Robbar

‘রিজ’ কি ইংরেজি ভাষা এতদিনে জানল?

Published by: Robbar Digital
  • Posted:December 7, 2023 3:59 pm
  • Updated:December 7, 2023 5:03 pm  

এ-যুগে ‘ক‌্যারিশমা’-র পেট থেকে পড়ল, পর্নোগ্রাফিক হ‌্যাঁচকায়, ‘রিজ’। এই শব্দ বিশুদ্ধ যৌনতার চিকন চিরুনি। নারী-পুরুষের সর্বাঙ্গ আঁচড়াতে পারে। জাগাতেও পারে পুরোটা! ‘রিজ’ শব্দটা কিন্তু খুলে দিল মুক্ত ফ্লার্টিং-এর এক নতুন পরত। যে-পরতে আর কোনওরকম সংকোচ নেই। নেই কপট আড়াল।

রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

‘How do I get my rizz up?’– এটি একটি চূড়ান্ত অশ্লীল বাক্য। অথচ জীবনের অতীব জরুরি প্রশ্নও বটে! ‘কী করে বাড়ানো যেতে পারে সেক্স-অ্যাপিল?’ ‘কেমন কথার জাদুতে, কেমন শরীর-ভাষার টানে ফুসলানো যায় সহজে?’ এমন আবশ্যিক, আর্জেন্ট একটি প্রশ্ন কী অবলীলায় নানা কাজের অলিতে-গলিতে গলিয়ে দিতে পারছে আজকের ইংরেজ– শুধুমাত্র ওই ‘রিজ’ শব্দটির অপরিশীলিত অবদানে!

অথচ আমাদের যৌবনে ইংরেজি ভাষার তাগড়া লেখক বা ইংরেজি-ভাষার উত্তর-আধুনিক মাস্টারমশাইরাও জানতেন না, ‘rizz’ শব্দটি। কোনও হদিশই পাননি তাঁরা শব্দটির অশালীন অব্যর্থতার! ডি. এইচ. লরেন্সের ‘‘লেডি চ্যাটার্লি’স লাভার’’ এবং ভ্লাদিমির নাবোকভের ‘লোলিটা’ উপ‌ন্যাসটিই ধরা যাক। কতভাবে যে নারী-পুরুষ দেখাতে পারে ফুসলানোর কেরামতি, ব্যবহার করতে পারে ফ্লার্টিংয়ের কৈতববাদ– এই দু’টি উপন্যাসে তো সেই সোনালি ফসলের চাষ করা হয়েছে। পড়ে পাগল হয়েছি, কিন্তু একটিবারও দেখা পাইনি ‘রিজ’ শব্দের! অথচ, লেডি সি-র ওই কাঠুরে এবং ‘লোলিটা’-র ওই বৃদ্ধভাম– সব্বাই তো মোহগ্রস্ত, ফুসলিত, ‘রিজড্‌ আপ’। দু’টি উপন্যাসে দুই মোহিনীর ‘রিজিং গেম’– শরীর ও কথার মোহপাশ, মায়াজাল। চার্ম। সিডাকশান। বোথ লেডি সি এবং লোলিটা, ‘দে গট সো মাচ রিজ!’ আর ওই কাঠুরে, আর ওই বৃদ্ধভাম, একজনের শরীর, অন্যজনের বাক্যজাদু– ‘দে গট সিরিয়াস রিজ।’ যখন যৌবনে পড়েছিলুম এই দুই ফ্লার্টিংয়ের মহাকাব্য, ‘লেডি চ‌্যাটার্লি’ এবং ‘লোলিটা’ তখন ‘রিজ’ জানতাম না। আজ জানলাম অক্সফোর্ড ডিকশনারির দুঃসাহসী শব্দবরণের সৌজন‌্যে। প্রতি বছরের মতো এই বছরেও সেরা শব্দের সম্মাননা এবং বন্দনা ঘোষণা করেছে অক্সফোর্ড অভিধান। ২০২৩-এর অক্সফোর্ড অভিধান-বন্দিত, বরণীয় শব্দটি, অশালীন অপরিমার্জিত ‘রিজ’। ‘রিজ’ অবশ‌্যই স্ল‌্যাং। কিন্তু এই মুহূর্তে টিক্‌টক্‌-এ প্রিয়তার অবিশ্বাস‌্য শীর্ষে। শব্দটা সত‌্যিই ছুঁয়েছে অশ্লীল দ‌্যোতনার এভারেস্ট-উচ্চতা। তা-ই নিঃসন্দেহে ওয়র্ড অফ দ‌্য ইয়ার, বলছে অক্সফোর্ড অভিধানের লেক্সিকোগ্রাফাররা।

Lady Chatterley's Lover (Vintage 1960 Edition) – Old Book DepotLolita - Wikipedia

