চিনের মিং বংশের রাজত্বকালেই রচিত ‘চিং পিং মেই’ অর্থাৎ ‘সোনার পদ্ম’ গ্রন্থটি যৌন উত্তেজক রচনা হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। চিনের নর-নারীদের যৌনচাহিদা বিষয়ক তথ্যের খনি ছিল এই গ্রন্থটি। এই রচনায় একজন ধনী ওষুধ বিক্রেতা এবং তার ছয় স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে। গ্রন্থের প্রস্তাবনা অংশেই রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, পাঠক যেন এই গ্রন্থ পাঠ করে যৌন বিষয়ে অতি বেশি নিবিষ্ট না হয়ে পড়েন।
১৯১৬ নাগাদ জাপান যাত্রার পথে জাহাজ থেকে চিনা মজুরদের শারীরিক বিবরণ পেশ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের বয়ানে এই মজুররা নীল পায়জামা পরা এবং ‘গা খোলা’। জাহাজ ঘাটে চিনা মজুরদের কাজ এবং শরীর– উভয় পরিসরই মুগ্ধ করেছিল রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথের নিজের কথায়: ‘এমন শরীরও কোথাও দেখি নি, এমন কাজও না। একেবারে প্রাণসার দেহ, লেশমাত্র বাহুল্য নেই। কাজের তালে তালে সমস্ত শরীরের মাংসপেশী কেবলই ঢেউ খেলাচ্ছে’। মাংসপেশীর যে ঢেউ মোহিত করেছিল রবীন্দ্রনাথকে, তা নিপাট পুরুষালী শৌর্য-বীর্যের আখ্যান নয়। এই দেহের পরিচিতি শরীরচর্চাকারীর মাংসপেশির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বরং এই চিনা শরীরের সঙ্গে সৌন্দর্য এবং কামনার এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়, যখন রবীন্দ্রনাথ লেখেন: ‘এ কথা জোর করে বলতে পারি, ওদের দেহের চেয়ে কোনো স্ত্রীলোকের দেহ সুন্দর হতে পারে না, কেননা, শক্তির সঙ্গে সুষমার এমন নিখুঁত সংগতি মেয়েদের শরীরে নিশ্চয়ই দুর্লভ’।
রবীন্দ্রনাথের এই দেহসৌন্দর্যের বিচারে কাজের স্থানও সমান ভাবেই জুড়ে রয়েছে। কাজের ক্ষেত্রেও কোথাও ‘অনিচ্ছা অবসাদ বা জড়ত্বের লেশমাত্র লক্ষণ’ নেই মজুরদের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথের এই দেখার মধ্যে আরও একটা বিশেষ দৃশ্য ধরা পড়ে। ঠিক সামনেই আর একটা জাহাজে বিকেলবেলা কাজকর্মের পর ‘সমস্ত চীনা মাল্লা…ডেকের উপর কাপড় খুলে ফেলে স্নান করছিল’।
স্নানের এই বিশেষ দৃশ্যটি রবীন্দ্রনাথের চিন্তায় গেঁথে যায়। তাঁর নিজের ভাষায়: ‘মানুষের শরীরের যে কী স্বর্গীয় শোভা তা আমি এমন করে আর কোনোদিন দেখতে পাই নি’। এরপর রবীন্দ্রনাথের বয়ান আর ব্যক্তিশরীরে সীমাবদ্ধ না থেকে আস্ত চিনা জাতির দিকে ধাবিত হয়েছে। চিনের প্রতি আমেরিকার ভয় ইত্যাদি প্রসঙ্গ ঠাঁই পেয়েছে সেখানে। বৃহত্তর পরিকল্পনা যাই থাক, চিনা মুজুরদের দেহকে যেভাবে চিনেছেন রবীন্দ্রনাথ, তা যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক। দারিদ্রর পূজা বা বেদনার রাশি রাশি বর্ণনা নয়, বরং প্রচলিত সেই পথ থেকে সরে এসে ‘শরীর’-এর নিজস্ব সৌন্দর্য অনুসন্ধান করেছেন রবীন্দ্রনাথ। মজুর আর মালিকের বিস্তর ফারাকের পরেও, মজুরের দেহ তাকে সেই পরিসর দেয়, যা নির্মাণ করে স্বাধীন সত্তা।
সামাজিক অবস্থানের বিচারেও রবীন্দ্রনাথ এবং চিনা মজুরদের মধ্যে বিস্তর প্রভেদ। রয়েছে সামাজিক শাসন তথা বড় এবং ছোটর দ্বিত্ব। কিন্তু এই ক্ষমতাপ্রকরণগুলি ভেঙে পড়ে শরীর চেনার মুহূর্তে। এটা ঠিক যে, এই ভাঙন ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু তথাপি সেই ভাঙনের মুহূর্তটুকু তার গুরুত্ব হারায় না। খেয়াল রাখা দরকার, অন্ত্য উনিশ শতকের বাঙালির লেখালেখিতে চিনা-শরীর বিষয়ে নঞর্থক চিন্তার ভুরিভুরি প্রমাণ রয়েছে। ১৮৮৭ নাগাদ সৌরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় চিনা দেহকে ‘খোক্ষস’-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। নেতির এই সিলসিলা ভেঙে পড়ে রবীন্দ্রনাথের বিচারে।
