অবিস্মরণীয় যন্ত্রণার গরিমা সংলাপের সোনার কাঠিতে খুঁজে পেয়েছে আপন প্রাণ। কয়েকটি অধ্যায় লাগত যা বলতে, মাত্র কয়েক মিনিটে সমাজেতিহাস ও মনস্তত্ত্ব ক্যামেরায় তুলি দিয়ে এঁকে দিলেন সত্যজিৎ।
চিন্ময় গুহ
তপন সিন্হা তাঁর এক অন্তিম সাক্ষাৎকারে বলেন, যে জিনিসটি তাঁর করা বাকি রয়ে গেল, সেটি হল চলচ্চিত্রের পর্দায় একটি ‘চরিত্র’ তৈরি করা, যা ‘আমাদের দেশে একমাত্র সত্যজিৎবাবু পেরেছেন।’ তাঁর নানা অসম প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও ঋত্বিক ঘটকের নিবন্ধের শিরোনামটি মনে পড়বে: ‘একমাত্র সত্যজিৎ রায়’। এই কথার মাহাত্ম্য অনেকেই বোঝেননি, কারণ সেজন্য যে শিক্ষিত ও অনুভূতিশীল অভিনিবেশ প্রয়োজন, তা আজও খুব সুলভ নয়। কথার পর কথা সাজানোর অপার বিস্ময়!
তুলি, কলম আর ছেনি-বাটালি নিয়ে সত্যজিতের এই চরিত্র নির্মাণের পিছনে সংলাপের ভূমিকা অপরিসীম। সেই সংলাপ রচনায় সত্যজিৎ রায় যে কোন সূক্ষ্মতায় পৌঁছেছেন, তার উদাহরণ তাঁর প্রতিটি কাজে খুঁজে পাওয়া যাবে। এদিক থেকে তিনি বিশ্বের বহু প্রথিতযশা সাহিত্যিককে অতিক্রম করে গেছেন।
ধরা যাক, মাত্র মধ্য-ত্রিশ বয়সে তৈরি সত্যজিতের ‘জলসাঘর’ ছবির দৃশ্য, যে ছবি সত্তর দশকের শেষে প্রথম দেখে গোটা ফ্রান্স হতবাক হয়ে যায়। ধ্বংসায়মান জমিদার বিশ্বম্ভর রায় লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে। ধুলোমাখা আয়নায় তাঁর ঝাপসা প্রতিবিম্ব। হাত দিয়ে মুছলেন আয়নার ধুলো। নিজের গালে হাত বুলিয়ে দেখলেন বার্ধক্যের রেখা। কী যেন ভাবলেন। তারপর অপ্রত্যাশিত ভাবে নায়েবকে বললেন:
তারাপ্রসন্ন: দেবোত্তরের তহবিলে তিনশোর বেশি নেই হুজুর।
বিশ্বম্ভর: কাল এখানে জলসা হবে। কৃষ্ণাবাইকে চাই!
(আয়নায় দেখা যাচ্ছে বিশ্বম্ভর বেরিয়ে যাচ্ছেন)
তারাপ্রসন্ন (চমকে উঠে): কিন্তু, এ তো সম্ভব নয়, হুজুর।
(বিশ্বম্ভর যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ান)
বিশ্বম্ভর: কী বললে?
(এগিয়ে এসে–)
বিশ্বম্ভর: কী বললে?
তারাপ্রসন্ন: মাপ করবেন হুজুর, মাপ করবেন।
এমন অবিস্মরণীয় যন্ত্রণার গরিমা সংলাপের সোনার কাঠিতে খুঁজে পেয়েছে আপন প্রাণ। কয়েকটি অধ্যায় লাগত যা বলতে, মাত্র কয়েক মিনিটে সমাজেতিহাস ও মনস্তত্ত্ব ক্যামেরায় তুলি দিয়ে এঁকে দিলেন সত্যজিৎ।
‘জলসাঘর’ সিনেমার একটি দৃশ্য
‘মহানগর’। ছোট্ট পিন্টু সাবানের বুদবুদ ওড়ায়। প্রবল অভিমানে বলে, ‘মা-র অফিসটা বাজে!’ কিন্তু খেলনার কথা শুনেই জিজ্ঞেস করে: ‘কী খেলনা?’ তিনটি আঁচড়ে একটি চরিত্র-চিত্রণ বিশ্ব-চলচ্চিত্রে সত্যি ক’বার দেখেছি আমরা?
