ধর্মগুরুদের নিয়ে মাতামাতি আমাদের দেশে নতুন নয়। সাধুবাবাদের কুসংস্কার আর কেলেঙ্কারি ধর্মের নামে চাপা পড়ে যাওয়ার ইতিহাস আর ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম ভাঙিয়ে দুর্নীতি, নৈরাজ্য আর ব্যবসার ইতিহাস– একই। ‘গুরু’, যিনি মানুষের চলার পথে পরামর্শদাতা, প্রদর্শক, বিশেষজ্ঞ বা শিক্ষক। কিন্তু সরষের মধ্যেই তো ভূত! অর্থাৎ ভেকধারী গুরু! ঝোলা নিয়ে সন্ন্যাসের পথে বেরিয়ে পড়া সবাই কি প্রকৃত অর্থে ‘সাধু’? এত সব কেলেঙ্কারির পরেও ভাটা পড়েনি ধর্মগুরুদের জনপ্রিয়তায়।
খোলা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে চলছিল ‘সৎসঙ্গ’-র আয়োজন। প্রচণ্ড গরমে সেই সময় তাঁবুর ভেতরে গলদঘর্ম অবস্থা। ছোটেলাল, তাঁর স্ত্রী মঞ্জু দেবী এবং তাঁদের ছ’বছরের সন্তানও গিয়েছিল। ‘সৎসঙ্গ’ শেষ হওয়ার পর ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এমনকী, ভোলে বাবার পায়ের ধুলো নেওয়ার জন্য মারামারি লেগে যায় সকলের মধ্যে। ছোটেলালরা পালানোর চেষ্টা করছিলেন। চলেও এসেছিলেন প্রায় মেন গেটের কাছে। কিন্তু হুড়োহুড়ির মধ্যে মঞ্জু দেবী তাঁর সন্তানকে নিয়ে পড়ে যান একটা জলভর্তি গর্তে। ক্রমাগত পায়ের চাপে আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। সেখানেই সব শেষ। এই জমায়েতে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে শতাধিক মানুষ। বহু মানুষ নিকটাত্মীয়দের খুঁজে বেড়িয়েছে। উর্মিলা দেবী যেমন খুঁজছিলেন তাঁর ১৬ বছর বয়সি পুত্রবধূকে, তেমনই প্রেমাবতী দেবী হতবাক তাঁর শাশুড়ির এমন আচমকা মারা যাওয়ার ঘটনায়। আরেকজন, যিনি পদদলিত হয়েও বেঁচে গিয়েছেন, জানাচ্ছেন সেই ভয়াবহ মুহূর্তের কথা। নড়াচড়া করতে পারছিলেন না। শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা প্রায় শূন্য, শুধু পিঠে পায়ের আঘাত। কোনওরকমে নিজের শরীরকে চাগিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। তারপর আর জ্ঞান নেই। হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিল কেউ তাঁকে। সৎসঙ্গ যেখানে হয়েছিল, সেখানে শুধু পড়েছিল জুতো আর চপ্পলের স্তূপ। কিন্তু যাঁর পায়ের ধুলো সংগ্রহ করতেই উন্মত্ত হয়ে ছুটেছিল জনতা, সেই ভোলেবাবা কোথায়? তিনি কি নিলেন এই মর্মান্তিক ঘটনার দায়? তিনি তো পগার পার! অন্তরালে থেকেই ঘটনার চারদিন পর শোকপ্রকাশ। ঘটনার পর থেকেই ভোলে বাবার প্রতি ক্ষোভ দেখা গিয়েছে তাঁর ভক্তদের। তাঁদের প্রশ্ন– ভোলে বাবা যদি অলৌকিক কাজ করতে পারেন, তবে কেন তিনি তাঁর অনুগামীদের জীবিত করলেন না? কিন্তু কে এই ভোলে বাবা? কীভাবে তিনি ইভটিজিংয়ের দায়ে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে, জেল খেটে বেরিয়ে ধর্মগুরু হয়ে উঠলেন? কাসগঞ্জ জেলার বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরজ পাল জাটভ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। চাকরি জীবনের গোড়ার দিকে বেশ কয়েক বছর পুলিশের স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগে ছিলেন কর্মরতও। প্রায় ২৮ বছর আগে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে। প্রথমে সাসপেন্ড করা হয়েছিল জাটভকে, পরে বরখাস্ত হন। বেশ লম্বা সময় জেলে ছিলেন সুরজ পাল জাটভ। কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে ‘বাবা’-র রূপ ধরেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কিছুদিন পরে তিনি দাবি করেন– সরাসরি ঈশ্বরের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। এই সময় থেকেই নিজেকে ‘ভোলে বাবা’ হিসাবে তুলে ধরতে থাকেন সুরজ পাল জাটভ।
