Robbar

বেসরকারি কর্পোরেট বিদ্যালয় কি শুধুই মুনাফাভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান?

Published by: Robbar Digital
  • Posted:April 21, 2025 8:40 pm
  • Updated:April 22, 2025 3:42 pm  
An article about privatization of education in India and recent scenario by Anindita Gupta Roy

মুক্তবাজার অর্থনীতি যে ভুবনগ্রাম উন্মুক্ত করে দিল তাতে যে নব্য-মধ্যবিত্ত সমাজের জন্ম হল তাদের ধ্যানধারণা চাওয়া-পাওয়ার রীতিনীতি সবই আলাদা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সবচেয়ে লাভজনক বাণিজ্যের পথ হিসেবেও তখন থেকেই বিবেচ্য হওয়া শুরু। সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় সাফল্যই হোক বা বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চ মাইনের চাকুরি, ইংরেজি ভাষা ছাড়া গতি নেই– এই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়তে, প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগল না। তলিয়ে দেখলে এ নিছক গুঞ্জনও নয় আসলে। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষা বিশ্বায়ন-পরবর্তী পৃথিবীতে যে কর্মজগতের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে তা নিছক সরকারি কেরানিগিরি। হ্যাঁ, স্কুল-কলেজের শিক্ষকতাকে যোগ করেই বলছি। এসবই আসলে ‘ক্লারিকাল ওয়ার্ক’। মুক্ত অর্থনীতি পরবর্তী পৃথিবীতে এই কাজগুলিও স্মার্ট হয়ে না-উঠতে পারলে কৌলিন্য হারায়, আর পিছিয়ে পড়ে জনমানসে।

অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

সাম্প্রতিক সময়ে জনমানসে সবচেয়ে আলোচিত ক্ষেত্রটি সম্ভবত স্কুল-শিক্ষা, সে সরকারি-বেসরকারি যে ধরনেরই হোক না কেন। তার অন্যতম কারণ, ন্যূনতম শিক্ষালাভ শিশুদের একটি মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে এবং শিক্ষা বিষয়টিকে আরও অনেকগুলো প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তার ‘বেসিক’ হিসেবে ধার্য করা হয়। তাই এ-সংক্রান্ত যে কোনও নীতি বা দুর্নীতি জনমানসে সুদূরপ্রসারীও হয়। দেশ জুড়েই শিক্ষাক্ষেত্রটিকে ক্রমশ বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া বিগত কয়েক দশক ধরেই আমাদের চোখ এড়াচ্ছে না। ইদানীংকালে ভুক্তভোগী থেকে চিন্তাবিদ– দেশ জুড়ে সকলের আলোচনাতেই উঠে আসছে সরকার-পোষিত স্কুলগুলির নানা দুরবস্থা, ক্রমহ্রাসমান ছাত্রসংখ্যা, শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা থেকে দুর্নীতি তথা চাকরি বাতিল; এবং তার পাশাপাশি দেশজুড়ে অসংখ্য নামীদামি-অনামী ভুঁইফোঁড় প্রাইভেট বেসরকারি স্কুলের বাড়বাড়ন্ত ও অত্যধিক ফি-বৃদ্ধি, কোথাও কোথাও মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখেই। অপ্রয়োজনীয় ‘প্যাকেজ’-এর বিনিময়ে মোটা ডোনেশন আদায়ের পাশাপাশি আচমকা বিনা নোটিশে ফি-বৃদ্ধির মতো বিষয় জাতীয়স্তরে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। আদালত বা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ছে নীতি নির্ধারণ বা নানা নিষেধাজ্ঞা ও নিয়মকানুন লাগু করায়। সচেতন নাগরিক চাইলেও বিষয়গুলির বাইরে থাকতে পারেন না, যেহেতু শিক্ষাক্ষেত্রটি কোনও না কোনওভাবে প্রত্যেক পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রশ্ন উঠেছে, বেসরকারি কর্পোরেট বিদ্যালয়গুলি কি আসলে মুনাফাভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিছকই! ঠিক যেমন প্রশ্ন ওঠে সরকারি বা সরকার-পোষিত বিদ্যালয়গুলি কি আস্থা হারাচ্ছে পুরোপুরি, বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে অধিকাংশই?