আরতির নিয়োগপত্র আসার পর–
বাণী: সামনের মাস থেকেই, না দাদা?
(সুব্রত মাথা নাড়ে)
বাণী: মাত্র একশো টাকা মাইনে কেন? দীপ্তিদের ড্রাইভার তো—
সুব্রত: তুই থাম তো!
পিন্টু: কী চিঠি, আমি দেখব—
(পিন্টু চিঠি নেয় ও দেখে)
পিন্টু: হয়ে গেছে—
(চিঠিটা বাপের হাতে দেয় ও বেরিয়ে যায়)
তিনটি ভিন্ন বয়সের মানুষের প্রতিক্রিয়া যেন সূক্ষ্ম বীণার তারে বাঁধা। যিনি পাশ্চাত্য সংগীত বোঝেন, তিনি ছাড়া কে পারতেন এই সংলাপ লিখতে ?
আরেকটি দৃশ্য।
সুব্রত-র বৃদ্ধ পিতার ঘর। তিনি বসে আছেন। মা মশা মারার ফ্লিট স্প্রে করছেন।
সুব্রত-র বাবা: দাও, ওই টেবিলের তলায় দাও একটু।
মা: যা, ফুরিয়ে গেল! কী করবে করো— তোমরা মশার—
(সুব্রত ঘরে ঢোকে)
বাবা: তোর আবার কী রে?
সুব্রত: বাবা, আরতি একটা চাকরি নিয়েছে।
বাবা: কে?
সুব্রত: আরতি।
বাবা (স্তম্ভিত): বৌমা?
সুব্রত: খুব ভালো ফার্ম। Apply করেছিল, interview দিয়েছিল। আজ appointment letter -টা এসে গেছে। সেলস গার্লের কাজ। একশো টাকা মাইনে—
বাবা: বৌমা! সেলস গার্ল! বৌমার কী মত?
সুব্রত: সে ইচ্ছে করে নেয়নি, দায়ে পড়ে। আমার একটা পার্ট-টাইম কিছু হলেই ও ছেড়ে দেবে।
বাবা (দীর্ঘশ্বাস ফেলে): বৌমাও চেঞ্জ হয়ে গেছে!
সুব্রত: অগত্যা। দিন বদলেছে, সেইসঙ্গে লোকের মতও বদলেছে। চেঞ্জ আসে কতকগুলো necessity থেকে। আমার একার দ্বারা আর সম্ভব হচ্ছে না! আপনি অবশ্য বলবেন এককালে আপনাকে আমার থেকেও বড় সংসারের ভার বহন করতে হয়েছে, আর তার জন্য মা-কে কোনও দিন চাকরি করতে হয়নি! কিন্তু সে যুগ আর এ যুগ এক নয় বাবা—
(বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় মা-কে দেখে)
সুব্রত: তোমারও কিছু বলার আছে নাকি?
মা: তোর কাছে এসে তোর পর হয়ে গেলাম আমি।
এমনভাবে সমাজ ও মানবমনের একাধিক প্রজন্মের নানা বিরোধী ও জটিল দৃষ্টিকোণকে কয়েকটি আশ্চর্য মুহূর্তে উপস্থাপন করা হচ্ছে ক্ষিপ্র ও অনায়াস নিপুণতায়।
লিফটে আরতি ও ইডিথ।
ইডিথ (বোতাম টিপে): Was that your boyfriend?
আরতি: উঁ?
ইডিথ: The one you waved at—your boyfriend?
আরতি মাথা নাড়ে। সিঁথির সিঁদুর দেখায়।
ইডিথ: Oh! Your husband?
