২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী পডকাস্ট শ্রোতার সংখ্যা ছিল ৫৪৬.৭ মিলিয়ন, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮৪.১ মিলিয়নে– এই প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৬.৮৩%। এর মধ্যে জ্যোতিষ, তন্ত্র ও গোপন জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি পডকাস্টগুলির শ্রোতা সংখ্যা ১০০%-এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একটি রিপোর্টে জানা গেছে। গবেষণা বলছে, এই ধরনের পডকাস্টের প্রতিটি পর্ব গড়ে প্রথম সাত দিনে প্রায় ৪,০০০ বার ডাউনলোড হয়েছে। এই প্রবণতা প্রমাণ করে যে, প্রাচীন জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা এবং গোপন তত্ত্ব নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে, বিশেষত মিলেনিয়াল ও জেন জেড-এর মধ্যে। জ্যোতিষ ও তন্ত্রভিত্তিক পডকাস্টের জনপ্রিয়তা আজকের তরুণ প্রজন্মের মনস্তত্ত্বের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।
আমরা যে পথে হাঁটছি, সেই পথের কোনও যুক্তি নেই। বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবুও আমরা হাঁটছি। উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটছি। সঙ্গী শুধু বিশ্বাস– যে বিশ্বাসেরও কোনও ভিত্তি নেই, যুক্তি নেই। যেন কোনও এক সকালে ‘মিরাকেল’ ঘটে যাবে। যা চাইছি সব পেয়ে যাব। যা চাইনি, তা কখনও আমাদের ছোঁবে না। জীবন মানে ইচ্ছেপূরণ, জীবন মানে সুখ-সমৃদ্ধি-গাড়ি-বাড়ি, সুসময়। আপনার নিকট ভবিষ্যতে যেটা ঘটবে, সেটা আপনি আজকে জেনে ফেললেন। তারপর রত্ন ধারণ করলেন। জ্যোতিষীর উপদেশে বেশ কিছু টোটকা পালন করলেন। যজ্ঞ করলেন। আরও যা যা করার, সেটাও করলেন। তারপর আপনার ভবিষ্যৎ পালটে গেল? আপনার ফাঁড়া কেটে গেল? আপনার সুদূর ভবিষ্যতের কোনও মারাত্মক দুর্ঘটনার হিসেব কি চিত্রগুপ্ত পালটে ফেলতে পারল?
আজকাল সোশাল মিডিয়ায় জ্যোতিষ এবং তন্ত্রের যে রমরমা বাজার, সেটার জন্য কিন্তু আমরাই দায়ী। আমরাই ভয়ের পডকাস্ট দেখতে ভালোবাসি। আমরাই জ্যোতিষীর সহজ টোটকা নিতে ভালোবাসি। আমরা সারাক্ষণ নিরাপত্তায় ভুগছি, আতঙ্কে রয়েছি, আতঙ্ক থেকে বাঁচতে আমরাই একটা ভিত্তিহীন পথ গড়ছি। আমরাই সেই পথে হেঁটে যাচ্ছি, একটা সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। আর একটা বৃহৎ ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি করে চলেছি, যে ব্যবসার আমরাই কনজিউমার।
এই বছরের শুরু থেকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক দাবি রেখেছেন। এখনও রাখছেন। আগামী দিনেও রাখবেন। ২০২৫ সাল নাকি মঙ্গলের বছর! আগুন নিয়ে সাবধান হন। এই বছর নাকি একটা মারাত্মক কিছু ঘটবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসবে। আরও কত কিছু! সাম্প্রতিক কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা এবং ভারতের প্রত্যাঘাতের ব্যাপারেও অনেক জ্যোতিষী আগাম সতর্ক করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। যেটা হচ্ছে, সেটা আমরা দেখছি এবং যেটা হবে সেটারও সাক্ষী থাকব। শুধু তাই নয়, অনেকে দাবি করছেন এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি। এর ফলাফলও আমাদের ভুগতে হবে। তাই কি?
