Robbar

ওই ছেলেমেয়ে দু’টির উচিত পরদিন ওই মেট্রো স্টেশনে গিয়ে আবার চুমু খাওয়া

Published by: Robbar Digital
  • Posted:December 21, 2024 3:01 pm
  • Updated:December 21, 2024 4:34 pm  

আমি যদি ওদের জায়গায় হতাম, আমি সেটাই করতাম। যতক্ষণ না এই সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছি, ততদিন কিছু বদলানো সম্ভব নয়। আমি ওই মেয়েটার জায়গায় থাকলে আবার চুমু খেতাম, আর বলতাম বেশ করেছি। যাদের জীবনে প্রেম আছে, ভালোবাসা আছে, তাদের সবার উচিত ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেট্রো স্টেশনে গিয়ে চুমু খাওয়া।

গ্রাফিক্স: অর্ঘ্য চৌধুরী

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

মেট্রোয় চুমু খাওয়া নিয়ে কলকাতা উত্তাল। না, প্রেম নিয়ে নয়, চুমু নিয়ে নয়, ভালোবাসা নিয়ে নয়। বরং উত্তাল চুমুর বিরোধিতা করতে। আশ্চর্য লাগে, ভালোবাসাহীন এই সময়ে যখন সবাই ভালোবাসার কাঙাল, তখন অন্যের ভালোবাসা দেখে রেগে যাচ্ছি কেন আমরা?

কলকাতা মেট্রোয় চুমু খাওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে আমার অবাক লাগছে যে ব্যাপারে, সেটা হল এই ছবিটা যে লুকিয়ে তুলেছে, তাকে নিয়ে কারও কোনও মাথাব‌্যথা নেই, বক্তব‌্য নেই কেন? শহর তো উত্তাল হওয়ার কথা ছিল তাকে নিয়ে। কলকাতার প্রতিটি মানুষের রেগে যাওয়ার কথা ছিল যুগলের ব্যক্তিগত মুহূর্তে উঁকি দেওয়ার বিরুদ্ধে। যারা চুমু খাচ্ছে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক, তারা একে-অপরের সম্মতি নিয়ে চুমু খেয়েছে, ভালোবেসেছে, ভালোবাসা প্রদর্শন করেছে। বেশ করেছে।

This may contain: two people in white headscarves are facing each other and one is wearing a black suit

গোটা পৃথিবী জুড়ে এত নৈরাজ‌্য, জ্বালা, যন্ত্রণা, খেয়োখেয়ি, মারপিট, ঈর্ষা– সেখানে দুটো মানুষ, তারা ভালোবেসে চুমু খাচ্ছে, সেটাতে গাত্রদাহ কেন? আমরা কি ভালোবাসার মানুষকে চুমু খেতে, জড়িয়ে ধরতে পারি না, ভালোবাসার প্রকাশ করতে পারি না, যাতে তারা আশাবাদী হয়ে এই পৃথিবীতে বাঁচতে পারে! ভালোবাসা থেকে যাতে মানুষের আশা-ভরসা, বিশ্বাস বিলুপ্ত না হয়, তার জন‌্য তো যাদের ভালোবাসি, তাদের হাত ধরে হাঁটা উচিত, তাদের চুমু খাওয়া উচিত। সেটা জনসমক্ষে অশ্লীল পর্যায়ে চলে না গেলে কারও কেন এটা নিয়ে মাথাব‌্যথা থাকবে? এটা কি সত্যিই আমাদের চিন্তা করার মতো বিষয়?