সত্যজিৎ রায়ের ‘মহাপুরুষ’ রাজশেখর বসু-র ছোটগল্প ‘বিরিঞ্চিবাবা’ অবলম্বনে তৈরি। মূল চলচ্চিত্রটির নাম ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’, যা দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের গল্প। প্রথম গল্পটি কাপুরুষ এবং দ্বিতীয় গল্পটি মহাপুরুষ। ‘মহাপুরুষ’ অংশে দেখা যায় স্ত্রী বিয়োগের পর নামকরা উকিল গুরুপদ মিত্রর সংসার বৈরাগ্য দেখা দেয়। ট্রেনে দেখা পান বিরিঞ্চিবাবার। গুরুপদবাবুর শ্যালক গণেশ মামার মতে তিনি ত্রিকালজ্ঞ মহাপুরুষ। তিনি মন্ত্রবলে নিয়ে আসেন ভগবানদের। গণেশমামার দৌলতে এই ভণ্ড বাবার প্রচুর ভক্ত তৈরি হয় কলকাতা শহরে।
ধর্মগুরুদের নিয়ে মাতামাতি আমাদের দেশে নতুন নয়। সাধুবাবাদের কুসংস্কার আর কেলেঙ্কারি ধর্মের নামে চাপা পড়ে যাওয়ার ইতিহাস আর ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম ভাঙিয়ে দুর্নীতি, নৈরাজ্য আর ব্যবসার ইতিহাস– একই। ‘গুরু’, যিনি মানুষের চলার পথে পরামর্শদাতা, প্রদর্শক, বিশেষজ্ঞ বা শিক্ষক। কিন্তু সরষের মধ্যেই তো ভূত! অর্থাৎ ভেকধারী গুরু! ঝোলা নিয়ে সন্ন্যাসের পথে বেরিয়ে পড়া সবাই কি প্রকৃত অর্থে ‘সাধু’? এত সব কেলেঙ্কারির পরেও ভাটা পড়েনি ধর্মগুরুদের জনপ্রিয়তায়। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সেলেব্রেটিরাও রয়েছেন তাঁদের ভক্তর তালিকায়। ‘অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদ’ বেশ কয়েক বছর আগে ১৪ জন ‘ভণ্ড বাবার’ তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেই তালিকায় ছিল আসারাম, রাধে মা, নারায়ণ সাঁই, নির্মল বাবার মতো ব্যক্তিদের নাম। নাম ছিল আলোচিত রাম রহিমেরও। এঁদের কেউ কেউ নিজেকে দাবি করেন অবতার বলে, কেউ বা ভগবান কেউ বা সাধু, ঋষি বা অন্য কিছু।
হরিয়ানা রাজ্যের স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপালের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৪-তে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৬৭ বছরের সন্ত রামপালকে। তাঁকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ছ’জনের। প্রায় ২৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সরকারের। তাঁর আশ্রম থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি বারুদ, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, কমান্ডোদের পোশাক, পেট্রোল বোমা, পাঁচ হাজার লাঠি, হেলমেট, প্রচুর মোবাইল ফোন এমনকী, প্রেগনেন্সি টেস্ট করা ও গর্ভ নিরোধক সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১২ একর আশ্রমে তল্লাশি চালিয়ে গোপন সুড়ঙ্গ পথে ঢুকে পুলিশ খোঁজ পেয়েছিল ২৪টি এসি ঘর, মাসাজ পার্লার, এলিভেটর, সুইমিং পুল-সহ বিলাসবহুল সামগ্রীর।
এককালের ‘গডম্যান’ ছিলেন চন্দ্রস্বামী। একসময় দেশ-বিদেশের নানা পত্রপত্রিকায় নিয়মিত দেখা যেত চন্দ্রস্বামীকে। সঙ্গে কোনও না কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। লম্বা ঝুলের সাদা পাঞ্জাবি, এলোমেলো চুল-দাড়ি, কপালে মস্ত গোল টিপ, গলায় একাধিক রুদ্রাক্ষ ও সোনার মালা, এক হাতে ধরা লাঠি, রাশভারী চেহারার চন্দ্রস্বামীকে প্রায়শই দেখা যেত একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর সঙ্গে। তবে এই ‘ঘনিষ্ঠতা’ই শেষমেশ চন্দ্রস্বামীর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গুরমিত সিংহ রাম রহিম শুধু নামেই ধর্মগুরু। তিনি পরতেন আধুনিক পোশাক, সিনেমাতেও অভিনয় করতেন। ঝলমলে পোশাক গায়ে মিউজিক ভিডিওতে তাঁর বিকট নাচের দৃশ্যও বিরল নয়। হরিয়ানা-পাঞ্জাবে অন্তত পাঁচ লাখ ভক্ত ছিল গুরমিত রাম রহিমের। তাঁদের দাবি, সারা বিশ্বে গুরু রাম রহিমের ছয় কোটি ভক্ত আছে। তবে বিতর্কের জেরে আপাতত শ্রীঘরে তিনি।
…………………………………………………………….