স্টার্ট-আপের যুগে অনেকেই কিন্তু জ্যোতিষ-সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন বানানোর ব্যাপারেও আগ্রহী হচ্ছেন। মূলত সেই অ্যাপ্লিকেশনে সারা ভারতের এবং ভারতের বাইরের বহু জ্যোতিষীদের সঙ্গে কথা বলার, ভিডিও কলে হাত দেখানোর ব্যবস্থা থাকছে। তারা আপনার জীবনের বিশেষ ঘটনা আপনার জন্মছক দেখেই বলে দেবেন। প্রতিকার দেবেন। বিশেষত এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনে একটি বিভাগ থাকে শুধুমাত্র প্রতিকার-সংক্রান্ত। সেখানে রত্ন থেকে জেমস্টোন, যজ্ঞ থেকে মাদুলি– সব ধরনের প্রতিকারই আছে। সঙ্গে বাঁধা আছে মূল্য। সেটা বেশ মোটাই! মানে, সেই মূল্যের কোনও ভিত্তি নেই। যে যেমন পারে! কেউ এক মিনিট কথা বলার জন্য ১০ টাকা, আবার কেউ এক মিনিটের জন্য ৫০০ টাকা নিচ্ছে। লোকে দেখাচ্ছেও। রমরমিয়ে চলছে ব্যবসা। বিক্রি হচ্ছে জেমস্টোন। নতুন ট্রেন্ডিং হয়েছে ‘হ্যাশট্যাগ পজিটিভিটি’! জেমস্টোন পড়লেই পজিটিভিটির মেঘ আপনাকে ঘিরে ধরবে। রত্নের বাজারে হয়তো খরচ হবে লাখখানেক। তবু সেই রত্ন ধারণ করলেই আপনার চাকরি পাকা; কিংবা অফিসের বস আপনার কথায় উঠবে-বসবে, সব দুর্ঘটনা ঘুলঘুলি দিয়ে পালাবে।
জ্যোতিষ এবং তার চর্চা আগেও ছিল, আগামী দিনেও থাকবে। কিন্তু ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা জ্যোতিষীদের নিয়ে যে আলগা পিরিত দেখাচ্ছে– তাতে মনে হচ্ছে আগামী দিনে সবাই পডকাস্টে বসে একেকটা টোটকা দেবে আর আমরা সেগুলো গোগ্রাসে গিলব। গত কয়েক বছরে বিশ্বজুড়ে পডকাস্ট মাধ্যমটি উল্লেখযোগ্যভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যার মধ্যে জ্যোতিষ ও তন্ত্র-সংক্রান্ত বিষয়বস্তু বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। গত এক বছরে বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যোতিষ-সংক্রান্ত পডকাস্ট। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী পডকাস্ট শ্রোতার সংখ্যা ছিল ৫৪৬.৭ মিলিয়ন, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮৪.১ মিলিয়নে– এই প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৬.৮৩%। এর মধ্যে জ্যোতিষ, তন্ত্র ও গোপন জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি পডকাস্টগুলির শ্রোতা সংখ্যা ১০০%-এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একটি রিপোর্টে জানা যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, এই ধরনের পডকাস্টের প্রতিটি পর্ব প্রথম সাত দিনে গড়ে প্রায় ৪,০০০ বার ডাউনলোড করা হয়েছে।
এই প্রবণতা প্রমাণ করে যে, প্রাচীন জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা এবং গোপন তত্ত্ব নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে, বিশেষত মিলেনিয়াল ও জেন জেড-এর মধ্যে। জ্যোতিষ ও তন্ত্রভিত্তিক পডকাস্টের জনপ্রিয়তা আজকের তরুণ প্রজন্মের মনস্তত্ত্বের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ আর ভবিষ্যৎ নিয়ে দোলাচলে থাকা একটি প্রজন্ম নিজেদের খুঁজতে যেমন আগ্রহী, তেমনই মানসিক ভরসার আশ্রয়ও খুঁজে ফেরে। ধর্ম নয়, বরং আধ্যাত্মিকতার প্রতি এই টান– নিজেকে জানার, নিজের ভেতরের রহস্য বুঝে ওঠার বাসনা। তাদের আকৃষ্ট করে তন্ত্র ও জ্যোতিষের রহস্যঘেরা জগৎ। পডকাস্টের সহজসাধ্যতা, শুনতে শুনতে ভাবার অবকাশ, আর সোশ্যাল মিডিয়ার রোমান্টিসাইজড উপস্থাপন– সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে আত্ম-অন্বেষণ আর গোপন আশ্বাসের এক মোহময় মাধ্যম। এই আকর্ষণ আরামদায়কও, কারণ এতে বিশ্বাস আর কৌতূহলের মাঝখানে ভেসে থাকার সুযোগ থাকে। এই বিষয়টা বুঝতে পেরেই এক শ্রেণির মানুষ বিষয়টিকে পণ্য করে তুলছেন। স্বপ্ন বিক্রি করছেন তাঁরা। আমরাও সেই স্বপ্ন কিনতে ছুটছি ভিন্ন পথে।
