প্রসঙ্গত বইমেলার পুড়ে যাওয়ার দিনটির হাহাকার আর বিষাদের কথা মনে পড়ে। আমি তখন সংস্কৃতি অধিকর্তা হিসেবে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বইমেলার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে খুব উত্তেজিত ও উদ্বিগ্ন দেখেছি। রাতারাতি তিনি সেই পুড়ে-যাওয়া বইমেলাকে আবার দাঁড় করিয়ে দিলেন সরকারি খরচে, কিছু দোকান নতুন করে বানিয়ে দিয়ে। সেই সঙ্গে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেন। আমার ওপর ভার পড়ল সেই টাকা ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী বিতরণ করার। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব হবে? প্রস্তাব করলাম গিল্ড এই দায়িত্ব নিক। অনুমোদন পাওয়া গেল। ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন বিবেচনা করে গিল্ডের কর্তারা তালিকা নিয়ে এলেন। সেই তালিকা ধরে আমাদের টাকার পরিমাণ ক্ষতির পরিমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাগ করে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তকে চেক দেওয়া হল।
গত শতকের পাঁচের দশকে আমাদের কৈশোর-যৌবন কেটেছিল মার্কসবাদ বোঝার চেষ্টাতে এবং সেই সূত্রে দর্শন-বিজ্ঞান নিয়ে তর্কবিতর্ক করে। একমাত্র আকর্ষণের বিষয় ছিল ফুটবল খেলা। কিছু কিছু আধুনিক বাংলা গানের আসরে গেলেও রবীন্দ্রসংগীত এসে ছয়ের দশকে অন্য সব গান অপ্রাসঙ্গিক করে দেয়। বাংলা সিনেমা দেখা মনে হত নেহাত মূর্খতা– সত্যজিৎ-ঋত্বিক ছাড়া। উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা নিয়ে মাতামাতি করা ছিল নবদীক্ষিত কমিউনিস্টদের কাছে একটা ধর্মবিরোধী কাজ! তথাকথিত নৈতিকতা কতরকম যে অন্ধত্ব আর বঞ্চনা আনে, তা বুঝতে অনেক সময় লেগেছে। তবে ধর্মীয় অন্ধত্বই যে মনের বিকাশের পক্ষে সব থেকে বড় বাধা, তা এখন আরও বেশি করে বুঝি।
একসময় জীবনের প্রধান উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছিল পঁচিশে বৈশাখের দিন এবং একপক্ষ কাল জুড়ে রবীন্দ্রজন্মোৎসব পালনের আসরগুলি। আর শীতকালের উচ্চাঙ্গ সংগীতের অত্যাশ্চর্য রাত্রিগুলি।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের বইমেলাধুলো: শক্তিপদ রাজগুরুর বই শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে এক পাঠক সই করাবেনই করাবেন!
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
তারপর যোগ হল ‘কলিকাতা পুস্তকমেলা’। এল আনন্দের এক নতুন অবারিত উৎস কেননা ততদিনে আমরাও ‘লেখক’ হয়ে উঠেছি! বইমেলা তো প্রধানত লেখকদের মেলা, বিশেষ করে তরুণ লেখকদের মিলনমেলা! তারা একে মিলনায়তন মনে করত!
আমরা প্রথমবারই বইমেলায় গিয়েছি যখন তা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাইরে শুরু হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর গিয়েছি। এখন পর্যন্ত একবারও, একদিনের জন্যও যাইনি– এমন মনে পড়ে না। গত কয়েক বছর অবশ্য একদিন দু’-দিন মাত্র গিয়েছি, অবশ্যই কোনও সঙ্গীর সঙ্গে। ভাগ্যিস সঙ্গী পেয়েছি সময়েই।
এখন যাওয়ার উৎসাহ অবশ্য কমে গেছে প্রথমত বয়সের কারণে, দ্বিতীয়ত অসহ্য কোলাহলের কারণে। প্রথম কয়েক বছর যে যেতাম এবং ঘণ্টাধ্বনি শুনে হাততালি দিয়ে বেরতাম তার কারণ কী, কেউ প্রশ্ন করতে পারেন। কারণ, প্রথম কয়েক বছর সারাক্ষণ মেলা জুড়ে উচ্চাঙ্গ সংগীতের ক্যাসেট বাজানো হত। আলি আকবর, রবিশংকর, নিখিল ব্যানার্জির যন্ত্রের সুর কানে নিয়ে কী যে মুগ্ধতায় সন্ধ্যাগুলি কাটত! মাঝে মাঝে ছড়িয়ে পড়ত আমির খানের অলৌকিক কণ্ঠ। কখনও কখনও রবীন্দ্রসংগীত বাজানো হত। মনে হত সংগীতের আসরে এসেছি যেখানে আড্ডা তুচ্ছ, মেলাও তুচ্ছ!
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
সৌরীন ভট্টাচার্যের বইমেলাধুলো: টেবিলের দায়িত্বে থাকা রামু-সমেত কফি হাউস উঠে এসেছিল বইমেলায়
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আস্তে আস্তে শুরু হল আধুনিক বাংলা গান, যা সেই গানের আসরটিকে লঘু করে আনল। তারপর তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল। শুরু হল শুধু অজস্র মাইকের বাণিজ্যিক আর্তনাদ। মনে হতে লাগল কতক্ষণে পালিয়ে বাঁচব । কর্তাদের অনেক বলেও ওই বিশুদ্ধ সংগীতের প্রবহমান আসরটিকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি।
প্রসঙ্গত বইমেলার পুড়ে যাওয়ার দিনটির হাহাকার আর বিষাদের কথা মনে পড়ে। আমি তখন সংস্কৃতি অধিকর্তা হিসেবে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বইমেলার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে খুব উত্তেজিত ও উদ্বিগ্ন দেখেছি। রাতারাতি তিনি সেই পুড়ে-যাওয়া বইমেলাকে আবার দাঁড় করিয়ে দিলেন সরকারি খরচে, কিছু দোকান নতুন করে বানিয়ে দিয়ে। সেই সঙ্গে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেন। আমার ওপর ভার পড়ল সেই টাকা ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী বিতরণ করার। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব হবে? প্রস্তাব করলাম গিল্ড এই দায়িত্ব নিক। অনুমোদন পাওয়া গেল। ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন বিবেচনা করে গিল্ডের কর্তারা তালিকা নিয়ে এলেন। সেই তালিকা ধরে আমাদের টাকার পরিমাণ ক্ষতির পরিমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাগ করে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তকে চেক দেওয়া হল। কাজটা অতি অল্প সময়ে করতে পেরেছিলাম সুধাংশু-ত্রিদিবের প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও তৎপরতার জন্য।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর বইমেলাধুলো: পাঠক বইমেলা সচেতন হলে বইমেলারও তো পাঠক সচেতন হওয়া উচিত
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
বইমেলা আজ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভাবতে ভালো লাগে। অনেক অনেক নতুন লেখকদের সঙ্গে অনেক অনেক নতুন প্রকাশক এসেছেন। জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলতেই হবে এটা একটা জাতির পক্ষে সুলক্ষণ।
শান্তিনিকেতন কবিতা লেখার জায়গাই নয়। শক্তি চট্টোপাধ্যায় বিশ্বভারতীতে বাংলা বিভাগে পড়াতেন যখন, বলেছিলেন একথা। সে নিয়ে নানা উষ্মাও তৈরি হয়েছিল। এই লেখা অধ্যাপক শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শান্তিনিকেতন পর্ব। কবির মৃত্যুদিনে রোববার.ইন-এর প্রণতি।