Student enrollment dropped in india congress raises question : 2025-03-27 | Aajkaal Bengali News, Bangla News, Breaking News in Bengali

শিক্ষকতা পেশায় নিজের দু’ দশকের অভিজ্ঞতায় জানি, সরকার-পোষিত বিদ্যালয়গুলির অবস্থা যতটা ভয়ানক বলে প্রচারিত হয়– সেটা আদতে যেমন তা নয়, তেমনই যতটা দুরবস্থা তার সবটাই সাম্প্রতিক কালের কোনও বিষয় নয়। এমন নয় যে আচমকাই সব পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে স্কুলগুলির। অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষাদানের ও শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের প্রাথমিক প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি অলভ্য নয়। বেশ কিছু শহুরে স্কুলে ডিজিটাল বা স্মার্ট ক্লাসরুম বা আনুষঙ্গিক বিষয়গুলির দেখা মেলা দুর্লভ নয়। শিক্ষক নিয়োগ অপ্রতুল ও অনিয়মিত বলে তার একটা প্রভাব এই স্কুলগুলিতে যে পড়েছে তা স্বীকার করেও জানি, এই পরিকাঠামোতেও একটা নির্দিষ্ট মানের শিক্ষিত পড়ুয়া তৈরি করা সম্ভব। শিক্ষকেরা চেষ্টাও করেন। আগে সফল হতেন, ইদানীং ততটা হয়তো হচ্ছেন না। তার একটা কারণ শহর-গ্রাম-মফস্‌সলের বড় অংশে সরকার-পোষিত স্কুলমুখী হওয়ার প্রবণতা কমে আসছে প্রতিনিয়ত। নানা অনুদান বা সুযোগ-সুবিধের পরেও কমে যাচ্ছে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও গজিয়ে উঠছে বেসরকারি স্কুল। সেখানে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত বিষয়-শিক্ষক আদৌ আছেন কি না, তা নিয়েও কেউ মাথা ঘামাচ্ছেন না, দৌড়চ্ছেন ছেলেমেয়ে ভর্তি করতে। হু হু করে বাড়ছে পড়ুয়া সংখ্যা, অনেকসময় সাধ্যের অতিরিক্ত ব্যয়েও। কেন এই প্রবণতা?

লক্ষ করলে দেখা যায় সরকার-পোষিত স্কুলগুলির প্রতি অনীহা যত না জনমানসে তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহ আসলে গড়ে উঠেছে ইংরেজি মাধ্যমে ঝাঁ-চকচকে পরিকাঠামোয় বাচ্চাকে লেখাপড়া শিখিয়ে পরিবর্তিত সমাজের পরিকাঠামোয় উপযুক্ত করে তোলার ঝোঁক। গত বছর এক আত্মীয়ার ঘরে গৃহসহায়িকার কাজে এসেছিলেন এক ভদ্রমহিলা। ছিমছাম ফিটফাট মার্জিত আচরণ ও বেশভূষায় সপ্রতিভ, স্কুটি চালিয়ে কাজে আসেন তিনি। ছোটখাট ব্যবসা করেন স্বামীটি। সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলেও অভাব নেই। তবু দুই বাড়ি রান্নার কাজ নিয়েছেন মেয়েটি শুধু একটি ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুলে বাচ্চাকে পড়ানোর অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হয় বলে। বলেছিলাম, সরকারি স্কুলে পড়ালে তো এই চাপটা হত না। বই-স্কুল-ড্রেস-সাইকেল, দুপুরের খাবার থেকে নানা বৃত্তি এমনকী, ক্রমে মোবাইল ফোনও– সবই সে পেত। মেয়েটি বলেছিলেন, ‘ইংরেজি না বলতে পারলে কোথাও তো কাজ পাবে না ভবিষ্যতে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-প্রফেসর না, সাধারণ কাজের জন্য কাজ চালানো ইংরেজি বলা-কওয়া বাংলা মিডিয়ামে পড়ে কী শিখবে? কাজ যদি না-ও পায়, বলিয়ে-কইয়ে তো হবে। আমি নিজে ক্লাস ইলেভেন অবধি পড়ে যা শিখেছি, তার চেয়ে আমার ফাইভে পড়া মেয়ে অনেক ভালো ইংরেজি জানে, ফটাফট বলতে পারে।’

Crisis of Teachers | Crisis of teachers at schools of West Bardhaman due to government rules regarding Transfer and recruitment process - Anandabazar

নিজে সরকার-পোষিত বাংলা মাধ্যমের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হয়ে তাকে অনেককিছু তত্ত্বগতভাবে বোঝাতে পারতাম হয়তো। তার মেয়ের শেখা, বিষয়ের ওপর দক্ষতা, গভীরতা বা ‘ফটাফট বলা’ ভাষাগুলোও আদৌ সঠিক শিখছে কি না– কে যাচাই করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলার স্মার্টনেসের মোহ যে তাতে একটুও কমত না, তা নিশ্চিত জানি। ভর্তির এককালীন পঞ্চাশ হাজার ছাড়াও বছরে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা স্কুল ফি, পোশাক, বইপত্র আনুষঙ্গিক বাদ দিয়েও, টিউশন পড়ানোর খরচ। কোথাও বা প্রতিবছর মোটা টাকায় ভর্তি। আর্থিকভাবে নিম্ন আয়ের পরিবারের পক্ষে এই চাপ নেওয়ার হিসেব করে অবাক হয়েছিলাম।