আমি সম্প্রতি পড়েছি সারা অগিলভি-র অসামান‌্য বই ‘দ‌্য ডিকশনারি পিপল্‌’। এই বইয়ের গোড়াতেই চমকে দেওয়ার মতো এই মুক্তভাষ : ‘What do three murderers, Karl Marx’s daughter, and a vegetarian vicar have in Common? They all helped create the Oxford English Dictionary.’ শুধু কি খুনিরা-ও তৈরি করেছে অক্সফোর্ড অভিধান? না, এই ভুবনখ‌্যাত অভিধান তৈরি করেছে পর্নোগ্রাফাররাও! এই দারুণ দাপুটে দলকেই সারা অগিলভি বলেছেন ‘দ‌্য ডিকশনারি পিপল’। এ-বই না পড়লে বুঝতে পারতাম না, ঠিক কেমন তোয়াক্কাহীন দুঃসাহ থেকে ‘রিজ’ এর মতো একটি পর্নোগ্রাফিক শব্দকে বসানো যায় ‘ওয়র্ড অফ দ‌্য ইয়ার’-এর সিংহাসনে! সংক্ষেপে কারণও খোলসা করা হয়েছে: আজকের ইংরেজ ফুসলানোর মতো কথা ও শরীরের কেরামতিকে আর ‘সিডাকটিভ স্কিল’ বা ‘পাওয়ার’ বলছে না। বলছে, ‘দ‌্যাট গাই অর দ‌্যাট উওম‌্যান হ‌্যাজ গট এনাফ রিজ’। আর বুড়ো ইংরেজ আর্ত স্বরে বলছে, ‘টেল মি ডক্‌, হাউ আই গেট মাই রিজ আপ?’ চূড়ান্ত অশালীন। কিন্তু উত্তপ্ত অব‌্যর্থ!

The Dictionary People: The Unsung Heroes Who Created the Oxford English Dictionary (Audio Download): Sarah Ogilvie, Joan Walker, Sarah Ogilvie, Penguin Audio: Amazon.in: Audible Books & Originals

প্রশ্ন হল, ‘রিজ’ কি আকাশ থেকে পড়ল? পাগল! কোনও শব্দই আকাশ থেকে পড়ে না। কোনও শব্দই ভুঁইফোড় নয়। ‘রিজ’ দিব‌্যি গ্রিক শব্দ ক‌্যারিশমা (Charisma)-র পেটে ভ্রূণ হয়ে যুগান্তর পেরিয়ে এসেছে। ক‌্যারিশমার গ্রিক অর্থ, মুগ্ধ করার দৈবগুণ। যা হয়তো ছিল রবীন্দ্রনাথের। আমি যে-দু’জন বাঙালিকে দিনের পর দিন খুব কাছ থেকে দেখেছি, তাঁদের একজন সত‌্যজিৎ রায়, অন‌্যজন উত্তমকুমার। দুই বাঙালিই ক‌্যারিশম‌্যাটিক। কিন্তু রবীন্দ্রার্থে নয়। এঁদের দু’জনের মধ‌্যে ‘ক‌্যারিশমা’-র নির্ভেজাল উত্তরণ ঘটেচে ‘দৈব’ থেকে রক্তমাংসের ‘অ‌্যাট্রাকটিভ অরা’-য়।

আর এক্কেবারে এ-যুগে ‘ক‌্যারিশমা’-র পেট থেকে পড়ল, পর্নোগ্রাফিক হ‌্যাঁচকায়, ‘রিজ’। এই শব্দ বিশুদ্ধ যৌনতার চিকন চিরুনি। নারী-পুরুষের সর্বাঙ্গ আঁচড়াতে পারে। জাগাতেও পারে পুরোটা! ‘রিজ’ শব্দটা কিন্তু খুলে দিল মুক্ত ফ্লার্টিং-এর এক নতুন পরত। যে-পরতে আর কোনওরকম সংকোচ নেই। নেই কপট আড়াল। প্রাচীন ভারত কিন্তু ‘রিজ’-কে চিনেছে তার আজকের নির্ভেজাল রূপে। ভারতের প্রাচীন কামশাস্ত্রে দীর্ঘ এবং বিশদ আলোচনা আছে সিডাকশান, ফ্লার্টিং, ফুসলানোর সমস্ত সম্ভাব‌্য রূপ ও সংরাগ নিয়ে। এই সেই বিশুদ্ধ ‘রিজ’ যা সত‌্যিই নারী-পুরুষের সমস্ত শরীর কখনও কথার কঙ্কতিকা, কখনও চাপল‌্যের চিরুনি হয়ে আঁচড়াতেই থাকে। আমাদের বাৎস‌্যায়নের কামশাস্ত্রই ‘রিজ’ (rizz) এর মহাকব‌্য! ফুসলানোর এমন অপূর্ব অশ্লীলতা আর কোনও শাস্ত্রে পাইনি।

নারী-পুরুষের প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে ‘রিজ-আপ’ নিয়ে বিশদ বর্ণনা করেছেন বাৎস্যায়ন। ফ্লার্টিংয়ের কোনও পর্যায় আড়াল করেননি। নারীর স্তন, স্তনবৃন্ত, নিতম্ব, কোমর, কোমরের তিনটি ধাপ বা ত্রিবলি, যোনি, জঘন, ঊরু, ঊরুসন্ধি– রতিবিহারের সর্বত্র বিরাজ করেছে বাৎস্যায়নের বাণী। সেইসঙ্গে পুরুষকে বলেছেন তিনি কীভাবে, কী পদ্ধতিতে, নারীকে নিয়ে যাবে কামজাগৃতির তুঙ্গে, শুধু কথা দিয়েও কীভাবে নারীকে নিয়ে যাওয়া যায় রাগমোচনে, রসস্খালনে! এই ‘রিজ’ কি ইংরেজি ভাষা এতদিনে জানল?