তবে প্রাক্-ঔপনিবেশিক যুগেও যে চিনা দেহকে নেতির মানদণ্ডে বিচার করা হত, এমনটা নয়। বরং ঔপনিবেশিকতার সূত্রেই উনিশ শতকের সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালির মনে চৈনিক দেহের বিকৃত রূপ জন্মাতে শুরু করে। প্রাক্-ঔপনিবেশিক বোঝাপড়ায় বাংলার সঙ্গে চিনের সহযোগিতা এবং বিরোধের অন্তর্লীন সম্পর্ক ছিল। সময়টা ১৪১৫। পাণ্ডুয়া তথা বাংলার মসনদে সুলতান জালালুদ্দিন। সুদূর চিনে তখন রাজত্ব করছেন সম্রাট যুং-লো। সমকালের চৈনিক লেখক ‘ফেই-শিন’-এর ‘শিং-ছা-শ্যং-লান’ গ্রন্থের সাক্ষ্য অনুযায়ী, হৌ-শিয়েনের নেতৃত্বাধিন একদল চৈনিক রাজ প্রতিনিধি এ-সময় পাণ্ডুয়া আসেন। বাংলার সুলতান চিনের প্রতিনিধিদের যথাযোগ্য মর্যাদায় আপ্যায়ন করেন। ভোজসভায় তাঁদের জন্য পরিবেশিত হয় মেষ এবং গো-মাংসের কাবাব। নিষিদ্ধ ছিল মদ্যপান, বদলে পরিবেশিত হয় শরবত।
……………………………………………………………..
১৯৫০ থেকে নেহেরুর নেতৃত্বে চিন এবং ভারতের মধ্যে একটা মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে। কিন্তু ১৯৬০-র কালপর্বে এসে সেই সহাবস্থান লড়াইয়ের আকার নিল। বিদ্বেষের আগুন ছড়াল। আর ঠিক এখান থেকেই, এই সংঘর্ষের প্রতর্কই একটা নতুন জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছিল সেদিন। এমন মারামারি তথা খুনোখুনির দিনেও কী আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে পারি? তাদের ইতিহাসকে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে পারি? আর যদি-বা পড়ি, সেই পড়াটুকু কতখানি সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য, আর কতখানি অপরের সংস্কৃতিকে ছোট করার জন্য, তার কি এক কথায় আদৌ কোনও উত্তর দিতে পারব?
……………………………………………………………..
‘ফেই-শিন’-এর বয়ান অনুসারে, মদ্যপান নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ ছিল: হতে পারে ইন্দ্রিয় উত্তেজনা এবং শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। এই নিষেধাজ্ঞাকে কিন্তু কোনও ভাবেই সম্রাটের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস বা ইসলামের কর্তব্যকর্মের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া যায় না। আচারধর্মের শক্তিকে অস্বীকার করছি না, কিন্তু মদ্যপান থেকে সরে থাকার মধ্যে অনেক বেশি সমকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তৎজাত আত্মরক্ষার প্রকৌশল প্রস্ফুটিত হয়েছে। ‘কান্স রায়’ তথা রাজা/ জমিদার গণেশের পুত্র যদু ইসলাম গ্রহণ করেন এবং গণেশ বনাম ইব্রাহিম শর্কীর লড়াইতে পিতার বিরুদ্ধে জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিমের পক্ষে রইলেন। যুদ্ধান্তে পরাজিত হন গণেশ এবং ইব্রাহিমের সম্মতিতে সিংহাসনে বসেন যদু তথা জালালুদ্দিন।
কিন্তু রাজা হয়েও শান্তি ছিল না জালিলুদ্দিনের মনে। ভয় ছিল যে কোনও দিন আসতে পারে ইব্রাহিমের থেকে আক্রমণ। চৈনিক রাজবংশের ইতিহাস ‘মিং-শ্ র্’-এর সাক্ষ্যানুযায়ী, হৌ-শিয়েনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জৌনপুর এবং বাংলার নবাবের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য। তবে শুধু একা জালালুদ্দিন নয়, ১৪০৮-১৪৩৮ সাধারণাব্দে নানা সময় বাংলার সুলতানরা চিনের সঙ্গে মৈত্রিতা জন্য উপহার হিসাবে জিরাফ বা ঘোড়া প্রেরণ করতেন। জিরাফের উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়, তৎকালে বাংলার সঙ্গে আফ্রিকার সম্পর্কের ইতিহাস। এক ভূখণ্ড থেকে অন্য ভূখণ্ডে পশু-পাখির আদান প্রদানের সঙ্গে মিলে ছিল বিনোদন, আভিজাত্য এবং প্রয়োজনের সম্পর্ক। না-হলে জিরাফের মতো প্রাণী তো আর বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ ছিল না।