এক সদ্য-নির্গত ইংরেজি না বলতে পারা গৃহবধূ, এবং ছয়ের দশকের প্রায় প্রতিনিধিত্বমূলক একটি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মেয়ের অপূর্ব ইঙ্গিতময় কথোপকথন। যার পিছনে আছে বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও তার ভাষা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান।
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’। পলিন কেল সহ বহু প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র-সমালোচকের মতে, সত্যজিতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি। আমি বিখ্যাত ‘মেমরি গেম’ চিত্রাংশ নিয়ে কিছু লিখছি না। সে-বিষয়ে অন্যত্র লিখেছি। শুধু মনে পড়ছে পালামৌর বাগানবাড়িতে বারান্দার বাইরে একটি চেয়ারে বসে সদাশিব ত্রিপাঠির গান। সত্যজিৎ নির্বাচন করেছেন অতুলপ্রসাদের ধর্মসংগীত:
‘শুন সে ডাকে আমারে/ বিনা সে সখারে/ রহিতে মম নারে/ সে ডাকে আমারে!’ আরেকটি চেয়ারে বসে ত্রিপাঠির মেয়ে অপর্ণা রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বোন’ পড়ছে। চার বন্ধু ত্রিপাঠির পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, সংগীতে মগ্ন মানুষটি টের পাননি।
আমাদের মনে পড়বে রবীন্দ্রসংগীতের আরও তিনটি তুলনারহিত প্রয়োগ। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবিতে সর্বজয়ার নির্জনে গাওয়া ‘এ পরবাসে রবে কে’, যেখানে বোঝা যায় ছবির আসল ট্র্যাজেডি তাঁর, তাঁর মেয়ের নয়। অন্যটি ‘জন-অরণ্য’ ছবিতে ঘনায়মান অন্ধকারে রেডিওতে বাজা ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’। তৃতীয়টি তাঁর শেষ ছবি ‘আগন্তুক’-এ অনিলার গাওয়া ‘বাজিল কাহার বীণা’, যা নৃতত্ত্ববিদ মনমোহনের তোলা জীবনের গূঢ় প্রশ্নগুলিকে মেলে ধরে।
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র একটি দৃশ্যে হরি আর সাঁওতাল মেয়ে দুলি। বন। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। দুলি ঘাসের ওপরে চিৎ হয়ে শুয়ে। হরি উপুড় হয়ে দুলির খুব কাছে মুখের ওপরে মুখ এনে কথা বলছে। ফুটে উঠছে শহুরে প্রাক-নির্ধারিত অগভীর দৃ্ষ্টিতে অরণ্যকে দেখা। মনে রাখতে হবে, চার বন্ধুর মধ্যে একমাত্র হরিই নিরাভরণ প্রকৃতির দিকে অপ্রতিরোধ্যভাবে আকৃষ্ট হয়। দু’জনেই অবসন্ন, তৃপ্ত, শান্ত।
হরি: তোর স্বামী নেই?
দুলি: মরে গেল।
হরি: মরে গেচে?
দুলি: বুনে গেছে কাঠ কাটতে, আর সাপ এইসে—
হরি: সাপে কাটল?
দুলি: কী জানি কুথায় খোকা হয়ে জন্মাইছে আবার—
হরি: তুই কলকাতায় যাবি?
দুলি: কলকাতায় কাম মিলে কত!
হরি: তুই আসিস— এলে তোকে আমার খেলা দেখিয়ে দেব— ক্রিকেট!
(দুলি খিলখিল করে হেসে ওঠে)
হরি: আমার রিস্ট দেখচিস, রিস্ট? (হরি কবজি দেখায়)
হরি: এই নিয়ে কেমন ছয় হাঁকড়াব দেখিস। (দুলি অন্যমনস্ক)
হরি: উঁ!… তোর জন্য আমি কী আনব জানিস— কলকাতা থেকে? বল তো—
দুলি: কী করে জানব?