এই মফস্‌সলি এলাকায় অতি সাধারণ ব্যক্তিগত মালিকানার বেসরকারি স্কুলে যদি এই চিত্র হয়, বড় শহরের কর্পোরেট-পোষিত স্কুলগুলির অবস্থা সহজেই অনুমেয়। মধ্যবিত্ত সম্পন্ন পরিবারেরও নাভিশ্বাস উঠছে তার ব্যয়বহনে।

পূর্ব-প্রাথমিক শিক্ষার সূত্রে নামজাদা প্লে-স্কুলে ভর্তি করতে গেলেও বছরে লক্ষাধিক টাকার জোগাড় করে ‘মাঠে নামতে’ হয়। চাপে পড়েন নিম্ন-মাঝারি থেকে উচ্চ-মাঝারি আয়ের মানুষজন। একটা তিন বছরের শিশুকে যে অত্যাবশ্যক ফাউন্ডেশন এডুকেশন দেওয়ার কথা, তার একমাত্র উপায় প্লে-স্কুলগুলি। কারণ বিপরীতে আছে বিনে পয়সার অঙ্গনওয়ারি শিশুশিক্ষাকেন্দ্র, যেখানে, পরিকাঠামোগত কারণেই অত্যন্ত নিরুপায় না হলে কেউই বাচ্চাকে পাঠাতে আগ্রহী হবেন না। তা সে যতই আধুনিকীকরণের সরকারি প্রকল্প বা প্রচেষ্টা থাকুক– সেগুলি প্রণয়ন আর প্রয়োগের মাঝখানের দূরত্বটুকু কোনও ক্ষেত্রেই আদৌ ভরাট হয় না। পূর্ব-প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা জেনে বা না-জেনে অভিভাবক যে প্লে-স্কুলে বাচ্চাকে পাঠান, শহরাঞ্চল বা প্রত্যন্ত এলাকাতেও সেগুলোর ব্যয়ও কি সবার আয়ত্ত্বাধীন? একেবারেই তা নয়। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ না করলে নামজাদা প্লে-স্কুলে প্রবেশাধিকারও মেলে না।

প্রায় প্রান্তিক জনপদে বাস করা যে সহকর্মীর দু’টি বাচ্চা স্থানীয় প্লে-স্কুলে যায়, তার কাছে শুনেছি, ভর্তির সময় কোনও আধুনিক পরিকাঠামোহীন সেই স্কুলে এককালীন ৩০ হাজার টাকা, মাসে মাসে দু’ হাজার টাকা ফি। অতি সাধারণ আয়ের পরিবার থেকেও বাচ্চারা এই স্কুলগুলোতে আসে– যে পরিবারের নিজস্ব রোজগার হয়তো মাসে দশ হাজারেরও কম। ইউনিফর্ম, বইপত্র ইত্যাদি-সহ এই ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা যাদের নেই, সেই শিশুরা অক্ষরজ্ঞানহীন হয়েই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি হয়। পয়সা খরচ না-করে পাওয়া শিক্ষায় অভিভাবকেরা আর আগ্রহী হন না বাচ্চাকে নিয়মিত স্কুলে পাঠাতে। বাচ্চাটি পিছিয়েই যেতে থাকে ক্রমশ। আর এই পিছিয়ে থাকার ইতিহাস তার ভবিতব্য হয়ে যায়, যখন ক্লাস ফাইভে সরকার-পোষিত হাইস্কুলে সেই অক্ষরজ্ঞানহীন নামটুকুও লিখতে না পারা বাচ্চাটি ভর্তি হয়। তারপর এক চক্র ঘুরতে থাকে নিজের নিয়মে। এই পিছিয়ে পড়া বাচ্চাকে জোর করে শিক্ষালয় বা শিক্ষণমুখী করার জন্য যে উদ্যোগ, পরিকাঠামো বা তৎপরতা প্রয়োজন তার সবটুকুই যে যথাযথ তা বুকে হাত রেখে বলতে পারি না।