‘অন্ধবিশ্বাস’ অতি ভয়ানক বিষয়। এই অন্ধবিশ্বাস মানুষের স্বাভাবিক যুক্তিবোধকে পরাজিত করে বারবার। ফলে মানুষ অস্বাভাবিক কোনও কিছুকেও স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়। নরবলি দিলে মনের আশা পূরণ হয়, গুরুর এমন কথায় বিশ্বাস করে নিজের শিশুসন্তানকে বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গুরুর ‘আশীর্বাদ’-এ নারী কীভাবে গর্ভবতী হয়, কিংবা ক্যানসার সেরে যায়– সেটাও ধোঁয়াশা। মানুষের মাথার খুলিতে বিশেষ পানীয় পান করলে আয়ু বাড়ে, গুরুর এমন কথায় অন্ধবিশ্বাস করে কবর খুঁড়ে মাথার খুলি জোগাড় করতে গিয়েও ধরা পড়েছে, এমন খবরও রয়েছে।
…………………………………………………………….
আরেক স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, জোর করে আটকে রাখা, মহিলাদের সঙ্গে অপকর্ম, মারধর করা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ‘জনপ্রিয়’ ধর্মগুরু রাধে মাকে নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। এক ভক্তের অনুরোধে তিনি নাকি পণের দাবিতে নির্যাতন চালিয়েছিলেন ভক্তের পরিবারের বধূর ওপরে। এছাড়াও একাধিকবার হিন্দি গানের সঙ্গে অশ্লীল ভাবে নাচতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অথচ এই সাধ্বী-অন্ত-প্রাণ পরিচালক সুভাষ ঘাই। স্ত্রী মুক্তাকে নিয়ে তিনি প্রায়ই যান রাধে মায়ের চরণে।
এছাড়াও রয়েছেন ওয়াননেস ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা কল্কি ভগবান। এই সাধকের আশ্রম চেন্নাইয়ে। তাঁর ঘরানার প্রচারিত মত হল, মহাবিশ্বে সবাই সমান। এই দর্শনে মুগ্ধ ঋত্বিক রোশন, শিল্পা শেঠি থেকে মনীষা কৈরালাও। অন্যদিকে এই কল্কি ভগবানের বিরুদ্ধেই আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে ভূরি ভূরি।
অমৃতসরের রাধাস্বামী সৎসঙ্গ বিয়াসও রয়েছেন জনপ্রিয় অথচ ভণ্ড সাধুদের তালিকায়। এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কথা ছাড়া নাকি এক পা’ও নড়ে না শাহিদ কাপুরের পরিবার। শাহিদ নাকি মীরাকে পেয়েছেন গুরুর খুঁজে দেওয়া সম্বন্ধেই। ধর্মীয় এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা জমি দখল করেছে। হস্তগত করে নিয়েছে এক গুরুদ্বারের জমি। রবিশঙ্করকে কে না চেনে! তার ‘আর্ট অফ লিভিং’-এর ভক্ত অনেক নামী-দামি মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাঁর ধর্মীয় উৎসবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যমুনা নদীর এক হাজার একর পলিজমি। যা ঠিক হতে সময় লাগবে দশ বছর। অর্থের প্রয়োজন হবে ৪২ কোটি।
সত্য সাঁই বাবা, যিনি নিজেকে দাবি করেন শিরডির সাধক সাঁই বাবার এক অবতার বলে। তাঁর তারকা ভক্তের সংখ্যা অগণিত। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে আর্থিক জালিয়াতি, যৌন হেনস্তা, বুজরুকি-সহ একাধিক অভিযোগ।
ওশো রজনীশের বিরুদ্ধে তো এত অভিযোগ উঠেছিল কেচ্ছার যে, তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল ‘সেক্স গুরু’।
ধর্ষণ ও শিশুদের অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত, নিত্যানন্দ ভারত থেকে পালিয়ে যান এবং দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের কাছে একটি দ্বীপ কেনেন। সেই দেশের নাম ‘কৈলাসা’। এই দেশের রাষ্ট্রপতি নিত্যানন্দ নিজে। কৈলাসার নিজস্ব জাতীয় সংগীত, মুদ্রা এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কও রয়েছে। এক দক্ষিণী অভিনেত্রী রঞ্জিতার সঙ্গে নিত্যানন্দ স্বামীর যৌনসম্পর্কের ভিডিও ফুটেজ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এই রঞ্জিতাই এখন কৈলাসার প্রধানমন্ত্রী।
………………………………………………………………………………………………
পড়ুন রিংকা চক্রবর্তীর লেখা: ব্রহ্মচর্য পালন কি এতই ঠুনকো যে মহিলা-দর্শনে তা টলে যাবে?