This may contain: an abstract drawing of red circles on white paper

যে লুকিয়ে-চুরিয়ে ছবি তুলছে, সে কি সেই যুগলের অনুমতি নিয়েছে ছবি তোলার আগে? এই লোকটার মানসিকতা ততটাই কদর্য, যতটা যারা ক‌্যামেরা বসিয়ে মানুষের ব‌্যক্তিগত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে, যারা পাশের বাড়িতে কী হচ্ছে দেখার জন‌্য জানলা খুলে দ‌েখে! আমাদের এখন যা ফ্ল‌্যাটবাড়ির অবস্থা, সবার ঘর থেকে সবার ঘর দেখা যায়। আমার বাড়ির বাথরুমের জানলা দিয়ে পাশের বাড়ির ড্রয়িংরুম দেখা যায়। এদের মতো মানুষই কিন্তু নজর রাখে, পাশের বাড়ির বেডরুমে কী হচ্ছে, কোন বউদি বাথরুমে গিয়ে তোয়ালেটা ফেলে দাঁড়াচ্ছে, কোন বউদি কলতলায় চান করতে যাচ্ছে, মেয়েদের স্কুলের পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ছে। এবং এদের তো আমরা নিকৃষ্ঠমানের মানুষ বলে গণ‌্য করি। নিজস্ব ভয়ারিজমের জায়গা থেকে যে ছবিটা তুলেছে, তাকে কেন প্রশ্ন করে, ট্রোল করে, গালাগালি দিয়ে তুলোধনা করছি না আমরা? এই নোংরা মানুষটার পরিচয় বের করে সোশাল মিডিয়াতে তাকে এক্সপোজ করা উচিত যাতে সে লুকনোর কোনও পথ না পায়। তা না করে যারা নিজেদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেছিল, তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি আমরা। এটা আমাদের দ্বিচারিতা!

This may contain: a man and woman standing next to each other with a pink scarf on their head

এই দ্বিচারিতা দেখতে দেখতে ২৪ ঘণ্টাই রেগে থাকি আমি। আই অ‌্যাম অ‌্যাংরি অল দ‌্য টাইম। কলকাতার বিভিন্ন পার্কে এর চেয়েও বেশি ঘনিষ্ঠ অবস্থায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখা যায়। অথচ মেট্রোতে চুমু খেলে দোষ। আর আগে তো বুঝতে হবে যে দু’জন মানুষ চুমু খেলে অন‌্যের সমস‌্যাটা কোথায়? আমাদের দেশ বলেই চুমু খাওয়া নিয়ে এত জলঘোলা হচ্ছে। আমাদের দেশই ভালোবাসাকে এতটা কদর্য করতে পারে!

This may contain: an old photo of a man kissing a woman

এবার যদি কেউ তর্কের খাতিরে বলে জনপরিসরে আমি ছবি তুলতেই পারি, তাহলে ওরাও বলতে পারে চুমু খেতেই পারি। ওরা চুমু খেয়েছে বেশ করেছে। ২০২৪ সালে এটা একটা বিষয় হল চর্চা করার মতো? অন‌্য দিকে চার্জশিট জমা পড়ল না, ধর্ষণের অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গেল– সেটা নিয়ে হইচই না করে চুমু নিয়ে বিতর্ক করছি আমরা!

Holly and Paul kissing in a scene of Breakfast at Tiffany's film.
ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানি সিনেমার একটি দৃশ্য

আমার তো মনে হয় ওই ছেলেমেয়েগুলোর উচিত পরদিন ওই মেট্রো স্টেশনে গিয়ে আবার চুমু খাওয়া। আমি যদি ওদের জায়গায় হতাম, আমি সেটাই করতাম। যতক্ষণ না এই সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছি, ততদিন কিছু বদলানো সম্ভব নয়। আমি ওই মেয়েটার জায়গায় থাকলে আবার চুমু খেতাম, আর বলতাম বেশ করেছি। যাদের জীবনে প্রেম আছে, ভালোবাসা আছে, তাদের সবার উচিত ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেট্রো স্টেশনে গিয়ে চুমু খাওয়া। রাজ‌্যে ঘটে যাওয়া এত বড় অন‌্যায় নিয়ে পুলিশ তার কাজ ঠিকমতো করছে না, এদিকে সবাই নীতিপুলিশ হয়ে গিয়েছে। আমার তো মনে হয় কলকাতা শহরে অন‌্যের জীবনে নাক গলানোর চর্চাটা অনেক বেশি। সব ব‌্যাপারে মন্তব‌্য করা, সীমারেখা লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়া অভ‌্যেসে দাঁড়িয়েছে। ভিতর থেকে ফাঁপা হয়ে গেলে মানুষ বোধহয় এটাই করে। এই অধঃপতন একেবারে মহামারীর মতো ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

তাই আমাদের আরও বেশি করে ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরতে হবে, ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে, অহরহ প্রেম নিবেদন করতে হবে, চুমু খেতে হবে, জড়িয়ে ধরে পথ চলতে হবে আড়ালে, আবডালে, বাড়িতে, প্রকাশ্যে।

আর জোর গলায় বলতে হবে বেশ করেছি।

……………………………

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

……………………………