রোববার.ইন পা দিল এক বছরে। এক বছর আগে, সত্যবতীর চিঠি এসেছিল ব্যোমকেশের কাছে। আজ প্রথম জন্মদিনে অজিতকে চিঠি লিখছে ব্যোমকেশ, রোববার.ইন পড়ার আর্জি নিয়ে এই চিঠি। যদিও এই চিঠির গুরুত্ব অন্য জায়গায়। তা হল সত্যবতী। সত্যবতী আজ রাস্তায়। সে নিজেই সত্য অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েছে। রাত দখল করতে তার কোনও ব্যোমকেশ কিংবা অজিত লাগে না। তারা বরং রোববার.ইন পড়ুক। চিঠিফিঠি লিখুক।
ব্যোমকেশের হয়ে এই চিঠি লিখেছেন সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়।
ভাই অজিত,
কেমন আছ? বহুকাল তোমার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই। কেয়াতলায় এই গরিবের কুটিরে আজকাল আর তোমার পায়ের ধুলো পড়ে কই? না কি সেই ফুরসতটুকুও নেই?
জানি, জানি, লেখার ব্যস্ততা বড় বালাই। আজকাল শুধু বই ছাপালেই তো চলে না, সোশাল মিডিয়া নামক একটা তৃতীয় ভুবনও আছে। সেখানে নিয়মিত তোমাদের হাজিরা দিতে হয়। এত ব্যস্ততায় পুরনো বন্ধুকে মনে আর পড়বে কী করে!
যাক গে সে-কথা। আজ মনে হল তোমায় একটা চিঠি লেখা দরকার। হ্যাঁ, চিঠি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ কিংবা মেল নয়। তুমি তো জানো, আমার পক্ষে চিঠি লেখা কীরকম কষ্টকর কাজ! বাঙালির ছেলে চিঠি লিখতে শেখে বিয়ের পর, সে বদ্ধমূল ধারণা আমার টাল খেয়েছে এ ডিজিটাল যুগে। দুনিয়াটা এখন মোবাইল ফোনে বন্দি। তবু চিঠির মধ্যে নিজের ভাবনাকে ব্যক্ত করা যায় সহজে, অনায়াসে ধরা যায় নিজের ছেলেমানুষিটুকু। তাই শেষমেশ কলম বাগিয়ে বসা। তবে তোমার কথা আলাদা। তুমি সাহিত্যিক মানুষ, কল্পনা তোমার সহজাত। আমি চির কাঠখোট্টা, সত্য নিয়ে কারবার করি।
সত্যের কথায় মনে পড়ল, তোমাদের সত্যবতী আজকাল বেজায় ব্যস্ত। এ শহরের বুকে এক মারণরোগ বাসা বেঁধেছে। তা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের শিরায় শিরায়। মেয়েদের সুরক্ষা আজ বড়সড় প্রশ্নের মুখে। অন্দরমহলের কয়েদ ভেঙে মেয়েরা তাই পথে নেমেছে নিজেদের অধিকার, প্রাপ্য সম্মানটুকু বুঝে নিতে। সে লড়াইয়ে আজও সত্যও শামিল। পুঁটিরামকে পাঠিয়েছি কলেজপাড়ায়, খোকাও বেরিয়েছে নিজের কাজে। বাড়িটা আজ বড্ড ফাঁকা। কী করি? অগত্যা ‘মোবাইল শরণাং গচ্ছামি’। সেই মুঠোফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে খবর পেলাম ‘রোববার.ইন’-এর জন্মদিনের। সেদিনের নবজাতক চোখের নিমেষেই পার করে ফেলল গোটা একটা বছর, টলমল পায়ে, স্বকীয়তায় ভর করে।
………………………………………………………………..
সত্যের কথায় মনে পড়ল, তোমাদের সত্যবতী আজকাল বেজায় ব্যস্ত। এ শহরের বুকে এক মারণরোগ বাসা বেঁধেছে। তা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের শিরায় শিরায়। মেয়েদের সুরক্ষা আজ বড়সড় প্রশ্নের মুখে। অন্দরমহলের কয়েদ ভেঙে মেয়েরা তাই পথে নেমেছে নিজেদের অধিকার, প্রাপ্য সম্মানটুকু বুঝে নিতে। সে লড়াইয়ে আজও সত্যও শামিল।
………………………………………………………………..