বর্তমানে সমাজমাধ্যমে ছোট ছোট রিলসের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে অমুক হাতের রেখা তমুক জায়গা পর্যন্ত গেলে কী হতে পারে। অথবা আপনার হাতে হৃদয়রেখার উপরিভাগের কোন অংশে ত্রিভুজ থাকলে কী কী হতে পারে। হাতের বুধ পর্বতে কীরকম দাগ থাকলে কী কী হতে পারে। একটা এক মিনিটের ক্লিপই তার সমাধান বাতলে দিতে পারে। এক বিখ্যাত জ্যোতিষী প্রেমিকা ‘পাওয়ার’ অব্যর্থ টিপস দিলেন। তাঁর কথায়– ‘প্রতিদিন স্নানের সময় দই দিয়ে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করলে নাকি চারপাশে মেয়েদের ভিড় লেগে থাকবে!’ একজন তো ব্লক খোলার উপায়ও জানালেন। ধরা যাক, আপনার প্রিয়জন আপনাকে সমাজমাধ্যমে ব্লক করে দিয়েছেন। আপনি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চাইছেন, কিন্তু আপনি অপারগ! সেই বাধা দূর হয়ে যাবে এক নিমেষে। কেবল ভাত খাওয়ার সময় একটি মন্ত্র বলতে হবে সাতবার। প্রতিবার ভাতের গোল অংশ মুখে নেওয়ার আগে মন্ত্রটি বললেই কেল্লাফতে! আসলে আমাদের চোখের সামনেই এমন একটা দুনিয়া চলছে, যেখানে একটা ‘টোটকা’ হাজার হাজার মানুষের ইচ্ছেশক্তিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। দর্শকদের টার্গেট করে রিলস্ বানানো হচ্ছে। অর্থের লোভ, সুন্দরী স্ত্রী-র লোভ, নিরাপত্তার লোভ। কোনও কোনও জ্যোতিষী ইচ্ছে করে এমন পোশাক পরে ভিডিও বানাচ্ছেন যে, সেটাই ক্লিকবেট।
এ ধরনের কনটেন্টের জনপ্রিয়তার পেছনে যেমন এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে; তেমনই রয়েছে এক সূক্ষ্ম কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক প্রকল্প– ভারতে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার প্রবণতা। সাম্প্রতিক দশকে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে ডিজিটাল মিডিয়া পর্যন্ত এক ধরনের উৎসাহ দেখা যাচ্ছে– যেখানে প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্ব ও আধ্যাত্মিক চর্চাগুলিকে ‘জাতীয় গৌরব’-এর স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। জ্যোতিষ, তন্ত্র, কুণ্ডলিনী বা যোগব্যায়ামের মতো বিষয়গুলোকে একদিকে আধ্যাত্মিক উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও, পরোক্ষে এগুলিকে শুদ্ধ হিন্দু সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। এই প্রবণতা শুধু যে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বা মানসিক শান্তির খোঁজকে পুঁজি করে, তা নয়। এ এক রাজনৈতিক কৌশল, যেখানে ‘ভারত মানে হিন্দু সংস্কৃতি’ এই ধারণাকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা। পডকাস্টের মতো ব্যক্তিগত এবং নন-কনফ্রন্টেশনাল মাধ্যমে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নরম উপায়ে– এমনভাবে, যাতে শ্রোতারা বুঝতেই না পারেন যে তাঁরা ধীরে ধীরে একটি বৃহৎ সাংস্কৃতিক প্রকল্পের অংশ হয়ে উঠছেন। এইভাবে জ্যোতিষ বা তন্ত্রের আড়ালে একটি ‘হিন্দু’ আত্মপরিচয় গড়ে তোলার কাজ চলছে, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হিন্দুরাষ্ট্রের নরম ভিত্তি নির্মাণ।