হরি: আরেকটা চুল! তোর এই চুল— তার ওপর আরেকটা চুল! তুই সেটা পরবি মাথায়…
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ সিনেমার একটি দৃশ্যে সিমি গারওয়াল
আমরা, অনুভূতিশীল দর্শকরা সত্যজিতের এই ভয়ংকর জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দেখে তড়িৎস্পৃষ্ট হই। একদিন সমাজের উপরতলার বান্ধবীটির শহুরে ভণ্ডামি অসহ্য লাগায় তার নকল চুল খুলে দিয়েছিল হরি, আজ সে-ই সাঁওতাল মেয়েটিকে সেই নকল মুখোশে দেখতে চাইছে! মনস্তত্ত্ব নিয়ে সত্যজিতের গভীর বীক্ষণ আমরা বারবার দেখেছি। শহুরে মানুষের—যার মধ্যে হরি বিশেষ ভাবে আলাদা,পরস্পরবিরোধিতা নিয়ে এই ছবি নতুন আলো ফেলে।
পরে। হরি খালি গায়ে ছিল, সে টি-শার্ট চাপিয়ে প্যান্টের ধুলো ঝাড়ে।
হরি: চলি। কাল আসবি তো?
দুলি: কুথায়?
হরি: আবার বলে কুথায়! মেলায়। আসিস, নইলে ঠ্যাঙাব।
সংলাপ কাকে বলে! কী করে সত্যজিৎ তাঁর সেই বিখ্যাত চেয়ারে বসে সমাজের নানা স্তরের ভাষা, ভাষার স্তর এবং ভাষাভঙ্গি জানলেন?
ত্রিপাঠিদের বাড়ি। জয়া কফি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে সঞ্জয়কে বাড়ি নিয়ে গেছে। ঘর থেকে বেরচ্ছে না। সঞ্জয় ঘড়ি দেখে। বাইরে অন্ধকার হয়ে আসছে। জয়া হালকা রঙের ঢাকাই ছেড়ে গাঢ় রঙের শাড়ি পরেছে, হাতে, গলায়, কানে ও খোঁপায় মেলা থেকে সদ্য কেনা রুপোর গয়না পরেছে। তাকে সলজ্জ অথচ দৃপ্ত, লাস্যময়ী দেখাচ্ছে। সঞ্জয় হকচকিয়ে গেছে।
জয়া: ভূতই তো!… স্বামী মরে গেলে তো শুধু স্বামীই মরে না…
(জয়া সঞ্জয়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চায়—)
জয়া: আমার স্বামী সুইসাইড করেছিল, জানেন?
সঞ্জয়: সে কী! কেন?
জয়া: সে কী করে জানব? এখানে তো নয়— বিলেতে। …আর কেউ ছিল বোধহয়! …আপনার নার্ভাস লাগছে?
সঞ্জয়: ন্-না—
জয়া: আমার লাগছে।
(হঠাৎ সঞ্জয়ের দিকে এগিয়ে আসে। তার বাঁ হাতটা নিজের বুকে রাখে। সে সঞ্জয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে। সঞ্জয় চোখ সরিয়ে নেয়। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। জয়া হাত ছাড়ে না। টাইমপিসের টিক টিক শব্দ। বাইরে বনে শেয়াল ডেকে উঠল। কফির কাপে সর— সামাজিক মুখোশ যেভাবে আমাদের প্রবৃত্তিকে ঢেকে রেখেছে! একটি গাড়ির আওয়াজ)
জয়া: ওটা আমাদের গাড়ি নয়।
(জয়া ঘুরে যায়, সঞ্জয়ের কাছ থেকে সরে যায়। তারপর ফিরে দাঁড়িয়ে–)
জয়া: হল তো কফি খাওয়া?