অজিত, তুমি জানো কি না, জানি না। ঠিক এক বছর আগে রোববার ডিজিটালের আবির্ভাবের দিনে আমায় চিঠি লিখেছিল সত্যবতী। আমি তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ‘আর্জেন্ট’ কল পেয়ে দিল্লিতে। সেই সময় সত্যর চিঠি। সে সাক্ষাৎ পত্রবোমা! দেওয়ালের কান থাকে শুনেছি, আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তো দশাবতার। তার চোখ-কানও ততধিক। প্রচারও ততগুণ। সেই আশঙ্কায় গৃহদাহ আরেকটু হলেই যে লাগতে বসেছিল সত্যান্বেষীর ঘরে! আর পাঁচজন মননশীল বাঙালির মতো সত্যও জানতে পেরে গিয়েছিল রোববার ডিজিটালের আর্বিভাবের কথা। সঙ্গে এটাও জেনে ছিল, তুমি নাকি আমার আর সত্যের সম্পর্কের কেমিস্ট্রি নিয়ে ধারাবাহিক কলম লিখতে চলেছ রোববার.ইন-এ– ‘ব্যোমকেশের সত্য-সন্ধান’ নামে। ব্যস, আগুনে ঘৃতাহুতি! শেষমেশ আমাদের সাংসারিক কেচ্ছা লিখবে অজিত ঠাকুরপো? তাও সেটা আমার অনুমতি ছাড়াই? এত দুঃসাহস? চিঠির ছত্রে ছত্রে সেই আগুনে আস্ফালন যেন এক একটা শক্তিশেল হয়ে বিঁধছিল আমার মনে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নির্ঘাৎ অন্তর্যামী। আগাম বিপদ বুঝেই বোধহয় সে-যাত্রায় আমায় দিল্লি ডেকে নিয়েছিল। নয়তো মদনবাণের মতো সত্যবাণে ভস্ম হওয়া ছাড়া আমার উপায় থাকত না। আসলে কী জানো অজিত, রসায়ন বিষয়টা বড্ড গোলমেলে! সে সম্পর্কের হোক কিংবা বিজ্ঞান। সহজে তার তল মেলে না। ভালোই করেছ, কলাম না লিখে। বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। আর তুমি বইপাড়ায়, আমি সত্যসন্ধানে।
সত্যর সেই চিঠিতে আরও কিছু ছিল। তা ছিল রোববার.ইন-এর প্রতি এক প্রবল মমত্ববোধ, এক গভীর ভালোবাসা। যে অনুভূতি একজন নিবিড় পাঠকের সবচেয়ে বড় সম্পদ। সত্যর সেই অনুরাগের কারণ আমি খুঁজে দেখেছি। সত্যান্বেষণই বলতে পারো। দেখেছি, জন্মলগ্ন থেকেই সমাজের দর্পণ হিসেবে সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালির চেতনাকে, তার বাঙালিয়ানাকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে রোববার.ইন। আমাদের মনের গভীরে রেখাপাতের প্রয়াস জারি রেখেছে কৌশলী উপস্থাপনায়। রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে আবিষ্কার করা, সে ছবিতে হোক বা লেখায়। চা দিবসে চা-বিক্রেতাদের সাক্ষাৎকারে, ভিস্তিওয়ালাদের জীবন কিংবা চিনেপাড়া– রোববার.ইন আসলেই হতাশ জীবনে বাতাস দিল। উদাহরণে কুলোবে না, ফলে একটু সাইট ঘুরে দেখো হে। তুমিও লিখলে-টিখলে ওদের মেল করো। শুনেছি রিপ্লাই দেওয়ার ব্যাপারে ওরা তেমন দেরি করে না।
তোমার,
ব্যোমকেশ