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির এই বাড়বাড়ন্ত বা সেগুলির প্রতি সমাজের সব শ্রেণির মানুষের এই অনুরাগের সূত্রপাত কিন্তু আজ নয়। ১৯৬৪ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি নির্ধারণে কোঠারি কমিশন যখন সুপারিশ করেন– প্রাথমিকভাবে শিশুদের ওপর কোনও ভাষা জোর করে চাপিয়ে দিলে তা শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি করে; তার অনুসারী হয়ে ১৯৮১ সালে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও প্রাথমিকে শুধু মাতৃভাষায় শিক্ষার পক্ষে ইংরেজি পঠনপাঠন তুলে দেওয়া হয়। যুক্তি হিসেবে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বা জাতীয় সমীক্ষায় ইংরেজি-ভীতি, ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান’ ইত্যাদি তত্ত্ব খাড়া করা হলেও কার্যক্ষেত্রে কিন্তু এর ফলাফল বেদনাদায়ক হয়ে দেখা দিল। কারণ সরকারিভাবে অফিসিয়াল কাজ চালানোর মাধ্যম কিন্তু বাংলাকে করা হল না। প্রাথমিকে বা উচ্চ প্রাথমিকে স্কুলছুট নাগরিক সামান্যতম ইংরেজিটুকু না-জানার গ্লানিতে ও সমস্যায় ঘরে-বাইরে নাকাল হল দীর্ঘদিন। তবুও দলে দলে বাংলা মাধ্যম ত্যাগ করা বা বেসরকারি ব্যক্তিগত উদ্যোগে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা স্কুলে বাচ্চাকে পড়ানোর প্রবণতা তখনও দেখা যায়নি। বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের দুনিয়া সেই দরজা হাট করে খুলে দিল আমাদের সামনে।

Bengal: More Than 7000 primary Schools Disappeared in Last 10 Years, ABPTA Claims it's 'Intentional' | NewsClick

মুক্তবাজার অর্থনীতি যে ভুবনগ্রাম উন্মুক্ত করে দিল তাতে যে নব্য-মধ্যবিত্ত সমাজের জন্ম হল তাদের ধ্যানধারণা চাওয়া-পাওয়ার রীতিনীতি সবই আলাদা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সবচেয়ে লাভজনক বাণিজ্যের পথ হিসেবেও তখন থেকেই বিবেচ্য হওয়া শুরু। সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় সাফল্যই হোক বা বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চ মাইনের চাকুরি, ইংরেজি ভাষা ছাড়া গতি নেই– এই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়তে, প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগল না। তলিয়ে দেখলে এ নিছক গুঞ্জনও নয় আসলে। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষা বিশ্বায়ন-পরবর্তী পৃথিবীতে যে কর্মজগতের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে তা নিছক সরকারি কেরানিগিরি। হ্যাঁ, স্কুল-কলেজের শিক্ষকতাকে যোগ করেই বলছি। এসবই আসলে ‘ক্লারিকাল ওয়ার্ক’। মুক্ত অর্থনীতি পরবর্তী পৃথিবীতে এই কাজগুলিও স্মার্ট হয়ে না-উঠতে পারলে কৌলিন্য হারায়, আর পিছিয়ে পড়ে জনমানসে। দেশজ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে গ্লোবাল মার্কেটিংয়ের পৃথিবীতে, আই টি সেক্টর বা প্রাইভেট সংস্থায় কাজের প্রয়োজনে, কমিউনিকেটিভ স্কিল হিসেবে ইংরেজি জানার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠা পাওয়া তাই সময়ের অপেক্ষা ছিল।

এ এক নতুন সাম্রাজ্যবাদ বলা যায়। আর এই সাম্রাজ্যের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় অভিভাবকের চিরন্তন চাহিদা ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’। অন্তত সামান্য করে-কম্মে খেতে-পরতে পায় যেন– এ আকাঙ্ক্ষাটুকু অস্বীকার করার জায়গা নেই। ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেই সেই সোনার খনির পাসওয়ার্ড পাওয়া যাবে কি না– সে প্রশ্ন তুললে কানে নেবেন না কেউই। প্রতি বছর ভাষা দিবসে ‘আপনার সন্তান কোন মাধ্যমে পড়ে?’ বা দু’-একজন বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়ার সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সাফল্য দেখিয়ে বিতর্ক তৈরি করলেও এ প্রবণতা কমবে না। কারণ আমরা জানি, ভাষাশিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের সিংহভাগই আসলে বিদ্যালয়ে হয় না। আমরা জানি, উন্নত পরিকাঠামোর সুযোগ নিতে সবাই-ই চাই। আমরা জানি, সত্যিই ইংরেজি ভাষা উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহে জরুরি; কিন্তু আমরা এ-ও জানি যে ইংরেজি মাধ্যমের ঝাঁ-চকচকে বিদ্যালয়গুলির প্যাকেজ তার একমাত্র পন্থা নয়। এই জেনেও অপারগ হয়ে থাকার সুযোগ নিয়েই বেসরকারি বহু বিদ্যালয়ে শিক্ষার খরচ এতটাই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে যে সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। আশা রাখব, আমাদের রাজ্যেও যে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য সদর্থক ভূমিকার কথা রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছেন, তা বলবৎ হবে। না হলে সত্যিই বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা নিছক ব্যবসায়িক ফায়দা তোলার জায়গায় পরিণত হবে। যেমন পরিণতি অন্যান্য বহু রাজ্যেই হইচই ফেলেছে।

………………………………………

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

………………………………………