আধুনিক কালে ফিরে আসা যাক। ১৯৫০ থেকে নেহেরুর নেতৃত্বে চিন এবং ভারতের মধ্যে একটা মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে। কিন্তু ১৯৬০-র কালপর্বে এসে সেই সহাবস্থান লড়াইয়ের আকার নিল। বিদ্বেষের আগুন ছড়াল। আর ঠিক এখান থেকেই, এই সংঘর্ষের প্রতর্কই একটা নতুন জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছিল সেদিন। এমন মারামারি তথা খুনোখুনির দিনেও কী আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে পারি? তাদের ইতিহাসকে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে পারি? আর যদি-বা পড়ি, সেই পড়াটুকু কতখানি সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য, আর কতখানি অপরের সংস্কৃতিকে ছোট করার জন্য, তার কি এক কথায় আদৌ কোনও উত্তর দিতে পারব?
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আরও পড়ুন বিশ্বজিৎ রায়-এর লেখা: চিনের দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের সভ্যতা-ভাবনা ছিল কল্পনা বিলাস
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন সেখানকার রাজা-রানিকে কেন্দ্র করে নানা বিকৃত যৌনাচারের কাহিনি তৈরি হয়েছিল। রাজশক্তির আদিরসাত্মক আখ্যানকে ব্যবহার করে বিপ্লবের মাটি অনেকখানি শক্ত হয়েছিল সেদিন। ভারত এবং চিনের সংঘর্ষকালীন দিনে, চিনের সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে যৌনতার ইতিহাস লিখনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন আশীষ বসু। ১৯৬৭ নাগাদ লিখলেন ‘প্রাচীন চীনের যৌনচিন্তা’। ১৩৬৮ থেকে ১৬৪৪ সাধারণাব্দ পর্যন্ত প্রসারিত চিনের মিং বংশের রাজত্বকালীন যৌনতার ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলেন শ্রী বসু। আশীষবাবুর মতে, এই সময় যৌনতার নানা ধরন খুঁজতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল চৈনিক নাগরিকেরা। বিশেষ করে, পীড়নের মাধ্যমে রতিতৃপ্তি অর্থাৎ Sadism-র নানা খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছিল চিনদেশীয় নর-নারীর থেকে। Sadism-কে অবশ্যই ‘যৌন বিকৃতি’ বলেই মনে করতেন অধ্যাপক বসু। কিন্তু তার এই মনে করা মধ্যে আলাদা করে চিনের সংস্কৃতিকে ছোট করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। সেদিনের সামাজিক জীবনে তথা যৌনতা সংক্রান্ত চর্চার জগতে Sadism একটি অপরাধ বিশেষই ছিল।
যৌনতার ইতিহাসে যা সব থেকে জরুরি, তা হল যৌনতার প্রকাশের ধরন। আর সেই যৌনতার প্রকাশে সাহিত্য বড় ভূমিকা গ্রহণ করে। আমাদের যৌনতা সংক্রান্ত কল্পনা বা চাহিদা যা বাস্তব জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই পূরণ করা সম্ভব হয় না ব্যক্তির নৈতিক এবং সামাজিক নানা অনুশাসনের কারণে, সেই অপূর্ণতা তীব্র বেগে বেরিয়ে আসতে পারে সাহিত্যের অনুশীলনের মাধ্যমে। যৌন আনন্দের এই প্রকাশকে একমাত্রিকভাবে শুধুমাত্র অবদমন থেকে মুক্তি ভাবলে মস্ত বড় ভুল করব আমরা। বরং যৌনতার মধ্যে যুগপৎ যে আনন্দ এবং ভীতির পরিসর থাকে তাকে সমবেতভাবে গ্রহণের মধ্যেই