।
সহায়তা: রণিতা চট্টোপাধ্যায়, সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়, শুভদীপ রায়, সম্বিত বসু