বাংলার অনেক সাহিত্যিক তন্ত্র, জ্যোতিষ এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে আগ্রহী ছিলেন, যা তাঁদের রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরাসরি তন্ত্রে বিশ্বাসী না হলেও আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল এবং তাঁর সাহিত্যেও এই ভাবনার ছাপ রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরোক্ষভাবে তন্ত্রের প্রভাব নিয়ে লিখেছেন ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামীণ বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার সূক্ষ্ম চিত্র এঁকেছেন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর সাহিত্যিক জীবনে আধ্যাত্মিকতা ও তন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ দেখিয়েছেন। কিন্তু তাই বলে কোনওদিন তাঁদের কাজ নিয়ে সেই পরিসরে আলোচনা হয়নি।
অনেকে দাবি করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তান্ত্রিক ছিলেন। যদিও এ-বিষয়ে উপযুক্ত প্রমাণ নেই। তবে এখন তান্ত্রিকদের পডকাস্টে এনে তাঁদের মুখে ভৌতিক গল্প শুনিয়ে ভিউয়ার বাড়ানো হচ্ছে। তন্ত্রের উদ্ভব ও ইতিহাস সুপ্রাচীন; এবং সে-সম্পর্কে শিক্ষালাভ দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। মাত্র এক ঘণ্টার ভিডিওতেই তার সমস্ত গুপ্ত-গুহ্য বয়ান জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে! ভূত তাড়ানো, নেগেটিভিটি কাটানো, জিন চালান, দেহবন্ধন প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান এবং মন্ত্র শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তন্ত্র ও জ্যোতিষ– এই দুই প্রাচীন বিদ্যার উৎপত্তি ভারতীয় সভ্যতার গহনে। তন্ত্রের জন্ম গোপন সাধনা, শক্তিপূজা ও আত্মোপলব্ধির পথ হিসেবে। তন্ত্রের শিকড় কাশ্মীর, বাংলা ও দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন তান্ত্রিক জনপদে প্রসারিত। অপরদিকে, জ্যোতিষের জন্ম বৈদিক যুগে, মূলত যজ্ঞ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণের জন্য; যা পরে ভাগ্য ও গ্রহ-নক্ষত্র বিশ্লেষণের বিজ্ঞান হয়ে ওঠে। তন্ত্র শরীর ও চেতনার গহনে প্রবেশ করে, আর জ্যোতিষ মহাকাশের গতিপথ থেকে মানবজীবনের ছায়া অনুধাবন করে– দু’য়েরই লক্ষ্য আত্মোন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ বোধের এক রহস্যময় সেতুবন্ধন গড়া। তবে এর ব্যবহার নিয়ে আমরা বিশেষ সচেতন নই। কারণ আমরা তন্ত্রকে শুধুমাত্র বশীকরণ ও বাণ মারার কাজ ছাড়া আর অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারিনি। অন্যদিকে, জ্যোতিষকে শুধুমাত্র বিয়ের জন্য ব্যবহার করতে শিখেছি।
তবে তন্ত্র আর জ্যোতিষের কাজ ভিন্ন। আমরা সেটাকে একটা ব্যবসায়িক রূপ দিয়েছি। প্রাচীন শাস্ত্র বলে গিয়েছে, কলিযুগে যখন ধর্মের চার স্তম্ভের তিনটি ভেঙে পড়বে– তখন মানুষ মুক্তির সহজ পথ খুঁজবে, আর সেই পথ হবে তন্ত্র ও জ্যোতিষ। যজ্ঞ, তপস্যা, ব্রহ্মচর্যের মতো কঠিন আচার তখন লুপ্ত হবে, আর মানুষ আকৃষ্ট হবে গোপন মন্ত্র, গুহ্য সাধনা, আর গ্রহ-নক্ষত্রের ভবিষ্যদ্বাণীতে। মহানির্বাণ তন্ত্র থেকে বৃহৎ সংহিতা– সব গ্রন্থেই ইঙ্গিত রয়েছে, কলিযুগে তন্ত্র হবে অস্ত্র, আর জ্যোতিষ হবে দিশারি। এই যুগে মানুষ যত বেশি বিভ্রান্ত হবে, ততই তারা ফিরে তাকাবে অলৌকিক ও আধ্যাত্মিক আশ্রয়ের দিকে। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা পুঁথির চেয়ে পডকাস্টের কথা বেশি বিশ্বাস করছি। আমরা ভুল পথে হাঁটছি। যে পথে আমাদের জ্যোতিষ এবং তন্ত্রের নামে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ধর্মের বুজরুকি। তবুও আমরা হাঁটছি। উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটছি। হেঁটেই যাচ্ছি অনবরত। এই হাঁটার শেষ কোথায় জানি না, তবুও চলেছি দূর অজানায়। সঙ্গী শুধু বিশ্বাস আর সময়।
………………………………
ফলো করুন আমাদের ওয়েবসাইট: রোববার ডিজিটাল
………………………………