এক উচ্চ মধ্যবিত্ত নারীর কামনার আর্তি নিয়ে এই দৃশ্যটি বাংলা ছবিতে ব্যতিক্রম হয়ে আছে।
ছবির ক্লাইম্যাক্সে ক্যালেইডোস্কোপের মতো একেকটা বৃত্ত। অসীম আর অপর্ণা। নদীর ধারে। অপর্ণার আঁজলা থেকে বালি ঝরছে। পলিন কেল-এর মতে বিশ্বচলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দৃশ্য।
অসীম: সময় যখন এত কম, বলেই ফেলি, আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। গোড়ায় আপনাকে ঠিক বুঝতে পারিনি। মনে হয়েছিল কলকাতার পার্টিতে যেরকম মেয়ে মিট করি, আপনিও বুঝি সেইরকম। এখন দেখছি তা নয়।
অপর্ণা: আর আপনাকে দেখে আমার কী মনে হয়েছিল জানেন? যে ভদ্রলোকের কনফিডেন্সটা একটু থেঁতলে দিতে পারলে বেশ হয়।
অসীম: সে কনফিডেন্স আর নেই। আপনা থেকেই থেঁতলে গেছে। কিন্তু একটা ব্যাপারে বারবার গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। আপনাকে কিছুতেই ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না— কেন বলুন তো?
(অপর্ণা কিছুক্ষণ নির্বাক। হাত থেকে বালি ঝেড়ে ফেলে সে)
অপর্ণা: আপনাকে হয়তো আমি কিছুটা হেল্প করতে পারি।
অসীম: করুন না!
(অপর্ণা অস্তগামী সূর্যের দিকে তাকায়। মাদলের শব্দ ভেসে আসে দূর থেকে)
অপর্ণা: তিন বছর আগে আমার দাদা সুইসাইড করেন। …দাদা আমার খুব বন্ধু ছিলেন।
(অসীম স্তব্ধ)
অপর্ণা: আর আমার যখন বারো বছর বয়স, তখন আমার মা আগুনে পুড়ে মারা যান। আমি ছাড়া তখন বাড়িতে কেউ ছিল না…
(অসীম ধীরে ধীরে অপর্ণার দিকে এগিয়ে আসে)
অপর্ণা: মনে আছে— তখন আমি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি— একবার এখানে এসেছিলাম— বিকেলে বেড়াতে বেরিয়েছি— দেখলাম, দূরে পাহাড়ের গায়ে, বনে আগুন লেগেছে। সেই আগুন দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।
(অসীম এখন অপর্ণার পাশে, তার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে।)
অপর্ণা: আপনি বোধহয় জীবনে কোনও বড় দুঃখ পাননি, তাই না?
(অসীম চোখ নামায়)
…
অসীম: কলকাতায় কোথায় তোমার দেখা পাব?
অপর্ণা: আমি পার্টিজে যাই না। আমার ভালো লাগে না।
অসীম: ঠিক আছে— কিন্তু কোথায় দেখা পাব বলো।
অপর্ণা: হাতটা ছাড়ুন—
(অপর্ণা ব্যাগ খুলে একটা কলম বের করে কাগজ খুঁজতে থাকে)
অপর্ণা: আপনার লাইটারটা একটু জ্বালবেন?
(অসীম লাইটার জ্বেলে অপর্ণার সামনে ধরে। অপর্ণা কাগজ খুঁজে পায়। তাতে কিছু লিখে অসীমকে দেয়। অসীম দেখে— একটা পাঁচ টাকার নোটের জলছাপের সাদা অংশে টেলিফোন নম্বর লিখে দিয়েছে)
জাতীয় স্বার্থরক্ষায় অনুদান বন্ধ আমেরিকার, অতল অন্ধকারে আজকের আফ্রিকা
দু’জন মানুষ– একজন রাষ্ট্রের প্রধান, আর একজন বিজনেস টাইকুন– যিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত নন, তাঁদের সিদ্ধান্তে গত দু’-তিন সপ্তাহে এত মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে, এত সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যে, হিসাব রাখা যাচ্ছে না।
এইচআইভি শনাক্তের উদ্দেশ্যে যৌনকর্মীদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছিলেন কুণ্ঠাহীন নির্মলা
আইচআইভি নিয়ে ঔদাসীন্য যখন ভারতের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ড. নির্মলা সেলাপ্পানের গবেষণা প্রমাণ করল এদেশের মানুষের রক্তেও এই মারণ ভাইরাস উপস্থিত। শুরু হল ভারতের বুকে এইচআইভি গবেষণার প্রথম ধাপ।