যৌনতার আসল রহস্য লুকিয়ে আছে। রক্তমাংসের নারী-পুরুষ যৌনসুখের মুহূর্তে যেমন তীব্র আনন্দের মধ্যে বিরাজ করে, তেমনই তার মনের মধ্যে একটা ভীতিও কাজ করে যে, সে তার পছন্দের পুরুষ বা নারীটিকে সম্পূর্ণ সুখ দিতে পারল কি না। আসলে ‘সম্পূর্ণ সুখ’ নামক একটি অলৌকিক ধারণার প্রতি অনবরত ছুটে চলি আমরা। যৌনতার মধ্যে যে অপূর্ণতার রহস্য থাকে তাই আসলে সাহিত্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা যৌন আনন্দের প্রতি অনবরত তাড়া করে বেড়ায় আমাদের।
অধ্যাপক বসু লিখেছেন, চিনের মিং বংশের রাজত্বকালেই রচিত ‘চিং পিং মেই’ অর্থাৎ ‘সোনার পদ্ম’ গ্রন্থটি যৌন উত্তেজক রচনা হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। চিনের নর-নারীদের যৌনচাহিদা বিষয়ক তথ্যের খনি ছিল এই গ্রন্থটি। এই রচনায় একজন ধনী ওষুধ বিক্রেতা এবং তার ছয় স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে। গ্রন্থের প্রস্তাবনা অংশেই রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, পাঠক যেন এই গ্রন্থপাঠ করে যৌন বিষয়ে অতি বেশি নিবিষ্ট না হয়ে পড়েন। গ্রন্থ আরও চেতবনি দেওয়া হয়েছে যে– এই পুস্তক যে আনন্দের পথ আপনার সামনে খুলে দিচ্ছে, ওই পথই আসলে আপনাকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যেতে পারে। গ্রন্থের নায়ক তার সুবিখ্যাত নায়িকা স্বর্ণ পদ্মের সঙ্গে দীর্ঘদিন বিশৃঙ্খল জীবনযাপন করার পর শেষপর্যন্ত আক্ষেপ করেছে, অনুতপ্ত হয়েছে। নায়ক সবসময় নিজের কাছে একটি ড্রাগন-খোদিত মূল্যবান পাথরের আংটি রাখত। এই আংটি সে যৌন মিলনে প্রবৃত্ত হওয়ার সময় লিঙ্গের গোড়ায় পরত। যৌনমিলনকালে আংটি-তে খোদিত ড্রাগনের বাঁকানো মাথা নারীর ক্লিটোরিসের পরে ঘর্ষিত হত এবং এই ঘর্ষণের ফলে নারীর যৌন উত্তেজনা তীব্রতা লাভ করত। শুধুমাত্র এটুকুই নয়। এই আখ্যানে নারীদের সমকামিতার কথাও বর্ণিত হয়েছে।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আরও পড়ুন ভাস্কর মজুমদার-এর লেখা: বাঙালি-পুরুষ বিচারে ইতিহাস এত নির্দয় কেন?
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
কিন্তু এই এত কিছুর পরেও আশীষবাবুর স্পষ্ট মতামত, এই গ্রন্থে ‘যৌন বিকৃতি’র কোনও বর্ণনা ছিল না। সেদিনের সামাজিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চিনের যৌনতার ইতিহাসকে যতখানি যত্নের সঙ্গে পড়েছিলেন আশীষ বসু, তা আমাদের বুঝিয়ে দেয়– শতেক যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও এমন অনেকেই ছিলেন যাঁরা অপর দেশের সংস্কৃতিকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিচার করেননি। অধ্যাপক বসু চিনের সংস্কৃতিচর্চায় যৌনতার প্রসঙ্গে দু’টি ধারার অনুগামী ছিলেন। যার মধ্যে প্রথম ধারায় তার অনুসন্ধান ছিল– চৈনিক নারী-পুরুষদের যৌন জীবনের খোঁজ, যেখানে ‘যৌন বিকৃতি’র উপস্থিতি তিনি খুঁজে পান। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, সাহিত্যকে পাঠ করার সময় ‘যৌন বিকৃতি’-র প্রসঙ্গটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়নি তাঁর কাছে। সাহিত্য-সংক্রান্ত এই বোঝাপড়া বিশেষভাবে খেয়াল করার মতো।
………………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
………………………………………..
নানা পথে, নানা প্রান্তরে ছড়িয়ে আছে চিনা দেহের ইতিহাস। দেহ অর্থে নিত্যদিনের যাতায়াত– টুকিটাকির পাশে যৌনতার কথাও বলা হল। তবে যা লেখা হল তাকে ঠিক আলাপ বলে না, অতি সামান্য চেনা-জানা মাত্র!