…………………………………………………………………………………………….
৫৪ বছরের নারী উ মে হো। যিনি নিজেকে ‘গডউওম্যান’ বলে দাবি করেন। দেবতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন সিঙ্গাপুরের এই বাসিন্দা। তিনি একজন দেবতা– এসব কথা রটিয়ে তৈরি করেছেন বহু ভক্ত, মানুষের সঙ্গে করেছেন প্রতারণা। অভিযোগ উঠেছিল, ওই নারী তাঁর ভক্তদের মল খেতে বাধ্য করেন। একই সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ওই নারী প্রায় ৪৪ কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
আরেক মহাগুরুর বিরুদ্ধে রয়েছে স্ত্রী খুনের অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে কোয়েম্বাটুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তাঁর শ্বশুর। এমনকী, আশ্রমের কোনও একজনের সঙ্গে এই মহাগুরুর অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগও আনেন তিনি। মহাগুরু এবং সেই আশ্রমের মহিলার পথের কাঁটা হয়ে গিয়েছিলেন বলেই স্ত্রীকে এইভাবে সরিয়ে দেন কি মহাগুরু? শ্বশুরমশাই আরও জানান তাঁদের কমিউনিটিতে মৃতদেহ দাহ করার নিয়ম নেই। কিন্তু জোর করে তাঁর মেয়ের দেহ সৎকার করেছিলেন এই মহাগুরু। উল্টে দাবি করেন, তাঁর স্ত্রীর মহা সমাধি হয়েছে।
‘অন্ধবিশ্বাস’ অতি ভয়ানক বিষয়। এই অন্ধবিশ্বাস মানুষের স্বাভাবিক যুক্তিবোধকে পরাজিত করে বারবার। ফলে মানুষ অস্বাভাবিক কোনও কিছুকেও স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়। নরবলি দিলে মনের আশা পূরণ হয়, গুরুর এমন কথায় বিশ্বাস করে নিজের শিশুসন্তানকে বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গুরুর ‘আশীর্বাদ’-এ নারী কীভাবে গর্ভবতী হয়, কিংবা ক্যানসার সেরে যায়– সেটাও ধোঁয়াশা। মানুষের মাথার খুলিতে বিশেষ পানীয় পান করলে আয়ু বাড়ে, গুরুর এমন কথায় অন্ধবিশ্বাস করে কবর খুঁড়ে মাথার খুলি জোগাড় করতে গিয়েও ধরা পড়েছে, এমন খবরও রয়েছে। তথাকথিত এই ধর্মগুরুদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা আকছার শোনা যায়। নানা কূটকৌশলে সহজ-সরল নিরীহ মানুষের ধনসম্পদ লুটে গুরুদেব ফেরার– এটাও তো অচেনা খবর নয়! তাহলে মানুষ কেন দলে দলে এই ধর্মগুরুদের ফাঁদে পড়ে? বিশ্বাস করে? উত্তর দিল্লির বুরারির মৃত্যুরহস্য মনে আছে? একই পরিবারের ১১ জনের রহস্যমৃত্যু তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল দেশে। সে সময় প্রশ্ন ওঠে এটি কি কোনও গণ আত্মহত্যা না কি খুন? পরে জানা যায় সেখানেও রয়েছে গুরুর প্রভাব। একের পর এক কাগজে লেখা ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা। কোথাও লেখা, ‘একই গোষ্ঠীর ১১ জন যদি একই ধর্মীয় মত মেনে চলে, তবে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব।’ কোনও কাগজে আবার লেখা, ‘চোখ এবং মুখ কাপড়ে ঢেকে ফেললে, মনের ভয় অনেকটাই কেটে যায়।’ দিল্লির একই পরিবারের ১১ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে, এমনই সব নথি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তাই নিয়ে তথ্যচিত্র এবং ওয়েব সিরিজও নির্মিত হয়েছে। তথাকথিত ‘বাবা’-দের আশ্রমের ভেতরে কী কী কুকীর্তি চলে, সেই রহস্য ঘিরে তৈরি হয়েছিল ‘আশ্রম’ ওয়েব সিরিজ। মোদ্দা কথা, ‘গুরু’ ব্যবসা বড় ব্যবসা– না পড়িলে ধরা। সৎ গুরু আর সদ্গুরু এক নন। অতীতে সাধকের সাধনার সঙ্গে এই ঘোর কলির গুরু-তত্ত্ব বড় গুরুতর। তাই এই চক্রে মাথা না দেওয়াই পরম-প্রাপ্তি।